আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৫৫- ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের আলামতের বর্ণনা

হাদীস নং: ৬৯৯১
আন্তর্জাতিক নং: ২৮৮৮-৪
৪. যখন দুই মুসলমান তাদের তরবারি নিয়ে মুখোমুখী হয়
৬৯৯১। আবু বকর ইবনে আবি শাঈবা (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনে মুসান্না ও ইবনে বাশশার (রাহঃ) ......... আবু বাকরা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেনঃ যদি দু’জন মুসলমানের একজন তার অন্য ভাইয়ের উপর অস্ত্রধারণ করে তবে তারা উভয়ই জাহান্নামের প্রান্তে এসে উপনীত হয়। অতঃপর যখন তাদের একজন তার অপর সঙ্গীকে হত্যা করে ফেলে, তখন তারা উভয়ই জাহান্নামে দাখিল হয়ে যায়।
باب إِذَا تَوَاجَهَ الْمُسْلِمَانِ بِسَيْفَيْهِمَا
وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ، عَنْ شُعْبَةَ، ح وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، وَابْنُ بَشَّارٍ قَالاَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ رِبْعِيِّ بْنِ حِرَاشٍ، عَنْ أَبِي بَكْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا الْمُسْلِمَانِ حَمَلَ أَحَدُهُمَا عَلَى أَخِيهِ السِّلاَحَ فَهُمَا فِي جُرُفِ جَهَنَّمَ فَإِذَا قَتَلَ أَحَدُهُمَا صَاحِبَهُ دَخَلاَهَا جَمِيعًا " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

মুসলিমদের আত্মকলহ গুরুতর অপরাধ। সেই কলহ যদি পারস্পরিক হতাহতের পর্যায়ে পৌঁছায়, তবে তা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে সতর্ক করেন, তারা যেন পরস্পরে আত্মঘাতী কলহে লিপ্ত না হয়। তিনি জানান, যদি দু'জন মুসলিম তরবারি নিয়ে পরস্পরে হানাহানিতে লিপ্ত হয় এবং তাতে একজনের হাতে আরেকজন নিহত হয়, তবে উভয়ই জাহান্নামে যাবে। এখানে তরবারির উল্লেখ সেকালের অবস্থা হিসেবে। তখন সাধারণত লড়াই ও হত্যা করার কাজটি তরবারি দ্বারাই করা হত। তাই বিশেষভাবে এর উল্লেখ করা হয়েছে, নয়তো তীর ও বর্শাও এর অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানকালে আধুনিক যত মারণাস্ত্র আছে, পিস্তল, রাইফেল,বোমা ইত্যাদির প্রত্যেকটির জন্যই এ হাদীছ প্রযোজ্য। এমন যে-কোনও অস্ত্র দিয়ে দু'জন মুসলিম মারামারিতে লিপ্ত হলে এবং তাতে একজনের হাতে আরেকজন নিহত হলে জাহান্নামে যাবে দু'জনই। স্বাভাবিকভাবেই এতে প্রশ্ন জাগে যে, হত্যা তো করল একজন অন্যজন তার হাতে নিহত হয়েছে, সে তো হত্যা করেনি। কাজেই হত্যা করার অপরাধে জাহান্নামে যেতে হলে হত্যাকারীরই যাওয়ার কথা। নিহত ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে কেন? তার অপরাধ কি? এই প্রশ্নই হযরত আবু বাকরা রাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম "সেও তার প্রতিপক্ষকে হত্যা করতে লালায়িত ছিল'-এই সংক্ষিপ্ত বাক্যে বিষয়টা পরিষ্কার করে দিয়েছেন। অর্থাৎ নিহত ব্যক্তি যে হত্যা করতে পারেনি, এটা কেবলই ঘটনাচক্র, না হয় হত্যা তো সেও করতে চেয়েছিল। সেও হাতে তরবারি নিয়েছিল। সে চেয়েছিল এ তরবারি দিয়ে তার প্রতিপক্ষকে খুন করবে, কিন্তু শক্তিতে বা কৌশলে সে পারেনি। না পারাটা তার ব্যর্থতা। তার নিয়ত কি ছিল সেটাই দেখা হবে। নিয়তের দিক থেকে তার ও হত্যাকারীর মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। উভয়ই একই উদ্দেশ্যে তরবারি চালিয়েছিল। সুতরাং পরিণতিও উভয়ের একই হবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কেউ যদি কোনও পাপকাজের নিয়ত করে এবং তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হয়, তবে বাস্তবায়ন না করতে পারলেও ওই নিয়তের কারণে সে গুনাহগার হবে। সুতরাং কোনও বদকাজের ইচ্ছা জাগলে তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট না হয়ে মন থেকে সেই ইচ্ছাকে ঝেড়ে ফেলা উচিত।

খ. নরহত্যা মহাপাপ, যদি তা অন্যায়ভাবে হয়। অন্যায়ভাবে কোনও মুসলিমকে হত্যা করা আরও কঠিন পাপ।

গ. শরী'আতের কোনও বিষয়ে মনে খটকা জাগলে সেই খটকা দূর করার জন্য কোনও বিজ্ঞ আলেমের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ৬৯৯১ | মুসলিম বাংলা