আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ
২৪. অধ্যায়ঃ জানাযা
হাদীস নং: ৫১৯০
অধ্যায়ঃ জানাযা
ধৈর্যধারণের প্রতি উৎসাহ প্রদান, বিশেষত সেই ব্যক্তিকে, যে তার ধন-প্রাণে বিপদাক্রান্ত হয়েছে। বালা-মুসিবত, রোগ-ব্যাধি ও জ্বর তাপের ফযীলত এবং দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তি সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস সমূহঃ
৫১৯০. হযরত মাহমুদ ইব্ন লাবীদ থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যখন আল্লাহ্ তা'আলা কোন সম্প্রদায়কে ভালবাসেন তখন তাদেরকে মুসিবতে আক্রান্ত করেন। সুতরাং যে ধৈর্য ধরে তার ধৈর্যধারনের তাওফীক হয়। পক্ষান্তরে যে অস্থির হয়ে যায়, সে অস্থিরতার শিকার হয়।
(আহমাদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এর সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। মাহমূদ ইব্ন লাবীদ নবী (ﷺ)-কে দেখেছেন, তবে তাঁর কাছ থেকে হাদীস শোনার ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে।)
(আহমাদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এর সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। মাহমূদ ইব্ন লাবীদ নবী (ﷺ)-কে দেখেছেন, তবে তাঁর কাছ থেকে হাদীস শোনার ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে।)
كتاب الجنائز
التَّرْغِيب فِي الصَّبْر سِيمَا لمن ابْتُلِيَ فِي نَفسه أَو مَاله وَفضل الْبلَاء وَالْمَرَض والحمى وَمَا جَاءَ فِيمَن فقد بَصَره
5190- وَعَن مَحْمُود بن لبيد أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ إِذا أحب الله قوما ابْتَلَاهُم فَمن صَبر فَلهُ الصَّبْر وَمن جزع فَلهُ الْجزع
رَوَاهُ أَحْمد وَرُوَاته ثِقَات
ومحمود بن لبيد رأى النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَاخْتلف فِي سَمَاعه مِنْهُ
رَوَاهُ أَحْمد وَرُوَاته ثِقَات
ومحمود بن لبيد رأى النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَاخْتلف فِي سَمَاعه مِنْهُ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
ইহজীবনে মানুষের দ্বারা নানারকম ভুল-ত্রুটি ও পাপাচার হয়ে যায়। তার ইবাদত- বন্দেগীতে অবহেলা হয়ে যায়। মানুষের সংগে আচার-আচরণে ভুল-ত্রুটি করে ফেলে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যথাযথ ব্যবহার হয় না। নিআমতের নাশোকরী হয়ে যায়। প্রতিদিন কত রকমের পাপকর্ম হয়ে যায়, তার ইয়ত্তা নেই। বেশিরভাগই আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেন। কোনও কোনওটি ধরেন। যেগুলো ধরেন সেগুলোর ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলার নীতি হল, কোনও না কোনও কৌশলে নেককার মুমিনদের তা থেকে পবিত্র করে ফেলা হয়। আল্লাহ তাওবার তাওফীক দেন, ফলে তাওবা করে সে তা থেকে পবিত্র হয়ে যায়। অথবা তাকে কোনও মুসিবতে ফেলেন এবং তাতে সবরের তাওফিক দেন। এর মাধ্যমেও তার গুনাহ মাফ হয়।
এ হাদীছে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা যার কল্যাণ চান তাকে দুনিয়ায় নগদ শাস্তি দিয়ে দেন।
হয়তো তার অর্থ-সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি হয়, বা কোনও প্রিয়জন মারা যায়, বা সে কোনও রোগে আক্রান্ত হয় কিংবা অন্য কোনও মুসিবতে পড়ে। এটা তার প্রতি আল্লাহ তাআলার এক বিরাট রহমত। কেননা এর মাধ্যমে আল্লাহ তার পাপমোচন করেন। নগদ শাস্তির মাধ্যমে যখন পাপমোচন হয়ে যায়, তখন তার কবরে যাওয়া হয় নিষ্পাপ অবস্থায়। ফলে হাশরে আল্লাহ তাআলার সামনে পুতঃপবিত্র বান্দারূপে হাজির হবে। সে জাহান্নামের শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে জান্নাতে পৌঁছে যাবে। ভাবা যায় এটা কত বড় সৌভাগ্যের কথা! তুচ্ছ দুনিয়ায় শাস্তিভোগের বিনিময়ে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি থেকে বেঁচে গেল এবং জান্নাতলাভের মাধ্যমে অনন্ত সৌভাগ্যের অধিকারী হয়ে গেল।
আর আল্লাহ তাআলা যার অনিষ্ট চান তাকে দুনিয়ায় শাস্তিদান করেন না। সে সুখ-সাচ্ছন্দ্যে দিন কাটায় আর নিশ্চিন্তমনে পাপাচার করে যায়। দুনিয়ায় শাস্তি না পাওয়ার কারণে তার সব পাপই জমা থাকে। এর পুরোপুরি শাস্তি তাকে আখিরাতে দেওয়া হবে। এ ব্যক্তি কাফির হয়ে থাকলে জাহান্নামের অনন্তকালীন শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। যদি মুমিন হয়, তবে ঈমানের বদৌলতে একদিন জান্নাতে যাবে বটে, কিন্তু তার আগে কতকাল যে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে তার তো কোনও ঠিকানা নেই। বলাবাহুল্য, জাহান্নামের শাস্তির সংগে দুনিয়ার শাস্তির কোনও তুলনা নেই। সেখানকার এক মুহূর্তের শাস্তিও দুনিয়ার গোটা জীবনের শাস্তি অপেক্ষা কঠিন। দুনিয়ায় সারা জীবনও যদি বিপদ-আপদে থাকতে হয়, তাও কোনও না কোনওভাবে হয়তো সহ্য করা সম্ভব, কিন্তু আখিরাতের এক মুহূর্তের শাস্তিও তো সহ্য করা সম্ভব নয়। কাজেই সেই শাস্তির বদলে দুনিয়ার শাস্তিভোগ একরকম রহমতই তো বটে। আর সেই শাস্তি যথারীতি বহাল রেখে ইহজীবনে সুখ-সাচ্ছন্দ্য ভোগ চরম অকল্যাণই তো বটে। হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
«يود أهل العافية يوم القيامة حين يعطى أهل البلاء الثواب لو أن جلودهم كانت قرضت في الدنيا بالمقاريض»
অর্থ: দুনিয়ায় যারা শান্তি ও নিরাপত্তার সংগে জীবনযাপন করে, কিয়ামতের দিন তারা যখন দুনিয়ায় বিপদ-আপদ ভোগকারী লোকদেরকে প্রতিদান লাভ করতে দেখবে, তখন তারা আক্ষেপ করে বলবে, আহা! দুনিয়ায় যদি তাদের চামড়া কাঁচি দ্বারা কেটে ফেলা হত (তবে তাদের পক্ষে তা কতই না ভালো হত। আজ তারাও ওইসব লোকের মত প্রতিদানের অধিকারী হত)! –তিরমিযী হাদীস নং ২৪০২–
তবে আখিরাতের শাস্তি থেকে বাঁচার লক্ষ্যে আল্লাহ তাআলার কাছে দুনিয়ায় শাস্তি চাওয়া উচিত নয়। অজ্ঞতাবশত এক সাহাবী তা চেয়েছিলেন। ফলে তিনি কঠিন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গিয়ে দেখেন, পাখির ছানার মত তাঁর জরাজীর্ণ অবস্থা। তিনি যখন জানতে পারলেন এই সাহাবী আখিরাতের শাস্তির বদলে দুনিয়ার শাস্তি চেয়েছিলেন, তখন তাকে নিষেধ করে দেন। এবং বলেন, আল্লাহর কাছে শান্তি ও নিরাপত্তা চাও। তো শাস্তি চেয়ে নেওয়া ঠিক নয়।
আল্লাহ তাআলা নিজেই যদি দেন, তখন কর্তব্য ধৈর্যধারণ করা। যে শাস্তির সাথে ধৈর্যের তাওফীক হয়, সেই শাস্তি রহমত ও নিআমত বটে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কোনও বিপদ-আপদ দেখা দিলে মু'মিন ব্যক্তির কর্তব্য তার পক্ষে তাকে কল্যাণকর মনে করা।
খ. যে গুনাহগার ব্যক্তি আরাম-আয়েশের জীবনযাপন করে তার কর্তব্য এই ভেবে সতর্ক হওয়া যে, এটা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তাকে গুনাহে লিপ্ত থাকার অবকাশ দান কিনা।
গ. অন্যকে আরাম-আয়েশে থাকতে দেখে আক্ষেপ করা উচিত নয়; বরং নিজ কষ্টের কারণে আখিরাতে পুরস্কার লাভের জন্য আশান্বিত থাকা উচিত।
এ হাদীছে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা যার কল্যাণ চান তাকে দুনিয়ায় নগদ শাস্তি দিয়ে দেন।
হয়তো তার অর্থ-সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি হয়, বা কোনও প্রিয়জন মারা যায়, বা সে কোনও রোগে আক্রান্ত হয় কিংবা অন্য কোনও মুসিবতে পড়ে। এটা তার প্রতি আল্লাহ তাআলার এক বিরাট রহমত। কেননা এর মাধ্যমে আল্লাহ তার পাপমোচন করেন। নগদ শাস্তির মাধ্যমে যখন পাপমোচন হয়ে যায়, তখন তার কবরে যাওয়া হয় নিষ্পাপ অবস্থায়। ফলে হাশরে আল্লাহ তাআলার সামনে পুতঃপবিত্র বান্দারূপে হাজির হবে। সে জাহান্নামের শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে জান্নাতে পৌঁছে যাবে। ভাবা যায় এটা কত বড় সৌভাগ্যের কথা! তুচ্ছ দুনিয়ায় শাস্তিভোগের বিনিময়ে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি থেকে বেঁচে গেল এবং জান্নাতলাভের মাধ্যমে অনন্ত সৌভাগ্যের অধিকারী হয়ে গেল।
আর আল্লাহ তাআলা যার অনিষ্ট চান তাকে দুনিয়ায় শাস্তিদান করেন না। সে সুখ-সাচ্ছন্দ্যে দিন কাটায় আর নিশ্চিন্তমনে পাপাচার করে যায়। দুনিয়ায় শাস্তি না পাওয়ার কারণে তার সব পাপই জমা থাকে। এর পুরোপুরি শাস্তি তাকে আখিরাতে দেওয়া হবে। এ ব্যক্তি কাফির হয়ে থাকলে জাহান্নামের অনন্তকালীন শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। যদি মুমিন হয়, তবে ঈমানের বদৌলতে একদিন জান্নাতে যাবে বটে, কিন্তু তার আগে কতকাল যে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে তার তো কোনও ঠিকানা নেই। বলাবাহুল্য, জাহান্নামের শাস্তির সংগে দুনিয়ার শাস্তির কোনও তুলনা নেই। সেখানকার এক মুহূর্তের শাস্তিও দুনিয়ার গোটা জীবনের শাস্তি অপেক্ষা কঠিন। দুনিয়ায় সারা জীবনও যদি বিপদ-আপদে থাকতে হয়, তাও কোনও না কোনওভাবে হয়তো সহ্য করা সম্ভব, কিন্তু আখিরাতের এক মুহূর্তের শাস্তিও তো সহ্য করা সম্ভব নয়। কাজেই সেই শাস্তির বদলে দুনিয়ার শাস্তিভোগ একরকম রহমতই তো বটে। আর সেই শাস্তি যথারীতি বহাল রেখে ইহজীবনে সুখ-সাচ্ছন্দ্য ভোগ চরম অকল্যাণই তো বটে। হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
«يود أهل العافية يوم القيامة حين يعطى أهل البلاء الثواب لو أن جلودهم كانت قرضت في الدنيا بالمقاريض»
অর্থ: দুনিয়ায় যারা শান্তি ও নিরাপত্তার সংগে জীবনযাপন করে, কিয়ামতের দিন তারা যখন দুনিয়ায় বিপদ-আপদ ভোগকারী লোকদেরকে প্রতিদান লাভ করতে দেখবে, তখন তারা আক্ষেপ করে বলবে, আহা! দুনিয়ায় যদি তাদের চামড়া কাঁচি দ্বারা কেটে ফেলা হত (তবে তাদের পক্ষে তা কতই না ভালো হত। আজ তারাও ওইসব লোকের মত প্রতিদানের অধিকারী হত)! –তিরমিযী হাদীস নং ২৪০২–
তবে আখিরাতের শাস্তি থেকে বাঁচার লক্ষ্যে আল্লাহ তাআলার কাছে দুনিয়ায় শাস্তি চাওয়া উচিত নয়। অজ্ঞতাবশত এক সাহাবী তা চেয়েছিলেন। ফলে তিনি কঠিন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গিয়ে দেখেন, পাখির ছানার মত তাঁর জরাজীর্ণ অবস্থা। তিনি যখন জানতে পারলেন এই সাহাবী আখিরাতের শাস্তির বদলে দুনিয়ার শাস্তি চেয়েছিলেন, তখন তাকে নিষেধ করে দেন। এবং বলেন, আল্লাহর কাছে শান্তি ও নিরাপত্তা চাও। তো শাস্তি চেয়ে নেওয়া ঠিক নয়।
আল্লাহ তাআলা নিজেই যদি দেন, তখন কর্তব্য ধৈর্যধারণ করা। যে শাস্তির সাথে ধৈর্যের তাওফীক হয়, সেই শাস্তি রহমত ও নিআমত বটে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কোনও বিপদ-আপদ দেখা দিলে মু'মিন ব্যক্তির কর্তব্য তার পক্ষে তাকে কল্যাণকর মনে করা।
খ. যে গুনাহগার ব্যক্তি আরাম-আয়েশের জীবনযাপন করে তার কর্তব্য এই ভেবে সতর্ক হওয়া যে, এটা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তাকে গুনাহে লিপ্ত থাকার অবকাশ দান কিনা।
গ. অন্যকে আরাম-আয়েশে থাকতে দেখে আক্ষেপ করা উচিত নয়; বরং নিজ কষ্টের কারণে আখিরাতে পুরস্কার লাভের জন্য আশান্বিত থাকা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)