মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)
তাওবা অধ্যায়
হাদীস নং: ৩২
তাওবা অধ্যায়
পরিচ্ছেদ: আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী থাকা অবস্থায় অধিক গুনাহ করেও গুনাহগার ব্যক্তির আল্লাহর ক্ষমা থেকে নিরাশ না হওয়া সম্পর্কে
৩২. আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, এক ব্যক্তি গুনাহ করে বলে, হে আমার রব! আমি গুনাহ করেছি। অথবা বলে, আমি গুনাহর কাজ করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা কর। তখন আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, আমার বান্দাহ গুনাহ করেছে, এরপর সে বুঝতে পেরেছে তার একজন রব আছে, তিনি গুনাহ ক্ষমা করতে পারেন এবং এর দরুণ তাকে পাকড়াও করতে পারেন। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। এরপর সে পুনরায় গুনাহর কাজ করে, অথবা দ্বিতীয়বার গুনাহ করে এবং বলে, হে আমার রব, আমি গুনাহের কাজ করেছি, তুমি ক্ষমা কর, তখন আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, আমার বান্দা জ্ঞাত হয়েছে যে, তার রব গুনাহ মাফ করতে পারে এবং তাকে পাকড়াও করতে পারে। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। পুনরায় সে গুনাহর কাজ করে, অথবা গুনাহ করে বলে, হে আমার রব! আমি গুনাহের কাজ করেছি, তুমি ক্ষমা কর, তখন আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, আমার বান্দা জ্ঞাত হয়েছে যে, তার রব তার গুনাহ মাফ করতে পারেন এবং তাকে পাকড়াও করতে পারেন। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। পুনরায় সে গুনাহর কাজ করে, অথবা গুনাহ করে বলে, হে আমার রব! আমি গুনাহের কাজ করেছি, তুমি ক্ষমা কর, তখন আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, আমার বান্দা জ্ঞাত হয়েছে যে, তার রব তার গুনাহ মাফ করতে পারেন এবং তাকে পাকড়াও করতে পারেন। তোমরা সাক্ষী থাকো আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। সুতরাং সে যা ইচ্ছে আমল করুক।
كتاب التوبة
باب ما جاء في عدم قنوط المذنب من المغفرة لكثرة ذنوبه ما دام موحدا
عن ابي هريرة (5) عن النبي صلى الله عليه وسلم ان رجلا أذنب ذنبا فقال رب اني اذنبت ذنبا أو قال عملت عملا ذنبا فاغفره فقال عز وجل عبدي عمل ذنبا فعلم أن له ربا يغفر الذنب ويأخذ به قد غفرت لعبدي ثم عمل ذنبا آخر أو أذنب ذنبا آخر فقال رب اني عملت ذنبا فاغفره فقال تبارك وتعالى علم عبدي ان له ربا يغفر الذنب ويأخذ به قد غفرت لعبدي ثم عمل ذنبا آخر أو أذنب ذنبا آخر فقال رب اني عملت ذنبا فاغفره فقال علم عبدي ان له رب يغفر الذنب ويأخذ به قد غفرت لعبدي فليعمل ما شاء
হাদীসের ব্যাখ্যা:
আল্লাহ তা'আলার কাছে বান্দার এ বিশ্বাস অতি মূল্যবান যে, তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি পাপী ব্যক্তির পাপ ক্ষমা করেন এবং পাপের জন্য তাকে শাস্তিও দান করেন। এ বিশ্বাসের সঙ্গে কোনও পাপী বান্দা যখন বলে, 'হে আল্লাহ! আমার পাপ ক্ষমা করুন', তখন তাকে অবশ্যই ক্ষমা করেন। আল্লাহ তা'আলা খুশি হয়ে বলতে থাকেন, আমার বান্দা একটি পাপ করেছে আর সে জানে যে, তার একজন রব্ব আছেন, তিনি পাপ ক্ষমা করেন এবং পাপের জন্য শাস্তিও দেন, আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম।
ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন, এ হাদীছটি আমাদের জানায়, ইস্তিগফার ও ক্ষমাপ্রার্থনা কত বড় উপকারী আমল। আরও জানায়, আল্লাহ তা'আলার অনুগ্রহ কী বিশাল, তাঁর রহমত, সহনশীলতা ও মহানুভবতা কত বিস্তৃত!
তবে প্রকৃত ক্ষমাপ্রার্থনা সেটাই, যা অন্তর থেকে উৎসারিত হয়ে যবান থেকে উচ্চারিত হয়, সেইসঙ্গে মনে লজ্জা ও অনুতাপও থাকে। এ হিসেবে ইস্তিগফার ও তাওবা একই অর্থ বহন করে।
এ হাদীছ দ্বারা জানা যাচ্ছে, যে ব্যক্তি গুনাহ করার পর খাঁটি মনে ইস্তিগফার করে, তারপর আবার তার দ্বারা একই গুনাহ হয়ে যায়, আবারও ইস্তিগফার করে, এভাবে সে বারবার একই গুনাহ করে এবং বারবার ইস্তিগফার করে, আল্লাহ তা'আলা প্রতিবারই তাকে ক্ষমা করে দেন। তবে এটা সত্যিকারের ইস্তিগফার হতে হবে। এমন নয় যে, মুখে আসতাগফিরুল্লাহ বলল, কিন্তু অন্তর সেই গুনাহের মধ্যেই মজে আছে। এরকম ইস্তিগফার কোনও ইস্তিগফারই নয়; বরং এর জন্যও ইস্তিগফার করা উচিত। কেননা এটা আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে একরকম তামাশা। যেমন হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত আছে
التائب من الذنب كمن لا ذنب له، والمستغفر من الذنب وهو مقيم عليه كالمستهری بربه
“গুনাহ থেকে তাওবাকারী ওই ব্যক্তির মত, যার কোনও গুনাহ নেই। যে ব্যক্তি কোনও গুনাহ থেকে ইস্তিগফার করছে অথচ সে গুনাহটি করেও যাচ্ছে, সে যেন তার রব্বের সঙ্গে পরিহাস করছে।
ইস্তিগফার করার পর একই গুনাহ পুনরায় করা আপাতদৃষ্টিতে প্রথমবার গুনাহ করার চেয়েও বেশি খারাপ মনে হয়। কেননা এর দ্বারা গুনাহটি পুনরায় করার সঙ্গে তাওবা ভঙ্গের অপরাধও যুক্ত রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পুনরায় যখন তাওবা-ইস্তিগফার করে, তখন সে ব্যক্তির মর্যাদা অনেক উঁচু হয়ে যায়। কেননা প্রথমবারের তাওবায় সে ব্যক্তি মহান আল্লাহ তা'আলার কাছে যেমন কাতরভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিল এবং আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গে এই স্বীকারোক্তি দিচ্ছিল যে, আল্লাহ তা'আলা ছাড়া তার পাপ মোচনকারী আর কেউ নেই, তেমনি দ্বিতীয়বারও সে আল্লাহ তা'আলার কাছে তার মনের একই আকুলতা ও একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করছে। এভাবে একের পর এক আল্লাহ তা'আলার সামনে নিজ দীনতা ও হীনতা প্রকাশ দ্বারা ধাপে ধাপে তার মর্যাদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ কথা বলার সুযোগ নেই যে, বারবার গুনাহ করার দ্বারা তার তো গুনাহের সংখ্যাও বাড়ছে। কেননা আগের বারের খাঁটি তাওবা দ্বারা আগের গুনাহও তো মিটে গেছে। তাই পরের গুনাহ আগের গুনাহের সঙ্গে যুক্ত হয়নি। বরং এটিই প্রথম গুনাহ। আর সে গুনাহটিও পরের তাওবা দ্বারা মুছে গেছে। পক্ষান্তরে গুনাহ দ্বারা আগের তাওবাও বাতিল হয়নি। কেননা ইখলাস ও খাটিমনে তাওবা করার কারণে সে তাওবা ছিল একটি মূল্যবান ইবাদত, যা তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। পরের বারের তাওবা দ্বারা তার সঙ্গে আরও একটি ইবাদত যুক্ত হল।
সুতরাং তাওবা যদি খাঁটি হয়ে থাকে, তবে নফস ও শয়তানের ফেরেবে -ধোঁকায়- পড়ে যতবারই গুনাহ করুক না কেন, প্রত্যেকবারের তাওবা তার জন্য লাভই লাভ। তাই তো আল্লাহ তা'আলা বলছেন قد غفرت لعبدي فليفعل ما شاء (আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। সুতরাং তার যা ইচ্ছা হয় করুক)। অর্থাৎ তোমার দ্বারা যতবারই গুনাহ হবে, তারপর তাওবা করবে, আমি তোমাকে ক্ষমা করতে থাকব। এর দ্বারা তাকে গুনাহের প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়নি; বরং পাপী বান্দার হতাশা দূর করা হয়েছে। বোঝানো হচ্ছে যে, বান্দার দ্বারা যতই গুনাহ হয়ে যাক না কেন, তার জন্য তাওবার দুয়ার কখনও বন্ধ হয় না। যদি খাঁটি মনে তাওবা করে এবং তাওবা করার সময় পুনরায় ওই গুনাহ করার কোনও ইচ্ছা তার মনে না থাকে, তারপর নফস ও শয়তানের ফেরেবে পড়ে তার দ্বারা ফের ওই গুনাহ হয়ে যায়, তবে তাকে অবশ্যই ক্ষমা করা হয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা ইস্তিগফারের অভাবনীয় উপকার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তাই আমরা বেশি বেশি ইস্তিগফার করব।
খ. আল্লাহ তা'আলা অসীম দয়ালু, অফুরন্ত ক্ষমাশীল। আমরা কখনও তাঁর রহমত ও ক্ষমার আশা পরিত্যাগ করব না।
গ. আমাদের তাওবা ও ইস্তিগফার হতে হবে খাঁটিমনে। তাওবা ও ইস্তিগফার করার সময় অবশ্যই গুনাহ পরিত্যাগের সংকল্প এবং পুনরায় তাতে লিপ্ত না হওয়ার অঙ্গীকার থাকতে হবে।
ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন, এ হাদীছটি আমাদের জানায়, ইস্তিগফার ও ক্ষমাপ্রার্থনা কত বড় উপকারী আমল। আরও জানায়, আল্লাহ তা'আলার অনুগ্রহ কী বিশাল, তাঁর রহমত, সহনশীলতা ও মহানুভবতা কত বিস্তৃত!
তবে প্রকৃত ক্ষমাপ্রার্থনা সেটাই, যা অন্তর থেকে উৎসারিত হয়ে যবান থেকে উচ্চারিত হয়, সেইসঙ্গে মনে লজ্জা ও অনুতাপও থাকে। এ হিসেবে ইস্তিগফার ও তাওবা একই অর্থ বহন করে।
এ হাদীছ দ্বারা জানা যাচ্ছে, যে ব্যক্তি গুনাহ করার পর খাঁটি মনে ইস্তিগফার করে, তারপর আবার তার দ্বারা একই গুনাহ হয়ে যায়, আবারও ইস্তিগফার করে, এভাবে সে বারবার একই গুনাহ করে এবং বারবার ইস্তিগফার করে, আল্লাহ তা'আলা প্রতিবারই তাকে ক্ষমা করে দেন। তবে এটা সত্যিকারের ইস্তিগফার হতে হবে। এমন নয় যে, মুখে আসতাগফিরুল্লাহ বলল, কিন্তু অন্তর সেই গুনাহের মধ্যেই মজে আছে। এরকম ইস্তিগফার কোনও ইস্তিগফারই নয়; বরং এর জন্যও ইস্তিগফার করা উচিত। কেননা এটা আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে একরকম তামাশা। যেমন হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত আছে
التائب من الذنب كمن لا ذنب له، والمستغفر من الذنب وهو مقيم عليه كالمستهری بربه
“গুনাহ থেকে তাওবাকারী ওই ব্যক্তির মত, যার কোনও গুনাহ নেই। যে ব্যক্তি কোনও গুনাহ থেকে ইস্তিগফার করছে অথচ সে গুনাহটি করেও যাচ্ছে, সে যেন তার রব্বের সঙ্গে পরিহাস করছে।
ইস্তিগফার করার পর একই গুনাহ পুনরায় করা আপাতদৃষ্টিতে প্রথমবার গুনাহ করার চেয়েও বেশি খারাপ মনে হয়। কেননা এর দ্বারা গুনাহটি পুনরায় করার সঙ্গে তাওবা ভঙ্গের অপরাধও যুক্ত রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পুনরায় যখন তাওবা-ইস্তিগফার করে, তখন সে ব্যক্তির মর্যাদা অনেক উঁচু হয়ে যায়। কেননা প্রথমবারের তাওবায় সে ব্যক্তি মহান আল্লাহ তা'আলার কাছে যেমন কাতরভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিল এবং আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গে এই স্বীকারোক্তি দিচ্ছিল যে, আল্লাহ তা'আলা ছাড়া তার পাপ মোচনকারী আর কেউ নেই, তেমনি দ্বিতীয়বারও সে আল্লাহ তা'আলার কাছে তার মনের একই আকুলতা ও একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করছে। এভাবে একের পর এক আল্লাহ তা'আলার সামনে নিজ দীনতা ও হীনতা প্রকাশ দ্বারা ধাপে ধাপে তার মর্যাদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ কথা বলার সুযোগ নেই যে, বারবার গুনাহ করার দ্বারা তার তো গুনাহের সংখ্যাও বাড়ছে। কেননা আগের বারের খাঁটি তাওবা দ্বারা আগের গুনাহও তো মিটে গেছে। তাই পরের গুনাহ আগের গুনাহের সঙ্গে যুক্ত হয়নি। বরং এটিই প্রথম গুনাহ। আর সে গুনাহটিও পরের তাওবা দ্বারা মুছে গেছে। পক্ষান্তরে গুনাহ দ্বারা আগের তাওবাও বাতিল হয়নি। কেননা ইখলাস ও খাটিমনে তাওবা করার কারণে সে তাওবা ছিল একটি মূল্যবান ইবাদত, যা তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। পরের বারের তাওবা দ্বারা তার সঙ্গে আরও একটি ইবাদত যুক্ত হল।
সুতরাং তাওবা যদি খাঁটি হয়ে থাকে, তবে নফস ও শয়তানের ফেরেবে -ধোঁকায়- পড়ে যতবারই গুনাহ করুক না কেন, প্রত্যেকবারের তাওবা তার জন্য লাভই লাভ। তাই তো আল্লাহ তা'আলা বলছেন قد غفرت لعبدي فليفعل ما شاء (আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। সুতরাং তার যা ইচ্ছা হয় করুক)। অর্থাৎ তোমার দ্বারা যতবারই গুনাহ হবে, তারপর তাওবা করবে, আমি তোমাকে ক্ষমা করতে থাকব। এর দ্বারা তাকে গুনাহের প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়নি; বরং পাপী বান্দার হতাশা দূর করা হয়েছে। বোঝানো হচ্ছে যে, বান্দার দ্বারা যতই গুনাহ হয়ে যাক না কেন, তার জন্য তাওবার দুয়ার কখনও বন্ধ হয় না। যদি খাঁটি মনে তাওবা করে এবং তাওবা করার সময় পুনরায় ওই গুনাহ করার কোনও ইচ্ছা তার মনে না থাকে, তারপর নফস ও শয়তানের ফেরেবে পড়ে তার দ্বারা ফের ওই গুনাহ হয়ে যায়, তবে তাকে অবশ্যই ক্ষমা করা হয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা ইস্তিগফারের অভাবনীয় উপকার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তাই আমরা বেশি বেশি ইস্তিগফার করব।
খ. আল্লাহ তা'আলা অসীম দয়ালু, অফুরন্ত ক্ষমাশীল। আমরা কখনও তাঁর রহমত ও ক্ষমার আশা পরিত্যাগ করব না।
গ. আমাদের তাওবা ও ইস্তিগফার হতে হবে খাঁটিমনে। তাওবা ও ইস্তিগফার করার সময় অবশ্যই গুনাহ পরিত্যাগের সংকল্প এবং পুনরায় তাতে লিপ্ত না হওয়ার অঙ্গীকার থাকতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)