কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ
২. নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৬৬৬
১০০. কাতার সোজা করা।
৬৬৬. ঈসা ইবনে ইবরাহীম ..... আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, তোমরা নামাযের সময় কাতারগুলো সোজা কর, পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াও, উভয়ের মাঝখানে ফাঁক বন্ধ কর এবং তোমাদের ভাইদের হাতে নরম হয়ে যাও। রাবী ঈসা তাঁর বর্ণনায় “বি-আইদী ইখওয়ানিকুম” বাক্যাংশ উল্লেখ করেন নাই। তিনি আরো বলেনঃ তোমরা কাতারের মধ্যে শয়তানের দণ্ডায়মান হওয়ার জন্য ফাঁক রাখবে না। যারা কাতারের মধ্যে পরস্পর মিলিত হয়ে দাঁড়াবে আল্লাহ্ তাদেরকে তাঁর রহমতের অন্তর্ভূক্ত করবেন। অপরপক্ষে যে ব্যক্তি কাতারে মিলিত হয়ে দাঁড়াবে না আল্লাহ্ তাকে তাঁর রহমত হতে বঞ্চিত করবেন।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
বুখারী শরীফে বর্ণিত হযরত আনাস রা.-এর হাদীস, আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত হযরত নু’মান বিন বাশীর রা.-এর হাদীস এবং এ অর্থে বর্ণিত অন্যান্য হাদীসের দোহাই দিয়ে বর্তমান কালের কিছু লোকজন নিজের দু’পায়ের মধ্যে অনেক ফাঁকা করে অন্যের পায়ের সাথে লাগিয়ে দেয় এবং এটাকে রসূল স.-এর ছুন্নাত বলে প্রচার করে থাকে।
এসব হাদীসের ব্যাপারে আমাদের মনত্মব্য হলো: এ সকল হাদীসের দুটি অংশ রয়েছে। এক. কাতার সোজা করার নির্দেশ। দুই. টাখনুর সাথে টাখনু, হাঁটুর সাথে হাঁটু এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানোর আমল। এর মধ্যে কাতার সোজা করার নির্দেশটি মারফু’ তথা রসূল স.এর বাণী। আর মিলিয়ে দাঁড়ানোর অংশটি মাউকুফ তথা সাহাবার আমল যা রসূলুল্লাহ স. দেখেছেন কি না তার কোন প্রমাণ হাদীসে বর্ণিত নেই। সুতরাং টাখনুর সাথে টাখনু, হাঁটুর সাথে হাঁটু এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানোকে রসূলুল্লাহ স.-এর হাদীস হিসেবে প্রচার করা কোনক্রমেই ঠিক নয়। তবে সাহাবাগণের আমল হিসেবে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত যার অনুসরণ করা আমাদের জন্য উচিত এবং আমরা করেও থাকি। অবশ্য, তারা মিলানোর বাহ্যিক অর্থ করে থাকে। আর হাদীস বিশারদগণ এর উদ্দিষ্ট অর্থ করে থাকেন। অর্থাৎ গায়ে গায়ে মিলে দাঁড়ানো আর কাতারের সবাই এব বরাবর হওয়া, আগে/পিছে না হওয়া। টাখনুর সাথে টাখনু, হাঁটুর সাথে হাঁটু এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানোর বাহ্যিক অর্থ যেমন এ হাদীসের উদ্দেশ্য নয়, ঠিক তেমনই তা সম্ভবও নয়। কারণ কাঁধ এবং কদম লাগিয়ে দাঁড়ালে হাঁটুর সাথে হাঁটু লাগানো অসম্ভব। আবার পায়ের পেছনের অংশ তুলনামূলক সরম্ন হওয়ায় গিটের সাথে গিট লাগিয়ে দাঁড়ালে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পা হুবহু কিবলামুখী রাখাও অসম্ভব। বুখারী শরীফের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাকার যুগশ্রেষ্ঠ ইমাম, হাফেজ ইবনে হাজার আসকালনী রহ.-এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন: الْمُرَادُ بِذَلِكَ الْمُبَالَغَةُ فِي تَعْدِيلِ الصَّفِّ وَسَدِّ خَلَلِهِ وَقَدْ وَرَدَ الْأَمْرُ بِسَدِّ خَلَلِ الصَّفِّ وَالتَّرْغِيبِ فِيهِ فِي أَحَادِيثَ كَثِيرَةٍ أجمعها حَدِيث بن عمر عِنْد أبي دَاوُد وَصَححهُ بن خُزَيْمَةَ وَالْحَاكِمُ উক্ত হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সর্বাধিক গুরম্নত্বের সাথে কাতার সোজা করা এবং ফাঁকা বন্ধ করে পরস্পর মিলেমিলে দাঁড়ানো। তিনি আরো বলেন: ফাঁকা বন্ধ করে দাঁড়ানোর ব্যাপারে অনেক হাদীস আছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক অর্থেবহ হচ্ছে আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত হযরত ইবনে উমার রা.-এর হাদীস। ইবনে খুযাইমা ও হাকেম উক্ত হাদীসকে সহীহ বলে মনত্মব্য করেছেন”।
পূর্ববর্ণিত হযরত আব্দুর রহমান, আবু হুরায়রা এবং হযরত আব্দুলস্নাহ বিন মাসউদ রা.-এর হাদীস এবং ইবনে হাজার আসকালানী রহ.-এর উপরিউক্ত ব্যাখ্যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, নিজের দু’পায়ের মধ্যে অনেক ফাঁকা করে অন্যের পায়ের সাথে লাগিয়ে দেয়া রসূলুল্লাহ স.-এর ছুন্নাতও নয় আর সাহাবায়ে কিরামের আমলের সঠিক রূপও নয়; বরং এটা কারো কল্পনাপ্রসূত ব্যাখ্যা সম্বলিত আমল। আর তা বাসত্মবায়নের জন্য হাদীসে উলিস্নখিত শব্দের বাহানা ও আশ্রয় গ্রহণ করা হয়েছে মাত্র। কেবল নবীর আমলই হুজ্জাত, সাহাবীদের আমল হুজ্জাত বা প্রমাণিক ভিত্তি নয় বলে যারা হারহামেশা দারাজ কন্ঠে প্রচার করে থাকেন তারা আবার এ মাসআলায় এসে তাদের নীতির আমূল পরিবর্তন ঘটালেন ! এ দ্বৈত নীতি আশ্চর্য জনক নয় কী ? প্রসিদ্ধ সালাফী আলেম জেদ্দা ফিকহ একাডেডমীর সাবেক প্রধান ড. বকর বিন আব্দুলস্নাহ আবু যায়দ তাঁর ‘লা জাদীদা ফী আহকামিস সালাহ’ কিতাবে নামাযে নতুন আবিষ্কৃত কিছু পদ্ধতি চিহিৃত করেছেন। কাতারে পাশের মুসলস্নীর পায়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে দাঁড়ানোর এ নব আবিস্কৃত পন্থাকেও তিনি এ তালিকার অনত্মর্ভুক্ত করেছেন। হায় ! আমাদের দেশের সালাফী ভাইরাও যদি এর থেকে শিক্ষা নিতেন তাহলে কতইনা ভাল হতো!
এসব হাদীসের ব্যাপারে আমাদের মনত্মব্য হলো: এ সকল হাদীসের দুটি অংশ রয়েছে। এক. কাতার সোজা করার নির্দেশ। দুই. টাখনুর সাথে টাখনু, হাঁটুর সাথে হাঁটু এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানোর আমল। এর মধ্যে কাতার সোজা করার নির্দেশটি মারফু’ তথা রসূল স.এর বাণী। আর মিলিয়ে দাঁড়ানোর অংশটি মাউকুফ তথা সাহাবার আমল যা রসূলুল্লাহ স. দেখেছেন কি না তার কোন প্রমাণ হাদীসে বর্ণিত নেই। সুতরাং টাখনুর সাথে টাখনু, হাঁটুর সাথে হাঁটু এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানোকে রসূলুল্লাহ স.-এর হাদীস হিসেবে প্রচার করা কোনক্রমেই ঠিক নয়। তবে সাহাবাগণের আমল হিসেবে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত যার অনুসরণ করা আমাদের জন্য উচিত এবং আমরা করেও থাকি। অবশ্য, তারা মিলানোর বাহ্যিক অর্থ করে থাকে। আর হাদীস বিশারদগণ এর উদ্দিষ্ট অর্থ করে থাকেন। অর্থাৎ গায়ে গায়ে মিলে দাঁড়ানো আর কাতারের সবাই এব বরাবর হওয়া, আগে/পিছে না হওয়া। টাখনুর সাথে টাখনু, হাঁটুর সাথে হাঁটু এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানোর বাহ্যিক অর্থ যেমন এ হাদীসের উদ্দেশ্য নয়, ঠিক তেমনই তা সম্ভবও নয়। কারণ কাঁধ এবং কদম লাগিয়ে দাঁড়ালে হাঁটুর সাথে হাঁটু লাগানো অসম্ভব। আবার পায়ের পেছনের অংশ তুলনামূলক সরম্ন হওয়ায় গিটের সাথে গিট লাগিয়ে দাঁড়ালে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পা হুবহু কিবলামুখী রাখাও অসম্ভব। বুখারী শরীফের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাকার যুগশ্রেষ্ঠ ইমাম, হাফেজ ইবনে হাজার আসকালনী রহ.-এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন: الْمُرَادُ بِذَلِكَ الْمُبَالَغَةُ فِي تَعْدِيلِ الصَّفِّ وَسَدِّ خَلَلِهِ وَقَدْ وَرَدَ الْأَمْرُ بِسَدِّ خَلَلِ الصَّفِّ وَالتَّرْغِيبِ فِيهِ فِي أَحَادِيثَ كَثِيرَةٍ أجمعها حَدِيث بن عمر عِنْد أبي دَاوُد وَصَححهُ بن خُزَيْمَةَ وَالْحَاكِمُ উক্ত হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সর্বাধিক গুরম্নত্বের সাথে কাতার সোজা করা এবং ফাঁকা বন্ধ করে পরস্পর মিলেমিলে দাঁড়ানো। তিনি আরো বলেন: ফাঁকা বন্ধ করে দাঁড়ানোর ব্যাপারে অনেক হাদীস আছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক অর্থেবহ হচ্ছে আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত হযরত ইবনে উমার রা.-এর হাদীস। ইবনে খুযাইমা ও হাকেম উক্ত হাদীসকে সহীহ বলে মনত্মব্য করেছেন”।
পূর্ববর্ণিত হযরত আব্দুর রহমান, আবু হুরায়রা এবং হযরত আব্দুলস্নাহ বিন মাসউদ রা.-এর হাদীস এবং ইবনে হাজার আসকালানী রহ.-এর উপরিউক্ত ব্যাখ্যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, নিজের দু’পায়ের মধ্যে অনেক ফাঁকা করে অন্যের পায়ের সাথে লাগিয়ে দেয়া রসূলুল্লাহ স.-এর ছুন্নাতও নয় আর সাহাবায়ে কিরামের আমলের সঠিক রূপও নয়; বরং এটা কারো কল্পনাপ্রসূত ব্যাখ্যা সম্বলিত আমল। আর তা বাসত্মবায়নের জন্য হাদীসে উলিস্নখিত শব্দের বাহানা ও আশ্রয় গ্রহণ করা হয়েছে মাত্র। কেবল নবীর আমলই হুজ্জাত, সাহাবীদের আমল হুজ্জাত বা প্রমাণিক ভিত্তি নয় বলে যারা হারহামেশা দারাজ কন্ঠে প্রচার করে থাকেন তারা আবার এ মাসআলায় এসে তাদের নীতির আমূল পরিবর্তন ঘটালেন ! এ দ্বৈত নীতি আশ্চর্য জনক নয় কী ? প্রসিদ্ধ সালাফী আলেম জেদ্দা ফিকহ একাডেডমীর সাবেক প্রধান ড. বকর বিন আব্দুলস্নাহ আবু যায়দ তাঁর ‘লা জাদীদা ফী আহকামিস সালাহ’ কিতাবে নামাযে নতুন আবিষ্কৃত কিছু পদ্ধতি চিহিৃত করেছেন। কাতারে পাশের মুসলস্নীর পায়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে দাঁড়ানোর এ নব আবিস্কৃত পন্থাকেও তিনি এ তালিকার অনত্মর্ভুক্ত করেছেন। হায় ! আমাদের দেশের সালাফী ভাইরাও যদি এর থেকে শিক্ষা নিতেন তাহলে কতইনা ভাল হতো!
