আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২১. অধ্যায়ঃ সদ্ব্যবহার

হাদীস নং: ৩৮৬২
অধ্যায়ঃ সদ্ব্যবহার
ইয়াতীমের তত্ত্বাবধান, তার প্রতি দয়া প্রদর্শন, তার ভরণ-পোষণ এবং বিধবা ও দুঃস্থের সেবায় আত্মনিয়োগ করার প্রতি অনুপ্রেরণা
৩৮৬২. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: আমি সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজা খুলব। তখন আমি দেখব জনৈক মহিলা জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য আমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। আমি তাকে বলব। তোমার কী হলঃ তুমি কে? সে বলবেঃ আমি ঐ রমনী যে ইয়াতীমের তত্ত্বাবধানে বিয়েহীন জীবন অতিবাহিত করেছি।
(আবু ই'আলা বর্ণিত। ইনশা-আল্লাহ তার সনদ সূত্র উত্তম।)
كتاب البر والصلة
التَّرْغِيب فِي كَفَالَة الْيَتِيم وَرَحمته وَالنَّفقَة عَلَيْهِ وَالسَّعْي على الأرملة والمسكين
3862- وَعَن أبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم أَنا أول من يفتح بَاب الْجنَّة إِلَّا أَنِّي أرى امْرَأَة تبادرني فَأَقُول لَهَا مَا لَك وَمن أَنْت فَتَقول أَنا امْرَأَة قعدت على أَيْتَام لي

رَوَاهُ أَبُو يعلى وَإِسْنَاده حسن إِن شَاءَ الله

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াতীমের লালন-পালনকারীকে সুসংবাদ দিয়েছেন। হাদীছ দ্বারা জানা গেল ইয়াতীমকে লালন-পালন করার ফযীলত কত উঁচু। সে লালন-পালনকারী যদি হয় ইয়াতীমের বিধবা মাতা এবং সে কেবল তার ইয়াতীম সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে অন্য স্বামী গ্রহণ থেকে বিরত থাকে, তবে আল্লাহ তাআলার কাছে তার মর্যাদা অনেক অনেক বেশি।

প্রকাশ থাকে যে, ইয়াতীমকে লালন-পালনের এ ফযীলত পাওয়া যাবে তখনই, যখন তার প্রতি পূর্ণ কল্যাণকামিতার আচরণ করা হবে, তার প্রতি কোনওরকম জুলুম করা হবে না, না তার মালের উপর, না তার জানের উপর। অন্যায়ভাবে তার সম্পদ গ্রাস করা কঠিন পাপ, যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَى ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا

'নিশ্চয়ই যারা ইয়াতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে, তারা নিজেদের পেটে কেবল আগুন ভরতি করে। তারা অচিরেই এক জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।
সুতরাং ইয়াতীমকে লালন-পালন করতে হবে নিঃস্বার্থভাবে। তার সম্পদের প্রতি লোভ করা যাবে না। পূর্ণ সতর্কতার সঙ্গে তার সম্পদের হেফাজত করতে হবে। এমনিভাবে তার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে মায়া-মমতার সাথে। অন্যায়ভাবে তাকে মারধর করা চলবে না। এ ব্যাপারে অনেকেই সতর্কতা অবলম্বন করে না। জাহিলী যুগে তো তাদের প্রতি নির্মম আচরণ করা হত। সেকালে মানুষ তাদের সম্পদ তো গ্রাস করতই, শারীরিকভাবেও নির্যাতন করত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কঠোরভাবে তা নিষেধ করে দেন। একবার কোনও এক সাহাবী জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কি কি কারণে আমি ইয়াতীমকে মারতে পারব? তিনি বললেন-

مِمَّا كُنْتَ ضارِبًا مِنْهُ وَلَدَكَ غَيْرَ وَاقٍ مَالَكَ بِمَالِهِ

‘তুমি তাকে মারতে পারবে এমন কোনও কারণে, যে কারণে তুমি নিজ সন্তানকে মেরে থাক। আর তুমি তার সম্পদ দ্বারা নিজের সম্পদ রক্ষাকারী হবে না (অর্থাৎ নিজের সম্পদ বাঁচানোর জন্য তার সম্পদ খরচ করবে না)।২৮৮

বাযযারের এক রেওয়ায়েতে স্পষ্টই আছে যে, যে ব্যক্তি কোনও ইয়াতীমের লালন-পালন করে, সে ইয়াতীম তার আত্মীয় হোক বা অনাত্মীয়। এর দ্বারা বোঝা যায় যে, ইয়াতীম আত্মীয় হোক বা অনাত্মীয় ইয়াতীমকে লালন-পালন করার উচ্চ ফযীলত রয়েছে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

এ হাদীছ দ্বারা ইয়াতীমকে লালন-পালন করার উচ্চ ফযীলত জানা গেল। সুতরাং আমাদের যখনই কোনও ইয়াতীমকে লালন-পালন করার সুযোগ আসে, তখন পূর্ণ আন্তরিকতা ও মমত্ববোধের সঙ্গে তার লালন-পালনে যত্নবান থাকব।

২৮৮. বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১০৯৯৩; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪৮৮২; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ২৬৬৮৭; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪২৪৪; তাবারানী, আল মুজামুস সগীর, হাদীছ নং ২৪৪
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান