আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

২০- যাকাতের অধ্যায়

হাদীস নং:
৯৪৭. সাগর থেকে সংগৃহীত সম্পদ।
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, আম্বর রিকায* নয়। বরং তা এমন বস্তু, সাগর যা তীরে নিক্ষেপ করে।
হাসান (রাহঃ) বলেন, আম্বর ও মতীর ক্ষেত্রে এক-পঞ্চমাংশ ওয়াজিব। কেননা, নবী (ﷺ) রিকাযের ক্ষেত্রে এক-পঞ্চমাংশ ধার্য করেছেন। আর যা পানিতে পাওয়া যায় তা রিকায নয়।
লাঈস (রাহঃ) ... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত যে, বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির নিকট এক হাজার দীনার (কর্জ) চাইলে, সে তাকে তা দিল। সে সাগরপথে যাত্রা করল কিন্তু কোন নৌযান পেল না। তখন একটি কাঠের টুকরা নিয়ে তা ছিদ্র করে এক হাজার দীনার তাতে ভরে তা সাগরে নিক্ষেপ করল। ঋণদাতা সাগর তীরে পৌঁছে একটি কাঠ (ভেসে আসতে) দেখে তার পরিবারের জন্য লাকড়ি হিসেবে নিয়ে আসল। তারপর রাবী পুরো ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। (সবশেষে রয়েছে) কাঠ চেরাই (ফাঁড়া) করার পর সে তার প্রাপ্য মাল পেয়ে গেল।

পরিচ্ছেদঃ ৯৪৮. রিকাযে এক-পঞ্চমাংশ ওয়াজিব।
ইমাম মালেক ও ইমাম ইবনে ইদরীস (শাফিঈ) (রাহঃ) বলেন, জাহিলী যুগের ভূগর্ভে প্রোথিত সম্পদই রিকায। তার অল্প ও অধিক পরিমাণে এক-পঞ্চমাংশ ওয়াজিব হবে। আর মা’দিন** রিকায নয়।
নবী (ﷺ) বলেছেনঃ মা’দিনে (খননের ঘটনায়) নিসাব নেই, রিকাযের এক-পঞ্চমাংশ ওয়াজিব।
উমর ইবনে আব্দুল আযীয (রাহঃ) মা’দিনের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ গ্রহণ করতেন।
হাসান (রাহঃ) বলেন, যুদ্ধের মাধ্যমে অধিকৃত ভূমির রিকাযে এক-পঞ্চমাংশ ওয়াজিব এবং সন্ধিকৃত ভূমির রিকাযে যাকাত ওয়াজিব। শত্রুর ভূমিতে লুকতা (পড়ে থাকা বস্তু) পাওয়া গেলে লোকদের মধ্যে তা ঘোষণা করবে। বস্তুটি শত্রুর হলে তাতে এক-পঞ্চমাংশ ওয়াজিব।
জনৈক ব্যক্তি*** [ইমাম আবু হানিফা (রাহঃ)] বলেন, মা’দিন রিকাযই (তার প্রকারবিশেষ মাত্র), জাহিলী যুগের প্রোথিত সম্পদের ন্যায়। তার যুক্তি হলঃ أَرْكَزَ الْمَعْدِنُ তখন বলা হয়, যখন খনি থেকে কিছু উত্তোলন করা হয়। তাকে বলা যায়, কাউকে কিছু দান করলে এবং এতে সে এ দিয়ে প্রচুর লাভবান হলে অথবা কারো প্রচুর ফল উৎপাদিত হলে বলা হয় أَرْكَزْتَ এরপর তিনি নিজেই স্ব-বিরোধী কথা বলেন। তিনি বলেন, মা’দিন থেকে উত্তোলিত সম্পদ গোপন রাখায় ও এক-পঞ্চমাংশ না দেওয়ায় কোন দোষ নেই।

* রিকাযঃ ভূগর্ভে প্রাপ্ত বা প্রোথিত সম্পদ।
** খনিজদ্রব্য।
***এখানে ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ)-এর অভিমতের সাথে ইমাম বুখারী (রাহঃ) দ্বিমত পোষণ করেছেন। ইমাম আবু হানীফা প্রোথিত সম্পদ ও খনিজ সম্পদের একই বিধান মনে করেন। ইমাম বুখারী ইমাম শাফি'ঈ ও ইমাম মালিকের অনুসরণে দু'টিকে ভিন্ন ভিন্নরূপে মনে করেন। ইমাম আবু হানীফার যুক্তি হল রিকায (প্রোথিত সম্পদ) শব্দটি أركز الرجل হতে গৃহীত। এর অর্থ হল লোকটি স্বর্ণের একটি খণ্ড পেয়েছে। আর স্বর্ণখণ্ডতো খনিজ সম্পদ । এছাড়া আন-নিহায়া গ্রন্থে বলা হয়েছে মা'দিন (খনিজ দ্রব্য) ও রিকায (প্রোথিত সম্পদ) একই। ফলে ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ)-এর প্রতি কেবল দোষ আরোপ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ইমাম সুফয়ান সাওরীও ইমাম আবু হানীফার সাথে একমত পোষণ করেন । ইমাম বুখারী (রাহঃ) দায়মুক্তি যাকাত ওয়াজিব না হওয়াকে একই জিনিস মনে করায় এ বিতর্কের জন্ম । ইমাম আবু হানীফা দু'টিকে স্বতন্ত্রভাবে গ্রহণ করেছেন- আইনী।
১৪১১। আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ চতুষ্পদ জন্তুর আঘাত দায়মুক্ত, কূপ (খননে শ্রমিকের মৃত্যুতে মালিক) দায়মুক্ত, খনি (খননে কেউ মারা গেলে মালিক) দায়মুক্ত। রিকাযে এক-পঞ্চমাংশ ওয়াজিব।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন