মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)

শিষ্টাচার, নসীহত, হিকমত এবং কম কথায় অধিক অর্থ পূর্ণ বিষয়ের বর্ণনায় উৎসাহ প্রদান অধ্যায়

হাদীস নং:
শিষ্টাচার, নসীহত, হিকমত এবং কম কথায় অধিক অর্থ পূর্ণ বিষয়ের বর্ণনায় উৎসাহ প্রদান অধ্যায়
অধ্যায়: শিষ্টাচার, নসীহত, হিকমত এবং কম কথায় অধিক অর্থ পূর্ণ বিষয়ের বর্ণনায় উৎসাহ প্রদান

প্রথম পরিচ্ছেদে: একক কর্ম দিয়ে; দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে: দ্বৈত কর্ম দিয়ে এবং তৃতীয় পরিচ্ছেদে: তিনটি কাজে উৎসাহ প্রদানের উল্লেখ করা হবে।

প্রথম পরিচ্ছেদ: একক বিষয় সম্পর্কে যা এসেছে
১. আবূ নদর (র) হাসান বসরী (র) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বনি সলীতের একজন বৃদ্ধ সাহাবী তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, আমি জাহিলিয়াতের সময় আমাদের বিপদগ্রস্থ হওয়ার একটি বিষয়ে কথা বলার জন্য রাসূল (ﷺ)-এর নিকট গিয়েছিলাম। তিনি তখন দাঁড়ানো ছিলেন এবং সেখানে একটি মজলিস চলছিল। লোকেরা তার চারিদিকে বসা ছিল, আর তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এ সময় তাঁর শরীরে মোটা সুতির একটি লুঙ্গি ছিল, তারপর আমি প্রথম তাকে সে কথা বলতে শুনলাম। তিনি হাতের আঙ্গুলের ইশারায় বলছিলেন, এক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই, সে না তার উপর জুলুম করতে পারে, আর না তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারে। তাকওয়া এখানে আছে। তিনি বললেন, অন্তরে।
(মুসলিম শরীফে বলা হয়েছে: তিনি তিনবার তার অন্তরের দিকে ইংগিত করেন।)
كتاب جامع للأدب والمواعظ والحكم وجوامع الكلم في الترغيبات
كتاب جامع للأدب والمواعظ والحكم وجوامع الكلم في الترغيبات
مبدئا بالترغيبات المفردات في الباب الأول وبالثنائيات في الثاني وبالثلاثيات في الثالث وهكذا

باب ما جاء في المفردات
حدثنا أبو النضر (4) ثنا المبارك ثنا الحسن (5) أن شيخا من بني ترابط (6) أخبره قال أتيت رسول الله صلى الله عليه وسلم أكلمه في شيء أصيب لنا في الجاهلية فإذا هو قاعد وعليه حلقة قد أطافت به وهو يحدث القوم عليه أزار قطن له غليظ فأول شيء سمعته يقول وهو يشير بإصبعيه المسلم أخو المسلم لا يظلمه ولا يخذله (7) التقوى ها هنا التقوى ههنا يقول أي في القلب

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে এক মুসলিমকে অপর মুসলিমের ভাই বলা হয়েছে। কুরআন মাজীদেও আছেঃ- إنّما المؤمنون إخوة ‘মুমিনগণ তো পরস্পর ভাই ভাই। সূরা হুজুরাত (৪৯), আয়াত ১০

এর দ্বারা দুই মুসলিমের ঈমানী সম্পর্ককে দুই ব্যক্তির ভ্রাতৃসম্পর্কের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। দুই ব্যক্তি যখন একই মূলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় অর্থাৎ তাদের পিতা-মাতা অভিন্ন হয়, তখন তারা ভাই ভাই হয়। তেমনি যারা আদর্শগতভাবে একই মূল তথা ঈমান ও ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের পরস্পরকেও 'ভাই ভাই' শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তারাই ভাই ভাই নামে অভিহিত হওয়ার বেশি উপযুক্ত। কেননা একই পিতা-মাতা-সঞ্জাত হওয়ার দ্বারা যে সম্পর্ক স্থাপিত হয় তা ক্ষণস্থায়ী। এ জীবন তো অল্পদিনের, যা মৃত্যুতেই শেষ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে ঈমান ও ইসলামভিত্তিক সম্পর্ক চিরস্থায়ী, যেহেতু ঈমান ও ইসলাম দ্বারা আখেরাতের অনন্ত জীবন লাভ হয়।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাদীছে মুসলিম ব্যক্তির কয়েকটি কর্তব্যের কথা উল্লেখ করেছেন। তার আগে ভূমিকাস্বরূপ المسلم أخو المسلم (এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই)- এ নীতিবাক্যটি বলে নিয়েছেন।কেননা মন-মস্তিষ্কে এ ভ্রাতৃত্ববোধ সঞ্চারিত হয়ে গেলে মুসলিম ব্যক্তি সে কর্তব্যসমূহ পালনে প্রস্তুত থাকবে। বস্তুত সে কর্তব্যসমূহ এ ভ্রাতৃত্বেরই দাবি।সে দাবির কারণে মুসলিম ব্যক্তির স্বতঃস্ফূর্তভাবেই তা পালন করার কথা। আলাদাভাবে তাকে সেসব কর্তব্যের কথা বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু উম্মতের এক পরম দরদী শিক্ষকও ছিলেন, তাই ছাত্র পড়ানোর মত করে তিনি এক এক করে সেগুলো স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, যাতে উম্মতের চরম গাফেল ব্যক্তিও মুসলিম ভাইয়ের প্রতি আপন কর্তব্য সম্পর্কে অনবহিত না থাকে এবং তা পালন করতে কোনওরূপ অবহেলা না করে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ মুসলিম উম্মাহকে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত করে ।

খ. আমরা কেউ একে অন্যের প্রতি জুলুম করব না। অর্থাৎ অন্যের জান, মাল ও ইজ্জতের উপর আঘাত করব না। এটা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের পরিপন্থী।

গ. কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়, তবে তার সাহায্য না করে পাশ কাটিয়ে যাওয়া উচিত নয়; বরং তার সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া ইসলামী ভ্রাতৃত্বের দাবি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান