মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)

পানীয় অধ্যায়

হাদীস নং: ৯২
পানীয় অধ্যায়
পরিচ্ছেদ : উপরোল্লিখিত পাত্রসমূহে নাবীয তৈরী করার নিষেধাজ্ঞা রহিত হওয়া প্রসঙ্গ।
৯২। আবদুল্লাহ ইবন আসলামী (র) তার পিতা বুরায়দা ইবন হাসিব (র) থেকে, তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আমি তোমাদেরকে তিনটি বিষয়ে নিষেধ করেছিলাম, কবর যিয়ারত করতে। এখন তোমরা তা যিয়ারত কর। কেননা, এর যিয়ারতে নসীহত ও শিক্ষা রয়েছে। আর আমি তোমাদেরকে তিন দিনের পর কুরবাণীর গোশত খেতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা তা খাও এবং জমা করে রাখ। আর আমি তোমাদেরকে যেসব পাত্রের নাবীয পান করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা সেগুলোর নাবীয পান কর; তবে হারাম পান কর না। (অন্য শব্দে: আমি তোমাদেরকে মটকার নাবীয পান করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা প্রত্যেক পাত্রে নাবীয তৈরী কর এবং নেশাযুক্ত বস্তু খাওয়া হতে বেঁচে থাক।
দ্বিতীয় সূত্রে তার অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। তবে তাতে আরও আছে যে, আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন মুহাম্মাদকে তাঁর মায়ের কবর যিয়ারত করতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর আমি তোমাদেরকে কিছু শরাবের পাত্র ব্যবহার করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু পাত্র কোন বস্তু হারামও করতে পারে না এবং হালালও করতে পারে না।
(মুসলিম ও ইমামচতুষ্টয়)
كتاب الأشربة
باب نسخ تحريم الانتباذ في الأوعية المتقدم ذكرها
عن عبد الله بن بريدة الأسلمى (12) عن أبيه بريدة ابن حصيب عن رسول الله صلى الله عليه وسلم أنه قال كنت نهيتكم عن ثلاث، عن زيارة القبور فزوروها فإن في زيارتها عظة وعبرة (1) ونهيتكم عن لحوم الأضاحي فوق ثلاث فكلوا وادخروا (2)، ونهيتكم عن النبيذ في هذه الأسقية (3) فاشربوا ولا تشربوا حراما (4) (وفي لفظ ونهيتكم عن نبيذ الجر فانتبذوا في كل وعاء واجتنبوا كل مسكر) (وعنه من طريق ثان بنحوه) (5) وفيه: ونهيتكم عن زيارة القبور وإن محمدا قد أذن له في زيارة قبر أمه (6) ونهيتكم عن الظروف، وإن الظروف لا تحرم شيئًا ولا تحله

হাদীসের ব্যাখ্যা:

প্রথমদিকে কবর যিয়ারত করা নিষেধ ছিল। শাহ ওয়ালিয়্যুল্লাহ রহ.-এর মতে এর কারণ ছিল শিরকের পথ বন্ধ করা। তিনি বলেন, কবর যিয়ারত কবর পূজার দুয়ার খোলে। পরে যখন ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং মানুষের চিন্তা-চেতনায় গায়রুল্লাহর ইবাদত হারাম হওয়ার বিষয়টি বদ্ধমূল হয়ে যায়, তখন (কবরপূজার আশঙ্কা দূর হয়ে যায়, ফলে) কবর যিয়ারতের অনুমতি দিয়ে দেওয়া হয়।

এ হাদীছে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, আগে কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ ছিল বটে, কিন্তু সে নিষেধাজ্ঞা রহিত করে দেওয়া হয়েছে এবং যিয়ারত করার অনুমতি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন অনুমতি দেওয়া হয়েছে, বিভিন্ন হাদীছে তার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে এরকম-
فَإِنَّهَا تُذَكَّرُنَا الْآخِرَةَ (কারণ তা আমাদেরকে আখিরাত স্মরণ করিয়ে দেয়)। অর্থাৎ কবরস্থানে গেলে সামনাসামনি লক্ষ করা যায় যারা একদিন এ মাটির উপর বিচরণ করত, দুনিয়ার হাজারও নি'আমত ভোগ ও উপভোগ করত, কীভাবে তারা সবকিছু থেকে চিরবিদায় নিয়ে একদম খালিহাতে মাটির নিচে চলে গেছে! সেখানে তারা সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ। মাটির অন্ধকার কক্ষে সম্পূর্ণ অসহায়। যাদের চলে যাওয়া পুরোনো হয়ে গেছে, তারা তো মাটিতে মিশেই গেছে। একদিন আমারও এ দশা হবে। অতএব শুধু শুধু কেন লম্বা-চওড়া স্বপ্নের জাল বোনা? এভাবে চিন্তা করতে থাকলে দুনিয়ার লোভ-লালসা ঘুচে যায় এবং মন আখিরাতের দিকে ঝোঁকে। মন আখিরাতমুখী হলে আমলে তার আছর পড়ে। তখন মন্দকাজের প্রবণতা কমে এবং সৎকাজের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। সৎকাজ দ্বারাই আখিরাতে মুক্তিলাভ হয়। সুতরাং কবর যিয়ারত আখিরাতের মুক্তিলাভের পক্ষে খুব সহায়ক। তাই এটা মাঝেমধ্যেই করা উচিত।

কবর যিয়ারতের এ অনুমতি নারী-পুরুষ সকলের জন্যই। হযরত ফাতিমা রাযি. প্রতি জুমু'আর দিন হযরত হামযা রাযি.-এর কবর যিয়ারত করতে যেতেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কবর যিয়ারতে গিয়ে কী বলব? তিনি বলেছিলেন-
قُوْلِي : السَّلَامُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلَاحِقُوْن
‘তুমি বলবে, হে মুমিন ও মুসলিম কবরবাসীগণ! তোমাদের প্রতি সালাম। আল্লাহ তা'আলা আমাদের মধ্যে যারা অগ্রগামী ও যারা পশ্চাদবর্তী, সকলের প্রতি দয়া করুন। ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সঙ্গে মিলিত হব।’(সহীহ মুসলিম: ৯৭৪; মুসনাদে আহমাদ: ২৫৮৫৫; সহীহ ইবন হিব্বান: ৭১১০; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৬৭১২; সুনানে নাসাঈ ২০৩৭; তাবারানী, আদ-দু'আ: ১২৪৬)

কোনও কোনও হাদীছে যে মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারতের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায়, সে নিষেধাজ্ঞা সকলের জন্য সাধারণ নয়। তা কেবল তাদের জন্যই প্রযোজ্য, যারা বারবার কবরস্থানে যায়, সেখানে গিয়ে বিলাপ করে, পর্দারও বরখেলাফ করে ও নানারকম সীমালঙ্ঘনে লিপ্ত হয়। যারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয় এবং কোনওরকম সীমালঙ্ঘনে লিপ্ত হয় না, এরকম মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারত নিষেধ নয়। কবর যিয়ারতের যে দীনী উপকারিতা, তা যেমন পুরুষের জন্য প্রয়োজন, তেমনি নারীদের জন্যও প্রয়োজন বটে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

দুনিয়ার মোহ ঘুচানো ও আখিরাতের ফিকির বাড়ানোর লক্ষ্যে মাঝেমাঝে কবর যিয়ারত করা চাই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান