আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

১৬. অধ্যায়ঃ বিবাহ সংশ্লিষ্ট বিষয়

হাদীস নং: ৩০১২
অধ্যায়ঃ বিবাহ সংশ্লিষ্ট বিষয়
স্ত্রী ও পরিবার-পরিজনের খোরপোষ সংস্থানের প্রতি অনুপ্রেরণা এবং তাদের প্রতি অবজ্ঞা করার প্রতি ভীতি প্রদর্শন এবং কন্যাদের খোরপোষ এবং তাদের আদব ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া প্রসঙ্গে
৩০১২. হযরত সা'দ ইবনে আবু ওয়াক্‌কাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাকে বলেন: তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে যা কিছু ব্যয় কর, এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে যে গ্রাস তুলে দাও, তার বিনিময়ে আল্লাহর কাছে তোমার জন্য সাওয়াব রয়েছে।
(ইমাম বুখারী ও মুসলিম-এর সুদীর্ঘ হাদীসের বর্ণনা থেকে।)
كتاب النكاح
التَّرْغِيب فِي النَّفَقَة على الزَّوْجَة والعيال والترهيب من إضاعتهم وَمَا جَاءَ فِي النَّفَقَة على الْبَنَات وتأديبهن
3012- وَعَن سعد بن أبي وَقاص رَضِي الله عَنهُ أَن رَسُول الله قَالَ لَهُ وَأَنَّك لن تنْفق نَفَقَة تبتغي بهَا وَجه الله إِلَّا أجرت عَلَيْهَا حَتَّى مَا تجْعَل فِي فِي امْرَأَتك

رَوَاهُ البُخَارِيّ وَمُسلم فِي حَدِيث طَوِيل

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত সা'দ ইবন আবী ওয়াক্কাস রাযি.-কে জানান যে, তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যে খাতেই ব্যয় কর না কেন, তাতে অবশ্যই ছাওয়াব পাবে, তাতে তোমার দানের পরিমাণ অল্প হোক বা বেশি। অবশ্য ব্যয়ের খাত শরীআতসম্মত হওয়া জরুরি। শরীআতবিরোধী কোনও কাজে ব্যয় করলে ছাওয়াব তো নয়ই, উল্টো গুনাহ হয়।
স্ত্রী ও সন্তানদের হক আদায়ার্থে যে অর্থ ব্যয় করা হয়, তাতেও ছওয়াব পাওয়া যায়। এ হাদীছে বলা হয়েছে যে, এমনকি স্ত্রীর মুখে যদি কোনও লোকমা তুলে দেওয়া হয়, তবে তাও ছওয়াবের কাজরূপে গণ্য হয়। এমন নয় যে, স্ত্রীর প্রতি খরচে স্বভাবগত মহব্বত ও আসক্তি কার্যকর থাকে বলে তা ছাওয়াবের পক্ষে বাধা হবে।বিবাহের পর স্ত্রীর খোরপোশ দেওয়া স্বামীর কর্তব্য। সে কর্তব্য পালন শরীআতেরই হুকুম। শরীআতের হুকুম পালন তো ছাওয়াবেরই কাজ। এমনিভাবে স্বামী-স্ত্রীর মহব্বতও আল্লাহ তাআলার কুদরতের নিদর্শন। সে হিসেবে এ মহব্বত তার প্রতি অর্থব্যয়ে অনুপ্রেরণা যোগায়ও বৈকি। সে অনুপ্রেরণায় যদি অর্থব্যয় করা হয়, তবে তা পারস্পরিক মহব্বত বৃদ্ধিতেও সহায়ক হয়, যা শরীআতে কাম্য। এদিক থেকেও তা ছাওয়াবের কাজই বটে।
উল্লেখ্য, স্ত্রীর পেছনে হোক বা অন্য কারও পেছনে, সর্বাবস্থায়ই অর্থব্যয় হওয়া চাই শরীআতের সীমারেখার মধ্যে। স্ত্রীর খেয়াল-খুশি পূরণের জন্য কিংবা নিজের বাড়তি আহ্লাদ মেটানোর উদ্দেশ্যে যদি ব্যয় করা হয় আর তা শরীআত অনুমোদিত কাজে না হয়, তবে তা নিছক অপব্যয় ও অপচয়। এতে ছাওয়াবের পরিবর্তে উল্টো গুনাহ হয়। এ ব্যাপারে সকলেরই সতর্ক থাকা জরুরি।
মোটকথা যে অর্থব্যয় আল্লাহর সন্তুষ্টিতে হয়, যা হয় দীন ও ঈমানের তাকাযায় এবং হয় শরীআতের সীমারেখার ভেতর, তাতে অবশ্যই ছাওয়াব আছে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কোনও খাতে টাকা-পয়সা খরচ করার দ্বারা ছাওয়াব পাওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে তা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিলাভের জন্য হওয়া।

খ. শরীআতসম্মত যে-কোনও খাতেই খরচ করার দ্বারা ছাওয়াব পাওয়া যায়, তাতে খরচের পরিমাণ কম হোক বা বেশি।

গ. স্ত্রীর মুখে লোকমা তুলে দেওয়া তথা তার পেছনে শরীআতসম্মত যে-কোনও ব্যয় দ্বারা ছাওয়াব পাওয়া যায়।

ঘ. স্ত্রীর মুখে লোকমা তুলে দেওয়ার কথাটি দ্বারা স্ত্রীকে আদর-সোহাগ করার প্রতি উৎসাহ পাওয়া যায়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান