কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

১. পাক-পবিত্রতার অধ্যায়

হাদীস নং: ১৪২
আন্তর্জাতিক নং: ১৪২
৫৫. নাক পরিস্কার করা সম্পর্কে।
১৪২. কুতায়বা ইবনে সাঈদ .... আসিম ইবনে লাকীত ইবনে সাবুরা থেকে তাঁর পিতা লাকীত ইবনে সাবুরার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বনু মুনতাফিকের (গোত্রের) একক প্রতিনিধি হিসেবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকটে গমন করি তিনি বলেন, যখন আমরা তাঁর নিকটে উপনীত হলাম- তখন তাকে স্বগৃহে (উপস্থিত) পেলাম না এবং উম্মুল মু'মিনীন আয়িশা (রাযিঃ)-কে উপস্থিত পেলাম। তখন তিনি আমাদের জন্য ‘খাযীরাহ্’ (এক ধরনের উপাদেয় খাদ্য) তৈরীর নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তা আমাদের জন্য প্রস্তুত করা হলে খাদ্যের পাত্রে তা আমাদের সম্মুখে পেশ করা হল। হাদীসের অন্য রাবী কুতায়বা (القناع) শব্দটি ষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। (القناع) হল এমন একটি পাত্র যার মধ্যে খেজুর রাখা হয়।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঘরে ফিরে এসে আমাদের জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমরা কি কিছু খেয়েছ? অথবা তোমাদের (খাওয়ার জন্য) কোন কিছুর নির্দেশ দেয়া হয়েছে কি? আমরা বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ এমতাস্থায় যখন আমরা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর সাথে মজলিসে ছিলাম- তখন এক মেষ-পালক তাঁর বকরীর পাল নিয়ে চারণ ভূমিতে যাচ্ছিল এবং বকরীর সাথে চিৎকার রত একটি বাচ্চাও ছিল। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ কি বাচ্চা জন্ম নিয়েছে? সে বলল, ছাগল অথবা ভেড়ার একটি মাদি বাচ্চা। তখন তিনি বলেনঃ এর পরিবর্তে তুমি আমাদের জন্য একটি বকরী যবেহ্ কর।

অতঃপর নবী (ﷺ) প্রতিনিধি দলের নেতাকে সম্বোধন করে বলেনঃ তোমরা মনে কর না যে, তা কেবলমাত্র তোমাদের উদ্দেশ্যে যবেহ্ করা হয়েছে। বরং অবস্থা এই যে, আমাদের একশত বকরী আছে, আমি এর অতিরিক্ত সংখ্যা বাড়াতে চাই না। কাজেই যখন একটি নতুন শাবক জন্ম নিয়েছে, তার পরিবর্তে একটি ছাগল যবেহ্ করেছি। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার একজন স্ত্রী আছে- যে কথাবার্তা বলার সময় গালিগালাজ করে। এতদশ্রবনে তিনি বলেনঃ তাকে তালাক দাও।

তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তার সাথে আমার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক এবং তার গর্ভজাত আমার একটি সন্তানও আছে। তখন তিনি বলেনঃ তুমি তাকে উপদেশ দাও। যদি সে তোমার উপদেশে ভাল হয়ে যায়- তবেই উত্তম। জেনে রেখ, তুমি তোমার স্ত্রীকে দাসীর মত মারপিট কর না। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! উযু সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। তিনি বলেনঃ পরিপূর্ণভাবে উযু করবে এবং অঙ্গুলিসমূহ খেলাল করবে এবং নাকের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে পানি পৌছাবে। অবশ্য রোযাদার হলে এরূপ করবে না।*

* উযুর সময় গড়গড়া করা ও নাকের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা সুন্নত এবং নাপাকীর গোসলের সময় তা ফরয। কিন্তু রোযা থাকাবস্থায় গড়গড়া করা এবং নাকের মধ্যে এমনভাবে পানি প্রবেশ করান নিষেধ- যাতে রোযার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। -(অনুবাদক)
باب فِي الاِسْتِنْثَارِ
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، - فِي آخَرِينَ - قَالُوا حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سُلَيْمٍ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ كَثِيرٍ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ لَقِيطِ بْنِ صَبْرَةَ، عَنْ أَبِيهِ، لَقِيطِ بْنِ صَبْرَةَ قَالَ كُنْتُ وَافِدَ بَنِي الْمُنْتَفِقِ - أَوْ فِي وَفْدِ بَنِي الْمُنْتَفِقِ - إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَلَمَّا قَدِمْنَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَلَمْ نُصَادِفْهُ فِي مَنْزِلِهِ وَصَادَفْنَا عَائِشَةَ أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ قَالَ فَأَمَرَتْ لَنَا بِخَزِيرَةٍ فَصُنِعَتْ لَنَا قَالَ وَأُتِينَا بِقِنَاعٍ - وَلَمْ يَقُلْ قُتَيْبَةُ الْقِنَاعَ وَالْقِنَاعُ الطَّبَقُ فِيهِ تَمْرٌ - ثُمَّ جَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ " هَلْ أَصَبْتُمْ شَيْئًا أَوْ أُمِرَ لَكُمْ بِشَىْءٍ " . قَالَ قُلْنَا نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ فَبَيْنَا نَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم جُلُوسٌ إِذْ دَفَعَ الرَّاعِي غَنَمَهُ إِلَى الْمُرَاحِ وَمَعَهُ سَخْلَةٌ تَيْعَرُ فَقَالَ " مَا وَلَّدْتَ يَا فُلاَنُ " . قَالَ بَهْمَةً . قَالَ فَاذْبَحْ لَنَا مَكَانَهَا شَاةً . ثُمَّ قَالَ لاَ تَحْسِبَنَّ - وَلَمْ يَقُلْ لاَ تَحْسَبَنَّ - أَنَّا مِنْ أَجْلِكَ ذَبَحْنَاهَا لَنَا غَنَمٌ مِائَةٌ لاَ نُرِيدُ أَنْ تَزِيدَ فَإِذَا وَلَّدَ الرَّاعِي بَهْمَةً ذَبَحْنَا مَكَانَهَا شَاةً . قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لِي امْرَأَةً وَإِنَّ فِي لِسَانِهَا شَيْئًا يَعْنِي الْبَذَاءَ . قَالَ " فَطَلِّقْهَا إِذًا " . قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لَهَا صُحْبَةً وَلِي مِنْهَا وَلَدٌ . قَالَ " فَمُرْهَا - يَقُولُ عِظْهَا - فَإِنْ يَكُ فِيهَا خَيْرٌ فَسَتَفْعَلُ وَلاَ تَضْرِبْ ظَعِينَتَكَ كَضَرْبِكَ أُمَيَّتَكَ " . فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَخْبِرْنِي عَنِ الْوُضُوءِ . قَالَ " أَسْبِغِ الْوُضُوءَ وَخَلِّلْ بَيْنَ الأَصَابِعِ وَبَالِغْ فِي الاِسْتِنْشَاقِ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ صَائِمًا " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

স্ত্রীকে মারধর করা কেন

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীকে দাস (দাসী)-এর মত পেটাতে নিষেধ করেছেন। দাস-দাসীর সঙ্গে তুলনা করার উদ্দেশ্য সাধারণভাবে দাস-দাসীকে মারার বৈধতাদানের জন্য নয়। বিভিন্ন হাদীছে দাস-দাসীকেও মারধর করতে নিষেধ করা হয়েছে। হাঁ, কারও সংশোধনের জন্য হালকা মারধরের প্রয়োজন বোধ হলে সেটা ভিন্ন কথা। না হয় কেবল নিজের মনের ঝাল মেটানোর জন্য দাস-দাসীকে পেটানো বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত শাস্তিদান করা কোনওক্রমেই বৈধ নয়। তাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে মূলত সেকালের মানুষের সাধারণ রেওয়াজ হিসেবে।
জাহিলী যুগে দাস-দাসীকে মানুষই মনে করা হত না। তাই তাদের সঙ্গে আচার আচরণও মানবিক ছিল না। কথায় কথায় মারধর করা হত। মারতে মারতে অনেক সময় মেরেই ফেলা হত। এ অন্যায় প্রবণতার সঙ্গে তুলনা করেই বলা হয়েছে যে, দাস দাসীকে যেমন অন্যায়ভাবে মারধর করতে দ্বিধাবোধ করা হয় না, তেমনি তোমাদের অনেকেও স্ত্রীকেও অন্যায়ভাবে মারধর করে থাকে। এটা কিছুতেই সমীচীন নয়। দাস দাসীকেই যখন অন্যায়ভাবে মারা যায় না, তখন স্ত্রীকে কিভাবে অন্যায় মারধর করা যায়? তোমরা যেমন আদমসন্তান, তারাও তেমনি একই আদমসন্তান। আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে যে তাদের অভিভাবক বানিয়েছেন, সেটা মারধর করার জন্য নয়; বরং দাম্পত্যজীবন যাতে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ হয় সেজন্য। তোমাদের কর্তব্য তাদের যথাযথ হক আদায় করা ও তাদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে চলা।
এটা কোনও বুদ্ধিমান ও রুচিশীল লোকের কাজ হতে পারে না যে, দিনের বেলা স্ত্রীকে মারবে এবং দিনশেষে তার সঙ্গে মেলামেশা করবে। মানবিক মেলামেশা করাটা পারস্পরিক সম্প্রীতি এবং আগ্রহ-উৎসাহের উপর নির্ভরশীল। সবকিছু গায়ের জোরে সারাটা একরকম পশুত্ব, তা মানুষের কাজ হতে পারে না। মেলামেশা করাটা যখন দাম্পত্যের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ, তখন তা যাতে সম্পূর্ণ মানবিক হয় সেজন্য মন-মানসিকতা সম্পূর্ণ অমলিন ও স্ফুর্তিপূর্ণ থাকা জরুরি। অন্যায় মারধর করাটা এর সঙ্গে সম্পূর্ণ বেমানান।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. স্ত্রীর সঙ্গে দাসীসুলভ আচরণ করতে নেই।

খ. স্ত্রীকে অন্যায়ভাবে মারা জায়েয নয়। এমনকি স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা ভদ্র ও রুচিশীল ব্যক্তির কাজ নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান