আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২২. অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার

হাদীস নং: ৪১২৮
অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার
সালামের ব্যাপক প্রসারের প্রতি অনুপ্রেরণা ও তার ফযীলত এবং যে ব্যক্তি তার সম্মানে দাঁড়ানো কামনা করে, তার প্রতি ভীতি প্রদর্শন
৪১২৮. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কোন এক মজলিসে ছিলেন, এমন সময় তার কাছ দিয়ে এক ব্যক্তি পথচলাকালে বলল: 'সালামুন আলাইকুম'। তিনি বলেনঃ তোমার জন্য রয়েছে দশ নেকী। এরপর আর এক ব্যক্তি পথ অতিক্রম করল এবং বলল। 'সালামুন আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ'। তিনি বলেন: তোমার জন্য রয়েছে বিশ নেকী। পরে আরেক ব্যক্তি পথ অতিক্রম করল এবং বলল: "আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।" তিনি বলেন: তোমার জন্য রয়েছে ত্রিশ নেকী। এ সময় এক ব্যক্তি মজলিস থেকে ওঠে দাঁড়াল অথচ সে সালাম দিল না। তখন তিনি বলেন: কিসে তোমাদের তোমার সাথীদের সালাম দিতে ভুলিয়ে দিল? (তিনি বলেন,) তোমাদের কেউ কোন মজলিসে এলে, সে যেন সালাম দেয়। সুতরাং সে যদি বসতে চায়, তাহলে যেন বসে, আর যদি চলে যেতে চায়, তাহলে যেন সালাম দিয়ে মজলিস ত্যাগ করে। কেননা, প্রথমবারের সালাম দ্বিতীয়বারের সালাম অপেক্ষা কম উত্তম নয়।
(ইবনে হিব্বানের সহীহ গ্রন্থে বর্ণিত।
ما أوشك - কোন জিনিস তাড়াতাড়ি করাল?)
كتاب الأدب
التَّرْغِيب فِي إفشاء السَّلَام وَمَا جَاءَ فِي فَضله وترهيب الْمَرْء من حب الْقيام لَهُ
4128- وَعَن أبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ أَن رجلا مر على رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَهُوَ فِي مجْلِس فَقَالَ سَلام عَلَيْكُم فَقَالَ عشر حَسَنَات ثمَّ مر آخر فَقَالَ سَلام عَلَيْكُم وَرَحْمَة الله فَقَالَ عشرُون حَسَنَة ثمَّ مر آخر فَقَالَ سَلام عَلَيْكُم وَرَحْمَة الله وَبَرَكَاته فَقَالَ ثَلَاثُونَ حَسَنَة فَقَامَ رجل من الْمجْلس وَلم يسلم فَقَالَ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم مَا أوشك مَا نسي صَاحبكُم إِذا جَاءَ أحدكُم إِلَى الْمجْلس فليسلم فَإِن بدا لَهُ أَن يجلس فليجلس وَإِن قَامَ فليسلم فَلَيْسَتْ الأولى بِأَحَق من الْآخِرَة

رَوَاهُ ابْن حبَان فِي صَحِيحه
مَا أوشك أَي مَا أسْرع

হাদীসের ব্যাখ্যা:

সালাম দেওয়ার উদ্দেশ্য তাকে নিজের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দেওয়া। সালামের মাধ্যমে বোঝানো হয় যে, তুমি আমার দিক থেকে নিশ্চিন্ত থাকো। আমার দ্বারা তোমার কোনও ক্ষতি হবে না। কোনও মজলিসে পৌছে সালাম দিলে মজলিসে উপস্থিত লোকজন আশ্বস্ত হতে পারে যে, এই আগন্তুকের পক্ষ থেকে তাদের কোনও ভয় নেই। ফলে তারা নিশ্চিন্তমনে তাকে গ্রহণ করে নিতে পারে। এজন্যই মজলিসে পৌঁছে সালাম দিতে হয়। তাদের এই একই নিরাপত্তা ওই ব্যক্তির বিদায় গ্রহণকালেও পাওয়া দরকার। কেননা অনেক সময় মজলিসে আগন্তুক ব্যক্তি মজলিসের খবরাখবর জেনে যায়। তারপর সে ওই মজলিসের কথা অন্যত্র প্রচার করে কিংবা মজলিসের লোকজন সম্পর্কে অন্যদের অবহিত করে তাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। কাজেই এ ব্যক্তি বিদায় নেওয়ার পর যে তাদের এরকম কোনও ক্ষতি করবে না, সে বিষয়ে তাদের নিশ্চিন্ত হওয়া দরকার। সালামের দ্বারা বিদায় নিলে তারা সে নিশ্চিন্ততা লাভ করতে পারে। কাজেই বিদায় গ্রহণকালেও সালাম দেওয়া উচিত। এজন্যই হাদীছটিতে বলা হয়েছে, শেষের সালাম অপেক্ষা প্রথমবারের সালাম বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। অর্থাৎ নিরাপত্তা ও নিরুদ্বেগের ব্যাপারে প্রথমবার সালাম দেওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ, বিদায়কালীন সালামও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। সে সালামের গুরুত্ব প্রথমবারের তুলনায় মোটেই কম নয়। তাই সাক্ষাৎকালে যেমন সালাম দেওয়া হয়েছে, বিদায়কালেও তেমনি সালাম দেওয়া উচিত।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সালাম দেওয়ার দ্বারা সালামদাতার পক্ষ থেকে কোনওরূপ ক্ষতি ও অনিষ্ট সাধিত না হওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। তাই সালামদাতার কর্তব্য সালামের এ অন্তর্নিহিত আবেদন সম্পর্কে সচেতন থাকা।

খ. মজলিসে উপস্থিত হওয়ার সময় বা কারও সঙ্গে সাক্ষাৎকালে যেমন সালাম দেওয়া হয়, তেমনি সালাম দিতে হবে বিদায়কালেও।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান