কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৫৯
আন্তর্জাতিক নং: ৫৫৯
৫৪. পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার ফযিলত।
৫৫৯. মুসাদ্দাদ .... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, কোন ব্যক্তি জামাআতের সাথে নামায আদায় করলে বাড়ীতে এবং বাজারে একাকী নামায আদায় করা অপেক্ষা তা পঁচিশ গুণ শ্রেয়। তা এই কারণে যে, যখন কোন ব্যক্তি উত্তমরূপে উযু করে শুধু নামাযের উদ্দেশ্যেই মসজিদে যায় তার প্রতি পদক্ষেপের বিনিময়ে তার মর্যাদা বৃদ্ধি এবং গুনাহ্ মাফ হয়ে থাকে যতক্ষণ না সে মসজিদে প্রবেশ করে।

অতঃপর সে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশের পর যতক্ষণ সেখানে নামাযের জন্য অবস্থান করবে ততক্ষণ তাকে নামাযী হিসাবে গণ্য করা হবে। ঐ ব্যক্তি যতক্ষণ মসজিদে অবস্থান করবে ততক্ষণ ফিরিশতারা তার জন্য দুআ করবে। দুআটি এইরূপঃ “ইয়া আল্লাহ্! তুমি তাকে ক্ষমা করা ইয়া আল্লাহ্! তুমি তার উপর রহমত বর্ষণ কর। ইয়া আল্লাহ্! তুমি তার তওবা কবুল করা।” ঐ ব্যক্তির জন্য ফিরিশতারা ততক্ষণ-পর্যন্ত ঐরূপ দুআ করতে থাকবে যতক্ষণ সে কাউকেও কষ্ট না দেয় অথবা তার উযু নষ্ট না হয়।
باب مَا جَاءَ فِي فَضْلِ الْمَشْىِ إِلَى الصَّلاَةِ
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " صَلاَةُ الرَّجُلِ فِي جَمَاعَةٍ تَزِيدُ عَلَى صَلاَتِهِ فِي بَيْتِهِ وَصَلاَتِهِ فِي سُوقِهِ خَمْسًا وَعِشْرِينَ دَرَجَةً وَذَلِكَ بِأَنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ وَأَتَى الْمَسْجِدَ لاَ يُرِيدُ إِلاَّ الصَّلاَةَ وَلاَ يَنْهَزُهُ إِلاَّ الصَّلاَةُ لَمْ يَخْطُ خَطْوَةً إِلاَّ رُفِعَ لَهُ بِهَا دَرَجَةٌ وَحُطَّ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةٌ حَتَّى يَدْخُلَ الْمَسْجِدَ فَإِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ كَانَ فِي صَلاَةٍ مَا كَانَتِ الصَّلاَةُ هِيَ تَحْبِسُهُ وَالْمَلاَئِكَةُ يُصَلُّونَ عَلَى أَحَدِكُمْ مَا دَامَ فِي مَجْلِسِهِ الَّذِي صَلَّى فِيهِ يَقُولُونَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ اللَّهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ مَا لَمْ يُؤْذِ فِيهِ أَوْ يُحْدِثْ فِيهِ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাচ্ছেন যে, নিজ ঘরে বা বাজারের দোকানে একাকী নামায পড়া অপেক্ষা মসজিদে জামাতের সংগে নামায আদায় করলে তার ফযীলত পঁচিশ গুণ বেশি হয়। মসজিদে জামাতের সংগে নামায পড়লে তার ফযীলত যে এত বেশি, তার কারণ কি? এ হাদীছ দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায়, তার কারণ কেবল নামাযের নিয়তে পথচলা। ঘরে বা দোকানে নামায পড়লে নামায পড়া হয় বটে, কিন্তু নামাযের নিয়তে পথচলা হয় না। আবার কেউ যদি এমনিই পথ চলে কিন্তু নামাযের নিয়ত না থাকে, তা দ্বারাও এই বাড়তি ফযীলত হাসিল হয় না। এই বাড়তি ফযীলত কেবল নামাযের নিয়তে মসজিদে গমনের কারণে।
এই মহান নিয়তের কারণে পথ চলাটা এত দামি হয়ে যায় যে, মসজিদ পর্যন্ত পৌঁছতে যতগুলি কদম ফেলা হয় তার প্রত্যেক কদমের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে বান্দার মর্যাদা এক স্তর বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়। বোঝাই যাচ্ছে মসজিদ পর্যন্ত যার পথ যতবেশি দূরে হবে, তার মর্যাদাও তত বাড়বে এবং ততবেশি গুনাহ মাফ হবে। অপর এক হাদীছে আছে, একবার বনূ সালিমা গোত্র তাদের মহল্লা ছেড়ে মসজিদের নিকটে এসে বসবাসের আগ্রহ ব্যক্ত করেছিল। কারণ তাদের মহল্লা মসজিদ থেকে দূরে ছিল। মসজিদে যাতায়াতে বেশি সময় লাগত এবং অনেক সময় কষ্টও হত। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানতে পারলেন যে, তারা মসজিদের কাছাকাছি এসে বসবাস করতে চাচ্ছে, তখন তিনি তাদেরকে তা থেকে বারণ করলেন এবং বললেন, হে বনূ সালিমা! আপন জায়গায়ই বাস করতে থাক। তাতে তোমাদের কদমে কদমে ছওয়াব লেখা হবে।
তারপর আবার মসজিদের ভেতরেও এই নিয়তের মাহাত্ম্য বাকি থেকে যায়। বান্দা যতক্ষণ নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে নামাযী গণ্য করা হবে। আবার নামাযের পর যতক্ষণ নামাযের জায়গায় বসা থাকবে, ততক্ষণ সে ফিরিশতাদের দু'আ লাভ করতে থাকবে। সুবহানাল্লাহ! নিয়তের কারণে সাধারণ একেকটা কাজ কত বড় দামী হয়ে গেল!
ফিরিশতাদের দু'আ লাভের জন্য এ হাদীছে দু'টি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে।
ক. কাউকে কষ্ট না দেওয়া। অর্থাৎ যতক্ষণ সেখানে বসা থাকবে, ততক্ষণ কারো গীবত করবে না, কাউকে গালি দেবে না, কষ্টদায়ক কোনও কথা বলবে না, উচ্চ আওয়াজে কথা বলে অন্যের নামায ও যিকরের ব্যাঘাত ঘটাবে না, কাউকে মারধর করবে না, মোটকথা হাতে, মুখে এবং সবরকমেই অন্যকে কষ্টদান থেকে বিরত থাকবে।
খ. যতক্ষণ বসা থাকবে, ওযূ অবস্থায় থাকবে। ওযূ নষ্ট করে অপবিত্র অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করবে না।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা জামাতে নামায পড়ার ফযীলত জানা যায়। সুতরাং যতসম্ভব জামাতের সাথে নামায আদায়ে যত্নবান থাকা উচিত।

খ. মসজিদে আগমনকালে দৈহিক ও মানসিকভাবে নামাযের জন্য প্রস্তুত হয়েই আসা উচিত। সেই প্রস্তুতির একটা অংশ উত্তমরূপে ওযূ করে আসা।

গ. মসজিদে গমনের উদ্দেশ্য যেহেতু নামায পড়া, তাই পথ চলাকালে সেই নিয়ত অন্তরে জাগ্রত রাখা উচিত, যাতে পথচলাটা ধীরশান্ত পদক্ষেপে হয় এবং গোটা পথ মুসল্লীসুলভ ভাবভঙ্গি বজায় থাকে।

ঘ. হাদীছে যে মর্যাদা বৃদ্ধি ও গুনাহ মাফের কথা বলা হয়েছে, তা হাসিলের প্রতি মনোযোগ থাকা কর্তব্য। এটা পথচলার আদব-কায়দা রক্ষায় সহায়ক হয়।

ঙ. জামাতের সময় না হলে শান্তভাবে নামাযের অপেক্ষা করা উচিত। কোনওভাবেই ব্যস্ততা প্রকাশ কাম্য নয়, কেননা অপেক্ষার এই সময়টা বড়ই মূল্যবান। এই অপেক্ষা বৃথা যায় না; বরং নামাযরূপেই গণ্য হয়।

চ. মসজিদ আল্লাহর ঘর। ইবাদতের স্থান। সেইসাথে এমনিতেও মসজিদে অবস্থানকালে দেহমনের পবিত্রতা বজায় রাখা উচিত। তদুপরি যখন অবস্থানকালীন সময়ে ফিরিশতাদের দু'আ লাভ হয়, তখন তো সবরকম অসমীচীন কাজ থেকে বিরত থাকার গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। তাই এ অবস্থায় ওযূ বজায় রাখা ও সর্বপ্রকার কষ্টদায়ক কাজ থেকে বিরত থাকা একান্ত কর্তব্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সুনানে আবু দাউদ - হাদীস নং ৫৫৯ | মুসলিম বাংলা