আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২২. অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার

হাদীস নং: ৪১০৫
অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার
হাস্যোজ্জ্বল চেহারা, নম্রবাক্য এবং অন্যান্য বিষয়ের প্রতি অনুপ্রেরণা
৪১০৫. মিকদাম ইবনে শুরায়হ পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও তাঁর দাতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাকে এ বিষয়ে হাদীস বর্ণনা করুন, যা আমল করলে আমার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। তিনি বলেন: জান্নাত অবধারিত করণের জন্য তিনটি কাজ সম্পন্ন করা অত্যাবশ্যক। তা হল: ১. আহার করানো, ২. সালামের ব্যাপাক প্রসার এবং উত্তম বাক্য বিনিময় করা।
(তাবারানী দু'টি সনদে উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, তবে একটি সনদ বিশ্বস্ত সূত্রে বর্ণিত। ইবনে আবুদ দুনিয়ার কিতাবুস সামতে বর্ণিত হয়েছে এবং হাকিম। তবে তারা উভয়ে বলেন: উত্তম বাক্যালাপ ও আহার করানো তোমার জন্য আবশ্যক করে নাও। হাকিম (র) বলেনঃ হাদীসটি ত্রুটিমুক্ত সনদে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত। হাদীসটি বাযযার সূত্রে (র) আনাস (রা) থেকে এরূপ বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবী (ﷺ)-কে বলেন, আপনি আমাকে এমন কাজের কথা বলে দিন, যা করলে তা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি বলেন: আহার করাবে, ব্যাপক সালামের প্রসার ঘটাবে, উত্তম বাক্যালাপ করবে এবং মানুষ যখন রাতে নিদ্রাবিভোর থাকে। তখন সালাত আদায় করবে, তাহলে তুমি নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে।)
كتاب الأدب
التَّرْغِيب فِي طلاقة الْوَجْه وَطيب الْكَلَام وَغير ذَلِك مِمَّا يذكر
4105- وَعَن الْمِقْدَام بن شُرَيْح عَن أَبِيه عَن جده رَضِي الله عَنْهُم قَالَ قلت يَا رَسُول الله حَدثنِي بِشَيْء يُوجب لي الْجنَّة قَالَ مُوجب الْجنَّة إطْعَام الطَّعَام وإفشاء السَّلَام وَحسن الْكَلَام

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيّ بِإِسْنَادَيْنِ رُوَاة أَحدهمَا ثِقَات وَابْن أبي الدُّنْيَا فِي كتاب الصمت وَالْحَاكِم إِلَّا أَنَّهُمَا قَالَا عَلَيْك بِحسن الْكَلَام وبذل الطَّعَام وَقَالَ الْحَاكِم صَحِيح وَلَا عِلّة لَهُ رَوَاهُ الْبَزَّار من حَدِيث أنس قَالَ قَالَ رجل للنَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم عَلمنِي عملا يدخلني الْجنَّة قَالَ أطْعم الطَّعَام وأفش السَّلَام وأطب الْكَلَام وصل بِاللَّيْلِ وَالنَّاس نيام تدخل الْجنَّة بِسَلام

হাদীসের ব্যাখ্যা:

সালামের রেওয়াজদান
إفشاء السلام (সালামের প্রসার ঘটানো)। সালামের প্রসার ঘটানোর অর্থ বেশি বেশি সালাম দেওয়া। এমনভাবে এর প্রচার ও চর্চা করা, যাতে সালাম দেওয়া-নেওয়া সামাজিক রেওয়াজে পরিণত হয়ে যায়। তা সম্ভব হবে এভাবে যে, সালামের যতগুলো ক্ষেত্র আছে তার প্রত্যেকটিতেই আমরা সালাম বিনিময় করব। ঘরে প্রবেশকালে সালাম দেব। একে অন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সালাম দেব। পরস্পর বিদায় গ্রহণকালে সালাম দেব। কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সালাম দেব। মজলিসে উপস্থিত হওয়ার সময় মজলিসের লোকদেরকে সালাম দেব। এমনিভাবে সালাম দেব বড় ছোটকে ও ছোট বড়কে। সালাম দেব পিতা-মাতাকে, ছেলেমেয়েকে, স্বামী তার স্ত্রীকে এবং স্ত্রী তার স্বামীকে। নিজে আগে সালাম দেওয়ার চেষ্টা করব। কাউকে সালাম দিতে লজ্জিত হব না, কুণ্ঠাবোধ করব না। যারা সালাম দেয় না তাদেরকে সালাম শেখাব। শিশুদেরকে সালামের তা'লীম দেব। ফোনালাপকালেও কথার সূচনা করব সালাম দ্বারা। আবার কথা শেষে সালাম দিয়েই ফোন রাখব। এভাবে নিজে সালামের চর্চা করার সাথে সাথে অন্যদেরকে সালাম দেওয়ার প্রতি উৎসাহ দিতে থাকলে এক পর্যায়ে ইসলামের এ সুন্নত সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, আমাদেরকে কেবল সালাম দিতে বা নিতেই বলা হয়নি; বরং সালামের প্রসার ঘটাতে, একে রেওয়াজে পরিণত করতে আদেশ করা হয়েছে। সর্বত্র সালামকে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখার দ্বারাই এ আদেশ যথাযথভাবে পালন হতে পারে। আমরা জান্নাতকে আমাদের আসল ঠিকানা মনে করি। সে ঠিকানায় পৌঁছার জন্য এ প্রচেষ্টা এক শক্তিশালী অবলম্বন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কেবল সালাম দিয়েই ক্ষান্ত হওয়া উচিত নয়; মুসলিম সমাজে যাতে সালামের ব্যাপক চর্চা হয়, সে চেষ্টা করাও জরুরি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান