আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৫৫- ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের আলামতের বর্ণনা

হাদীস নং: ৭০৯০
আন্তর্জাতিক নং: ১৬৯-৪
১৯. ইবনে সাইয়্যাদের আলোচনা
৭০৯০। হারামালা ইবনে ইয়াহয়া ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হারামালা ইবনে ইমরান আত-তুজীবী (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) একদল মানুষ সহ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে ইবনে সাইয়্যাদের নিকট গেলেন। তখন তাকে বনী মাগলার কিল্লার নিকট একদল বালকের সাথে ক্রীড়ারত অবস্থায় পেলেন। তখন ইবনে সাইয়্যাদ বালিগ হবার কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিল। কিন্তু সে তা জানত না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর হাত দ্বারা তার পৃষ্ঠে আঘাত করে বললেন, তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, আমি আল্লাহর রাসুল? এ কথা শুনে ইবনে সাইয়্যাদ তার প্রতি তাকাল এবং বলল যে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি উম্মীদের রাসূল। অতঃপর ইবনে সাইয়্যাদ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করল যে, আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহর রাসুল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে ছেড়ে দিলেন এবং (এর সরাসরি উত্তর না দিয়ে) বললেন আমি ঈমান আনয়ন করেছি আল্লাহর প্রতি ও তার রাসুলগণের প্রতি।

এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে বললেনঃ তুমি কি দেখতে পাও? ইবনে সাইয়্যাদ বলল, আমার নিকট সত্যবাদী ও মিথ্যাবদী লোক আসে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে বললেন, তোমার বিষয়টি সঠিক-বেঠিক মিশ্রিত (হযবরল) হয়ে গিয়েছে। তোমাকে জিজ্ঞাসা করার জন্য একটি কথা আমি মনে মনে গোপন রেখেছি। ইবনে সাইয়্যাদ বলল, তা হচ্ছে دخ (ধুয়া)। তৎপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ দূর হয়ে যা। তুই তোর পরিধি অতিক্রম করতে পারবি না। অতঃপর উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে ছেড়ে দিন। আমি এক্ষণি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। রাসুল(ﷺ) বললেনঃ যদি সে দাজ্জাল হয়, তবে তো তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না। আর যদি সে দাজ্জাল না হয় তবে তাকে হত্যা করার মাঝে কোন কল্যাণ নেই।

সালাম ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) কে বলতে শুনেছি, পরবর্তী সময়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং উবাই ইবনে কাব (রাযিঃ) সেই খেজুর বাগানের দিকে চললেন, যেখানে ইবনে সাইয়্যাদ বসবাস করত। বাগানের মধ্যে এসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বৃক্ষের আড়ালে আত্মগোপন করতে চেষ্টা করছিলেন, যাতে ইবনে সাইয়্যাদ তাঁকে দেখার পূর্বে তিনি তার কথা শুনে নেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে দেখলেন যে, সে তার বিছানায় একটি চাঁদরে আবৃত অবস্থায় গুণগুণ করে কি যেন বলছিল। এদিকে ইবনে সাইয়্যাদের মা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে দেখল যে, তিনি বৃক্ষের আড়ালে আত্মগোপনের চেষ্টা করছেন। সে ততক্ষণাৎ ইবনে সাইয়্যাদকে বলে উঠলঃ হে সাফ! এটা ইবনে সাইয়্যাদের নাম। মুহাম্মাদ এসে গেছে। (এ কথা শুনতেই) ইবনে সাইয়্যাদ বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তার মা তাকে সাবধান না করলে সে পরিষ্কার বলে ফেলত।

সালিম (রাহঃ) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) বলেছেন, এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুসলমানদের উদ্দেশ্যে একটি বক্তৃতা দিলেন। তাতে আল্লাহ তাআলার যথাযোগ্য প্রশংসা ও গুণকীর্তনের পর দাজ্জালের কথা উল্লেখ করলেন এবং বললেনঃ আমি তোমাদেরকে দাজ্জালের ফিত্‌না সম্পর্কে সতর্ক করছি যেমন প্রত্যেক নবী তাঁর সম্প্রদায়কে এ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। এমনকি নূহ (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর কওমকে এ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তবে এ সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে একটি বিষয় পরিস্কারভাবে বলে দিচ্ছি যা কোন নবী তার সম্প্রদায়কে বলেননি। তা হল এই যে, তোমরা জেনে রাখ, দাজ্জাল কানা হবে। আর আল্লাহ তাআলা কানা নন।

ইবনে শিহাব (রাহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জনৈক সাহাবী তাকে অবহিত করেছেন যে, যে দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। সে দিন তিনি বলেছেন, যে তাঁর চক্ষুদ্বয়ের মাঝখানে কাফির (كافر) অথবা (ك ف ر) লেখা থাকবে। যে ব্যক্তি তার কার্যক্রম অপছন্দ করবে সে তা পাঠ করতে পারবে অথবা প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তি তা পাঠ করতে সক্ষম হবে। তিনি এও বলেছেন যে, তোমরা জেনে রাখ যে, তোমাদের কোন ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে তার প্রতিপালককে দেখতে সক্ষম হবে না।
باب ذِكْرِ ابْنِ صَيَّادٍ
حَدَّثَنِي حَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ حَرْمَلَةَ بْنِ عِمْرَانَ التُّجِيبِيُّ، أَخْبَرَنِي ابْنُ، وَهْبٍ أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَخْبَرَهُ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ أَخْبَرَهُ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ انْطَلَقَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي رَهْطٍ قِبَلَ ابْنِ صَيَّادٍ حَتَّى وَجَدَهُ يَلْعَبُ مَعَ الصِّبْيَانِ عِنْدَ أُطُمِ بَنِي مَغَالَةَ وَقَدْ قَارَبَ ابْنُ صَيَّادٍ يَوْمَئِذٍ الْحُلُمَ فَلَمْ يَشْعُرْ حَتَّى ضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ظَهْرَهُ بِيَدِهِ ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لاِبْنِ صَيَّادٍ " أَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ " . فَنَظَرَ إِلَيْهِ ابْنُ صَيَّادٍ فَقَالَ أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ الأُمِّيِّينَ . فَقَالَ ابْنُ صَيَّادٍ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ فَرَفَضَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَقَالَ " آمَنْتُ بِاللَّهِ وَبِرُسُلِهِ " . ثُمَّ قَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَاذَا تَرَى " . قَالَ ابْنُ صَيَّادٍ يَأْتِينِي صَادِقٌ وَكَاذِبٌ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " خُلِّطَ عَلَيْكَ الأَمْرُ " . ثُمَّ قَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنِّي قَدْ خَبَأْتُ لَكَ خَبِيئًا " . فَقَالَ ابْنُ صَيَّادٍ " هُوَ الدُّخُّ " . فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " اخْسَأْ فَلَنْ تَعْدُوَ قَدْرَكَ " . فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ ذَرْنِي يَا رَسُولَ اللَّهِ أَضْرِبْ عُنُقَهُ . فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنْ يَكُنْهُ فَلَنْ تُسَلَّطَ عَلَيْهِ وَإِنْ لَمْ يَكُنْهُ فَلاَ خَيْرَ لَكَ فِي قَتْلِهِ " . وَقَالَ سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، يَقُولُ انْطَلَقَ بَعْدَ ذَلِكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأُبَىُّ بْنُ كَعْبٍ الأَنْصَارِيُّ إِلَى النَّخْلِ الَّتِي فِيهَا ابْنُ صَيَّادٍ حَتَّى إِذَا دَخَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم النَّخْلَ طَفِقَ يَتَّقِي بِجُذُوعِ النَّخْلِ وَهُوَ يَخْتِلُ أَنْ يَسْمَعَ مِنِ ابْنِ صَيَّادٍ شَيْئًا قَبْلَ أَنْ يَرَاهُ ابْنُ صَيَّادٍ فَرَآهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ مُضْطَجِعٌ عَلَى فِرَاشٍ فِي قَطِيفَةٍ لَهُ فِيهَا زَمْزَمَةٌ فَرَأَتْ أُمُّ ابْنِ صَيَّادٍ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يَتَّقِي بِجُذُوعِ النَّخْلِ فَقَالَتْ لاِبْنِ صَيَّادٍ يَا صَافِ - وَهُوَ اسْمُ ابْنِ صَيَّادٍ - هَذَا مُحَمَّدٌ . فَثَارَ ابْنُ صَيَّادٍ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لَوْ تَرَكَتْهُ بَيَّنَ " . قَالَ سَالِمٌ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي النَّاسِ فَأَثْنَى عَلَى اللَّهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ثُمَّ ذَكَرَ الدَّجَّالَ فَقَالَ " إِنِّي لأُنْذِرُكُمُوهُ مَا مِنْ نَبِيٍّ إِلاَّ وَقَدْ أَنْذَرَهُ قَوْمَهُ لَقَدْ أَنْذَرَهُ نُوحٌ قَوْمَهُ وَلَكِنْ أَقُولُ لَكُمْ فِيهِ قَوْلاً لَمْ يَقُلْهُ نَبِيٌّ لِقَوْمِهِ تَعَلَّمُوا أَنَّهُ أَعْوَرُ وَأَنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى لَيْسَ بِأَعْوَرَ " . قَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَأَخْبَرَنِي عُمَرُ بْنُ ثَابِتٍ الأَنْصَارِيُّ أَنَّهُ أَخْبَرَهُ بَعْضُ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ يَوْمَ حَذَّرَ النَّاسَ الدَّجَّالَ " إِنَّهُ مَكْتُوبٌ بَيْنَ عَيْنَيْهِ كَافِرٌ يَقْرَؤُهُ مَنْ كَرِهَ عَمَلَهُ أَوْ يَقْرَؤُهُ كُلُّ مُؤْمِنٍ " . وَقَالَ " تَعَلَّمُوا أَنَّهُ لَنْ يَرَى أَحَدٌ مِنْكُمْ رَبَّهُ عَزَّ وَجَلَّ حَتَّى يَمُوتَ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্কীকরণ

বিদায় হজ্জের দীর্ঘ ভাষণে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন জরুরি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেন। তার মধ্যে একটা ছিল দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করা ও তার কিছু আলামত বলে দেওয়া।

দাজ্জালকে ‘মাসীহুদ-দাজ্জাল' বলা হয়ে থাকে। ‘মাসীহ' শব্দের বিভিন্ন অর্থ আছে, যেমন- অত্যধিক ভ্রমণকারী, হাতের স্পর্শে রোগ নিরাময়কারী। দাজ্জালের মধ্যে এ দু'টি বিশেষত্ব থাকবে। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকেও মাসীহ বলা হয়ে থাকে। কেননা তিনিও দাওয়াতী কাজে খুব সফর করতেন এবং তাঁর হাতের স্পর্শে অন্ধ ও কুষ্ঠ রোগী নিরাময় লাভ করত। এদিক থেকে দাজ্জালের সঙ্গে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের সাদৃশ্য আছে। তাই তো দাজ্জালকে বধ করার জন্য হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে এখনও পর্যন্ত আসমানে জীবিত ও নিরাপদ রাখা হয়েছে। দাজ্জালের আবির্ভাবের পর তাঁকে দুনিয়ায় পাঠানো হবে। তাঁর হাতেই দাজ্জালের বিনাশ ঘটবে।

'মাসীহ'-এর আরেক অর্থ- যা মুছে ফেলা হয়েছে। দাজ্জালের ডান চোখের স্থান মুছে ফেলা। অর্থাৎ সেখানে চোখ নেই। জায়গাটি সম্পূর্ণ ভরাট, সমতল। তার থাকবে শুধু বাম চোখ। তাও উপরের দিকে তোলা।

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাজ্জালের চোখকে এমন একটি আঙ্গুরদানার সাথে তুলনা করেছেন, যে দানাটি সন্নিবদ্ধ আঙ্গুর থোকার ওপর আলাদাভাবে ভাসমান। এমনিই ডান চোখ নেই। সে জায়গাটি চামড়া দিয়ে ঢাকা সম্পূর্ণ সমতল। আছে কেবল বাম চোখ। তাও এভাবে উপরে তোলা। তিনি জানানঃ-

إنَّ ربكم ليس بأعور، وإنه أعور عين اليمنى، كأن عينه عنبة طافية

তোমাদের প্রতিপালক কানা নন, অথচ সে হবে ডান চোখের কানা। তার চোখ যেন (আঙ্গুরের থোকার) উপরে ভেসে থাকা একটি আঙ্গুর।

এই যার চোখের অবস্থা, দেখতে সে কতই না কুৎসিত ও বীভৎস হবে! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাজ্জালের এই বিদঘুটে রূপটির প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এ কারণে যে, দাজ্জাল অনেক তেলেসমাতি দেখাবে- মৃতকে জীবিত করবে, বৃষ্টি নামিয়ে দেখাবে, আবার বৃষ্টি বন্ধ করে খরার অবস্থা বানাবে, সঙ্গে জান্নাত ও জাহান্নামের আকৃতি রাখবে আর এসবের ভিত্তিতে নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করবে। তো ঈমানদার ব্যক্তি যাতে এসব দেখে বিভ্রান্ত না হয়, তাই বিশেষভাবে বিদঘুটে চোখের আলামতটি উল্লেখ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন- সে যদি তোমাদের মধ্যে আত্মপ্রকাশ করে, তবে তার অবস্থা সম্পর্কে তোমাদের যা-কিছুই অজানা থাকুক না কেন, এ বিষয়টা তো অজানা থাকতে পারে না যে, তোমাদের প্রতিপালক কানা নন, অথচ সে হবে ডান চোখের কানা। তার চোখ যেন (আঙ্গুরের থোকার) উপরে ভেসে থাকা একটি আঙ্গুর।

বস্তুত দাজ্জালের ফিতনা হবে অত্যন্ত ভয়ংকর। আল্লাহ তা'আলা যাকে হেফাজত করবেন কেবল সে-ই তার ফিতনা থেকে বাঁচতে পারবে। তার ফিতনা এমনকি কবরবাসীদেরকেও স্পর্শ করবে। এজন্যই হযরত নূহ আলাইহিস সালাম থেকে পরবর্তী সমস্ত নবী-রাসূল আপন আপন উম্মতকে তার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তবে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ব্যাপারে সর্বাপেক্ষা বেশি স্পষ্ট ধারণা দিয়েছেন। তার আলামতসমূহের মধ্যে একটা বিশেষ আলামত এই যে, তার কপালে ك ف ر লেখা থাকবে। তা দেখে মু'মিনগণ বুঝে ফেলবে যে, সে এক ঘোর কাফের। যার কুফর এতই পূর্ণাঙ্গ ও বলিষ্ঠ যে, তার আছর অন্তর ও দেহের স্থূলতা ভেদ করে কপালেও পরিস্ফুট হবে। মোটকথা কেউ যাতে তার ফিতনায় পড়ে ঈমান না হারায় সেজন্য তিনি তার আলামতসমূহ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। আমাদেরকে তার ফিতনা থেকে বাঁচার দু'আও শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। যেমন একটি দু'আ হচ্ছে-

«اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ النَّارِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ»

হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে, আপনার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামের আযাব থেকে, আপনার কাছে আশ্রয় চাই মাসীহুদ-দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং আপনার কাছে আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর যাবতীয় ফিতনা থেকে। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৮৩২; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৫৮৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ৮৮০; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩৪৯৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ১৩০৯; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৯০৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২১৬৭)

এ দু'আটি নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও পড়তেন। এক হাদীছে তিনি ইরশাদ করেনঃ-

من حفظ عشر آيات من أول سورة الكهف، عصم من فتنة الدجال

যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে, তাকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা করা হবে। (সহীহ মুসলিম,হাদীছ নং ৮০৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৩২৩; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩১০৫; নাসাঈ, হাদীছ নং ৮০২৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২১৭১২; মুস্তাদরাক হাকিম, হাদীছ নং ৩৩৯১: শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৬৬৮৩)

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কিয়ামতের আগে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। তাঁর ফিতনা সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, এটা সত্য। এতে বিশ্বাস রাখতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)