আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ
২১. অধ্যায়ঃ সদ্ব্যবহার
হাদীস নং: ৩৮০২
অধ্যায়ঃ সদ্ব্যবহার
পিতামাতার অবাধ্য হওয়ার প্রতি ভীতি প্রদর্শন
৩৮০২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ'স (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: পিতামাতাকে গালি দেওয়া কবীরা গুনাহ। সাহাবায়ে কিরাম বলেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! কেউ কি মাতাপিতাকে গালি দেয়? তিনি বলেন: হাঁ। কোন ব্যক্তি অন্যের পিতাকে গালি দেওয়া, তার পিতাকে গালি দেওয়ার নামান্তর।
(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ ও তিরমিযী বর্ণিত।)
(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ ও তিরমিযী বর্ণিত।)
كتاب البر والصلة
التَّرْهِيب من عقوق الْوَالِدين
3802 - وَعَن عبد الله بن عَمْرو بن الْعَاصِ رَضِي الله عَنْهُمَا أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ من الْكَبَائِر شتم الرجل وَالِديهِ
قَالُوا يَا رَسُول الله وَهل يشْتم الرجل وَالِديهِ قَالَ نعم يسب أَبَا الرجل فيسب أَبَاهُ ويسب أمه فيسب أمه
رَوَاهُ البُخَارِيّ وَمُسلم وَأَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ
قَالُوا يَا رَسُول الله وَهل يشْتم الرجل وَالِديهِ قَالَ نعم يسب أَبَا الرجل فيسب أَبَاهُ ويسب أمه فيسب أمه
رَوَاهُ البُخَارِيّ وَمُسلم وَأَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিতা-মাতাকে গালি দেওয়াকে কবীরা গুনাহ সাব্যস্ত করলে সাহাবায়ে কেরামের আশ্চর্য বোধ হলো। কী করে কোনও বুদ্ধিমান ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে গালি দিতে পারে! যার কিছুটাও বুঝ-বুদ্ধি আছে, পিতা-মাতার মর্যাদা তার জানার কথা এবং তাদের হক সম্পর্কেও তার কিছু না কিছু খবর থাকার কথা। এরূপ ব্যক্তি তো পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। সে সর্বদা তাদের সেবাযত্ন করে তাদেরকে খুশি রাখার চেষ্টা করবে। এর পরিবর্তে সে তাকে গালি দেবে এটা কী করে সম্ভব? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানালেন যে, হাঁ সম্ভব। আর তা এভাবে যে, সে অন্যের পিতা-মাতাকে গালি দেবে। আর তার প্রতিশোধস্বরূপ সেও তার পিতা-মাতাকে গালি দেবে। তো এই ব্যক্তি নিজে তার পিতা-মাতাকে গালি না দিলেও তার কারণেই তো তাদেরকে গালি শুনতে হয়েছে। যেন সে নিজেই তাদেরকে গালি দিয়েছে। কাজেই বলা যায় অন্যের পিতা-মাতাকে গালি দেওয়া নিজ পিতা-মাতাকে গালি দেওয়ার নামান্তর।
এর দ্বারা বোঝা গেল নিজের শ্রদ্ধেয় কোনও ব্যক্তির মর্যাদা রক্ষার একটি দিক এইও যে, অন্যের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির কোনওরূপ নিন্দা-সমালোচনা করা হবে না। কেননা তা করতে গেলে প্রতিশোধস্বরূপ তারাও তার শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির নিন্দা-সমালোচনা করবে। এভাবে সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে তার নিন্দা-সমালোচনা করা হয়ে যাবে। সুতরাং নিজ শিক্ষক, শায়খ ও আদর্শ ব্যক্তির সম্মানরক্ষার খাতিরে আমাদেরকে অন্যদের এ জাতীয় ব্যক্তিদের নিন্দা-সমালোচনা হতে বিরত থাকতে হবে।
এ কারণেই আল্লাহ তাআলা অন্যদের ভ্রান্ত ও বাতিল উপাস্যদের পর্যন্ত গালমন্দ করতে নিষেধ করেছেন। কেননা এর প্রতিশোধস্বরূপ তারাও আল্লাহ তাআলাকে গালমন্দ করতে পারে। ইরশাদ হয়েছে وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ فَيَسُبُّوا اللَّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ "(হে মুসলিমগণ!) তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে (ভ্রান্ত মাবুদদেরকে) ডাকে,তোমরা তাদেরকে গালমন্দ করো না। কেননা পরিণামে তারা অজ্ঞাতবশত সীমালঙ্ঘন করে আল্লাহকেও গালমন্দ করবে।১৪২
ইবন বাত্তাল রহ. বলেন, অন্যায়-অপরাধের দরজা বন্ধ করার পক্ষে এ হাদীছটি একটি মূলনীতিস্বরূপ। এর থেকে শিক্ষালাভ হয়, যার কোনও (বৈধ) কাজের পরিণামে কোনও অবৈধ কাজ ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তখন ওই বৈধ কাজটি করাও তার জন্য নিষেধ হয়ে যায়, যদিও সে ওই অবৈধ কাজ ঘটানোর ইচ্ছা না রাখে।
ইমাম মাওয়ারদী রহ. বলেন, এমন কোনও ব্যক্তির কাছে রেশমী কাপড় বিক্রি জায়েয হবে না, যার ব্যাপারে জানা থাকে যে, ওই কাপড় সে নিজেই পরিধান করবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা পিতা-মাতার উচ্চমর্যাদা সম্পর্কে ধারণা লাভ হয়।
খ. নিজ পিতা-মাতার মর্যাদা রক্ষার্থে অন্যের পিতা-মাতাকেও মর্যাদা দিতে হবে এবং তাদের অসম্মান করা হতে বিরত থাকতে হবে।
গ. শিক্ষার্থীর যদি কোনও পাঠ ভালোভাবে বুঝে না আসে, তবে তার কর্তব্য শিক্ষকের কাছ থেকে তা ভালোভাবে বুঝে নেওয়া।
ঘ. যে বৈধ কাজের পরিণামে কোনও অবৈধ কাজ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তা থেকে বিরত থাকা অবশ্যকর্তব্য।
১৪২. সূরা আন‘আম (৬), আয়াত ১০৮
এর দ্বারা বোঝা গেল নিজের শ্রদ্ধেয় কোনও ব্যক্তির মর্যাদা রক্ষার একটি দিক এইও যে, অন্যের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির কোনওরূপ নিন্দা-সমালোচনা করা হবে না। কেননা তা করতে গেলে প্রতিশোধস্বরূপ তারাও তার শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির নিন্দা-সমালোচনা করবে। এভাবে সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে তার নিন্দা-সমালোচনা করা হয়ে যাবে। সুতরাং নিজ শিক্ষক, শায়খ ও আদর্শ ব্যক্তির সম্মানরক্ষার খাতিরে আমাদেরকে অন্যদের এ জাতীয় ব্যক্তিদের নিন্দা-সমালোচনা হতে বিরত থাকতে হবে।
এ কারণেই আল্লাহ তাআলা অন্যদের ভ্রান্ত ও বাতিল উপাস্যদের পর্যন্ত গালমন্দ করতে নিষেধ করেছেন। কেননা এর প্রতিশোধস্বরূপ তারাও আল্লাহ তাআলাকে গালমন্দ করতে পারে। ইরশাদ হয়েছে وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ فَيَسُبُّوا اللَّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ "(হে মুসলিমগণ!) তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে (ভ্রান্ত মাবুদদেরকে) ডাকে,তোমরা তাদেরকে গালমন্দ করো না। কেননা পরিণামে তারা অজ্ঞাতবশত সীমালঙ্ঘন করে আল্লাহকেও গালমন্দ করবে।১৪২
ইবন বাত্তাল রহ. বলেন, অন্যায়-অপরাধের দরজা বন্ধ করার পক্ষে এ হাদীছটি একটি মূলনীতিস্বরূপ। এর থেকে শিক্ষালাভ হয়, যার কোনও (বৈধ) কাজের পরিণামে কোনও অবৈধ কাজ ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তখন ওই বৈধ কাজটি করাও তার জন্য নিষেধ হয়ে যায়, যদিও সে ওই অবৈধ কাজ ঘটানোর ইচ্ছা না রাখে।
ইমাম মাওয়ারদী রহ. বলেন, এমন কোনও ব্যক্তির কাছে রেশমী কাপড় বিক্রি জায়েয হবে না, যার ব্যাপারে জানা থাকে যে, ওই কাপড় সে নিজেই পরিধান করবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা পিতা-মাতার উচ্চমর্যাদা সম্পর্কে ধারণা লাভ হয়।
খ. নিজ পিতা-মাতার মর্যাদা রক্ষার্থে অন্যের পিতা-মাতাকেও মর্যাদা দিতে হবে এবং তাদের অসম্মান করা হতে বিরত থাকতে হবে।
গ. শিক্ষার্থীর যদি কোনও পাঠ ভালোভাবে বুঝে না আসে, তবে তার কর্তব্য শিক্ষকের কাছ থেকে তা ভালোভাবে বুঝে নেওয়া।
ঘ. যে বৈধ কাজের পরিণামে কোনও অবৈধ কাজ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তা থেকে বিরত থাকা অবশ্যকর্তব্য।
১৪২. সূরা আন‘আম (৬), আয়াত ১০৮
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)