আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২০. অধ্যায়ঃ হদ্দ

হাদীস নং: ৩৫০১
অধ্যায়ঃ হদ্দ
অধ্যায়: হদ্দ ও অপরাপর বিষয়।
সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধাজ্ঞার প্রতি অনুপ্রেরণা এবং যে ব্যক্তি এ দু'টি বর্জন করেও তোষামদ করে তার প্রতি ভীতি প্রদর্শন
৩৫০১. হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: আমার পূর্বের প্রত্যেক নবীই, যাদেরকে আল্লাহ্ তাদের উম্মাতের নিকট প্রেরণ করেছিলেন। তাঁদের প্রত্যেকেরই কিছু সংখ্যক বন্ধু ও সাথী ছিল, যারা নবীদের সুন্নাত আঁকড়ে ধরত এবং তাঁর অনুসরণ করত। অবশেষে তাদের ইন্তিকালের পর এমন কিছু লোক প্রতিনিধিত্ব করত, তারা যা বলত, তা করত না এবং যা নিদের্শ দেওয়া হয়নি তা করত। এ জাতীয় লোকের সাথে যে ব্যক্তি হাত দ্বারা জিহাদ করে, সে মু'মিন, যে মুখের দ্বারা প্রতিবাদ করে, সেও মু'মিন এবং অন্তরে যে ঘৃণা করে, সেও মু'মিন। এছাড়া করো অন্তরে সরিষা দানার পরিমাণও ঈমান নেই।
(মুসলিম বর্ণিত।
الحورای কোন ব্যক্তির সাহায্যকারী, বিশেষ ব্যক্তি, বিশেষ সহযোগী, অন্তরঙ্গ বন্ধু।)
كتاب الحدود
كتاب الْحُدُود وَغَيرهَا
التَّرْغِيب فِي الْأَمر بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْي عَن الْمُنكر والترهيب من تَركهمَا والمداهنة فيهمَا
3501- وَعَن ابْن مَسْعُود رَضِي الله عَنهُ أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ مَا من نَبِي بَعثه الله فِي أمة قبلي إِلَّا كَانَ لَهُ من أمته حواريون وَأَصْحَاب يَأْخُذُونَ بسنته ويقتدون بأَمْره ثمَّ إِنَّهَا تخلف من بعدهمْ خلوف يَقُولُونَ مَا لَا يَفْعَلُونَ ويفعلون مَا لَا يؤمرون فَمن جاهدهم بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤمن وَمن جاهدهم بِلِسَانِهِ فَهُوَ مُؤمن وَمن جاهدهم بِقَلْبِه فَهُوَ مُؤمن لَيْسَ وَرَاء ذَلِك من الْإِيمَان حَبَّة خَرْدَل

رَوَاهُ مُسلم
الْحوَاري هُوَ النَّاصِر للرجل والمختص بِهِ والمعين والمصافي

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ কয়েকটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। নিচে সংক্ষেপে সে বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে।

এক.

আল্লাহ তা'আলা যত নবী পাঠিয়েছেন তাদের প্রত্যেকেরই হাওয়ারী ও আসহাব ছিল। এখানে 'প্রত্যেকের' বলে অধিকাংশ বোঝানো হয়েছে। কেননা এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাচ্ছেন-

عُرِضَتْ عَلَيَّ الأُمَمُ, فَرَأَيْتُ النَّبِيَّ وَمَعَهُ الرُّهَيْطُ وَالنَّبِيَّ وَمَعَهُ الرَّجُلُ وَالرَّجُلاَنِ, وَالنَّبِيَّ لَيْسَ مَعَهُ أَحَدٌ

'আমাকে উম্মতসমূহ দেখানো হল। আমি কোনও নবীকে দেখলাম তাঁর সঙ্গে ক্ষুদ্র একটি দল। কোনও নবীকে দেখলাম যাঁর সঙ্গে এক-দুইজন লোক এবং কোনও নবীকে দেখলাম যাঁর সঙ্গে একজনও নেই। সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৩৭৪
এর দ্বারা বোঝা যায় দুনিয়ায় এমন কোনও কোনও নবী এসেছেন, যাঁর দাওয়াতে একজনও সাড়া দেয়নি। কারও দাওয়াতে সাড়া দিয়েছে মাত্র একজন। কারও দাওয়াতে দু'জন। অথচ এ হাদীছে বহুবচনে বলা হচ্ছে- সকল নবীর সঙ্গেই হাওয়ারী ও আসহাব ছিল। এ উভয় হাদীছের মধ্যে সামঞ্জস্যবিধানের জন্য বলতে হবে যে, সকল নবী বলতে অধিকাংশ নবীকে বোঝানো হয়েছে। আরবী ভাষায় 'অধিকাংশ'- এর ক্ষেত্রে 'সকল শব্দের প্রচুর ব্যবহার আছে। অন্যসব ভাষায়ও আছে।

حواريون শব্দটি حواري -এর বহুবচন। এর অর্থ নবীর এমন বিশিষ্ট সঙ্গী, যারা সবরকম দোষ থেকে পরিশুদ্ধ ছিলেন। কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ নবীদের সাহায্যকারী বা আনসার। কারও মতে এর অর্থ মুজাহিদ। কেউ বলেন নবীর এমনসব সঙ্গী, যারা তাঁদের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার যোগ্যতা রাখতেন। আবার কেউ মনে করেন এর দ্বারা নবীদের বিশিষ্ট ও শীর্ষস্থানীয় সঙ্গীদেরকে বোঝানো হয়ে থাকে। কুরআন মাজীদে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের সাহায্যকারী সঙ্গীদেরকে 'হাওয়ারী' নামে উল্লেখ করা হয়েছে। (দ্রষ্টব্য: সূরা সাফফ, ২৮ নং পারায়)

اصحاب শব্দটি صاحب এর বহুবচন। এর উৎপত্তি صحبة (সুহবাত) থেকে। সুহবাত অর্থ ভক্তি-শ্রদ্ধার সঙ্গে কারও সাহচর্য গ্রহণ করা। এটা দীন শিক্ষা এবং সে শিক্ষা অনুযায়ী জীবন গড়ার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। নবী-রাসূলগণের সঙ্গীগণ অত্যন্ত ভক্তি- শ্রদ্ধার সঙ্গে তাদের সাহচর্য অবলম্বন করতেন, তাই তাদেরকে 'আসহাব' বলা হয়ে থাকে। আসহাব শব্দটি অনেক সময় অন্যদের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। যেমন বলা হয়, ইমাম আবূ হানীফা রহ.-এর আসহাব, ইমাম মালিক রহ.-এর আসহাব ইত্যাদি। তবে সাহাবী শব্দ দ্বারা বিশেষভাবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গীগণকেই বোঝানো হয়ে থাকে।

দুই.

এ হাদীছে দ্বিতীয়ত হাওয়ারী ও আসহাবের বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে যে, তারা নবীগণের সুন্নত ও আদর্শ অবলম্বন করতেন এবং তাঁদের আদেশ মেনে চলতেন। বস্তুত প্রত্যেক নবীর সঙ্গীগণ সেই নবীর শিক্ষা ও আদর্শের বাস্তব নমুনা হতেন। তাদের পরবর্তীকালের মানুষ নবীর শিক্ষা অনুসরণের জন্য তাদেরকে নমুনা ও আদর্শরূপে গ্রহণ করত। আমাদের নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণও ছিলেন তাঁর জীবনাদর্শের প্রতিচ্ছবি। কুরআন মাজীদে তাদেরকে ঈমানদারদের ঈমানের আদর্শরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং আমাদের জন্য সাহাবায়ে কিরামের কথা ও কাজ দীন ও ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ দলীল। তাই সকল মু'মিনের কর্তব্য সকল সাহাবীর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা বজায় রাখা এবং তাদের কথা ও কাজকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা।

তিন.

তারপর বলা হয়েছে-

إِنَّهَا تَخْلُفُ مِنْ بَعْدِهِمْ خُلُوفٌ

‘অতঃপর তাদের পরবর্তীকালে একদল নিকৃষ্ট উত্তরসূরী তাদের স্থলাভিষিক্ত হত।'

خلوف শব্দটি خلف -এর বহুবচন। জযমযুক্ত ل (লাম)-এর সাথে خلف -এর অর্থ নিকৃষ্ট স্থলাভিষিক্ত। কুরআন মাজীদে এ অর্থে শব্দটির ব্যবহার আছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে-

فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ

অর্থ : তারপর তাদের স্থলাভিষিক্ত হল এমন (নিকৃষ্ট) লোক, যারা নামায নষ্ট করল এবং ইন্দ্রিয়-চাহিদার অনুগামী হল। সূরা মারয়াম (১৯), আয়াত ৫৯
যদি ل (লাম)-এর ওপর যবর দিয়ে خلف বলা হয়, তবে অর্থ হবে উৎকৃষ্ট স্থলাভিষিক্ত। যেমন এক হাদীছে আছে-

يَحْمِلُ هَذَا الْعِلْمَ مِنْ كُلِّ خَلْفٍ عُدُولُهُ

প্রত্যেক (উৎকৃষ্ট) স্থলাভিষিক্তদের মধ্য থেকে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিগণ এ ইলম বহন করবে। মুসনাদুল বাযযার, হাদীছ নং ৯৪২২; ইমাম তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার, হাদীছ নং ৩৮৮৪; তাবারানী, মুসনাদুশ-শামিয়্যীন, হাদীছ নং ৫৯৯
এস্থলে প্রথম অর্থ বোঝানোই উদ্দেশ্য, যে কারণে পরে এদের চরিত্র বলা হয়েছে- "যারা এমন কথা বলত যা নিজেরা করত না আর এমন কাজ করত যা করার আদেশ তাদের করা হত না”। অর্থাৎ মুখে তো ভালো ভালো কথা বলত, মানুষের সামনে খুব সুন্দর সুন্দর ওয়াজ ও নসীহত করত, কিন্তু নিজেরা সে অনুযায়ী আমল করত না। বরং তারা এমন আমল করত, যা করতে তাদেরকে আদেশ করা হয়নি। অর্থাৎ তাদের আচার-আচরণ ছিল শরী'আতবিরোধী। এই চরিত্রের মানুষ বর্তমানকালেও অনেক আছে। তাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হয় অনেক বড় মুত্তাকী-পরহেযগার। কিন্তু কাছে গেলে হতাশ হতে হয়। তাদের কথাবার্তা ও ওয়াজ-নসীহতের সঙ্গে আমলের কোনও মিল পাওয়া যায় না।

বেআমল ওয়াজ-নসীহতকারীর জন্য সতর্কবাণী

কুরআন মাজীদে এ জাতীয় চরিত্রের নিন্দা করা হয়েছে। যেমন ইয়াহুদীদেরকে তিরস্কার করে বলা হয়েছে-

أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنْسَوْنَ أَنْفُسَكُمْ

তোমরা কি অন্য লোকদেরকে পুণ্যের আদেশ কর আর নিজেদেরকে ভুলে যাও? সূরা বাকারা (২), আয়াত ৪৪

এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

"رَأَيْتُ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي رجَالًا تقطعُ ألسنتُهم بمقاريض من النَّار فَقُلْتُ من هؤلاء؟ قال: هؤلاء خطباء من أمتك الَّذين يَأْمُرُونَ النَّاسَ بِمَا لَا يَفْعَلُونَ"

'মিরাজের রাতে আমি একদল লোককে দেখলাম, আগুনের কাচি দ্বারা যাদের জিহ্বা কাটা হচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরীল। এরা কারা? তিনি বললেন, এরা আপনার উম্মতের বক্তাগণ, যারা মানুষকে এমন কাজের আদেশ করত যা তারা নিজেরা পালন করত না। আত-তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৪১১
বেআমল ওয়ায়েজ ও বক্তা সম্পর্কে হাদীছ শরীফে আরও অনেক কঠোর সতর্কবাণী শোনানো হয়েছে। সুতরাং আমাদের সকলেরই সাবধান হওয়া দরকার। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে কথা অনুযায়ী কাজ করার তাওফীক দান করুন।
আবূ ‘উছমান হীরী রহ. বলেন, যে ব্যক্তি নিজে মুত্তাকী-পরহেযগার নয় অথচ মানুষকে তাকওয়া-পরহেযগারীর নসীহত করে, সে ওই চিকিৎসকের মত, যে মানুষের চিকিৎসা করে অথচ নিজেই একজন রোগী।

চার,

চতুর্থ পর্যায়ে অন্যায়-অপরাধ দেখলে কী করণীয় সে সম্পর্কে হিদায়াত দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ যারা অন্যকে ভালো ভালো কাজের হুকুম দেয় কিন্তু নিজেরা অন্যায়-অসৎকর্ম করে বেড়ায়, তাদের সঙ্গে আমাদের আচরণ কী হবে? এ হাদীছ বলছে, তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে। সে জিহাদের তিনটি স্তর আছে, যেমনটা এর আগের হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।

প্রকাশ থাকে যে, জিহাদ শব্দের উচ্চারণ করলেই মানুষের দৃষ্টি চলে যায় সসস্ত্র যুদ্ধ ও মারণাস্ত্র ব্যবহারের দিকে। অথচ সেটা জিহাদের সর্বশেষ পর্যায়, যার জন্য সুনির্দিষ্ট শর্ত ও রীতি-নীতি রয়েছে। দীন প্রতিষ্ঠা ও অপরাধ দমনের জিহাদ বলতে কেবল সেই সর্বশেষ স্তরকেই বোঝায় না; বরং তার পূর্ববর্তী স্তরসমূহও এর অন্তর্ভুক্ত, যেমন বাকশক্তি ও কলমের শক্তি ব্যবহার করা এবং এমন বাহুবল ব্যবহার করা যা হত্যা, রক্তপাত ও মারামারি পর্যন্ত পৌঁছায় না। পূর্বে হাদীছ উল্লেখ করা হয়েছে যে, জালেম শাসকের সামনে সত্য কথা বলা শ্রেষ্ঠতম জিহাদ।

পাঁচ.

সবশেষে বলা হয়েছে-

وليس وراء ذلِكَ مِنَ الْإِيْمَانِ حَبَّةُ خَرْدَلٍ

এরপর আর সরিষার দানা পরিমাণও ঈমানের স্তর নেই।
এখানে 'ঈমান' বলে ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ শাখা 'সৎকাজের আদেশ করা ও অসৎকাজে নিষেধ করা'-কে বোঝানো হয়েছে। কোনও অন্যায় কাজ হতে দেখলে তা হাত দিয়ে ফেরানো এ শাখাটির সর্বোচ্চ স্তর। দ্বিতীয় স্তর হচ্ছে মুখের কথা দ্বারা তাকে ফেরানোর চেষ্টা করা। আর সর্বনিম্ন স্তর হল মনে মনে সে অন্যায়ের প্রতি ঘৃণা পোষণ করা। এর নিচে কোনও স্তর নেই। সুতরাং যার অন্তরে সে ঘৃণাটুকু নেই, তার অন্তরে ঈমানের এই শাখার সরিষার দানা পরিমাণও অবশিষ্ট নেই। তার ঈমানের অন্যান্য শাখা ঠিক থাকলে সে মু'মিন বটে, কিন্তু এই শাখাটির অবর্তমানে তার ঈমান ত্রুটিপূর্ণ এবং সে এক অসম্পূর্ণ মু'মিন।
অবশ্য যে অন্যায় ও অপরাধ কুফর পর্যায়ের, সে সম্পর্কে যদি অন্তরে ঘৃণা না থাকে; বরং থাকে সন্তুষ্টি, তবে তো তা সরাসরি কুফর। এরূপ ব্যক্তি পুরোপুরিই ঈমান থেকে খারিজ। সে আদৌ মু'মিন নয়।

এরকমও বলা যায় যে, চোখের সামনে অসৎকাজ হতে দেখলে তা ফেরানোর চেষ্টা করা ঈমানের আলামত। হাত দিয়ে তা ফেরানোর চেষ্টা করা উচ্চস্তরের আলামত। কথা দিয়ে ফেরানোর চেষ্টা করা দ্বিতীয় পর্যায়ের আলামত। আর অন্তর দিয়ে ঘৃণা করা সর্বশেষ আলামত। এ আলামতটি বোঝা যায় আচার-আচরণ দ্বারা। অর্থাৎ যার অন্তরে সেই ঘৃণা আছে, সে অপরাধকারী ব্যক্তিকে পাশ কাটিয়ে চলবে এবং কিছুতেই তার সঙ্গে অন্তরঙ্গ হয়ে চলবে না। অন্তরে ঘৃণা পোষণের নিচে আর কোনও আলামত নেই। সুতরাং যে ব্যক্তির সামনে কোনও অসৎকর্ম হয় আর তা দেখেও সে তার প্রতি অন্তরে ঘৃণা পোষণ করে না, সে বাস্তবিকপক্ষে মু'মিন হলেও বাহ্যত তার আলামত পাওয়া যাচ্ছে না। সেদিকেই ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে যে, এর নিচে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান নেই অর্থাৎ ঈমানের আলামত নেই।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. আন্তরিকভাবে দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত করা সত্ত্বেও যদি মানুষের পক্ষ থেকে কোনও সাড়া না পাওয়া যায়, তবে মেহনত বৃথা গেছে বলে মনে করা ঠিক নয়। যেমন কোনও কোনও নবীর দাওয়াতে একজনও সাড়া দেয়নি, তাই বলে সে নবী তো ব্যর্থ নন। বস্তুত মেহনত করতে পারাটাই সফলতা। আল্লাহ তা'আলার কাছে অবশ্যই এর প্রতিদান পাওয়া যাবে।

খ. যে ব্যক্তি সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে, তাকে অবশ্যই নিজ আমলের যত্ন নিতে হবে। বেআমল ওয়ায়েজ হওয়াটা অত্যন্ত বিপজ্জনক।

গ. সৎকাজের আদেশ করা ও অসৎকাজে নিষেধ করা ঈমানদার ব্যক্তির অবশ্যকর্তব্য। তার কর্তব্য বেআমল ওয়ায়েজকে আমলের দিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা। সে চেষ্টা জিহাদের মর্যাদা রাখে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান