আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

১৪. অধ্যায়ঃ যিকির ও দু‘আ

হাদীস নং: ২৬০৬
অধ্যায়ঃ যিকির ও দু‘আ
সর্বদা বেশি করে নবী করীম (ﷺ) -এর প্রতি দরূদ পাঠের ব্যাপারে উৎসাহ দান ও তাঁর আলোচনার সময় যে ব্যক্তি দরূদ পাঠ করে না, তার সম্পর্কে সতর্কবাণী
২৬০৬. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকেই বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি ধূসরিত হোক (অর্থাৎ সে ব্যক্তি চরম লাঞ্ছিত হোক) যার সামনে আমার আলোচনা হল অথচ আমার প্রতি দরূদ পড়ল না। ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি ধূসরিত হোক, যার নিকট রমযান আসল এবং চলে গেল অথচ তার মাগফিরাত হল না। ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি ধূসরিত হোক, যে বৃদ্ধাবস্থায় তার পিতামাতাকে পেল অথচ তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাল না।
(হাদীসটি তিরমিযী বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেনঃঃ এ হাদীসটি হাসান-গরীব।)
كتاب الذّكر وَالدُّعَاء
التَّرْغِيب فِي إكثار الصَّلَاة على النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم والترهيب من تَركهَا عِنْد ذكره صلى الله عَلَيْهِ وَسلم كثيرا دَائِما
2606- وَعَن أبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم رغم أنف رجل ذكرت عِنْده فَلم يصل عَليّ وَرَغمَ أنف رجل دخل عَلَيْهِ رَمَضَان ثمَّ انْسَلَخَ قبل أَن يغْفر لَهُ وَرَغمَ أنف رجل أدْرك عِنْده أَبَوَاهُ الْكبر فَلم يدْخلَاهُ الْجنَّة

رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَقَالَ حَدِيث حسن غَرِيب

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছ জানাচ্ছে পিতা-মাতার দু'জনকেই বা তাদের কোনও একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পাওয়া জান্নাতলাভের একটি উপায়। এ অবস্থায় তাদের সেবাযত্ন করলে জান্নাত লাভ হয়। কাজেই কেউ যদি তার পিতা-মাতাকে বা তাদের কোনও একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পায়, তবে তার কর্তব্য তাদের সেবাযত্নে লিপ্ত থাকা। এটা করলে তা তার জন্য জান্নাতলাভের একটি বড় উপায় হবে। কিন্তু কেউ যদি এতে অবহেলা করে এবং বৃদ্ধ পিতা-মাতার সেবাযত্ন করা হতে বিরত থাকে, তবে সে বড় হতভাগা। সে সুযোগ পেয়েও জান্নাতলাভ থেকে বঞ্চিত থাকল এবং নিজের জন্য জাহান্নাম অবধারিত করে নিল।

বস্তুত পিতা-মাতার সেবাযত্নে অবহেলা করে এমন লোকই, যে নিজের খেয়াল-খুশিমত চলে এবং আল্লাহকে খুশি করার পরিবর্তে মনের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত থাকে। নিজ খেয়াল-খুশিমত চলা ও মনের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত থাকার দ্বারা যা হয় তা আল্লাহ তাআলার নাফরমানি ও পাপকর্ম ছাড়া আর কিছুই নয়। পাপকর্মের পরিণাম কেবলই জাহান্নাম। এ ব্যক্তি যেন জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নামের পথই বেছে নেয়। জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নাম বেছে নেওয়া মনুষ্যত্বের পরম লাঞ্ছনা।

হাদীছে আছে যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে উঠছিলেন। এ অবস্থায় পরপর তিনবার আমীন বললেন। পরে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে জানিয়েছিলেন যে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উপরে বর্ণিত তিন ব্যক্তির প্রতি লাঞ্ছিত হওয়ার অভিশাপ দিচ্ছিলেন আর তিনি তাতে আমীন বলছিলেন।৭৩

একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায় এটা কত বড় ভয়ের কথা। সর্বশ্রেষ্ঠ ফিরিশতা হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম বদ্দুআ করছেন আর তার জবাবে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমীন বলছেন! এটা কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোনও সন্দেহ থাকে কি? আল্লাহ, ফিরিশতা, নবী-রাসূল ও আখেরাতের উপর যার ঈমান আছে, তার তো এ বদ্দুআ শুনে ভয়ে কেঁপে উঠার কথা। এ অভিশাপ থেকে বাঁচার লক্ষ্যে প্রত্যেক মুমিনের উচিত অতি সতর্কতার সঙ্গে হাদীছে বর্ণিত এ তিনওটি বিষয়ে মনোযোগী থাকা। অর্থাৎ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শুনলে ভক্তি ও মহব্বতের সঙ্গে দুরূদ পাঠ করবে, রমযান মাস আসলে সবরকম গুনাহ হতে বিরত থেকে একজন খাঁটি বান্দা ও সাচ্চা মুসলিমরূপে এ মাসটি কাটাবে এবং পরম যত্নের সঙ্গে বৃদ্ধ পিতা-মাতার সেবাযত্ন করবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. পিতা-মাতার বার্ধক্য অবস্থায় তাদের সেবাযত্ন করা জান্নাতলাভের একটি বড় উপায় ।

খ. বৃদ্ধ পিতা-মাতার খেদমত করার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও তাতে অবহেলা করার পরিণাম দুনিয়া ও আখেরাতের চরম লাঞ্ছনা ও অপদস্থতা।

৭৩. বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৬৪৪; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৩১৫; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১৪৭১
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান