আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২২. অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার

হাদীস নং: ৪৬৪৮
অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার
ঘর-বাড়ী ইত্যাদিতে জীব-জন্তু ও পাখ-পাখালির ছবি অংকন সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন
৪৬৪৮. অপর এক রিওয়ায়াতে আছে, তিনি (আয়েশা) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমার কাছে এলেন। তখন ঘরে ছিল একটি পর্দা, তাতে ছিল কতগুলো প্রাণীর ছবি। ফলে তাঁর চেহারা মুবারক বিবর্ণ হয়ে যায়। অতঃপর তিনি পর্দাটি নিয়ে ছিড়ে ফেললেন এবং বললেন, কিয়ামতের দিন তারা সর্বাধিক শাস্তিপ্রাপ্ত লোক হবে, যারা এসব ছবি অংকন করে।
كتاب الأدب
التَّرْهِيب من تَصْوِير الْحَيَوَانَات والطيور فِي الْبيُوت وَغَيرهَا
4648- وَفِي رِوَايَة قَالَت دخل عَليّ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَفِي الْبَيْت قرام فِيهِ صور فَتَلَوَّنَ وَجهه ثمَّ تنَاول السّتْر فهتكه وَقَالَ إِن من أَشد النَّاس عذَابا يَوْم الْقِيَامَة الَّذين يصورون هَذِه الصُّور

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, এ হাদীছের ঘটনাটি তাবুকের যুদ্ধকালীন। কোনও কোনও বর্ণনায় খায়বার যুদ্ধের কথাও বলা হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধে চলে যাওয়ার পর হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. তাঁর ঘরের আঙিনায় একটি পর্দা টানিয়েছিলেন। সে পর্দায় প্রাণীর ছবি ছিল। যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর পর্দাটির উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চোখ পড়ল। তাতে প্রাণীর ছবি দেখেই তিনি খুব রেগে গেলেন। রাগে তাঁর চেহারা রক্তিম হয়ে গেল। তিনি পর্দাটি টেনে ছিঁড়ে ফেললেন। কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, তিনি পর্দাটি নামিয়ে ফেলতে বললেন। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. সেটি নামিয়ে ফেললেন। তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাণীর ছবি সম্পর্কে সতর্ক করে বললেন-
أَشَدُّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِينَ يُضَاهُوْنَ بِخَلْقِ اللَّهِ (কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা কঠোর শাস্তিপ্রাপ্ত হবে তারা, যারা আল্লাহর সৃষ্টির সঙ্গে সাদৃশ্য স্থাপন করে)। অর্থাৎ সর্বাপেক্ষা কঠোর শাস্তি যাদেরকে দেওয়া হবে, তাদের মধ্যে এরাও থাকবে। সর্বাপেক্ষা কঠিন শাস্তিপ্রাপ্তদের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। তাদের মধ্যে এক স্তরের লোক হবে তারা, যারা প্রাণীর ছবি তৈরি করে। কেননা তারা তাদের এ কাজটি দ্বারা আল্লাহ তা'আলার কাজের অনুকরণ করে। আল্লাহ তা'আলা প্রাণী সৃষ্টি করেন। তারা প্রাণী সৃষ্টি তো করতে পারে না, কিন্তু এমন আকৃতি সৃষ্টি করে, যা দেখতে প্রাণীর মতো মনে হয়। যদি তাদের এ কাজ দ্বারা উদ্দেশ্য হয় সেই ছবির উপাসনা করা অথবা উদ্দেশ্য হয় এ ভাব দেখানো যে, আমরাও আল্লাহর মতো পারি, তবে তো তা স্পষ্ট কুফরীকর্ম। এ কারণেই তাদের শাস্তি হবে সর্বাপেক্ষা কঠিন। আর যদি এরকম উদ্দেশ্য না থাকে, তবে তা কুফরী নয় বটে, কিন্তু কবীরা গুনাহ অবশ্যই। তাই তা থেকেও বিরত থাকা অবশ্যকর্তব্য।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কোনও প্রাণীর ছবি তৈরি বা অঙ্কন করা কঠিন গুনাহ।

খ. প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় দ্বারা পর্দা বা পোশাক তৈরি করা জায়েয নয়।

গ. পর্দা বা পোশাকে প্রাণীর ছবি থাকলে তা নষ্ট করে ফেলা উচিত।

ঘ. কারও কোনও আপত্তিকর কাজ চোখে পড়লে তাতে আপত্তি জানানো ও তা সংশোধন করে দেওয়া কর্তব্য।

ঙ. অন্যায় ও আপত্তিকর কাজে রাগ করা জায়েয; বরং তা ঈমানের দাবি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান