আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২২. অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার

হাদীস নং: ৪১২৭
অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার
সালামের ব্যাপক প্রসারের প্রতি অনুপ্রেরণা ও তার ফযীলত এবং যে ব্যক্তি তার সম্মানে দাঁড়ানো কামনা করে, তার প্রতি ভীতি প্রদর্শন
৪১২৭. হযরত সাহল ইবনে হুনায়ফ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি আস-সালামু আলাইকুম বলবে, তার আমলনামায় দশটি নেকী লেখা হবে। আর যে ব্যক্তি বলবে, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ তার আমলনামায় বিশ নেকী লেখা হবে। আর যে ব্যক্তি আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু বলবে, তার আমলনামায় ত্রিশ নেকী লেখা হবে।
(তাবারানী বর্ণিত।)
كتاب الأدب
التَّرْغِيب فِي إفشاء السَّلَام وَمَا جَاءَ فِي فَضله وترهيب الْمَرْء من حب الْقيام لَهُ
4127- وَرُوِيَ عَن سهل بن حنيف رَضِي الله عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من قَالَ السَّلَام عَلَيْكُم كتبت لَهُ عشر حَسَنَات وَمن قَالَ السَّلَام عَلَيْكُم وَرَحْمَة الله كتبت لَهُ عشرُون حَسَنَة وَمن قَالَ السَّلَام عَلَيْكُم وَرَحْمَة الله وَبَرَكَاته كتبت لَهُ ثَلَاثُونَ حَسَنَة

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيّ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটি দ্বারা জানা যায়, সালামের সংক্ষিপ্ত রূপ হল- اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (তোমাদের সালাম)। এর মাঝামাঝি রূপ হল- السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ الله (তোমাদের প্রতি সালাম ও আল্লাহর রহমত)। এখানে একটি শব্দ বেশি আছে। তা হল রাহমাতুল্লাহ। পরিপূর্ণ রূপ হল- السَّلامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ ( তোমাদের প্রতি সালাম ও আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত)। এখানে দু'টি শব্দ বেশি- রাহমাতুল্লাহ এবং বারাকাতুহু।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসে পরপর তিন ব্যক্তি আসল। প্রথম ব্যক্তি সংক্ষিপ্ত রূপে সালাম দিয়েছে। তাতে কেবল 'সালাম' শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তার সালামের অনুরূপ উত্তর দিলেন এবং বললেন, দশ। অর্থাৎ দশ নেকী হল। শব্দ যেহেতু একটি, তাই মূলত নেকীও হয় একটি। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা সব নেকীকেই দশগুণ বৃদ্ধি করেন। সে হিসেবে দশ নেকী বলা হয়েছে।

দ্বিতীয় ব্যক্তি এসে সালাম দিয়েছে দুই শব্দে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামেরও অনুরূপ উত্তর দিলেন এবং বললেন, বিশ (নেকী হয়েছে)।

তৃতীয় ব্যক্তি এসে পরিপূর্ণরূপে সালাম দিয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামেরও অনুরূপ উত্তর দিলেন এবং এ সালামে তিন শব্দ থাকায় বললেন, ত্রিশ (নেকী হয়েছে)।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বারা পরিপূর্ণরূপে সালাম দেওয়ার প্রতি উৎসাহদান করেছেন। অর্থাৎ উত্তম হল السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ- এই পরিপূর্ণ রূপে সালাম দেওয়া। কারণ এতে বেশি নেকী পাওয়া যায়। মূলত বেশি বেশি নেকী অর্জন করাই ইহজীবনের প্রধান কাজ। এ জগৎ আখিরাতের শস্যক্ষেত্র। এখানে যত নেকী কামাই করা যাবে, আখিরাতে তার ততো বেশি সুফল ভোগ করা যাবে। বলাবাহুল্য, পরিপূর্ণরূপে সালাম দেওয়া হলে তার উত্তরও পরিপূর্ণরূপেই দিতে হবে।

লক্ষণীয়, প্রথম ব্যক্তি সংক্ষিপ্তরূপে এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি মাঝামাঝিরূপে সালাম দিলে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে তিরস্কার করেননি যে, শব্দ কম ব্যবহার করলে কেন? বরং তাদেরকেও সালামের জবাব দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তারা যথাক্রমে দশ ও বিশ নেকী পেয়েছে। শব্দ কম হয়েছে বলে তাদের সালাম বৃথা যায়নি। যে যতটুকু বলেছে ততটুকুর ছাওয়াব অবশ্যই পাবে। বোঝা গেল সালাম সংক্ষিপ্তরূপে দেওয়াও জায়েয। যদিও শব্দ যত বেশি হবে ছাওয়াবও ততো বেশি মিলবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সালামের প্রত্যেক শব্দে দশ নেকী।

খ. সালাম সংক্ষিপ্তরূপে দেওয়া অর্থাৎ কেবল আসসালামু আলাইকুম বলাও জায়েয। এতটুকু বললেও সালাম দেওয়ার কর্তব্য পালন হয়ে যাবে।

গ. পরিপূর্ণরূপে সালাম দেওয়া উত্তম।

ঘ. কোনও সৎকর্মই বৃথা যায় না, যদিও তা ন্যূনতম পরিমাণে হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান