আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

১৬. অধ্যায়ঃ বিবাহ সংশ্লিষ্ট বিষয়

হাদীস নং: ৩০৬৩
অধ্যায়ঃ বিবাহ সংশ্লিষ্ট বিষয়
যার তিনটি সন্তান অথবা দু'টি সন্তান অথবা একটি সন্তান মারা যায়, তার প্রচুর সাওয়াব লাভ সম্পর্কিত আলোচনা ও অনুপ্রেরণা
৩০৬৩. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: কোন মুসলিম ব্যক্তির তিনটি নাবালক সন্তান মারা গেলে তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না, তবে শপথ ভঙ্গের বিষয়টি স্বতন্ত্র।
(মালিক, বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ বর্ণিত।
মুসলিমের বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আনসার মহিলাদের উদ্দেশ্যে বলেনঃ তোমাদের কারো তিনটি সন্তান মারা যাওয়া সত্ত্বেও যে সাওয়াবের আশা করে, সে জান্নাতী। তাদের মধ্যকার এক মহিলা তাবারানীর বর্ণনানুযায়ী তিনি ছিলেন আনাস (রা)-এর মা হযরত উম্মু সুলায়ম (রা) বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! দু'টি সন্তান মারা গেলে। তিনি বললেন: দু'টি সন্তান মারা গেলেও। তাঁর অন্য এক বর্ণনায় আছে, এক মহিলা একটি বালক নিয়ে (নবী (ﷺ)-এর নিকট) এলো। সে বলল, ইয়া নবী আল্লাহ! আপনি আল্লাহর কাছে আমার জন্য দু'আ করুন। কেননা আমি তিনটি সন্তান দাফন করেছি।
তিনি বললেন: তুমি তিনটি সন্তান দাফন করেছ? সে বলল, হাঁ। তিনি বললেনঃ তুমি তো জাহান্নামের দিকে
শক্তিশালী প্রাচীর স্থাপন করেছ।
الحظار চতুর্দিক বেষ্টনী দেওয়াল, যা কাউকে বিরত রাখে। অর্থাৎ জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে তুমি নিজকে রক্ষা করেছ।)
كتاب النكاح
ترغيب من مَاتَ لَهُ ثَلَاثَة من الْأَوْلَاد أَو اثْنَان أَو وَاحِد فِيمَا يذكر من جزيل الثَّوَاب
3063- وَعَن أبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم لَا يَمُوت لأحد من
الْمُسلمين ثَلَاثَة من الْوَلَد فَتَمَسهُ النَّار إِلَّا تَحِلَّة الْقسم

رَوَاهُ مَالك وَالْبُخَارِيّ وَمُسلم وَالتِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه
وَلمُسلم أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ لنسوة من الْأَنْصَار لَا يَمُوت لاحداكن ثَلَاثَة من الْوَلَد فتحتسبه إِلَّا دخلت الْجنَّة
فَقَالَت امْرَأَة مِنْهُنَّ أَو اثْنَان يَا رَسُول الله قَالَ أَو اثْنَان
وَفِي أُخْرَى لَهُ أَيْضا قَالَ أَتَت امْرَأَة بصبي لَهَا فَقَالَت يَا نَبِي الله ادْع الله لي فَلَقَد دفنت ثَلَاثَة فَقَالَ أدفنت ثَلَاثَة قَالَت نعم
قَالَ لقد احتظرت بحظار شَدِيد من النَّار
الحظار بِكَسْر الْحَاء الْمُهْملَة وبالظاء الْمُعْجَمَة هُوَ الْحَائِط يَجْعَل حول الشَّيْء كالسور الْمَانِع وَمَعْنَاهُ لقد احتميت وتحصنت من النَّار بحمى عَظِيم وحصن حُصَيْن

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে সাধারণভাবে সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, যার তিনটি সন্তান মারা যায়, জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ করবে না। অর্থাস সে অবশ্যই জাহান্নাম থেকে মুক্ত থাকবে এবং জান্নাত লাভ করবে। অবশ্য যারা জান্নাত লাভ করবে, তাদেরকেও জান্নাতে যেতে হবে জাহান্নামের উপর দিয়েই। সে সম্পর্কেই এ হাদীছটির শেষে বলা হয়েছে-
إلا تحلة القسم (তবে কসম পূরণ করার বিষয়টা ভিন্ন।) ইমাম নববী রহ. এর ব্যাখ্যা করেছেন, কসম পূরণ করার দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে আল্লাহ তা'আলার এ বাণীর দিকে যে- وَإِنْ مِنْكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا (তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তা (অর্থাৎ জাহান্নাম) অতিক্রম করবে না)। এ অতিক্রম দ্বারা পুলসিরাত অতিক্রম করার কথা বোঝানো হয়েছে। এটা জাহান্নামের উপর স্থাপিত একটি সেতু।

হাদীছটিতে বোঝানো হয়েছে যে, যার তিনটি সন্তান মারা যায় আর তাতে সে ধৈর্যধারণ করে, সে অবশ্যই জান্নাতবাসী হবে। সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। তবে জাহান্নামে প্রবেশ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলার যে কসম রয়েছে, সে কসম পূরণের জন্য তাকে ক্ষণিকের জন্য অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করতে হবে। সে প্রবেশ এভাবে যে, জাহান্নামের উপর যে পুলসিরাত আছে সে পুলসিরাতের উপর দিয়ে সকলকেই যেতে হবে। যারা জাহান্নামী, তারা সেই ক্ষুরধার পুলসিরাতে কাটা পড়বে এবং জাহান্নামের গর্তে পতিত হবে। আর যারা জান্নাতবাসী, তারা বিভিন্ন গতিতে পুলসিরাত পার হয়ে যাবে। যেমন এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
يَرِدُ النَّاسُ النَّارَ، ثُمَّ يَصْدُرُونَ مِنْهَا بِأَعْمَالِهِمْ فَأَوَّلُهُمْ كَلَمْحِ الْبَرْقِ، ثُمَّ كَالرِّيحِ، ثُمَّ كَحُضْرِ الْفَرَسِ، ثُمَّ كَالرَّاكِبِ فِي رَحْلِهِ، ثُمَّ كَشَدِّ الرَّجُلِ، ثُمَّ كَمَشْيِهِ
'সমস্ত মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তারপর তারা নিজ নিজ আমল অনুযায়ী তা থেকে বের হবে। সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি বের হবে, সে বের হবে বিদ্যুৎগতিতে। তার পরের ব্যক্তি বের হবে বায়ুর গতিতে। তার পরের ব্যক্তি বের হবে ঘোড়ার গতিতে। তারপর পরের ব্যক্তি বের হবে উষ্ট্রারোহীর গতিতে। তার পরের ব্যক্তি বের হবে দৌড়ের গতিতে। তারপর হেঁটে চলার গতিতে।’ (জামে' তিরমিযী: ২১৫৯; সুনানে দারিমী: ২৮৫২; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৩৪২১)

যদিও মুমিনদেরকে জাহান্নামের উপর স্থাপিত পুলসিরাত অতিক্রম করতে হবে, আল্লাহ তা'আলার রহমত ও কুদরতে তারা সম্পূর্ণ অক্ষত থাকবে। এমনকি জাহান্নামের আগুনের উত্তাপও তাদের গায়ে লাগবে না। তাদের কাছে সে আগুনের উত্তাপ শীতল বোধ হবে। যেমন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَا يَبْقَى بَرٌّ وَلَا فَاجِرٌ إِلَّا دَخَلَهَا، فَتَكُونُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ بَرْدًا وَسَلَامًا كَمَا كَانَتْ عَلَى إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ
'পুণ্যবান ও পাপী সকলকেই জাহান্নামে প্রবেশ করতে হবে। তবে মুমিনদের জন্য তা শীতল ও শান্তিদায়ক হবে, যেমন ইবরাহীম আলাইহিস সালামের উপর শীতল ও শান্তিদায়ক হয়েছিল।’ (বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ৩৬৪; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৮৭৪৪)

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সন্তানের মৃত্যুতে পিতা-মাতার সবরের পরিচয় দেওয়া উচিত।

খ. সন্তানের মৃত্যু বাহ্যত মসিবত হলেও প্রকৃতপক্ষে পিতা-মাতার জন্য তা আল্লাহর রহমত এবং তা তাদের জন্য জান্নাতলাভের অসিলা।

গ. জান্নাতবাসীদেরকেও জাহান্নামের উপর স্থাপিত পুলসিরাত পার হতে হবে।

ঘ. জাহান্নামের উপর দিয়ে অতিক্রমকালে জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ জান্নাতবাসীদের গায়ে লাগবে না।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান