আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ
১৮. অধ্যায়ঃ পানাহার সংশ্লিষ্ট বিষয়
হাদীস নং: ৩২৪৯
অধ্যায়ঃ পানাহার সংশ্লিষ্ট বিষয়
অতিভোজ ও অহংকারবশত পানাহারে প্রাচুর্য অবলম্বনের প্রতি ভীতি প্রদর্শন
৩২৪৯. হযরত মিকদাম ইবনে মাদী কারিব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি: বনী আদমের পাত্র সমূহের মধ্যে উদরপূর্তি অপেক্ষা নিকৃষ্ট (কোন পাত্র) নেই। বনী আদামের অল্প আহার যথেষ্ট মনে করা উচিত। যাতে সে চলাচল করতে পারে। যদি তাতে না হয় তাহলে এক তৃতীয়াংশ খাদ্য, এক তৃতীয়াংশ পানি এবং এক তৃতীয়াংশ নিজের জন্য খালি রাখবে।
(তিরমিযী বর্ণিত। তিনি বলেন: হাদীসটি হাসান। ইবনে মাজাহ ও ইবনে হিব্বানের সহীহ গ্রন্থে বর্ণিত। তবে ইবনে মাজাহর বর্ণনায় আছেঃ "যদি তার প্রবৃত্তি আরো চায়, তাহলে খাদ্য এক তৃতীয়াংশ"।
আল-হাদীস।)
(তিরমিযী বর্ণিত। তিনি বলেন: হাদীসটি হাসান। ইবনে মাজাহ ও ইবনে হিব্বানের সহীহ গ্রন্থে বর্ণিত। তবে ইবনে মাজাহর বর্ণনায় আছেঃ "যদি তার প্রবৃত্তি আরো চায়, তাহলে খাদ্য এক তৃতীয়াংশ"।
আল-হাদীস।)
كتاب الطعام
التَّرْهِيب من الإمعان فِي الشِّبَع والتوسع فِي المآكل والمشارب شَرها وبطرا
3249- وَعَن الْمِقْدَام بن معديكرب رَضِي الله عَنهُ قَالَ سَمِعت رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَقُول مَا مَلأ آدَمِيّ وعَاء شرا من بطن بِحَسب ابْن آدم أكيلات يقمن صلبه فَإِن كَانَ لَا محَالة فثلث لطعامه وَثلث لشرابه وَثلث لنَفسِهِ
رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَحسنه وَابْن مَاجَه وَابْن حبَان فِي صَحِيحه إِلَّا أَن ابْن مَاجَه قَالَ فَإِن غلبت الْآدَمِيّ نَفسه فثلث للطعام الحَدِيث
رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَحسنه وَابْن مَاجَه وَابْن حبَان فِي صَحِيحه إِلَّا أَن ابْن مَاجَه قَالَ فَإِن غلبت الْآدَمِيّ نَفسه فثلث للطعام الحَدِيث
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে প্রথমে পেটকে পাত্রের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। পাত্রের ভেতর যেমন জরুরি জিনিসপত্র রাখা হয়, পেটও যেন সেরকম একটি পাত্র, যার মধ্যে খাদ্য-পানীয় রাখা হয়। এ তুলনা দ্বারা পরোক্ষভাবে পেটকে একটি তুচ্ছ বস্তু সাব্যস্ত করা হয়েছে। তারপর আবার পাত্রের ভেতরও পেটকে বলা হয়েছে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট পাত্র। পেট সৃষ্টি করা হয়েছে খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে মেরুদণ্ড সোজা করার জন্য। সেদিক থেকে নিঃসন্দেহে পেট একটি উপকারী অঙ্গ। কিন্তু এ পেটকেই যদি পানাহার দ্বারা সর্বদা ভরে রাখার চেষ্টায় থাকায় হয়, তখন তা দীন ও দুনিয়া ধ্বংসের কারণ হয়ে যায়।
বস্তুত ভরপেট খাওয়া পশুদের কাজ। তাদের কাজই কেবল খাওয়া আর খাওয়া। যারা কেবল খাওয়াকেই কাজ বানিয়ে নেয়, তারা পশুরই মতো। তাই এটা মুমিনদের সাজে না। কাফেরগণ যেহেতু আখিরাত চায় না, তাই ভরপেট খাওয়া তাদেরই সাজে। তাইতো কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
ذَرْهُمْ يَأْكُلُوا وَيَتَمَتَّعُوا وَيُلْهِهِمُ الْأَمَلُ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ
(হে নবী!) তাদেরকে তাদের হালে ছেড়ে দাও- তারা খেয়ে নিক, ফুর্তি ওড়াক এবং অসার আশা তাদেরকে উদাসীন করে রাখুক। শীঘ্রই তারা জানতে পারবে (প্রকৃত সত্য কী ছিল)।
যাহোক, ভরপেট খাওয়ার অপকারিতার দিকে লক্ষ করেই একে নিকৃষ্ট পাত্র বলা হয়েছে। কাজেই সম্পূর্ণ পেট ভরে পানাহার করা উচিত নয়। তাহলে কী পরিমাণ খাবে? হাদীছে বলা হয়েছে-
ما ملأ آدمي وعاء شرا من بطن، بحسب ابن آدم أكلات يقمن صلبه
(আদম সন্তানের এমন কয়েক লোকমা খাবারই যথেষ্ট, যা দ্বারা মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পারে)। অর্থাৎ যতটুকু খেলে ক্ষুধা মেটে ততটুকুই খাবে, তার বেশি নয়। যে পরিমাণ খাবার দ্বারা ক্ষুধাও মেটে, স্বাস্থ্যও রক্ষা হয়। অর্থাৎ পরিমিত খাবার খাবে। শরীরের পুষ্টি ও শক্তির জন্য বেশি খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ক্ষুধা মেটে পরিমাণ খাওয়াই যথেষ্ট। বেশি খাওয়ার দ্বারা বেশি পুষ্টি লাভ হয়। এমন নয়; বরং তাতে উপকারের বদলে ক্ষতিই বেশি হয়। নানা রোগ-ব্যাধি দেখা দেয়। হজম শক্তির একটা মাত্রা আছে। সে মাত্রার বেশি খেলে হজম শক্তি তা বরদাশত করতে পারে না। ফলে বদহজমী দেখা দেয়। ক্রমান্বয়ে এ শক্তি যায় দুর্বল হয়ে। একপর্যায়ে পরিমিত খাবারও হজম করা সম্ভব হয় না। সুতরাং অপরিমিত খাবার থেকে বেঁচে থাকা অতি জরুরি।
হাদীছে প্রথমত কয়েক লোকমা খাবারকেই যথেষ্ট বলা হয়েছে। তবে অনেকেই হয়তো এত সামান্য খাবার খেয়ে চলতে পারবে না। কষ্ট হবে। তাছাড়া সেই কয়েক লোকমা ঠিক কত লোকমা, তাও অনেকের পক্ষে নির্ধারণ করা সম্ভব হবে না। তাই একটা পরিষ্কার মাপকাঠি বলে দেওয়া হয়েছে। আর তা হচ্ছে-
فإن كان لا محالة فثلث لطعامه، وثلث لشرابه، وثلث لنفسه (একান্ত যদি আরও বেশি প্রয়োজনই হয়, তবে পেটের এক-তৃতীয়াংশ রাখবে খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য)। অর্থাৎ পেটের তিন ভাগের একভাগ খালি রেখে পানাহার করবে। তাতে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে আসান হয়। আসানীর সঙ্গে শ্বাস নিতে পারাটাও সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।
একান্ত বেশি প্রয়োজন হলে কথাটি বলে শেষ সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে যে, সর্বোচ্চ খাবে পেটের ধারণক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ, তার বেশি নয়।
হযরত উমর রাযি. বলেন, সাবধান! পেট ভরে পানাহার করবে না। এতে শরীর নষ্ট হয়, অসুখ-বিসুখ দেখা দেয় এবং নামাযে আলস্য লাগে। পরিমিত খাবে। এটাই শরীরের জন্য উপযোগী। তাছাড়া তাতে অপব্যয় থেকেও বাঁচা যায়।
ইমাম গাযালী রহ. বলেন, জনৈক চিকিৎসা বিজ্ঞানীর সামনে এ হাদীছটি উল্লেখ করা হলে তিনি বলেছিলেন, অল্পাহার সম্পর্কে এরচে' সুস্পষ্ট নির্দেশনামূলক কথা আর শোনা যায়নি।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. ভূরিভোজনে অভ্যস্ত হওয়া উচিত নয়। মুমিনের পক্ষে এটা নিন্দনীয়।
খ. পরিমিত পানাহারই শরীআতের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের জন্যও উপযোগী।
গ. দুনিয়ার ভোগ-উপভোগে যত কম লিপ্ত হওয়া যায়, ততোই শ্রেয়।
বস্তুত ভরপেট খাওয়া পশুদের কাজ। তাদের কাজই কেবল খাওয়া আর খাওয়া। যারা কেবল খাওয়াকেই কাজ বানিয়ে নেয়, তারা পশুরই মতো। তাই এটা মুমিনদের সাজে না। কাফেরগণ যেহেতু আখিরাত চায় না, তাই ভরপেট খাওয়া তাদেরই সাজে। তাইতো কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
ذَرْهُمْ يَأْكُلُوا وَيَتَمَتَّعُوا وَيُلْهِهِمُ الْأَمَلُ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ
(হে নবী!) তাদেরকে তাদের হালে ছেড়ে দাও- তারা খেয়ে নিক, ফুর্তি ওড়াক এবং অসার আশা তাদেরকে উদাসীন করে রাখুক। শীঘ্রই তারা জানতে পারবে (প্রকৃত সত্য কী ছিল)।
যাহোক, ভরপেট খাওয়ার অপকারিতার দিকে লক্ষ করেই একে নিকৃষ্ট পাত্র বলা হয়েছে। কাজেই সম্পূর্ণ পেট ভরে পানাহার করা উচিত নয়। তাহলে কী পরিমাণ খাবে? হাদীছে বলা হয়েছে-
ما ملأ آدمي وعاء شرا من بطن، بحسب ابن آدم أكلات يقمن صلبه
(আদম সন্তানের এমন কয়েক লোকমা খাবারই যথেষ্ট, যা দ্বারা মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পারে)। অর্থাৎ যতটুকু খেলে ক্ষুধা মেটে ততটুকুই খাবে, তার বেশি নয়। যে পরিমাণ খাবার দ্বারা ক্ষুধাও মেটে, স্বাস্থ্যও রক্ষা হয়। অর্থাৎ পরিমিত খাবার খাবে। শরীরের পুষ্টি ও শক্তির জন্য বেশি খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ক্ষুধা মেটে পরিমাণ খাওয়াই যথেষ্ট। বেশি খাওয়ার দ্বারা বেশি পুষ্টি লাভ হয়। এমন নয়; বরং তাতে উপকারের বদলে ক্ষতিই বেশি হয়। নানা রোগ-ব্যাধি দেখা দেয়। হজম শক্তির একটা মাত্রা আছে। সে মাত্রার বেশি খেলে হজম শক্তি তা বরদাশত করতে পারে না। ফলে বদহজমী দেখা দেয়। ক্রমান্বয়ে এ শক্তি যায় দুর্বল হয়ে। একপর্যায়ে পরিমিত খাবারও হজম করা সম্ভব হয় না। সুতরাং অপরিমিত খাবার থেকে বেঁচে থাকা অতি জরুরি।
হাদীছে প্রথমত কয়েক লোকমা খাবারকেই যথেষ্ট বলা হয়েছে। তবে অনেকেই হয়তো এত সামান্য খাবার খেয়ে চলতে পারবে না। কষ্ট হবে। তাছাড়া সেই কয়েক লোকমা ঠিক কত লোকমা, তাও অনেকের পক্ষে নির্ধারণ করা সম্ভব হবে না। তাই একটা পরিষ্কার মাপকাঠি বলে দেওয়া হয়েছে। আর তা হচ্ছে-
فإن كان لا محالة فثلث لطعامه، وثلث لشرابه، وثلث لنفسه (একান্ত যদি আরও বেশি প্রয়োজনই হয়, তবে পেটের এক-তৃতীয়াংশ রাখবে খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য)। অর্থাৎ পেটের তিন ভাগের একভাগ খালি রেখে পানাহার করবে। তাতে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে আসান হয়। আসানীর সঙ্গে শ্বাস নিতে পারাটাও সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।
একান্ত বেশি প্রয়োজন হলে কথাটি বলে শেষ সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে যে, সর্বোচ্চ খাবে পেটের ধারণক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ, তার বেশি নয়।
হযরত উমর রাযি. বলেন, সাবধান! পেট ভরে পানাহার করবে না। এতে শরীর নষ্ট হয়, অসুখ-বিসুখ দেখা দেয় এবং নামাযে আলস্য লাগে। পরিমিত খাবে। এটাই শরীরের জন্য উপযোগী। তাছাড়া তাতে অপব্যয় থেকেও বাঁচা যায়।
ইমাম গাযালী রহ. বলেন, জনৈক চিকিৎসা বিজ্ঞানীর সামনে এ হাদীছটি উল্লেখ করা হলে তিনি বলেছিলেন, অল্পাহার সম্পর্কে এরচে' সুস্পষ্ট নির্দেশনামূলক কথা আর শোনা যায়নি।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. ভূরিভোজনে অভ্যস্ত হওয়া উচিত নয়। মুমিনের পক্ষে এটা নিন্দনীয়।
খ. পরিমিত পানাহারই শরীআতের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের জন্যও উপযোগী।
গ. দুনিয়ার ভোগ-উপভোগে যত কম লিপ্ত হওয়া যায়, ততোই শ্রেয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)