আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ
২১. অধ্যায়ঃ সদ্ব্যবহার
হাদীস নং: ৩৯১১
অধ্যায়ঃ সদ্ব্যবহার
দীনী ভাই ও নেক্কার লোকের সাথে সাক্ষাৎকারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন
৩৯১১. হযরত আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি তার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে এক গ্রামে গেল। আল্লাহ তাঁর সম্মানে একজন ফিরিশতা প্রেরণ করেন। এরপর যখন ফিরিশতা তার কাছে এসে বলল: তুমি কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা কর? তখন সে বলল: আমি আমার ভাইয়ের সাথে এই গ্রামে সাক্ষাৎ করার জন্য যাচ্ছি, ফিরিশতা বলল: তোমার উপর তার এমন কোন দয়া আছে কি যে, তুমি তার প্রতিদান দিতে যাচ্ছ? সে বললঃ না। তবে আমি তাকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালবাসি। সে বলল: আমি তোমার নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন দূত। আমি তোমাকে সুসংবাদ দিতে এসেছি যে, তুমি যেরূপ তাকে ভালবাস, অনুরূপ আল্লাহ্ও তোমাকে ভালবাসেন।
(মুসলিম বর্ণিত।
المدرجة রাস্তা, পথ।
تربها তুমি সেই নি'আমত প্রাপ্ত হলে এবং তুমি তার প্রতিদান দিতে যাচ্ছ।)
(মুসলিম বর্ণিত।
المدرجة রাস্তা, পথ।
تربها তুমি সেই নি'আমত প্রাপ্ত হলে এবং তুমি তার প্রতিদান দিতে যাচ্ছ।)
كتاب البر والصلة
التَّرْغِيب فِي زِيَارَة الإخوان وَالصَّالِحِينَ وَمَا جَاءَ فِي إكرام الزائرين
3911 - وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِي ﷺ أَنَّ رَجُلاً زَارَ أَخَالَهُ فِي قَرْيَةٍ ، فَأَرْصَدَ اللهُ تَعَالَى عَلَى مَدْرَجَتِهِ مَلَكًا ، فَلَمَّا أَتَى عَلَيْهِ قَالَ : أَيْنَ تُرِيدُ ؟ قَالَ : أُرِيدُ أَخَالِي هِي هَذِهِ الْقَرْيَةِ ، قَالَ هَلْ لَكَ عَلَيْهِ مِنْ نِعْمَةٍ تَرَبُّهَا ، قَالَ : لا ، غَيْرَ أَنِّي أَحْبَبْتُهُ فِي اللَّهِ - قَالَ : فَإِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكَ بِأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَبَّكَ كَا أَحْبَبْتَهُ فِيهِ -
رواه مسلم -
[المدرجة] بفتح الميم والراء : الطريق [وقوله : تربها ] : أى تقوم بها ، ونسعى في صلاحها -
رواه مسلم -
[المدرجة] بفتح الميم والراء : الطريق [وقوله : تربها ] : أى تقوم بها ، ونسعى في صلاحها -
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছ দ্বারা জানা যায়, কোনও মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করতে যাওয়া অনেক বড় ফযীলতের কাজ। দেখা-সাক্ষাত দ্বারা পরস্পরে ভালোবাসা সৃষ্টি হয় ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। কোনও ব্যক্তি যখন অন্য কোনও পল্লীতে বসবাসকারী তার ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যায়, আল্লাহ তাআলা তার যাত্রাপথে একজন ফিরিশতা নিযুক্ত করেন, সে ভাই তার রক্ত সম্পর্কিত ভাই হোক বা ইসলামী ভাই। ফিরিশতাকে নিযুক্ত করার উদ্দেশ্য বিপদ-আপদ থেকে তাকে হেফাজত করা এবং সে সাক্ষাতের কারণে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে তাকে ভালোবাসার সুসংবাদ দেওয়া।
আলোচ্য হাদীছটিতে মুমিন ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাওয়ার একটি ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। কোনও এক কালে এক ব্যক্তি অন্য পল্লীতে বসবাসরত তার ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাচ্ছিল। পথে তার জন্য নিযুক্ত সেই ফিরিশতা যেখানে অবস্থান করছিল, লোকটি যখন সেখানে পৌঁছাল, তখন ফিরিশতা তাকে জিজ্ঞেস করল সে কোথায় যাচ্ছে। সে তার ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করার উদ্দেশ্যে যাওয়ার কথা বললে ফিরিশতা বলল-
هَلْ لَكَ علَيْهِ مِنْ نِعْمَةٍ تَرُبُّهَا عَلَيْهِ؟
(তার দায়িত্বে কি আপনার কোনও সম্পদ আছে, যার দেখাশোনা করার উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন?)। অর্থাৎ আপনার কোনও সম্পদ তার দায়িত্বে ন্যস্ত আছে কি বা তার কাছে আপনার কোনও সম্পদ পাওনা আছে কি, যা এখনও সে আপনাকে বুঝিয়ে দেয়নি আর আপনি সে সম্পদের দেখাশোনা করতে এবং সে সম্পর্কে তার কাছে খোঁজখবর নিতে যাচ্ছেন?
সে উত্তরে জানাল যে, তার যাওয়ার উদ্দেশ্য তা নয়। সে পার্থিব কোনও উদ্দেশ্যে তার কাছে যাচ্ছে না। বরং সে তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে আর সেই ভালোবাসার তাগিদেই সে তার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে। তার এ কথা শুনে ফিরিশতা এই বলে তাকে সুসংবাদ শোনাল যে-
فَإِنِّي رَسُول اللَّهِ إِلَيْكَ بأَنَّ اللَّه قَدْ أَحبَّكَ كَما أَحْببْتَهُ فِيهِ
(আমি আপনার কাছে এই মর্মে আল্লাহর বার্তাবাহক যে, আপনি যেমন তাঁর জন্য এই ব্যক্তিকে ভালোবেসেছেন, তেমনি আল্লাহ তা'আলাও আপনাকে ভালোবাসেন)। এটা আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসা এবং সেই ভালোবাসার তাগিদে তাকে দেখতে যাওয়ার এক বিশাল পুরস্কার। আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসা এবং আল্লাহরই জন্য কাউকে পরিত্যাগ করা ঈমানের অঙ্গ। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ أَحَبَّ لِلَّهِ ، وَأَبْغَضَ لِلَّهِ ، وَأَعْطَى لِلَّهِ، وَمَنَعَ لِلَّهِ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ الْإِيْمَانَ
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, আল্লাহরই জন্য কাউকে অপসন্দ করে, কাল্লাহরই জন্য দেয় এবং আল্লাহরই জন্য দেওয়া হতে বিরত থাকে, সে তার ঈমান পরিপূর্ণ করল।২৩৩
অপর এক হাদীছে আছে-
حَقَّتْ مَحَبَّنِي لِلْمُتَحَايِّينَ فِي وَحَقَّتْ مَحَبَّنِي لِلْمُتَرَاوِرِيْنَ فِي
‘আল্লাহ তাআলা বলেন, ওই ব্যক্তিদের জন্য আমার মহব্বত অবধারিত হয়ে যায়, যারা পরস্পরকে আমারই জন্য ভালোবাসে, ওই ব্যক্তিদের জন্য আমার মহব্বত অবধারিত হয়ে যায়, যারা আমারই জন্য পরস্পরে সাক্ষাত করে।২৩৪
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মুমিন ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাওয়া একটি বড় নেক আমল।
খ. মুমিন ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাওয়া উচিত কেবলই আল্লাহর মহব্বতে, দুনিয়াবী স্বার্থে নয় ।
গ. কারও সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলে যে সময় ও অর্থ খরচ হয়, তাকে অহেতুক খরচ মনে করা উচিত নয়। কেননা এর বিনিময়ে যা অর্জিত হয় তা অনেক বড়- আল্লাহর মহব্বত।
২৩৩. সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৬৮১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ৩৪৭৩০; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৭৬১৩; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৬০৫; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৪৬৯
২৩৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২২০৮০; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা, হাদীছ নং ৩৪১০০; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫৭৭; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ১৫৪;
বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৩১০৬৮
আলোচ্য হাদীছটিতে মুমিন ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাওয়ার একটি ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। কোনও এক কালে এক ব্যক্তি অন্য পল্লীতে বসবাসরত তার ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাচ্ছিল। পথে তার জন্য নিযুক্ত সেই ফিরিশতা যেখানে অবস্থান করছিল, লোকটি যখন সেখানে পৌঁছাল, তখন ফিরিশতা তাকে জিজ্ঞেস করল সে কোথায় যাচ্ছে। সে তার ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করার উদ্দেশ্যে যাওয়ার কথা বললে ফিরিশতা বলল-
هَلْ لَكَ علَيْهِ مِنْ نِعْمَةٍ تَرُبُّهَا عَلَيْهِ؟
(তার দায়িত্বে কি আপনার কোনও সম্পদ আছে, যার দেখাশোনা করার উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন?)। অর্থাৎ আপনার কোনও সম্পদ তার দায়িত্বে ন্যস্ত আছে কি বা তার কাছে আপনার কোনও সম্পদ পাওনা আছে কি, যা এখনও সে আপনাকে বুঝিয়ে দেয়নি আর আপনি সে সম্পদের দেখাশোনা করতে এবং সে সম্পর্কে তার কাছে খোঁজখবর নিতে যাচ্ছেন?
সে উত্তরে জানাল যে, তার যাওয়ার উদ্দেশ্য তা নয়। সে পার্থিব কোনও উদ্দেশ্যে তার কাছে যাচ্ছে না। বরং সে তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে আর সেই ভালোবাসার তাগিদেই সে তার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে। তার এ কথা শুনে ফিরিশতা এই বলে তাকে সুসংবাদ শোনাল যে-
فَإِنِّي رَسُول اللَّهِ إِلَيْكَ بأَنَّ اللَّه قَدْ أَحبَّكَ كَما أَحْببْتَهُ فِيهِ
(আমি আপনার কাছে এই মর্মে আল্লাহর বার্তাবাহক যে, আপনি যেমন তাঁর জন্য এই ব্যক্তিকে ভালোবেসেছেন, তেমনি আল্লাহ তা'আলাও আপনাকে ভালোবাসেন)। এটা আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসা এবং সেই ভালোবাসার তাগিদে তাকে দেখতে যাওয়ার এক বিশাল পুরস্কার। আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসা এবং আল্লাহরই জন্য কাউকে পরিত্যাগ করা ঈমানের অঙ্গ। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ أَحَبَّ لِلَّهِ ، وَأَبْغَضَ لِلَّهِ ، وَأَعْطَى لِلَّهِ، وَمَنَعَ لِلَّهِ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ الْإِيْمَانَ
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, আল্লাহরই জন্য কাউকে অপসন্দ করে, কাল্লাহরই জন্য দেয় এবং আল্লাহরই জন্য দেওয়া হতে বিরত থাকে, সে তার ঈমান পরিপূর্ণ করল।২৩৩
অপর এক হাদীছে আছে-
حَقَّتْ مَحَبَّنِي لِلْمُتَحَايِّينَ فِي وَحَقَّتْ مَحَبَّنِي لِلْمُتَرَاوِرِيْنَ فِي
‘আল্লাহ তাআলা বলেন, ওই ব্যক্তিদের জন্য আমার মহব্বত অবধারিত হয়ে যায়, যারা পরস্পরকে আমারই জন্য ভালোবাসে, ওই ব্যক্তিদের জন্য আমার মহব্বত অবধারিত হয়ে যায়, যারা আমারই জন্য পরস্পরে সাক্ষাত করে।২৩৪
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মুমিন ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাওয়া একটি বড় নেক আমল।
খ. মুমিন ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাওয়া উচিত কেবলই আল্লাহর মহব্বতে, দুনিয়াবী স্বার্থে নয় ।
গ. কারও সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলে যে সময় ও অর্থ খরচ হয়, তাকে অহেতুক খরচ মনে করা উচিত নয়। কেননা এর বিনিময়ে যা অর্জিত হয় তা অনেক বড়- আল্লাহর মহব্বত।
২৩৩. সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৬৮১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ৩৪৭৩০; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৭৬১৩; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৬০৫; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৪৬৯
২৩৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২২০৮০; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা, হাদীছ নং ৩৪১০০; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫৭৭; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ১৫৪;
বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৩১০৬৮
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)