আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২৬. অধ্যায়ঃ জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা

হাদীস নং: ৫৫৬৬
জাহান্নাম থেকে ভীতি প্রদর্শন, আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর ফযল ও করমে আমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করুন।
৫৫৬৬. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে এমন একটি ঘোড়া আনীত হল, যে তার দৃষ্টির শেষ সীমায় প্রতিটি পদক্ষেপ রাখে। (তাতে আরোহণ করে) তিনি সফর করলেন এবং তার সাথে জিব্রীল (আ) ও তাঁর সাথে সফর করলেন। তখন তিনি এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে উপনীত হলেন যারা একদিন ফসল বুনে এবং ঐ একই দিনে কাটে। যখন তারা ফসল কাটে, তখন তা পূর্বের মত হয়ে যায়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে জিব্রীল! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা আল্লাহর পথের মুজাহিদ। তাদের নেক আমল সাতশ' গুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয় এবং সে যা ব্যয় করেছে, আল্লাহ্ তা'আলা তাকে তার বদলা দিয়ে দেন। এরপর এমন সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে উপনীত হলেন যাদের মস্তক পাথর দ্বারা চূর্ণ করা হচ্ছে। যখন চূর্ণ করা হয়, তখন আবার পূর্বে যেমন ছিল তেমন হয়ে যায় এবং এর কোন চিহ্ন তাদের কাছে থাকে না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে জিব্রীল, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা হচ্ছে তারা যাদের মাথা সালাতের ব্যাপারে ভারী থাকত। এরপর তিনি এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে গেলেন, যাদের পেছনে রয়েছে কিছু নথিপত্র এবং সামনে রয়েছে। কিছু নথিপত্র। তারা চতুষ্পদ জন্তুর চরার মত 'দারী' ও 'যাক্কুম নামক কাটাবৃক্ষ এবং জাহান্নামের গরম পাথর চরে চরে খাচ্ছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে জিবরীল! এগুলো কি? তিনি বললেন, এরা হচ্ছে তারা, যারা তাদের সম্পদের যাকাত আদায় করত না। আল্লাহ তাদের উপর যুলুম করেন নি এবং আল্লাহ্ বান্দাদের প্রতি যুলুমকারী নন। তারপর তিনি এমন এক লোকের কাছে গেলেন, যে এক বিরাট লাকড়ীর বোঝা একত্রিত করেছে, কিন্তু সে তা বহন করতে সক্ষম নয়। অথচ সে বোঝা আরও বৃদ্ধি করতে চায়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে জিব্রীল, আবার কি? তিনি বললেন এ ব্যক্তি আপনার উম্মতের এমন এক লোক, যার কাছে মানুষের আমানত রয়েছে, কিন্তু সে তা আদায় করতে সক্ষম নয়, অথচ সে তা আরও বৃদ্ধি করতে চায়।
তারপর তিনি এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে গেলেন, যাদের ঠোঁট ও জিহ্বা লোহার কাঁচি দ্বারা কাটা হচ্ছে।
যতবার কাটা হয়, ততবার পূর্বে যেমন ছিল তেমন হয়ে যায় এবং তাদের কাছে এর চিহ্ন থাকে না। তিনি
জিজ্ঞেস করলেন, হে জিবরীল এরা কারা? তিনি বললেন, ফিতনার বক্তৃতা প্রদানকারীগণ।
তারপর তিনি একটি ছোট গর্তের কাছে গেলেন, তা থেকে একটি প্রকাণ্ড ষাঁড় বের হচ্ছে। অতঃপর ষাঁড়টি যেখান থেকে বের হয়েছে, সেখানে প্রবেশ করার জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু সে তাতে সক্ষম হচ্ছে না। তিনি
জিজ্ঞেস করলেন, হে জিব্রীল, এটা কি? তিনি বললেন, এলোক বড় কথা বলে এবং তজ্জন্য লজ্জিত হয়। অতঃপর সে তার কথা ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছা করে, কিন্তু সক্ষম হয় না।
এরপর তিনি একটি উপত্যকায় গেলেন এবং সেখানে সুগন্ধি পেলেন ও মিশকের সুগন্ধি ও শব্দ শুনতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি? জিব্রীল বললেন, এটা জান্নাতের শব্দ। জান্নাত বলছে, প্রভু। আমার মালিক ও আমাকে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা আমাকে প্রদান করুন। কেননা, আমার গাছ-গাছালি, রেশম, সুন্দুস, ইস্স্তাবরাক, মূল্যবান পাথর, মারজান, রূপা, সোনা, পানপাত্র রাশি, তৈজসপত্র, লোটা, ফলমূল, মধু, পানি, দুধ ও শরাব অধিক পরিমাণে হয়েছে। তুমি আমাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছ তা আমাকে দান কর।
আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, তোমার জন্য রয়েছে প্রতিটি মুসলিম পুরুষ, মুসলিম নারী ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী এবং যারা আমার প্রতি ও আমার রাসূলদের প্রতি ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, আমার সাথে কিছু শরীক করেনি এবং আমার পরিবর্তে কোন শরীক গ্রহণ করে নি, সে নিরাপদে থাকবে, যে আমার কাছে চায়, আমি তাকে দেই, যে আমাকে ঋণ দেয়, আমি তাকে তার বিনিময় দেই এবং যে আমার প্রতি ভরসা করে, আমি তার জন্য যথেষ্ট হই। নিশ্চয় আমি আল্লাহ্। আমি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। আমার প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ হয় না। মু'মিনগণ সফলকাম হয়েছে। সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ্ তা'আলা বরকতময়। তখন জান্নাত বলে, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি।
তারপর তিনি আরেকটি উপত্যকায় গেলেন এবং সেখানে ভয়ঙ্কর শব্দ শুনতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে জিব্রীল, এটা কিসের শব্দ? তিনি বললেন, এটা জাহান্নামের শব্দ। সে বলে হে প্রভু! আমার অধিবাসীকে আমার কাছে দিন এবং আমাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা পূর্ণ করুন, কেননা আমার জিঞ্জির, বেড়ি, প্রজ্জলিত অগ্নি শিখা, গরম পানি, জাহান্নামীদের পুঁজ ও শরীরের ময়লার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার গভীরতা অনেক চেয়েছে, আমার তাপ তীব্রতর হয়েছে, আমাকে আপনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা পূর্ণ করুন। আল্লাহ বলেন, তোমার জন্য রয়েছে প্রতিটি মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারী, পাপাচারী পুরুষ ও পাপাচারী নারী এবং প্রত্যেক যালিম ব্যক্তি, যে হিসাবের দিবসের প্রতি ঈমান রাখে না। জাহান্নাম বলে, আমি সন্তুষ্টি হয়েছি।...... অতঃপর মি'রাজের কাহিনী, সালাত ফরয হওয়া ইত্যাদি বিষয়ে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।
(বাযযার রাবী ইব্‌ন আনাস-এর সূত্রে আবুল আলিয়া অথবা অন্য কারও মধ্যস্থতায় আবু হুরায়রা (রা) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
التَّرْهِيب من النَّار أعاذنا الله مِنْهَا بمنه وَكَرمه
5566- وَعَن أبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم أُتِي بفرس يَجْعَل كل خطو مِنْهُ أقْصَى بَصَره فَسَار وَسَار مَعَه جِبْرِيل عَلَيْهِ السَّلَام فَأتى على قوم يزرعون فِي يَوْم ويحصدون فِي يَوْم كلما حصدوا عَاد كَمَا كَانَ فَقَالَ يَا جِبْرِيل من هَؤُلَاءِ قَالَ هَؤُلَاءِ المجاهدون فِي سَبِيل الله تضَاعف لَهُم الْحَسَنَة بسبعمائة ضعف وَمَا أَنْفقُوا من شَيْء فَهُوَ يخلفه ثمَّ أَتَى على قوم ترضخ رؤوسهم بالصخر كلما رضخت عَادَتْ كَمَا كَانَت وَلَا يفتر عَنْهُم من ذَلِك شَيْء قَالَ يَا جِبْرِيل من هَؤُلَاءِ قَالَ هَؤُلَاءِ الَّذين تثاقلت رؤوسهم عَن الصَّلَاة ثمَّ أَتَى على قوم على أدبارهم رقاع وعَلى أقبالهم رقاع يسرحون كَمَا تسرح الْأَنْعَام إِلَى الضريع والزقوم ورضف جَهَنَّم قَالَ مَا هَؤُلَاءِ يَا جِبْرِيل قَالَ هَؤُلَاءِ الَّذين لَا يؤدون صدقَات أَمْوَالهم وَمَا ظلمهم الله وَمَا الله بظلام للعبيد ثمَّ أَتَى على رجل قد جمع حزمة عَظِيمَة لَا يَسْتَطِيع حملهَا وَهُوَ يُرِيد أَن يزِيد عَلَيْهَا قَالَ يَا جِبْرِيل مَا هَذَا قَالَ هَذَا رجل من أمتك عَلَيْهِ أَمَانَة النَّاس لَا يَسْتَطِيع أداءها وَهُوَ يُرِيد أَن يزِيد عَلَيْهَا ثمَّ أَتَى على قوم
تقْرض شفاههم وألسنتهم بمقاريض من حَدِيد كلما قرضت عَادَتْ كَمَا كَانَت لَا يفتر عَنْهُم من ذَلِك شَيْء قَالَ يَا جِبْرِيل مَا هَؤُلَاءِ قَالَ خطباء الْفِتْنَة ثمَّ أَتَى على جُحر صَغِير يخرج مِنْهُ ثَوْر عَظِيم فيريد الثور أَن يدْخل من حَيْثُ خرج فَلَا يَسْتَطِيع قَالَ مَا هَذَا يَا جِبْرِيل قَالَ هَذَا الرجل يتَكَلَّم بِالْكَلِمَةِ الْعَظِيمَة فيندم عَلَيْهَا فيريد أَن يردهَا فَلَا يَسْتَطِيع ثمَّ أَتَى على وَاد فَوجدَ ريحًا طيبَة وَوجد ريح مسك مَعَ صَوت فَقَالَ مَا هَذَا قَالَ صَوت الْجنَّة تَقول يَا رب ائْتِنِي بأهلي وَبِمَا وَعَدتنِي فقد كثر غرسي وحريري وسندسي وإستبرقي وعبقريي ومرجاني وفضتي وذهبي وأكوابي وصحافي وأباريقي وفواكهي وعسلي ومائي ولبني وخمري ائْتِنِي بِمَا وَعَدتنِي
قَالَ لَك كل مُسلم ومسلمة وَمُؤمن ومؤمنة وَمن آمن بِي وبرسلي وَعمل صَالحا وَلم يُشْرك بِي شَيْئا وَلم يتَّخذ من دوني أندادا فَهُوَ آمن وَمن سَأَلَني أَعْطيته وَمن أَقْرضنِي جزيته وَمن توكل عَليّ كفيته إِنِّي أَنا الله لَا إِلَه إِلَّا أَنا لَا خلف لميعادي قد أَفْلح الْمُؤْمِنُونَ تبَارك الله أحسن الْخَالِقِينَ فَقَالَت قد رضيت ثمَّ أَتَى على وَاد فَسمع صَوتا مُنْكرا فَقَالَ يَا جِبْرِيل مَا هَذَا الصَّوْت قَالَ هَذَا صَوت جَهَنَّم تَقول يَا رب ائْتِنِي بأهلي وَبِمَا وَعَدتنِي فقد كثرت سلاسلي وأغلالي وسعيري وحميمي وغساقي وغسليني وَقد بعد قعري وَاشْتَدَّ حري ائْتِنِي بِمَا وَعَدتنِي قَالَ لَك كل مُشْرك ومشركة وخبيث وخبيثة وكل جَبَّار لَا يُؤمن بِيَوْم الْحساب قَالَت قد رضيت فَذكر الحَدِيث فِي قصَّة الْإِسْرَاء وَفرض الصَّلَاة وَغير ذَلِك

رَوَاهُ الْبَزَّار عَن الرّبيع بن أنس عَن أبي الْعَالِيَة أَو غَيره عَن أبي هُرَيْرَة
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব - হাদীস নং ৫৫৬৬ | মুসলিম বাংলা