আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

৭. অধ্যায়ঃ জুম‘আর নামাজ

হাদীস নং: ১০৩০
অধ্যায়ঃ জুম‘আর নামাজ
জুমু'আ অধ্যায়ঃ
জুমুআর সালাত (আদায়) ও তার জন্যে দৌড়ে যাওয়ার প্রতি অনুপ্রেরণা এবং জুমুআর দিন রাত ও জুমু’আর সময়ের ফযীলত
১০৩০. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযূ করে জুমু'আর সালাত আদায় করতে আসে এবং মনোযোগ সহকারে নীরবে খুতবা শোনে, আল্লাহ তা'আলা তার এক জুমু'আ থেকে অন্য জুমু'আর মধ্যবর্তী সময়ের যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করে দেন এবং আরো তিনদিনের গুনাহও ক্ষমা করে দেন। তিনি বলেন: যে ব্যক্তি (খুতবা ও সালাত আদায়ের সময়) কংকর সরায়, যে যেন অনর্থক কাজ করল।
(মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী ও ইবন মাজাহ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
كتاب الْجُمُعَة
كتاب الْجُمُعَة:
التَّرْغِيب فِي صَلَاة الْجُمُعَة وَالسَّعْي إِلَيْهَا وَمَا جَاءَ فِي فضل
يَوْمهَا وساعتها
1030 - عَن أبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من تَوَضَّأ فَأحْسن الْوضُوء ثمَّ أَتَى الْجُمُعَة فاستمع وأنصت غفر لَهُ مَا بَينه وَبَين الْجُمُعَة الْأُخْرَى وَزِيَادَة ثَلَاثَة أَيَّام وَمن مس الْحَصَا فقد لَغَا

رَوَاهُ مُسلم وَأَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে উত্তমরূপে ওযূ করে জুমু'আয় যাওয়া, তারপর মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনার ফযীলত বর্ণিত হয়েছে যে, এর দ্বারা বিগত সপ্তাহের গুনাহ তো বটেই, অতিরিক্ত আরও তিনদিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

উত্তমরূপে ওযু করার অর্থ সুন্নত, মুস্তাহাব ও যাবতীয় আদব রক্ষার সাথে ওযু করা। বোঝা গেল এ ফযীলত লাভের জন্য দায়সারাগোছের ওযু করা চলবে না। সর্বপ্রথম ফরয আদায়ের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। অনেক সময় এমন তাড়াহুড়া করে ওযূ করা হয় যে, ফরযই আদায় হয় না, যেমন পায়ের গোড়ালি শুকনো থেকে যাওয়া বা হাতের কনুইতে পানি না পৌঁছা। তারপর সুন্নত, মুস্তাহাব ও আদবসমূহ জেনে তার প্রতিটি যত্নের সাথে আদায় করতে হবে। তখনই এ ফযীলতলাভের আশা করা যাবে।

ফযীলতলাভের জন্য এটাও জরুরি যে, জুমু'আর মসজিদে গিয়ে কোনও গল্পগুজব করা যাবে না এবং বেহুদা কাজ থেকেও বেঁচে থাকতে হবে। ইমাম সাহেব যখন খুতবা দেন, তখন গভীর মনোযোগের সাথে তার খুতবা শুনতে হবে। বোঝা গেল এ সময় কোনও নামাযও পড়া যাবে না।

হাদীছটির শেষে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি কঙ্কর নাড়াচাড়া করে সে একটি বেহুদা কাজ করল। এর দ্বারা ইশারা করা হচ্ছে হাদীছে বর্ণিত ফযীলত লাভ করতে চাইলে বেহুদা ও অনর্থক কাজ থেকেও বেঁচে থাকতে হবে। অনর্থক কাজ হিসেবে এখানে কঙ্কর নিয়ে নাড়াচাড়ার কথা বলা হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় মসজিদের মেঝেতে পাথরের নুড়ি বিছানো ছিল। অনেকে সে নুড়ি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করত। খেলাচ্ছলে এরকম বেহুদা কাজ অনেকেই করে থাকে। কেউ কাপড় হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে, কেউ বা রুমাল পাকায় এবং এভাবে হাতের কাছে যা পাওয়া যায় তা নিয়েই খেলতে থাকে। এর ফলে মনোযোগ বিঘ্নিত হয়। খুতবায় যেহেতু আল্লাহ তাআলার যিকর ও নসীহত থাকে, তাই কর্তব্য হচ্ছে দেহমন সবটাই তাঁর অভিমুখী করে রাখা এবং গোটা অস্তিত্বকেই তাঁর প্রতি অভিনিবিষ্ট করা। এটা কেবল খুতবা শোনারই আদব নয়, মসজিদেরও আদব। বরং এ আদব খোদ আল্লাহ তা'আলার প্রতি। যেহেতু এটা আল্লাহর ঘর ও তাঁর দরবার এবং তাঁরই যিকর ও তাঁর কালাম তিলাওয়াতের হাল। কাজেই সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথেই আদব রক্ষায় যত্নবান থাকা চাই। যে ব্যক্তি তা রাখতে সক্ষম হবে তার জন্য কত বড়ই না সৌভাগ্য যে, তার কেবল বিগত সপ্তাহই নয়, অতিরিক্ত আরও তিন দিনসহ মোট দশ দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। সুবহানাল্লাহ!

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা উত্তমরূপে ওযূ করে মসজিদে আসা ও মনোযোগের সাথে খুতবা শোনার ফযীলত জানা গেল।

খ. এর দ্বারা বান্দার প্রতি আল্লাহ তা'আলার অসীম দয়ারও পরিচয় পাওয়া গেল যে, কত ছলেই না তিনি বান্দার গুনাহ মাফ করে থাকেন।

গ. আরও জানা গেল মসজিদে অবস্থানকালে, বিশেষত খুতবা চলাকালে কোনও বেহুদা কাজ করা উচিত নয়; বরং সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে আদব রক্ষায় যত্নবান থাকা চাই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান