আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৫৬- দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি ও হৃদয়গ্রাহী বিষয়াদির বর্ণনা

হাদীস নং: ৭১৯৩
আন্তর্জাতিক নং: ২৯৭৯-২
শিরোনামবিহীন পরিচ্ছেদ
৭১৯৩। আবু তাহির আহমদ ইবনে আমর ইবনে সারহ (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি তাকে প্রশ্ল করল যে, আমরা কি মুহাজির ফকীরদের অন্তভুক্ত নই? আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) তাকে বললেন, তোমার কি স্ত্রী নেই, যার নিকট তুমি গিয়ে থাক? জবাবে সে বলল, হ্যাঁ আছে। অতঃপর তিনি বললেন, বসবাস করার জন্য তোমার কি বাসস্থান নেই? সে বলল, হ্যাঁ আছে। তখন তিনি বললেন, তবে তো তুমি ধনীদের অন্তর্ভুক্ত। এরপর সে বলল, আমার একজন খাদিমও আছে। এ কথা শুনে তিনি বললেন, তাহলে তো তুমি বাদশাহ।

আবু আব্দুর রহমান বলেন, একদা তিন ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) এর নিকট এলেন। তখন আমি তার নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এসে তারা বলল, হে আবু মুহাম্মাদ! আমাদের কোন কিছুই নেই। না ব্যয় করার মত পয়সা আছে, না আছে সওয়ারী, না আছে কোন আসবাব সামগ্রী। অতঃপর তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা যা চাও আমি তাই করব। তোমাদের মনে চাইলে তোমরা আমার নিকট চলে এসো। আল্লাহ তোমাদের ভাগ্যে যা রেখেছেন আমি তোমাদেরকে তা দান করব। তোমরা চাইলে, বাদশাহর নিকট আমি তোমাদের আলোচনা করব। আর তোমাদের মনে চাইলে তোমরা ধৈর্য ধারণ কর।

আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে একথা বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন ফকীর মুহাজির ব্যক্তিগণ ধনীদের চেয়ে চল্লিশ বছর পূর্বে জান্নাতে পৌছে যাবে। একথা শুনে তারা বললেন, আমরা ধৈর্য ধারণ করব, আমরা কিছুই চাই না।
حَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، أَحْمَدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ سَرْحٍ أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي أَبُو هَانِئٍ سَمِعَ أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْحُبُلِيَّ، يَقُولُ سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، وَسَأَلَهُ، رَجُلٌ فَقَالَ أَلَسْنَا مِنْ فُقَرَاءِ الْمُهَاجِرِينَ فَقَالَ لَهُ عَبْدُ اللَّهِ أَلَكَ امْرَأَةٌ تَأْوِي إِلَيْهَا قَالَ نَعَمْ . قَالَ أَلَكَ مَسْكَنٌ تَسْكُنُهُ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَأَنْتَ مِنَ الأَغْنِيَاءِ قَالَ فَإِنَّ لِي خَادِمًا قَالَ فَأَنْتَ مِنَ الْمُلُوكِ . قَالَ أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ وَجَاءَ ثَلاَثَةُ نَفَرٍ إِلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ وَأَنَا عِنْدَهُ فَقَالُوا يَا أَبَا مُحَمَّدٍ إِنَّا وَاللَّهِ مَا نَقْدِرُ عَلَى شَىْءٍ لاَ نَفَقَةٍ وَلاَ دَابَّةٍ وَلاَ مَتَاعٍ . فَقَالَ لَهُمْ مَا شِئْتُمْ إِنْ شِئْتُمْ رَجَعْتُمْ إِلَيْنَا فَأَعْطَيْنَاكُمْ مَا يَسَّرَ اللَّهُ لَكُمْ وَإِنْ شِئْتُمْ ذَكَرْنَا أَمْرَكُمْ لِلسُّلْطَانِ وَإِنْ شِئْتُمْ صَبَرْتُمْ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِنَّ فُقَرَاءَ الْمُهَاجِرِينَ يَسْبِقُونَ الأَغْنِيَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى الْجَنَّةِ بِأَرْبَعِينَ خَرِيفًا " . قَالُوا فَإِنَّا نَصْبِرُ لاَ نَسْأَلُ شَيْئًا .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

১. ইবনে মাজার রেওয়ায়তে আছে, পাঁচ শত বৎসর পূর্বে প্রবেশ করিবে। ইহার সমাধানে বলা হয় যে, আলোচ্য হাদীসে মুহাজির গরীব ও মুহাজির ধনীর মধ্যে চল্লিশ বৎসরের ব্যবধান। আর পাঁচ শত বৎসরের ব্যবধান হইল সাধারণ ঈমানদারদের মধ্যে।

হাদীসের মূল শব্দ হইল خريف – গ্রীষ্ম ও শীত এই উভয় ঋতুর মধ্যবর্তী সময়কে ‘খারীফ’ বলা হয়। তবে সাধারণতঃ 'দীর্ঘ সময়' অর্থে ব্যবহৃত হয়। বস্তুতঃ দীর্ঘ সময় বলিতে একটি গোটা বৎসরকে বুঝায়।

২. হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন যে, গরীবেরা ধনীদের চল্লিশ বৎসর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এর কারণ, হিসাব-নিকাশের জন্য ধনীদের আটকে রাখা হবে। তারা কোন পথে সম্পদ অর্জন করেছিল এবং কোন কোন খাতে ব্যয় করেছিল সে সম্পর্কে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে। গরীবদের তো সে বালাই নেই।

হযরত মালিক ইবন দীনার রহ. এক সফরে নদীর এক পার থেকে অপর পারে গেলেন। ওপারে যেতেই কর আদায়কারীগণ ধরল। তোমার মালামালের কর দিয়ে যাও। তিনি দু'হাত উঁচু করে বললেন, দেখ কী আছে, নিয়ে নাও। তারা দেখল সঙ্গে মালামাল বলতে কিছুই নেই। তাদের তো ব্যস্ততা। শুধু শুধু কথা বলে সময় নষ্ট করার অবকাশ নেই। তাড়া দিয়ে বলল, যাও যাও! তিনি কতদূর এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালেন। তারপর নিজেকে সম্বোধন করে বললেন, ওহে দীনারের পুত্র মালিক। আখিরাতের বিষয়টি তো এমনই হবে। অর্থাৎ মাল নেই তো হিসাবও নেই। মাল থাকলে হিসাব দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকো।

এর দ্বারা বোঝা গেল ধনী দীনদার অপেক্ষা গরীব দীনদারের আখিরাতে পার হওয়া সহজ হবে। দীনদার ব্যক্তি ধনী হলে তার সম্পদের হিসাব দেওয়ার একটা ব্যাপার যেহেতু আছে, তাই তার কিছু না কিছু বিলম্ব অবশ্যই হবে। হাঁ, আল্লাহ তা'আলা যাদেরকে বিনা হিসেবে পার করে দেবেন তাদের কথা আলাদা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. গরীবানা অবস্থা বাহ্যদৃষ্টিতে কষ্টকর হলেও আখিরাতের পক্ষে কল্যাণকর। তাই গরীবদের উচিত অভাব-অনটনের জন্য আক্ষেপ না করে ধৈর্য ও সহ্যের সঙ্গে দুনিয়ার জীবন পার করা।

খ. বিষয়টা যেহেতু জান্নাতে প্রবেশের, তাই দীনদারীর শর্ত অবশ্যই আছে। সুতরাং কেবল গরীবানা অবস্থার উপর নির্ভর করার সুযোগ নেই। নিজ দীন ও ঈমানেরও যত্ন নিতে হবে।

গ. বিলম্বে হলেও দীনদার ধনী ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতে যাবে। তাই ধনী ব্যক্তিরও নিজ দ্বীনদারীর পরিচর্যা করা অবশ্যকর্তব্য।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ৭১৯৩ | মুসলিম বাংলা