আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২২. অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার

হাদীস নং: ৪১০৭
অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার
সালামের ব্যাপক প্রসারের প্রতি অনুপ্রেরণা ও তার ফযীলত এবং যে ব্যক্তি তার সম্মানে দাঁড়ানো কামনা করে, তার প্রতি ভীতি প্রদর্শন
৪১০৭. আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর ইবনে আ'স (রা) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলঃ ইসলামে সবচেয়ে উত্তম কাজ কি? তিনি বলেন। অদ্ভূক্তদের আহার করানো ও পরিচিত ও অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া।
(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ ও ইবনে মাজা বর্ণিত।)
كتاب الأدب
التَّرْغِيب فِي إفشاء السَّلَام وَمَا جَاءَ فِي فَضله وترهيب الْمَرْء من حب الْقيام لَهُ
4107- عَن عبد الله بن عَمْرو بن الْعَاصِ رَضِي الله عَنْهُمَا أَن رجلا سَأَلَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم أَي الْإِسْلَام خير قَالَ تطعم الطَّعَام وتقرأ السَّلَام على من عرفت وَمن لم تعرف

رَوَاهُ البُخَارِيّ وَمُسلم وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীছটির বর্ণনা বলা হয়েছে, জনৈক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ইসলামের শ্রেষ্ঠতম আমল কী তা জানতে চেয়েছিলেন। সে সাহাবী কে, তার উল্লেখ এ বর্ণনায় নেই। তবে অন্যান্য বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, এ জিজ্ঞাসাকারী হাদীছটির বর্ণনাকারী হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাযি. নিজেই।

এ জাতীয় প্রশ্ন অন্যান্য সাহাবীদের থেকেও পাওয়া যায়। বস্তুত সৎকর্মের প্রতি সাহাবায়ে কেরামের আগ্রহ-উদ্দীপনা ছিল বিপুল। তবে একই ব্যক্তির পক্ষে যাবতীয় সৎকর্ম করা দুরূহ। যেগুলো ফরয বা ওয়াজিব পর্যায়ের, তা তো সকলের পক্ষেই পালন করা সম্ভব ও সহজ। কিন্তু যাবতীয় নফল কাজ প্রত্যেকের পক্ষে করা সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে যেসব আমল নিজের পক্ষে করা সম্ভব এবং তাতে ছাওয়াবও বেশি, সেগুলো বাছাই করে নেওয়াই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক, যাতে তা নিয়মিত পালন করা যায় এবং বেশির থেকে বেশি ছাওয়াব অর্জন করা যায়। তাই হাদীছ গ্রন্থসমূহে আমরা বিভিন্ন সাহাবীর পক্ষ থেকে এ জাতীয় প্রশ্নের উল্লেখ পাই।

যাহোক জিজ্ঞাসাকারী সাহাবী জানতে চাইলেন- أَيُّ الْإِسْلَامِ خَيْرٌ؟ (কোন ইসলাম উত্তম)? অর্থাৎ ইসলামের কোন কোন বিষয় উত্তম? প্রশ্নটিতে الْإِسْلَام শব্দের আগে خصال (বিষয়সমূহ, কর্মসমূহ) শব্দ উহ্য আছে। অর্থাৎ ইসলাম যেসকল বিষয়ের শিক্ষা দেয় এবং যেসব আমল করতে বলে, তার মধ্যে কোন কোনটিতে ছাওয়াব বেশি? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ২টি বিষয় উল্লেখ করলেন। প্রথমে বললেন-
تُطْعِمُ الطَّعَامَ (তুমি খাবার খাওয়াবে)। বাহ্যত এর দ্বারা দান-খয়রাত, হাদিয়া, আতিথেয়তা ইত্যাদিরূপে খানা খাওয়ানোর কথা বোঝানো হয়েছে।

وَتَقْرَأُ السَّلَامَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ (এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেবে)। অর্থাৎ সালাম দেওয়াকে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট করে ফেলবে না। বরং এটা যেহেতু ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন, তাই এ ক্ষেত্রে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের দিকে দৃষ্টি রাখবে। সুতরাং যে ব্যক্তিই মুসলিম, সে পরিচিত হোক বা অপরিচিত, তাকেই সালাম দেবে।

প্রশ্ন হতে পারে, ‘পরিচিত-অপরিচিত’ শব্দের ব্যাপকতার মধ্যে তো কাফের, ফাসেক ও মুনাফিক সকলেই পড়ে যায়, তাহলে তাদেরকেও কি সালাম দেওয়া হবে?
এর উত্তর হল, হাদীছটি দ্বারা এতটা ব্যাপকতা বোঝানো উদ্দেশ্য নয়। শুধু মুসলিমদের মধ্যে ‘পরিচিত-অপরিচিত’-এর ব্যাপকতা বোঝানো হয়েছে। এটা অন্যান্য দলীল দ্বারা বোঝা যায়। সারকথা এ হাদীছ দ্বারা মুসলিম-সমাজে সালামের ব্যাপক প্রচলন ঘটাতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।

বিশেষভাবে খাবার খাওয়ানো ও সালাম দেওয়াকে উত্তম বলা হয়েছে এ কারণে যে, খাদ্য হচ্ছে মানুষের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক চাহিদা। এ চাহিদা পূরণ করার দ্বারা মানুষের উপকার বেশি হয়। তাই এতে ছাওয়াবও বেশি। সালাম দেওয়ার দ্বারা বিনয় প্রকাশ পায়। তাছাড়া এটা নিজের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দানের ঘোষণাস্বরূপ। যাকে সালাম দেওয়া হয় তাকে যেন বোঝানো হয়, তুমি নিশ্চিত থাকো, আমার পক্ষ থেকে তোমার কোনওভাবে কোনও ক্ষতি করা হবে না। সে দৃষ্টিতে সালামের উপকার অনেক ব্যাপক। তাই এর ছাওয়াবও অনেক বেশি।

তাছাড়া সালাম দেওয়া ও খানা খাওয়ানো- এ উভয় কাজটি দ্বারা পারস্পরিক মহব্বত ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। পারস্পরিক ভালোবাসা ঈমানের পরিপূর্ণতার জন্য শর্ত। এ গুরুত্বের কারণে তুলনামূলকভাবে এ আমলদু'টিতে ছাওয়াবও বেশি।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. যেসকল কাজে ছাওয়াব বেশি, আমল করার ক্ষেত্রে সেগুলোকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া চাই।

খ. অন্যকে খাবার খাওয়ানো অতি বড় পুণ্যের কাজ। এ কাজে কিছুতেই কৃপণতা করতে নেই।

গ. পরিচিত-অপরিচিত যে-কোনও মুসলিমকে আগে আগে সালাম দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা চাই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান