কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ
২. নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং: ১২৯৮
আন্তর্জাতিক নং: ১২৯৮
৩০৮. সালাতুত তাসবীহ সম্পর্কে।
১২৯৮. মুহাম্মাদ ইবনে সুফিয়ান (রাহঃ) .... আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা নবী করীম (ﷺ) আমাকে বলেন, তুমি আগামীকাল আমার নিকট আসবে। আমি তোমাকে একটি উপাদেয় বস্তু দেব। তিনি বলেনঃ আমি মনে মনে ধারণা করলাম যে, তিনি নিশ্চয়ই আমাকে কোন জিনিস প্রদান করবেন। (পরদিন আমি তাঁর খিদমতে হাজির হলে) তিনি বলেনঃ যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়বে, তখন তুমি চার রাকআত নাময আদায় করবে।
অতঃপর রাবী পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তিনি আরো বলেনঃ অতঃপর তুমি দ্বিতীয় সিজদা হতে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসবে এবং দাঁড়ানোর পূর্বেই দশবার তাসবীহ, দশবার তাহমীদ, দশবার তাকবীর ও দশবার তাহলীল পাঠ করবে (অর্থাৎ সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ও আল্লাহু আকবার)। তুমি চার রাকআত নমাযেই এরূপ দুআ পাঠ করবে। যদি তুমি যমীনের সর্বাপেক্ষা অধিক গুনাহগার ব্যক্তিও হও, তবুও তোমার গুনাহ মার্জিত হবে।
রাবী বলেনঃ আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করি, যদি আমি তা ঐ সময়ে আদায় করতে না পারি? তিনি বলেনঃ তুমি দিবারাত্রির মধ্যে যখনই সুযোগ পাবে তখনই তা আদায় করবে।
অতঃপর রাবী পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তিনি আরো বলেনঃ অতঃপর তুমি দ্বিতীয় সিজদা হতে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসবে এবং দাঁড়ানোর পূর্বেই দশবার তাসবীহ, দশবার তাহমীদ, দশবার তাকবীর ও দশবার তাহলীল পাঠ করবে (অর্থাৎ সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ও আল্লাহু আকবার)। তুমি চার রাকআত নমাযেই এরূপ দুআ পাঠ করবে। যদি তুমি যমীনের সর্বাপেক্ষা অধিক গুনাহগার ব্যক্তিও হও, তবুও তোমার গুনাহ মার্জিত হবে।
রাবী বলেনঃ আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করি, যদি আমি তা ঐ সময়ে আদায় করতে না পারি? তিনি বলেনঃ তুমি দিবারাত্রির মধ্যে যখনই সুযোগ পাবে তখনই তা আদায় করবে।
باب صَلاَةِ التَّسْبِيحِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سُفْيَانَ الأُبُلِّيُّ، حَدَّثَنَا حَبَّانُ بْنُ هِلاَلٍ أَبُو حَبِيبٍ، حَدَّثَنَا مَهْدِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ، حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ مَالِكٍ، عَنْ أَبِي الْجَوْزَاءِ، قَالَ حَدَّثَنِي رَجُلٌ، كَانَتْ لَهُ صُحْبَةٌ يُرَوْنَ أَنَّهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرٍو قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " ائْتِنِي غَدًا أَحْبُوكَ وَأُثِيبُكَ وَأُعْطِيكَ " . حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ يُعْطِينِي عَطِيَّةً قَالَ " إِذَا زَالَ النَّهَارُ فَقُمْ فَصَلِّ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ " . فَذَكَرَ نَحْوَهُ قَالَ " تَرْفَعُ رَأْسَكَ - يَعْنِي مِنَ السَّجْدَةِ الثَّانِيَةِ - فَاسْتَوِ جَالِسًا وَلاَ تَقُمْ حَتَّى تُسَبِّحَ عَشْرًا وَتَحْمَدَ عَشْرًا وَتُكَبِّرَ عَشْرًا وَتُهَلِّلَ عَشْرًا ثُمَّ تَصْنَعُ ذَلِكَ فِي الأَرْبَعِ رَكَعَاتٍ " . قَالَ " فَإِنَّكَ لَوْ كُنْتَ أَعْظَمَ أَهْلِ الأَرْضِ ذَنْبًا غُفِرَ لَكَ بِذَلِكَ " . قُلْتُ فَإِنْ لَمْ أَسْتَطِعْ أَنْ أُصَلِّيَهَا تِلْكَ السَّاعَةَ قَالَ " صَلِّهَا مِنَ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ حَبَّانُ بْنُ هِلاَلٍ خَالُ هِلاَلٍ الرَّائِيِّ . قَالَ أَبُو دَاوُدَ رَوَاهُ الْمُسْتَمِرُّ بْنُ الرَّيَّانِ عَنْ أَبِي الْجَوْزَاءِ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو مَوْقُوفًا وَرَوَاهُ رَوْحُ بْنُ الْمُسَيَّبِ وَجَعْفَرُ بْنُ سُلَيْمَانَ عَنْ عَمْرِو بْنِ مَالِكٍ النُّكْرِيِّ عَنْ أَبِي الْجَوْزَاءِ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَوْلُهُ وَقَالَ فِي حَدِيثِ رَوْحٍ فَقَالَ حَدِيثُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
সালাতুত তাসবিহ আদায় করার পদ্ধতিঃ
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ لِلْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ: يَا عَبَّاسُ، يَا عَمَّاهُ، ” أَلَا أُعْطِيكَ، أَلَا أَمْنَحُكَ، أَلَا أَحْبُوكَ، أَلَا أَفْعَلُ لَكَ عَشْرَ خِصَالٍ إِذَا أَنْتَ فَعَلْتَ ذَلِكَ، غَفَرَ اللَّهُ لَكَ ذَنْبَكَ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ، وَقَدِيمَهُ وَحَدِيثَهُ، وَخَطَأَهُ وَعَمْدَهُ، وَصَغِيرَهُ وَكَبِيرَهُ، وَسِرَّهُ وَعَلَانِيَتَهُ، عَشْرُ خِصَالٍ: أَنْ تُصَلِّيَ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ، تَقْرَأُ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَسُورَةٍ، فَإِذَا فَرَغْتَ مِنَ الْقِرَاءَةِ فِي أَوَّلِ رَكْعَةٍ، قُلْتَ وَأَنْتَ قَائِمٌ: سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ خَمْسَ عَشْرَةَ مَرَّةً، ثُمَّ تَرْكَعُ فَتَقُولُ وَأَنْتَ رَاكِعٌ عَشْرًا، ثُمَّ تَرْفَعُ رَأْسَكَ مِنَ الرُّكُوعِ فَتَقُولُهَا عَشْرًا، ثُمَّ تَهْوِي سَاجِدًا فَتَقُولُهَا وَأَنْتَ سَاجِدٌ عَشْرًا، ثُمَّ تَرْفَعُ رَأْسَكَ مِنَ السُّجُودِ فَتَقُولُهَا عَشْرًا، ثُمَّ تَسْجُدُ فَتَقُولُهَا عَشْرًا، ثُمَّ تَرْفَعُ رَأْسَكَ مِنَ السُّجُودِ فَتَقُولُهَا عَشْرًا، فَذَلِكَ خَمْسَةٌ وَسَبْعُونَ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ، تَفْعَلُ فِي أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ، إِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ تُصَلِّيَهَا فِي كُلِّ يَوْمٍ مَرَّةً فَافْعَلْ، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَفِي كُلِّ جُمُعَةٍ مَرَّةً، فَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَفِي كُلِّ شَهْرٍ مَرَّةً، فَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَفِي عُمُرِكَ مَرَّةً“
ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আব্বাস ইবনে আব্দিল মুত্তালিবকে বলেছেন, হে চাচা! আমি কি আপনাকে দেব না? আমি কি আপনাকে প্রদান করব না? আমি কি আপনার নিকটে আসব না? আমি কি আপনার জন্য দশটি সৎ গুনের বর্ণনা করব না যা করলে আল্লাহ তাআলা আপনার আগের ও পিছনের, নতুন ও পুরাতন, ইচ্ছায় ও ভুলবশত কৃত, ছোট ও বড়, গোপন ও প্রকাশ্য সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন? আর সে দশটি সৎ গুন হলো: আপনি চার রাকাত নামাজ পড়বেন। প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়বেন। প্রথম রাকাতে যখন কিরাআত পড়া শেষ করবেন তখন দাঁড়ানো অবস্থায় ১৫ বার বলবেন:
سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ
{উচ্চারণঃ সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার}
এরপর রুকুতে যাবেন এবঃ রুকু অবস্থায় (উক্ত দুআটি) ১০ বার পড়বেন। এরপর রুকু থেকে মাথা ওঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদায় যাবেন। সিজদারত অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদা থেকে মাথা উঠাবেন অতঃপর ১০ বার পড়বেন। এরপর আবার সিজদায় যাবেন এবং সিজদারত অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদা থেকে মাথা ওঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন। এ হলো প্রতি রাকাতে ৭৫ বার। আপনি চার রাকাতেই অনুরূপ করবেন। যদি আপনি প্রতিদিন আমল করতে পারেন, তবে তা করুন। আর যদি না পারেন,তবে প্রতি জুমাআয় একবার। যদি প্রতি জুমআয় না করেন তবে প্রদি মাসে একবার। আর যদি তাও না করেন তবে জীবনে একবার।
{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১২৯৭,
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৮৭,
সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১২১৬,
সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৬৯৫}
হাদীসটি সহীহ।
উক্ত হাদীসকে যারা সহীহ বলেছেন!
১
ইমাম আবু দাউদ, হাদীস নং-১২৯৭, [ইমাম আবু দাউদ হাদীস বললে, চুপ থাকলে সেটি তার কাছে সহীহ।
২
ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন, এর সনদটি হাসান। [আলখিছাল-১/৪১]
৩
আল্লামা ওয়াদেয়ী বলেন, হাসান। [সহীহুল মুসনাদ, হাদীস নং-৫৮২]
৪
ইবনুল মুলাক্কিন বলেন, এর সনদ উত্তম। [আবদরুল মুনীর-৪/২৩৫]
৫
ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন, হাসান। [তাখরীজুল মিশকাতুল মাসাবীহ-২/৭৮]
৬
শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানী বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। [সহীহুল জামে, হাদীস নং-৭৯৩৭]
এতগুলো মুহাদ্দিস হাদিসটি সহীহ ও হাসানের মর্যাদা দেবার পরও একে বাতিল বলা ধৃষ্ঠতা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। সালাতুত তাসবিহ নামাজ অবশ্যই পড়া যাবে। বিভিন্ন হাদিস দ্বারা বিষয়টি প্রমাণিত।
দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহ্হুদ পড়ার জন্য বসবে তখন আগে উক্ত তাসবীহ ১০ বার পড়বে তারপর তাশাহ্হুদ পড়বে। তারপর আল্লাহু আকবার বলে তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠবে। অতঃপর তৃতীয় রাকাত ও চতুর্থ রাকাতেও উক্ত নিয়মে উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। তাসবীর বাংলা উচ্চারণ হলো-“সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার”
কোন এক স্থানে উক্ত তাসবীহ পড়তে সম্পূর্ণ ভুলে গেলে বা ভুলে নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে কম পড়লে পরবর্তী যে রুকনেই স্মরণ আসুক সেখানে তথাকার সংখ্যার সাথে এই ভুলে যাওয়া সংখ্যাগুলোও আদায় করে নিবে। আর এই নামাযে কোন কারণে সাজদায়ে সাহু ওয়াজিব হলে সেই সাজদা এবং তার মধ্যকার বৈঠকে উক্ত তাসবীহ পাঠ করতে হবে না। তাসবীহের সংখ্যা স্মরণ রাখার জন্য আঙ্গুলের কর গণনা করা যাবে না, তবে আঙ্গুল চেপে স্মরণ রাখা যেতে পারে।
বিঃ দ্রঃ সালাতুত তাসবীহ পড়ার আরো একটি নিয়ম রয়েছে। তবে উপরোল্লিখিত নিয়মটি উত্তম।
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ لِلْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ: يَا عَبَّاسُ، يَا عَمَّاهُ، ” أَلَا أُعْطِيكَ، أَلَا أَمْنَحُكَ، أَلَا أَحْبُوكَ، أَلَا أَفْعَلُ لَكَ عَشْرَ خِصَالٍ إِذَا أَنْتَ فَعَلْتَ ذَلِكَ، غَفَرَ اللَّهُ لَكَ ذَنْبَكَ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ، وَقَدِيمَهُ وَحَدِيثَهُ، وَخَطَأَهُ وَعَمْدَهُ، وَصَغِيرَهُ وَكَبِيرَهُ، وَسِرَّهُ وَعَلَانِيَتَهُ، عَشْرُ خِصَالٍ: أَنْ تُصَلِّيَ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ، تَقْرَأُ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَسُورَةٍ، فَإِذَا فَرَغْتَ مِنَ الْقِرَاءَةِ فِي أَوَّلِ رَكْعَةٍ، قُلْتَ وَأَنْتَ قَائِمٌ: سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ خَمْسَ عَشْرَةَ مَرَّةً، ثُمَّ تَرْكَعُ فَتَقُولُ وَأَنْتَ رَاكِعٌ عَشْرًا، ثُمَّ تَرْفَعُ رَأْسَكَ مِنَ الرُّكُوعِ فَتَقُولُهَا عَشْرًا، ثُمَّ تَهْوِي سَاجِدًا فَتَقُولُهَا وَأَنْتَ سَاجِدٌ عَشْرًا، ثُمَّ تَرْفَعُ رَأْسَكَ مِنَ السُّجُودِ فَتَقُولُهَا عَشْرًا، ثُمَّ تَسْجُدُ فَتَقُولُهَا عَشْرًا، ثُمَّ تَرْفَعُ رَأْسَكَ مِنَ السُّجُودِ فَتَقُولُهَا عَشْرًا، فَذَلِكَ خَمْسَةٌ وَسَبْعُونَ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ، تَفْعَلُ فِي أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ، إِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ تُصَلِّيَهَا فِي كُلِّ يَوْمٍ مَرَّةً فَافْعَلْ، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَفِي كُلِّ جُمُعَةٍ مَرَّةً، فَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَفِي كُلِّ شَهْرٍ مَرَّةً، فَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَفِي عُمُرِكَ مَرَّةً“
ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আব্বাস ইবনে আব্দিল মুত্তালিবকে বলেছেন, হে চাচা! আমি কি আপনাকে দেব না? আমি কি আপনাকে প্রদান করব না? আমি কি আপনার নিকটে আসব না? আমি কি আপনার জন্য দশটি সৎ গুনের বর্ণনা করব না যা করলে আল্লাহ তাআলা আপনার আগের ও পিছনের, নতুন ও পুরাতন, ইচ্ছায় ও ভুলবশত কৃত, ছোট ও বড়, গোপন ও প্রকাশ্য সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন? আর সে দশটি সৎ গুন হলো: আপনি চার রাকাত নামাজ পড়বেন। প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়বেন। প্রথম রাকাতে যখন কিরাআত পড়া শেষ করবেন তখন দাঁড়ানো অবস্থায় ১৫ বার বলবেন:
سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ
{উচ্চারণঃ সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার}
এরপর রুকুতে যাবেন এবঃ রুকু অবস্থায় (উক্ত দুআটি) ১০ বার পড়বেন। এরপর রুকু থেকে মাথা ওঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদায় যাবেন। সিজদারত অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদা থেকে মাথা উঠাবেন অতঃপর ১০ বার পড়বেন। এরপর আবার সিজদায় যাবেন এবং সিজদারত অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদা থেকে মাথা ওঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন। এ হলো প্রতি রাকাতে ৭৫ বার। আপনি চার রাকাতেই অনুরূপ করবেন। যদি আপনি প্রতিদিন আমল করতে পারেন, তবে তা করুন। আর যদি না পারেন,তবে প্রতি জুমাআয় একবার। যদি প্রতি জুমআয় না করেন তবে প্রদি মাসে একবার। আর যদি তাও না করেন তবে জীবনে একবার।
{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১২৯৭,
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৮৭,
সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১২১৬,
সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৬৯৫}
হাদীসটি সহীহ।
উক্ত হাদীসকে যারা সহীহ বলেছেন!
১
ইমাম আবু দাউদ, হাদীস নং-১২৯৭, [ইমাম আবু দাউদ হাদীস বললে, চুপ থাকলে সেটি তার কাছে সহীহ।
২
ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন, এর সনদটি হাসান। [আলখিছাল-১/৪১]
৩
আল্লামা ওয়াদেয়ী বলেন, হাসান। [সহীহুল মুসনাদ, হাদীস নং-৫৮২]
৪
ইবনুল মুলাক্কিন বলেন, এর সনদ উত্তম। [আবদরুল মুনীর-৪/২৩৫]
৫
ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন, হাসান। [তাখরীজুল মিশকাতুল মাসাবীহ-২/৭৮]
৬
শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানী বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। [সহীহুল জামে, হাদীস নং-৭৯৩৭]
এতগুলো মুহাদ্দিস হাদিসটি সহীহ ও হাসানের মর্যাদা দেবার পরও একে বাতিল বলা ধৃষ্ঠতা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। সালাতুত তাসবিহ নামাজ অবশ্যই পড়া যাবে। বিভিন্ন হাদিস দ্বারা বিষয়টি প্রমাণিত।
দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহ্হুদ পড়ার জন্য বসবে তখন আগে উক্ত তাসবীহ ১০ বার পড়বে তারপর তাশাহ্হুদ পড়বে। তারপর আল্লাহু আকবার বলে তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠবে। অতঃপর তৃতীয় রাকাত ও চতুর্থ রাকাতেও উক্ত নিয়মে উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। তাসবীর বাংলা উচ্চারণ হলো-“সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার”
কোন এক স্থানে উক্ত তাসবীহ পড়তে সম্পূর্ণ ভুলে গেলে বা ভুলে নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে কম পড়লে পরবর্তী যে রুকনেই স্মরণ আসুক সেখানে তথাকার সংখ্যার সাথে এই ভুলে যাওয়া সংখ্যাগুলোও আদায় করে নিবে। আর এই নামাযে কোন কারণে সাজদায়ে সাহু ওয়াজিব হলে সেই সাজদা এবং তার মধ্যকার বৈঠকে উক্ত তাসবীহ পাঠ করতে হবে না। তাসবীহের সংখ্যা স্মরণ রাখার জন্য আঙ্গুলের কর গণনা করা যাবে না, তবে আঙ্গুল চেপে স্মরণ রাখা যেতে পারে।
বিঃ দ্রঃ সালাতুত তাসবীহ পড়ার আরো একটি নিয়ম রয়েছে। তবে উপরোল্লিখিত নিয়মটি উত্তম।
