কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ
৫. হজ্ব আদায়ের নিয়মাবলীর বিবরণ
হাদীস নং: ১৮৭১
আন্তর্জাতিক নং: ১৮৭৩
৪৫. হাজরে আসওয়াদে চুমু দেয়া।
১৮৭১. মুহাম্মাদ ইবনে কাসীর (রাহঃ) ...... উমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি হাজরে আসওয়াদের নিকটবর্তী হয়ে তাতে চুমু দেন এবং বলেন, তুমি একটি পাথর মাত্র, তোমার মধ্যে উপকার বা ক্ষতি করার কোন ক্ষমতা নেই। যদি আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে তোমায় চুমু দিতে না দেখতাম তবে আমিও তোমায় চুমু দিতাম না।
باب فِي تَقْبِيلِ الْحَجَرِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ، أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَابِسِ بْنِ رَبِيعَةَ، عَنْ عُمَرَ، أَنَّهُ جَاءَ إِلَى الْحَجَرِ فَقَبَّلَهُ فَقَالَ إِنِّي أَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ لاَ تَنْفَعُ وَلاَ تَضُرُّ وَلَوْلاَ أَنِّي رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
'হাজারে আসওয়াদ' মানে কালো পাথর। বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা জানা যায়, এটি জান্নাতের পাথর। এটি সাদা ও উজ্জ্বল ছিল। পাপী মানুষের ক্রমাগত চুমুর কারণে ধীরে ধীরে এর উজ্জ্বলতা কমতে থাকে এবং একপর্যায়ে এর সাদা রঙ সম্পূর্ণ লোপ পেয়ে যায়। পরিশেষে পাথরটি কালো হয়ে যায়। যুগ যুগ এভাবে চলতে থাকার পর এর সাদা রঙের কথা মানুষ ভুলে যায় এবং তারা এর নাম দিয়ে দেয় হাজারে আসওয়াদ বা কালো পাথর। যদি হাদীছে এর সাদা বর্ণের কথা জানানো না হত, তবে আমরা কোনওদিন জানতে পারতাম না যে, এটি একটি সাদা পাথর ছিল।
মুহিব্ব তাবারী রহ. বলেন, হাজারে আসওয়াদটি এভাবে কালো থেকে যাওয়ার মধ্যে প্রকৃত চক্ষুষ্মান ব্যক্তির জন্য অনেক বড় শিক্ষা আছে। তা এই যে, মানুষের পাপের স্পর্শে যদি একটি জড় সাদা পাথর কালো হয়ে যেতে পারে, তবে মানুষের কলব ও আত্মায় কেন পাপের কালো দাগ লাগবে না? অবশ্যই লাগবে; বরং পাথরের চেয়ে আরও বেশিই লাগবে। সহীহ হাদীছ দ্বারাও জানা যায়, পাপের কারণে মানুষের কলবে কালো দাগ পড়ে যায়। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে সবরকম পাপাচার থেকে হেফাজত করুন- আমীন।
হাজারে আসওয়াদে চুমু দেওয়া কা'বা ঘর তাওয়াফের একটি সুন্নত আমল। সরাসরি চুমু দেওয়া না গেলে হাত দিয়ে ইশারা করে সে হাতে চুমু দিলেই সুন্নত আদায় হয়ে যায়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও এবং সাহাবায়ে কিরামও এ আমল করেছেন। কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, যারা এ সুন্নতের ওপর আমল করে, কিয়ামতের দিন এ পাথরটি তাদের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে।
এ সুন্নতের অনুসরণে একবার হযরত উমর রাযি. হাজারে আসওয়াদে চুমু দিতে গিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন, এ হাদীছে তা বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, আমি জানি তুমি একটা পাথর মাত্র। তুমি কোনও উপকারও করতে পার না এবং অপকারও করতে পার না। আমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তোমাকে চুমু দিতে না দেখতাম, তবে আমি তোমাকে চুমু দিতাম না।
প্রশ্ন হতে পারে, হযরত উমর রাযি. এ কথা কেন বলেছিলেন? ইমাম তাবারী রহ. বলেন, তিনি এ কথা বলেছিলেন মানুষকে সতর্ক করার জন্য। কেননা মানুষ মূর্তিপূজা ছেড়েছে খুব বেশি দিন হয়নি। তাই তিনি আশঙ্কা বোধ করেছিলেন, অজ্ঞ লোকেরা মনে করতে পারে কালো পাথরে চুমু দেওয়ার দ্বারা পাথরকে সম্মান জানানো উদ্দেশ্য, যেমনটা জাহিলী যুগে করা হত। তা করা হত এ কারণে যে, মনে করা হত পাথর ও মূর্তি উপকার ও অপকার করার ক্ষমতা রাখে। এ জাতীয় ধারণা যাতে কেউ না করে, তাই তিনি এ বক্তব্য দ্বারা মানুষকে জানিয়ে দিলেন যে, পাথরে চুমু দেওয়া হয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণার্থে। এজন্য নয় যে, সে নিজে কোনও উপকার বা অপকার করতে পারে।
নাসাঈ শরীফের এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও হাজারে আসওয়াদে চুমু দেওয়ার পর অনুরূপ কথা বলেছিলেন আর এভাবে তিনি পৌত্তলিক আকীদা বিশ্বাসের মূলোৎপাটন করেছিলেন।
হযরত উমর রাযি. যে বলেছেন- আমি জানি তুমি একটা পাথর মাত্র। তুমি কোনও উপকারও করতে পার না এবং অপকারও করতে পার না। আমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তোমাকে চুমু দিতে না দেখতাম, তবে আমি তোমাকে চুমু দিতাম না- তাঁর এ কথাটি শরী'আতের অনুসরণের ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি মূলনীতি। শরী'আত আমাদেরকে যে সকল আদেশ-নিষেধ করেছে আমরা তার হিকমত ও তাৎপর্য বুঝি বা না-ই বুঝি, সর্বাবস্থায় আমাদের কর্তব্য তা পালন করে যাওয়া। ব্যস আমরা যখন জানতে পারলাম এটি শরী'আতের হুকুম, তখন একজন মুসলিম হিসেবে তা পালন করে যাওয়াই আমার কাজ। এভাবে শরী'আতের সামনে আত্মনিবেদিত থাকার নামই ইসলাম। যে ব্যক্তি বিনাবাক্যে শরী'আতের হুকুম শিরোধার্য করে সেই মুসলিম।
একটা পাথর কোনও উপকারও করতে পারে না, অপকারও করতে পারে না, তা সত্ত্বেও মুসলিমগণ তাতে চুমু দেয় কেন? হযরত উমর রাযি. তাঁর বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তা দেয় কেবল এ কারণে যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাথরটিতে চুমু দিয়েছিলেন। শরী'আতের যাবতীয় বিধানেই কেবল এটাই লক্ষণীয় যে, তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের হুকুম আর সে কারণেই আমরা তা পালন করব। তার ভেতর কী হিকমত ও তাৎপর্য নিহিত আছে তা দেখা আমাদের মূল কাজ নয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায় হাজারে আসওয়াদে চুমু দেওয়া সুন্নত।
খ. আরও জানা যায়, হাজারে আসওয়াদ নিজে কারও কোনও উপকার বা অপকার করার ক্ষমতা রাখে না। এতে চুমু দেওয়া হয় কেবলই সুন্নতের অনুসরণার্থে।
গ. এ হাদীছের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে, শরী'আতের কোনও বিধানের অনুসরণ করার জন্য সে বিধানটির হিকমত ও তাৎপর্য বুঝতে পারা শর্ত নয়। বরং কেবল এতটুকু জানাই যথেষ্ট যে, সেটি শরী'আতের বিধান।
ঘ. কোনও দীনী ব্যক্তিত্বের কোনও কাজ দ্বারা যদি জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে, তবে তার কর্তব্য কাজটির স্বরূপ ব্যাখ্যা করে দেওয়া, যাতে তারা বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে যায়, যেমন হযরত উমর রাযি. হাজারে আসওয়াদে চুমু দেওয়ার হাকীকত ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন।
মুহিব্ব তাবারী রহ. বলেন, হাজারে আসওয়াদটি এভাবে কালো থেকে যাওয়ার মধ্যে প্রকৃত চক্ষুষ্মান ব্যক্তির জন্য অনেক বড় শিক্ষা আছে। তা এই যে, মানুষের পাপের স্পর্শে যদি একটি জড় সাদা পাথর কালো হয়ে যেতে পারে, তবে মানুষের কলব ও আত্মায় কেন পাপের কালো দাগ লাগবে না? অবশ্যই লাগবে; বরং পাথরের চেয়ে আরও বেশিই লাগবে। সহীহ হাদীছ দ্বারাও জানা যায়, পাপের কারণে মানুষের কলবে কালো দাগ পড়ে যায়। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে সবরকম পাপাচার থেকে হেফাজত করুন- আমীন।
হাজারে আসওয়াদে চুমু দেওয়া কা'বা ঘর তাওয়াফের একটি সুন্নত আমল। সরাসরি চুমু দেওয়া না গেলে হাত দিয়ে ইশারা করে সে হাতে চুমু দিলেই সুন্নত আদায় হয়ে যায়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও এবং সাহাবায়ে কিরামও এ আমল করেছেন। কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, যারা এ সুন্নতের ওপর আমল করে, কিয়ামতের দিন এ পাথরটি তাদের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে।
এ সুন্নতের অনুসরণে একবার হযরত উমর রাযি. হাজারে আসওয়াদে চুমু দিতে গিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন, এ হাদীছে তা বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, আমি জানি তুমি একটা পাথর মাত্র। তুমি কোনও উপকারও করতে পার না এবং অপকারও করতে পার না। আমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তোমাকে চুমু দিতে না দেখতাম, তবে আমি তোমাকে চুমু দিতাম না।
প্রশ্ন হতে পারে, হযরত উমর রাযি. এ কথা কেন বলেছিলেন? ইমাম তাবারী রহ. বলেন, তিনি এ কথা বলেছিলেন মানুষকে সতর্ক করার জন্য। কেননা মানুষ মূর্তিপূজা ছেড়েছে খুব বেশি দিন হয়নি। তাই তিনি আশঙ্কা বোধ করেছিলেন, অজ্ঞ লোকেরা মনে করতে পারে কালো পাথরে চুমু দেওয়ার দ্বারা পাথরকে সম্মান জানানো উদ্দেশ্য, যেমনটা জাহিলী যুগে করা হত। তা করা হত এ কারণে যে, মনে করা হত পাথর ও মূর্তি উপকার ও অপকার করার ক্ষমতা রাখে। এ জাতীয় ধারণা যাতে কেউ না করে, তাই তিনি এ বক্তব্য দ্বারা মানুষকে জানিয়ে দিলেন যে, পাথরে চুমু দেওয়া হয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণার্থে। এজন্য নয় যে, সে নিজে কোনও উপকার বা অপকার করতে পারে।
নাসাঈ শরীফের এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও হাজারে আসওয়াদে চুমু দেওয়ার পর অনুরূপ কথা বলেছিলেন আর এভাবে তিনি পৌত্তলিক আকীদা বিশ্বাসের মূলোৎপাটন করেছিলেন।
হযরত উমর রাযি. যে বলেছেন- আমি জানি তুমি একটা পাথর মাত্র। তুমি কোনও উপকারও করতে পার না এবং অপকারও করতে পার না। আমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তোমাকে চুমু দিতে না দেখতাম, তবে আমি তোমাকে চুমু দিতাম না- তাঁর এ কথাটি শরী'আতের অনুসরণের ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি মূলনীতি। শরী'আত আমাদেরকে যে সকল আদেশ-নিষেধ করেছে আমরা তার হিকমত ও তাৎপর্য বুঝি বা না-ই বুঝি, সর্বাবস্থায় আমাদের কর্তব্য তা পালন করে যাওয়া। ব্যস আমরা যখন জানতে পারলাম এটি শরী'আতের হুকুম, তখন একজন মুসলিম হিসেবে তা পালন করে যাওয়াই আমার কাজ। এভাবে শরী'আতের সামনে আত্মনিবেদিত থাকার নামই ইসলাম। যে ব্যক্তি বিনাবাক্যে শরী'আতের হুকুম শিরোধার্য করে সেই মুসলিম।
একটা পাথর কোনও উপকারও করতে পারে না, অপকারও করতে পারে না, তা সত্ত্বেও মুসলিমগণ তাতে চুমু দেয় কেন? হযরত উমর রাযি. তাঁর বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তা দেয় কেবল এ কারণে যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাথরটিতে চুমু দিয়েছিলেন। শরী'আতের যাবতীয় বিধানেই কেবল এটাই লক্ষণীয় যে, তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের হুকুম আর সে কারণেই আমরা তা পালন করব। তার ভেতর কী হিকমত ও তাৎপর্য নিহিত আছে তা দেখা আমাদের মূল কাজ নয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায় হাজারে আসওয়াদে চুমু দেওয়া সুন্নত।
খ. আরও জানা যায়, হাজারে আসওয়াদ নিজে কারও কোনও উপকার বা অপকার করার ক্ষমতা রাখে না। এতে চুমু দেওয়া হয় কেবলই সুন্নতের অনুসরণার্থে।
গ. এ হাদীছের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে, শরী'আতের কোনও বিধানের অনুসরণ করার জন্য সে বিধানটির হিকমত ও তাৎপর্য বুঝতে পারা শর্ত নয়। বরং কেবল এতটুকু জানাই যথেষ্ট যে, সেটি শরী'আতের বিধান।
ঘ. কোনও দীনী ব্যক্তিত্বের কোনও কাজ দ্বারা যদি জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে, তবে তার কর্তব্য কাজটির স্বরূপ ব্যাখ্যা করে দেওয়া, যাতে তারা বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে যায়, যেমন হযরত উমর রাযি. হাজারে আসওয়াদে চুমু দেওয়ার হাকীকত ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
