কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৫৩
আন্তর্জাতিক নং: ৪৫৩
১৬. মসজিদ নির্মাণ প্রসঙ্গে।
৪৫৩. মুসাদ্দাদ .... আনাস ইবনে মালেক (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মদীনায় আগমনের পর আওআলীয়ে-মদীনায় আমর ইবনে আওফ গোত্রে অবতরণ করেন এবং তথায় ১৪ দিন অবস্থান করেন। অতঃপর তিনি বনু নাজ্জার গোত্রে যাওয়ার উদ্দেশ্যে খবর পাঠান। তারা নবী (ﷺ) এর সম্মানার্থে গলদেশে তরবারি ঝুলিয়ে সেখানে আসেন। আনাস (রাযিঃ) বলেন, আমি যেন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে বাহনে আরোহিত অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি এবং আবু বকর (রাযিঃ) তখন তাঁর পশ্চাতে আরোহিত ছিলেন। বনু নাজ্জার গোত্রের নেতৃবৃন্দ তাঁর চারদিকে ছিল। তিনি আবু আইয়ুব (রাযিঃ) এর বাড়ির আঙ্গিনায় এসে অবতরণ করেন।

রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যেখানেই নামাযের ওয়াক্ত হত সেখানেই নামায আদায় করতেন। এমনকি তিনি বকরী রাখার স্থানেও নামায আদায় করতেন। তিনি মসজিদ নির্মাণের জন্য আদিষ্ট হলে বনু নাজ্জার গোভ্রের নিকট এ সংবাদ প্রেরণ করেন এবং বলেন, হে বনু নাজ্জার। তোমরা মসজিদ নির্মাণের জন্য এই বাগানটি আমার নিকট বিক্রি কর। তাঁরা বলেন, আমরা বিনিময় একমাত্র আল্লাহর নিকটেই কামনা করি। আনাস (রাযিঃ) বলেন, তাতে যা ছিল- সে ব্যাপারে আমি এখনই তোমাদের জ্ঞাত করাচ্ছি। ঐ স্থানে ছিল মুশরিকদের কবর, পুরাতন ধ্বংসস্তুপ ও খেজুর গাছ।

রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মুশরিকদের কবর হতে তাদের গলিত হাড্ডি ইত্যাদি অন্যত্র নিক্ষেপের নির্দেশ দিলে তা ফেলে দেয়া হয়, ভূমি সমতল করা হয় এবং খেজুর গাছগুলি কেটে ফেলা হয়। অতঃপর মসজিদের দক্ষিণ দিকের খেজুর গাছগুলি সুবিন্যস্তভাবে রাখা হয় এবং দরজার চৌকাঠ ছিল পাথরের তৈরী। মসজিদ তৈরীর জন্য পাথর আনার সময় নবী (ﷺ)ও সাহাবীদের সাথে একত্রে কাজ করার সময় নিম্নোক্ত কবিতা পাঠ করেনঃ

اللَّهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرُ الآخِرَهْ فَانْصُرِ الأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَهْ

“ইয়া আল্লাহ! আখেরাতে কল্যাণই আমাদের কাম্য। আপনি আনসার ও মুহাজিরদের সাহায্য করুন”।
باب فِي بِنَاءِ الْمَسَاجِدِ
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ، عَنْ أَبِي التَّيَّاحِ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ فَنَزَلَ فِي عُلْوِ الْمَدِينَةِ فِي حَىٍّ يُقَالُ لَهُمْ بَنُو عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ فَأَقَامَ فِيهِمْ أَرْبَعَ عَشَرَةَ لَيْلَةً ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَى بَنِي النَّجَّارِ فَجَاءُوا مُتَقَلِّدِينَ سُيُوفَهُمْ - فَقَالَ أَنَسٌ - فَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى رَاحِلَتِهِ وَأَبُو بَكْرٍ رِدْفَهُ وَمَلأُ بَنِي النَّجَّارِ حَوْلَهُ حَتَّى أَلْقَى بِفِنَاءِ أَبِي أَيُّوبَ وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي حَيْثُ أَدْرَكَتْهُ الصَّلاَةُ وَيُصَلِّي فِي مَرَابِضِ الْغَنَمِ وَإِنَّهُ أَمَرَ بِبِنَاءِ الْمَسْجِدِ فَأَرْسَلَ إِلَى بَنِي النَّجَّارِ فَقَالَ " يَا بَنِي النَّجَّارِ ثَامِنُونِي بِحَائِطِكُمْ هَذَا " . فَقَالُوا وَاللَّهِ لاَ نَطْلُبُ ثَمَنَهُ إِلاَّ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ . قَالَ أَنَسٌ وَكَانَ فِيهِ مَا أَقُولُ لَكُمْ كَانَتْ فِيهِ قُبُورُ الْمُشْرِكِينَ وَكَانَتْ فِيهِ خِرَبٌ وَكَانَ فِيهِ نَخْلٌ فَأَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِقُبُورِ الْمُشْرِكِينَ فَنُبِشَتْ وَبِالْخِرَبِ فَسُوِّيَتْ وَبِالنَّخْلِ فَقُطِعَ فَصَفُّوا النَّخْلَ قِبْلَةَ الْمَسْجِدِ وَجَعَلُوا عِضَادَتَيْهِ حِجَارَةً وَجَعَلُوا يَنْقُلُونَ الصَّخْرَ وَهُمْ يَرْتَجِزُونَ وَالنَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَعَهُمْ وَهُوَ يَقُولُ اللَّهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرُ الآخِرَهْ فَانْصُرِ الأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَهْ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ কথাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিকবার বলেছেন। এর দ্বারা তিনি সাহাবীদের বুঝাচ্ছিলেন যে, দেখ দুনিয়ার কষ্ট স্থায়ী কিছু নয়। দুনিয়া যেমন ক্ষণস্থায়ী, তেমনি এর কষ্ট-ক্লেশও ক্ষণস্থায়ী। তোমরা কষ্ট করছ আল্লাহর জন্য। একদিন কষ্ট থাকবে না। কিন্তু এর পুরস্কারস্বরূপ অনন্ত অসীম আখিরাতে তোমরা অফুরন্ত সুখ-শান্তি ভোগ করতে পারবে।

আবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাক্যটির মাধ্যমে যেন উম্মতকে সতর্ক করছেন, দুনিয়ার কোনও সফলতা, সমৃদ্ধি কিংবা অন্য কোনও আনন্দদায়ক বস্তু অর্জিত হয়ে যাওয়ায় তোমরা খুশিতে মেতে যেয়ো না। কারণ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার সবই ক্ষণস্থায়ী। স্থায়ী সুখ ও আনন্দ কেবল আখিরাতেই আছে। তাই আসল লক্ষ্যবস্তু হওয়া উচিত আখিরাতের সফলতা। সর্বাবস্থায় সে চিন্তা-চেতনা অন্তরে জাগ্রত রেখো।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

দুনিয়ার সুখ-দুঃখ, আরাম-কষ্ট কোনও অবস্থায়ই আখিরাতের কথা ভুলে যেতে নেই। সর্বাবস্থায় মন-মস্তিষ্কে এ চেতনা জাগ্রত রাখা চাই যে, আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন। তাই সে জীবনে মুক্তিলাভ করাই হবে জীবনের আসল লক্ষ্যবস্তু।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সুনানে আবু দাউদ - হাদীস নং ৪৫৩ | মুসলিম বাংলা