আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

৫. অধ্যায়ঃ নামাজ

হাদীস নং: ৫৯০
জামাআতের সাথে সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে বের হওয়া এবং জামাআত না পাওয়া সত্ত্বেও মসজিদে আসার প্রতি অনুপ্রেরণা
৫৯০. হযরত ইবন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি কাল কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে মুসলিম হিসেবে সাক্ষাত কামনা করে, তার এই সালাতসমূহের প্রতি অতীব গুরুত্ব দেয়া কর্তব্য, যার জন্য আযান দেয়া হয়। কারণ আল্লাহ তা'আলা তোমাদের নবীর জন্য সুনানে হুদা নির্ধারণ করেছেন, আর সালাত এই সুনানে হুদার অন্তর্ভুক্ত। কাজেই তোমরা যদি ঘরে সালাত আদায় করতে থাক, যেভাবে জামা'আত বর্জনকারীরা তাদের ঘরে সালাত আদায় করে থাকে, তাহলে তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত বর্জন করলে। আর যদি তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত ত্যাগ কর, তাহলে তোমরা নিশ্চিত গুমরাহ হয়ে যাবে। যে কেউ উযু করে এবং উত্তমরূপে উযূ করে মসজিদসমূহের কোন মসজিদের দিকে যতবার পা বাড়ায়, ততবার তার প্রত্যেক কদমের জন্য আল্লাহ একটি নেকী দান করেন, একটি মর্যাদা সমুন্নত করেন এবং তা দ্বারা তার একটি গুনাহ মোচন করে দেন। আর আমরা আমাদের লোকদের এমন অবস্থায় দেখেছি যে, তাদের মধ্যে একমাত্র পরিচিত মুনাফিক ছাড়া আর কেউ জামাআত বর্জন করত না। আর কোন কোন লোক এমনও ছিল যে, দু'জন লোকের সহায়তায় তাকে আনা হতো এবং সালাতের কাতারের মধ্যে দাঁড় করিয়ে দেয়া হতো।
অন্য বর্ণনায় আছে যে, আমরা আমাদের লোকদের এমন অবস্থায় দেখেছি যে, তাদের মধ্যে একমাত্র পরিচিত মুনাফিক অথবা রোগী ছাড়া আর কেউ জামাআত বর্জন করত না। (আমি আরও দেখেছি যে,) দু'জনের সহায়তায় এসে লোকেরা জামাআতে অংশগ্রহণ করত। এরপর তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের 'সুনানে হুদা' শিক্ষা দিয়েছেন। আর সুনানে হুদা হল যে মসজিদে আযান দেওয়া হয়, সেখানে সালাত আদায় করা।
(মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ ও ইবন মাজাহ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
التَّرْغِيب فِي صَلَاة الْجَمَاعَة وَمَا جَاءَ فِيمَن خرج يُرِيد الْجَمَاعَة فَوجدَ النَّاس قد صلوا
590 - وَعَن ابْن مَسْعُود رَضِي الله عَنهُ قَالَ من سره أَن يلقى الله غَدا مُسلما فليحافظ على هَؤُلَاءِ الصَّلَوَات حَيْثُ يُنَادى بِهن فَإِن الله تَعَالَى شرع لنبيكم صلى الله عَلَيْهِ وَسلم سنَن الْهدى وإنهن من سنَن الْهدى وَلَو أَنكُمْ صليتم فِي بُيُوتكُمْ كَمَا يُصَلِّي هَذَا المتخلف فِي بَيته لتركتم سنة نَبِيكُم وَلَو تركْتُم سنة نَبِيكُم لَضَلَلْتُمْ وَمَا من رجل يتَطَهَّر فَيحسن الطّهُور ثمَّ يعمد إِلَى مَسْجِد من هَذِه الْمَسَاجِد إِلَّا كتب الله لَهُ بِكُل خطْوَة يخطوها حَسَنَة وَيَرْفَعهُ بهَا دَرَجَة ويحط عَنهُ بهَا سَيِّئَة وَلَقَد رَأَيْتنَا وَمَا يتَخَلَّف عَنْهَا إِلَّا مُنَافِق مَعْلُوم النِّفَاق وَلَقَد كَانَ الرجل يُؤْتى بِهِ يهادي بَين الرجلَيْن حَتَّى يُقَام فِي الصَّفّ
وَفِي رِوَايَة لقد رَأَيْتنَا وَمَا يتَخَلَّف عَن الصَّلَاة إِلَّا مُنَافِق قد علم نفَاقه أَو مَرِيض إِن كَانَ الرجل ليمشي بَين رجلَيْنِ حَتَّى يَأْتِي الصَّلَاة وَقَالَ إِن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم علمنَا سنَن
الْهدى وَإِن من سنَن الْهدى الصَّلَاة فِي الْمَسْجِد الَّذِي يُؤذن فِيهِ
رَوَاهُ مُسلم وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه

হাদীসের ব্যাখ্যা:

জামাতের সাথে নামায আদায় করা একা নামায পড়া অপেক্ষা সাতাশ গুণ অধিক সওয়াব (বা মর্যাদা) রাখে।
মসজিদে জামাতের সংগে নামায পড়লে তার ফযীলত যে এত বেশি, তার কারণ কি? এ হাদীছ দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায়, তার কারণ কেবল নামাযের নিয়তে পথচলা। ঘরে বা দোকানে নামায পড়লে নামায পড়া হয় বটে, কিন্তু নামাযের নিয়তে পথচলা হয় না। আবার কেউ যদি এমনিই পথ চলে কিন্তু নামাযের নিয়ত না থাকে, তা দ্বারাও এই বাড়তি ফযীলত হাসিল হয় না। এই বাড়তি ফযীলত কেবল নামাযের নিয়তে মসজিদে গমনের কারণে।
এই মহান নিয়তের কারণে পথ চলাটা এত দামি হয়ে যায় যে, মসজিদ পর্যন্ত পৌঁছতে যতগুলি কদম ফেলা হয় তার প্রত্যেক কদমের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে বান্দার মর্যাদা এক স্তর বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়। বোঝাই যাচ্ছে মসজিদ পর্যন্ত যার পথ যতবেশি দূরে হবে, তার মর্যাদাও তত বাড়বে এবং ততবেশি গুনাহ মাফ হবে। অপর এক হাদীছে আছে, একবার বনূ সালিমা গোত্র তাদের মহল্লা ছেড়ে মসজিদের নিকটে এসে বসবাসের আগ্রহ ব্যক্ত করেছিল। কারণ তাদের মহল্লা মসজিদ থেকে দূরে ছিল। মসজিদে যাতায়াতে বেশি সময় লাগত এবং অনেক সময় কষ্টও হত। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানতে পারলেন যে, তারা মসজিদের কাছাকাছি এসে বসবাস করতে চাচ্ছে, তখন তিনি তাদেরকে তা থেকে বারণ করলেন এবং বললেন, হে বনূ সালিমা! আপন জায়গায়ই বাস করতে থাক। তাতে তোমাদের কদমে কদমে ছওয়াব লেখা হবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা জামাতে নামায পড়ার ফযীলত জানা যায়। সুতরাং যতসম্ভব জামাতের সাথে নামায আদায়ে যত্নবান থাকা উচিত।

খ. মসজিদে গমনের উদ্দেশ্য যেহেতু নামায পড়া, তাই পথ চলাকালে সেই নিয়ত অন্তরে জাগ্রত রাখা উচিত, যাতে পথচলাটা ধীরশান্ত পদক্ষেপে হয় এবং গোটা পথ মুসল্লীসুলভ ভাবভঙ্গি বজায় থাকে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব - হাদীস নং ৫৯০ | মুসলিম বাংলা