আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

৮. অধ্যায়ঃ সদকা

হাদীস নং: ১২০৫
ভিক্ষাবৃত্তির প্রতি ভীতি প্রদর্শন, ধনী ব্যক্তির ভিক্ষাবৃত্তির আশ্রয় নেয়া হারাম হওয়া, লোভ-লালসার নিন্দা এবং লোভ-লালসা থেকে পবিত্র থাকা, অল্পে তুষ্টি এবং নিজ হাতে উপার্জিত বস্তু খাওয়ার প্রতি অনুপ্রেরণা
১২০৫. হযরত সাহল ইবন হানযালী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একদা উয়ায়না ইবন হিসন ও আকরা ইবন হাবিস (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে এসে সওয়াল করেন। সে মতে তিনি তাদের সওয়াল মঞ্জুর করে চিঠি লিখার জন্য মুআবিয়া (রা)-কে নির্দেশ দেন। আকরা (রা) উক্ত চিঠিটি ভাঁজ করে পাগড়ীর মধ্যে রেখে চলে গেলেন, আর উয়ায়না (রা) চিঠিটি নিয়ে রাসূলুল্লাহ-এর কাছে চলে আসেন। তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মদ! আপনারা কি এক ব্যক্তিকে তার কওমের কাছে এমন চিঠি দিয়ে পাঠালেন, যে সম্পর্কে সে জানে না, যা মুতালাম্মিসের চিঠির ন্যায়। মু'আবিয়া (রা) তাকে রাসূলুল্লাহ-এর একখানা হাদীস শোনান যে, রাসূলুল্লাহ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ভিক্ষা চায়, অথচ তার নিকট এমন সম্বল রয়েছে, যা খেয়ে সে বেঁচে থাকতে পারে- নিশ্চয়ই সে জাহান্নামের আগুন অধিক হারে সংগ্রহ করছে। নুফায়লী বলেন, তারা জিজ্ঞাসা করল : কী পরিমাণ সম্বল থাকলে কারো পক্ষে ভিক্ষা করা উচিত নয়? তিনি বললেনঃ সকাল ও বিকালের
খাবার থাকলে।
(আহমদ নিজ শব্দযোগে এবং ইবন হিব্বান তাঁর 'সহীহ' গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেন। ইবন হিব্বান (র) বলেন, যে ব্যক্তি ভিক্ষা চায় অথচ তার নিকট এমন সম্বল আছে, যা খেয়ে সে বেঁচে থাকতে পারে, নিশ্চয়ই সে জাহান্নামের আগুন অধিকহারে সংগ্রহ করছে। তারা জিজ্ঞেস করল: কী পরিমাণ সম্বল থাকলে কারো পক্ষে ভিক্ষা করা উচিত নয়? তিনি বললেন: এক সকাল অথবা এক বিকালের খাবার থাকলে অথবা এক রাতের খাবার থাকলে।
ইবন খুযায়মা সংক্ষেপে তাঁর 'সহীহ' গ্রন্থে বর্ণনা করেনঃ একদা জিজ্ঞেস করা হল: ইয়া রাসূলাল্লাহ! কী পরিমাণ সম্বল থাকলে কারো পক্ষে ভিক্ষা করা উচিত নয়? তিনি বললেন: একদিন, এক রাতের অথবা তিনি বলেছেন: একরাত, এক দিনের তৃপ্তি সহকারে খাবারযোগ্য খানা থাকলে।
[كصحيفة المتلمس] এটি আরব দেশের একটি উপমা। কোন ব্যক্তি যদি কিছু বহন করে অথচ সে যদি না জানে যে, তার মধ্যস্থ জিনিস তার উপকারে আসবে না অপকারে আসবে, তখন তারা এই উপমা ও উৎপ্রেক্ষার অবতারণা করে। প্রকৃত ব্যাপার হল এইঃ মুতালাম্মিস-এর প্রকৃত নাম ছিল আবদুল মাসীহ। একদা সে এবং তার বন্ধু ত্বরাফা আবদী বাদশাহ আমর ইবন মুনযির-এর দরবারে যান। সেখানে তারা কিছু দিন কাটান। তিনি তাদের কোন ব্যাপারে অসন্তুষ্ট হয়ে শাস্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। সেমতে তিনি তার কোন এক কর্মকর্তাকে তাদের হত্যা করার নির্দেশ সম্বলিত চিঠি লেখেন। তিনি তাদের বললেন: আমি তোমাদের হাদিয়ার জন্য একটি চিঠি পাঠিয়েছি। তারা হিরায় পৌঁছে। এরপর মুতালাম্মিস তার চিঠিটি একটি বালককে পড়তে দিল। সে তা পড়ে তাতে দেখতে পায় যে, পত্র বাহককে হত্যা করার নির্দেশ রয়েছে। সে তা ছিঁড়ে ফেলে এবং ত্বরাফাকে বলে: তুমিও আমার ন্যায় কাজ কর। সে এতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে এবং বাদশাহের কর্মকর্তার নিকট চলে যায়। তখন সে তা পাঠ করে ত্বরাফাকে হত্যা করে।
[খাত্তাবী (র) বলেন]: লোকেরা এর ব্যাখ্যায় দ্বিমত পোষণ করেন। অর্থাৎ সাহল (রা) বর্ণিত হাদীস। কেউ কেউ বলেন: প্রকাশ্য হাদীসদ্বারা বুঝা যায় যে, যার সকাল ও সন্ধ্যার খাবার আছে, তার সওয়াল করা বৈধ নয়। কেউ কেউ বলেন: যার সকাল ও সন্ধ্যা তথা সর্বক্ষণের খাবার আছে এবং দীর্ঘদিনের খাবার আছে, তার জন্য সওয়াল করা হারাম। অপরাপর মুহাদ্দিসগণ বলেন, সামনের হাদীস, যাতে বলা হয়েছে কেউবা "পঞ্চাশ দিরহাম অথবা তৎসমমূল্যের সামগ্রী অথবা এক আওকীয়ার মালিক অথবা তার সমমূল্যের সম্পদের মালিক" শীর্ষক হাদীস দ্বারা এই হাদীসটি রহিত।
[হাফিয মুনযিরী (র) বলেন:] হাদীস রহিত হওয়ার বিধান উপরে বর্ণিত উভয় প্রকারের অবস্থার মধ্যে সংযুক্ত। একটি হাদীস অপরটির উপর প্রাধান্য পাওয়ার কোন পদ্ধতি আমার জানা নেই। ইমাম শাফিঈ (র) বলতেন: এক ব্যক্তির একটিমাত্র দিরহাম প্রয়োজনের অতিরিক্ত আছে এবং সে দৈনন্দিন রোজগার করে সংসার চালাতে সক্ষম। অপরদিকে এমনও কেউ কেউ আছে, উপার্জন ক্ষমতা না থাকায় এবং পরিবারের সদস্য সংখ্যা অধিক থাকায়, এক হাজার দিরহাম মওজুদ থাকা সত্ত্বেও সে গরীব। সুফয়ান সাওরী, ইবন মুবারক, হাসান ইবন সালিহ, আহমদ ইবন হাম্বল ও ইসহাক ইবন রাহওয়াই প্রমুখ বলেনঃ "যার কাছে পঞ্চাশ দিরহাম রয়েছে, সে ধনী অথবা যার কাছে পঞ্চাশ দিরহাম মূল্যের স্বর্ণ আছে, তাকে যাকাত দেওয়া যাবে না।" হাসান বসরী ও আবু উবায়দার অভিমত এই যেঃ "যার নিকট চল্লিশ দিরহাম আছে, সে ধনী।" ফিকহশাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ একদল মুহাদ্দিসের অভিমত হলঃ "এমন ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া যেতে পারে, যে নিসাবের মালের মালিক নয়। যদিও সে উপার্জনে সক্ষম।" অথচ এদের বিপরীত অভিমত হল, "যার নিকট একদিনের খাদ্য আছে, তার ভিক্ষা করা হারাম।", তাঁরা উপরোক্ত হাদীস প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেন।
التَّرْهِيب من الْمَسْأَلَة وتحريمها مَعَ الْغنى وَمَا جَاءَ فِي ذمّ الطمع وَالتَّرْغِيب فِي التعفف والقناعة وَالْأكل من كسب يَده
1205 - وَعَن سهل ابْن الحنظلية رَضِي الله عَنهُ قَالَ قدم عُيَيْنَة بن حصن والأقرع بن حَابِس رَضِي الله عَنْهُمَا على رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَسَأَلَاهُ فَأمر مُعَاوِيَة فَكتب لَهما مَا سَأَلَا فَأَما الْأَقْرَع فَأخذ كِتَابه فلفه فِي عمَامَته وَانْطَلق وَأما عُيَيْنَة فَأخذ كِتَابه وأتى بِهِ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ يَا مُحَمَّد أَترَانِي حَامِلا إِلَى قومِي كتابا لَا أَدْرِي مَا فِيهِ كصحيفة المتلمس فَأخْبر مُعَاوِيَة بقوله رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من سَأَلَ وَعِنْده مَا يُغْنِيه فَإِنَّمَا يستكثر من النَّار
قَالَ النُّفَيْلِي وَهُوَ أحد رُوَاته قَالُوا وَمَا الْغنى الَّذِي لَا تنبغي مَعَه الْمَسْأَلَة قَالَ قدر مَا يغديه ويعشيه

رَوَاهُ أَحْمد وَاللَّفْظ لَهُ وَابْن حبَان فِي صَحِيحه وَقَالَ فِيهِ من سَأَلَ شَيْئا وَعِنْده مَا يُغْنِيه فَإِنَّمَا يستكثر من جمر جَهَنَّم
قَالُوا يَا رَسُول الله وَمَا يُغْنِيه قَالَ مَا يغديه أَو يعشيه كَذَا عِنْده أَو يعشيه بِأَلف
وَرَوَاهُ ابْن خُزَيْمَة بِاخْتِصَار إِلَّا أَنه قَالَ
قيل يَا رَسُول الله وَمَا الْغنى الَّذِي لَا تنبغي مَعَه الْمَسْأَلَة قَالَ أَن يكون لَهُ شبع يَوْم وَلَيْلَة أَو لَيْلَة وَيَوْم
قَوْله كصحيفة المتلمس هَذَا مثل تضربه الْعَرَب لمن حمل شَيْئا لَا يدْرِي هَل يعود عَلَيْهِ بنفع أَو ضرّ
وَأَصله أَن المتلمس واسْمه عبد الْمَسِيح قدم هُوَ وطرفة الْعَبْدي على الْملك عَمْرو بن الْمُنْذر فأقاما عِنْده فنقم عَلَيْهِمَا أمرا فَكتب إِلَى بعض عماله يَأْمُرهُ بِقَتْلِهِمَا وَقَالَ لَهما إِنِّي قد كتبت لَكمَا بصلَة فاجتازا بِالْحيرَةِ فَأعْطى المتلمس صَحِيفَته صَبيا فقرأها فَإِذا فِيهَا الْأَمر بقتْله فألقاها وَقَالَ لطرفة افْعَل مثل فعلي فَأبى عَلَيْهِ وَمضى إِلَى عَامل الْملك فقرأها وَقَتله
قَالَ الْخطابِيّ اخْتلف النَّاس فِي تَأْوِيله يَعْنِي حَدِيث سهل فَقَالَ بَعضهم من وجد غداء يَوْمه وعشاءه لم تحل لَهُ الْمَسْأَلَة على ظَاهر الحَدِيث وَقَالَ بَعضهم إِنَّمَا هُوَ فِيمَن وجد غداء وعشاء على دَائِم الْأَوْقَات فَإِذا كَانَ عِنْده مَا يَكْفِيهِ لقُوته الْمدَّة الطَّوِيلَة حرمت عَلَيْهِ الْمَسْأَلَة وَقَالَ آخَرُونَ هَذَا مَنْسُوخ بالأحاديث الَّتِي تقدم ذكرهَا يَعْنِي الْأَحَادِيث الَّتِي فِيهَا تَقْدِير الْغنى بِملك خمسين درهما أَو قيمتهَا أَو بِملك أُوقِيَّة أَو قيمتهَا
قَالَ الْحَافِظ رَضِي الله عَنهُ ادِّعَاء النّسخ مُشْتَرك بَينهمَا وَلَا أعلم مرجحا لأَحَدهمَا على الآخر
وَقد كَانَ الشَّافِعِي رَحمَه الله يَقُول قد يكون الرجل بالدرهم غَنِيا مَعَ كَسبه وَلَا يُغْنِيه الْألف مَعَ ضعفه فِي نَفسه وَكَثْرَة عِيَاله وَقد ذهب سُفْيَان الثَّوْريّ وَابْن الْمُبَارك وَالْحسن بن صَالح وَأحمد بن حَنْبَل وَإِسْحَاق بن رَاهَوَيْه إِلَى أَن من لَهُ خَمْسُونَ درهما أَو قيمتهَا من الذَّهَب لَا يدْفع إِلَيْهِ شَيْء من الزَّكَاة
وَكَانَ الْحسن الْبَصْرِيّ وَأَبُو عُبَيْدَة يَقُولَانِ من لَهُ أَرْبَعُونَ درهما فَهُوَ غَنِي وَقَالَ أَصْحَاب الرَّأْي يجوز دَفعهَا إِلَى من يملك دون النّصاب وَإِن كَانَ صَحِيحا مكتسبا مَعَ قَوْلهم من كَانَ لَهُ قوت يَوْمه لَا يحل لَهُ السُّؤَال اسْتِدْلَالا بِهَذَا الحَدِيث وَغَيره وَالله أعلم
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব - হাদীস নং ১২০৫ | মুসলিম বাংলা