আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

৮. অধ্যায়ঃ সদকা

হাদীস নং: ১২৪৩
অধ্যায়ঃ সদকা
ভিক্ষাবৃত্তির প্রতি ভীতি প্রদর্শন, ধনী ব্যক্তির ভিক্ষাবৃত্তির আশ্রয় নেয়া হারাম হওয়া, লোভ-লালসার নিন্দা এবং লোভ-লালসা থেকে পবিত্র থাকা, অল্পে তুষ্টি এবং নিজ হাতে উপার্জিত বস্তু খাওয়ার প্রতি অনুপ্রেরণা
১২৪৩. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: তোমাদের কারো পিঠে কাঠের বোঝা বহন করা (এবং তা বিক্রি করা), কারো কাছে কিছু চাওয়া অপেক্ষা উত্তম। হয়ত লোকে তাকে কিছু দেবে নতুবা কিছু দেবে না।
(মালিক, বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী ও নাসাঈ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
كتاب الصَّدقَات
التَّرْهِيب من الْمَسْأَلَة وتحريمها مَعَ الْغنى وَمَا جَاءَ فِي ذمّ الطمع وَالتَّرْغِيب فِي التعفف والقناعة وَالْأكل من كسب يَده
1243 - وَعَن أبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم لِأَن يحتطب أحدكُم حزمة على ظَهره خير لَهُ من أَن يسْأَل أحدا فيعطيه أَو يمنعهُ

رَوَاهُ مَالك وَالْبُخَارِيّ وَمُسلم وَالتِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে অন্যের কাছে চেয়ে খাওয়ার উপর পরিশ্রম করে খাওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, তাতে সে পরিশ্রম যত কঠোরই হোক না কেন। বন-জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে আনা এমনিই কঠিন কাজ। তা যদি হয় পাহাড়ের উপর, তবে কষ্ট আরও বেড়ে যায়। তার উপর আবার যদি সে কাঠ নিজের পিঠে করে টেনে আনতে হয়, তবে তা কত কষ্টসাধ্য বলাই বাহুল্য। এতদসত্ত্বেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যের কাছে হাত না পেতে এরূপ কষ্টসাধ্য কাজ করে খেতে বলেছেন।

কাঠ কুড়ানোর কাজটিকে সমাজচোখে নিম্নস্তরের মনে করা হয়। হাদীছটি দ্বারা বোঝা গেল সওয়াল করে খাওয়া তারচে'ও নিম্নস্তরের। বরং পরিশ্রম করে খাওয়াকে মানুষ যে চোখেই দেখুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে তাতে লজ্জার কিছু নেই। চেয়ে খাওয়াই মূলত লজ্জার বিষয়। তাতে ইজ্জত ভূলুণ্ঠিত হয়। হাদীসে আছে- فَيَكُفَّ اللَّهُ بِهَا وَجْهَهُ 'এভাবে আল্লাহ তা'আলা তা দ্বারা তার চেহারাকে (অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়ার বেইজ্জতি থেকে) রক্ষা করবেন'। অর্থাৎ মানুষের কাছে চাওয়ার দ্বারা মান-সম্মান নষ্ট হয়। কামাই-রোজগার করার দ্বারা মান-সম্মান রক্ষা পায়। বোঝা গেল মানুষের মান-সম্মান অনেক মূল্যবান। কিছুতেই তা নষ্ট হতে দিতে নেই। কামাই-রোজগারের কাজ যত কঠিনই হোক না কেন, তা দ্বারা যেহেতু মান-সম্মানের হেফাজত হয়, তাই সওয়াল না করে এতেই লিপ্ত হওয়া উচিত। তাছাড়া কামাই-রোজগার করলে অনেক সময় দান-খয়রাতও করা যায়, যা বড়ই নেকীর কাজ।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. নিতান্ত ঠেকায় না পড়লে ভিক্ষা করা বা অন্যের কাছে হাত পাতা উচিত নয় কিছুতেই।

খ. যত কষ্টসাধ্যই হোক না কেন, কামাই-রোজগার করেই খাওয়া উচিত।

গ. উপার্জনের পন্থাটি যদি বৈধ হয়, তবে সমাজচোখে তা যতই নিম্নস্তরের হোক না কেন, প্রকৃতপক্ষে তাতে লজ্জার কিছু নেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান