কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১২৭৭
আন্তর্জাতিক নং: ১২৭৭
৩০৪. সূর্য উপরে থাকতেই তা আদায়ের অনুমতি সম্পর্কে।
১২৭৭. আর-রবী ইবনে নাফে (রাহঃ) .... আমর ইবনে আনবাসা আস-সুলামী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! রাতের কোন অংশে আল্লাহ পাক দুআ অধিক কবুল করেন? তিনি বলেনঃ রাতের শেষাংশে। অতএব তখন তুমি তোমার ইচ্ছামত নামায আদায় করবে। কেননা ঐ সময়ের নামাযে বিশেষ ফিরিশতারা উপস্থিত হয়ে তা তাদের নিকট রক্ষিত আমলনামায় লিপিবদ্ধ করে নেয় এবং তারা ফজরের সূর্য উঠা পর্যন্ত উপস্থিত থাকে। অতঃপর তুমি সূর্য উঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে এবং এর পরিমাণ হল, এক বা দুই তীরের সমান। কেননা সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখান দিয়ে উদিত হয় এবং ঐ সময় কাফিররা শয়তানের পূজা করে। অতঃপর তোমার ইচ্ছানুযায়ী নামায আদায় করবে। কেননা প্রত্যেক নামাযের সময়ই ফিরিশতারা দফতরসহ উপস্থিত হয়ে থাকে এবং ঠিক দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত নামায আদায় করা যায়।

অতঃপর সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। কেননা এই সময় জাহান্নামের আগুন প্রবলভাবে উদ্দীপিত হতে থাকে এবং এর দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। অতঃপর সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পর তুমি তোমার খুশীমত আসরের পূর্ব পর্যন্ত নামায আদায় করতে পার। কেননা প্রত্যেক নামাযের সময় ফেরেশাতার হাযির হয়ে থাকে। আসরের ফরয নামায আদায়ের পর হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনরূপ নামায পড়া থেকে বিরত থাকবে। কেননা শয়তানের দুই শিংয়ের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে সূর্য অস্তচলে যায় এবং কাফিররা ঐ সময় শয়তানের পূজা করে থাকে। অতঃপর রাবী দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন।

রাবী আব্বাস ইবনে সালিম (রাহঃ) বলেন, আবু সালামা (রাহঃ) ......... আবু উমামা (রাযিঃ) হতে আমার নিকট ঐরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে যদি আমার বর্ণনায় কোন ভুলত্রুটি হয়ে থাকে সেজন্য আমি আল্লাহর নিকটে তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
باب مَنْ رَخَّصَ فِيهِمَا إِذَا كَانَتِ الشَّمْسُ مُرْتَفِعَةً
حَدَّثَنَا الرَّبِيعُ بْنُ نَافِعٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُهَاجِرِ، عَنِ الْعَبَّاسِ بْنِ سَالِمٍ، عَنْ أَبِي سَلاَّمٍ، عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، عَنْ عَمْرِو بْنِ عَبَسَةَ السُّلَمِيِّ، أَنَّهُ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَىُّ اللَّيْلِ أَسْمَعُ قَالَ " جَوْفُ اللَّيْلِ الآخِرُ فَصَلِّ مَا شِئْتَ فَإِنَّ الصَّلاَةَ مَشْهُودَةٌ مَكْتُوبَةٌ حَتَّى تُصَلِّيَ الصُّبْحَ ثُمَّ أَقْصِرْ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ فَتَرْتَفِعَ قِيْسَ رُمْحٍ أَوْ رُمْحَيْنِ فَإِنَّهَا تَطْلُعُ بَيْنَ قَرْنَىْ شَيْطَانٍ وَتُصَلِّي لَهَا الْكُفَّارُ ثُمَّ صَلِّ مَا شِئْتَ فَإِنَّ الصَّلاَةَ مَشْهُودَةٌ مَكْتُوبَةٌ حَتَّى يَعْدِلَ الرُّمْحُ ظِلَّهُ ثُمَّ أَقْصِرْ فَإِنَّ جَهَنَّمَ تُسْجَرُ وَتُفْتَحُ أَبْوَابُهَا فَإِذَا زَاغَتِ الشَّمْسُ فَصَلِّ مَا شِئْتَ فَإِنَّ الصَّلاَةَ مَشْهُودَةٌ حَتَّى تُصَلِّيَ الْعَصْرَ ثُمَّ أَقْصِرْ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ فَإِنَّهَا تَغْرُبُ بَيْنَ قَرْنَىْ شَيْطَانٍ وَيُصَلِّي لَهَا الْكُفَّارُ " . وَقَصَّ حَدِيثًا طَوِيلاً قَالَ الْعَبَّاسُ هَكَذَا حَدَّثَنِي أَبُو سَلاَّمٍ عَنْ أَبِي أُمَامَةَ إِلاَّ أَنْ أُخْطِئَ شَيْئًا لاَ أُرِيدُهُ فَأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

সূর্যোদয়কাল ও তার আগের পরের সময়টায় নামায পড়া নিষেধ কেন, সে সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
(কেননা সূর্য উদিত হয় শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে)। শয়তানের দুই শিং' বলে তার মাথার দুই প্রান্ত বোঝানো হয়েছে। প্রকৃত উদ্দেশ্য তার মাথা বোঝানো। শিংধারী পশু যেমন অন্যের উপর হামলা করার জন্য মাথা দিয়ে তাক করে, তেমনি শয়তানও সূর্যোদয়কালে মাথা উঁচিয়ে মানুষকে লক্ষ্যবস্তু বানায়, যাতে তাদেরকে বিপথগামী করতে পারে, তাদেরকে কুমন্ত্রণার ফাঁদে ফেলে নিজ অনুসারী বানিয়ে নিতে পারে। একশ্রেণীর মানুষ ঠিকই তার ফাঁদে পড়ে যায়। এবং সত্যদ্বীন থেকে বিচ্যুত হয়ে সূর্যের পূজা শুরু করে দেয়। এভাবে যুগে যুগে বহু মানুষ আকল-বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে সূর্যের পূজা করেছে। আজও করছে। শয়তান একই কাজ করে সূর্যাস্তকালেও। এ কারণেই এ দুই সময়ে নামায পড়া নিষেধ। কেননা এ সময়ে নামায পড়লে সূর্য-পূজারীদের সঙ্গে একরকম সাদৃশ্য হয়ে যায়।

নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে ঠিক দুপুর বেলায়ও। কেন এসময়ে নামায পড়া জায়েয নয় সে সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- (কেননা তখন জাহান্নাম উত্তপ্ত করা হয়)। অর্থাৎ যদিও জাহান্নাম সর্বক্ষণ প্রজ্বলিত থাকে, কিন্তু দুপুরবেলা তার উত্তাপ অন্য সময়ের তুলনায় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাই এসময়ে নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে।

প্রশ্ন হতে পারে, নামায আল্লাহ তা'আলার রহমত লাভের উপায়, কাজেই নামায পড়ার দ্বারা আযার দূর হওয়ার আশা থাকে, এ হিসেবে যখন জাহান্নামের আগুন বেশি উত্তপ্ত করা হয় সেই দুপুর বেলায়ই তো নামায পড়া বেশি সমীচীন মনে হয়, তা সত্ত্বেও এ সময় নামায না পড়তে হুকুম করা হল কেন?
এর প্রকৃত উত্তর তো এই যে, বিধানদাতা নিজেই যখন কোনও কারণ বর্ণনা করেন, তখন আমাদের তা বুঝে আসুক বা না-ই আসুক, বান্দা হিসেবে তা গ্রহণ করে নেওয়াই কর্তব্য। তবে কেউ কেউ এর সপক্ষে যুক্তিও দেখিয়েছেন। যেমন যায়নুদ্দীন ইবনুল মুনায়্যির রহ. বলেন, আযাব ও গযবের প্রকাশকালে প্রার্থনা ফলপ্রসূ হয় না। তা ফলপ্রসূ হয় কেবল তার জন্যই, যাকে এরূপ সময় প্রার্থনার অনুমতি দেওয়া হয়, যেমন হাশরের ময়দানে চরম বিভীষিকার কালে আল্লাহ তা'আলা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শাফা'আত ও প্রার্থনার অনুমতি দেবেন এবং তা কবুলও করা হবে। অন্য কোনও নবীকে অনুমতি দেওয়া হবে না বলে তারা সুপারিশ করতেও সাহস পাবেন না। নামাযেও দু'আ ও প্রার্থনা থাকে। তাই যখন গযব ও ক্রোধের প্রকাশ হয়, সেই দুপুরবেলা নামায থেকে বিরত থাকাই বাঞ্ছনীয়।

প্রকাশ থাকে যে, জাহান্নাম উত্তপ্ত করা, শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে সূর্যের উদয় ও অস্ত যাওয়া সম্পর্কে উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন ব্যাখ্যাদান করেছেন। তবে এ সম্পর্কে ইমাম খাত্তাবী রহ.-এর কথাই সর্বাপেক্ষা সুন্দর। তিনি বলেন, কোনও বিষয়: হারাম করা বা নিষিদ্ধ করার কারণ সম্পর্কে এরকম যা-কিছু উল্লেখ করা হয়ে থাকে, প্রকৃতপক্ষে তার হাকীকত দৃষ্টিশক্তি ও অন্যান্য ইন্দ্রিয়শক্তি দ্বারা অনুভব করা সম্ভব নয়। আমাদের কর্তব্য এর উপর ঈমান আনা, এর অন্তর্নিহিত অর্থ সত্য বলে বিশ্বাস করা এবং এসব কারণের সঙ্গে যে বিধি-বিধান যুক্ত করা হয়েছে তা পালন করা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সূর্যোদয়কালে, সুর্যাস্তকালে ও দুপুরবেলা নামায পড়া জায়েয নয়।

খ. ফজরের নামায আদায়ের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং আসরের নামায আদায়ের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনও নফল নামায পড়া জায়েয নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
সুনানে আবু দাউদ - হাদীস নং ১২৭৭ | মুসলিম বাংলা