আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
২০- যাকাতের অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ১৪৭৪
৯৩৪. সম্পদ বাড়ানোর জন্য যে মানুষের কাছে সাওয়াল করে।
১৩৮৯। ইয়াহয়া ইবনে বুকাইর (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সবসময় মানুষের কাছে চাইতে থাকে, সে কিয়ামতের দিন এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, তার চেহারায় কোন গোশত থাকবে না।
তিনি আরো বলেনঃ কিয়ামতের দিন সূর্য তাদের অতি কাছে আসবে, এমনকি ঘাম কানের অর্ধেক পর্যন্ত পৌঁছবে। যখন তারা এই অবস্থায় থাকবে, তখন তারা সাহায্য চাইবে আদম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে, তারপর মুসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে, তারপর মুহাম্মাদ (ﷺ) এর কাছে।
আব্দুল্লাহ (রাহঃ) লাঈস (রাহঃ) সূত্রে ইবনে আবু জা‘ফর (রাহঃ) থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সৃষ্টের মধ্যে ফয়সালা করার জন্য সুপারিশ করবেন। তিনি যেতে যেতে জান্নাতের ফটকের কড়া ধরবেন। সেদিন আল্লাহ তাঁকে মাকামে মাহমুদে পৌঁছে দিবেন। হাশরের ময়দানে সমবেত সকলেই তাঁর প্রশংসা করবে।
রাবী মুআল্লা (রাহঃ) ......... ইবনে উমর (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে যাচনা করা সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
তিনি আরো বলেনঃ কিয়ামতের দিন সূর্য তাদের অতি কাছে আসবে, এমনকি ঘাম কানের অর্ধেক পর্যন্ত পৌঁছবে। যখন তারা এই অবস্থায় থাকবে, তখন তারা সাহায্য চাইবে আদম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে, তারপর মুসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে, তারপর মুহাম্মাদ (ﷺ) এর কাছে।
আব্দুল্লাহ (রাহঃ) লাঈস (রাহঃ) সূত্রে ইবনে আবু জা‘ফর (রাহঃ) থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সৃষ্টের মধ্যে ফয়সালা করার জন্য সুপারিশ করবেন। তিনি যেতে যেতে জান্নাতের ফটকের কড়া ধরবেন। সেদিন আল্লাহ তাঁকে মাকামে মাহমুদে পৌঁছে দিবেন। হাশরের ময়দানে সমবেত সকলেই তাঁর প্রশংসা করবে।
রাবী মুআল্লা (রাহঃ) ......... ইবনে উমর (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে যাচনা করা সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
যে ব্যক্তি মানুষের কাছে চাওয়ার অভ্যাস বানিয়ে নেয়, তার সম্পর্কে হাদীছে বলা হয়েছে-
يَلْقَى اللَّهَ تَعَالٰى وَلَيْسَ فِي وَجْهِهِ مُزْعَة لَحْمٍ (সে আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে এ অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তার চেহারায় এক টুকরোও গোশত থাকবে না)। এ কথাটি রূপক অর্থেও হতে পারে এবং আক্ষরিক অর্থেও হতে পারে। রূপক অর্থে হলে এর মানে সে আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে এমনভাবে সাক্ষাৎ করবে যে, তার কোনও ইজ্জত ও সম্মান থাকবে না। একটি রেওয়ায়েত দ্বারা এ অর্থের সমর্থন মেলে। যেমন বর্ণিত হয়েছে-
لا يَرَالُ الْعَبْدُ يَسْأَلُ وَهُوَ غَنِيٌّ حَتَّى يَحلِقَ وَجْهَهُ فَمَا يَكُونُ لَهُ عِنْدَ اللَّهِ وَجْهٌ
বান্দা একাধারে মানুষের কাছে চাইতে থাকে, অথচ সে একজন সচ্ছল লোক, আর এভাবে সে নিজ চেহারা বিনষ্ট করে ফেলে। ফলে আল্লাহ তা'আলার কাছে তার কোনও গুরুত্ব থাকে না।(তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর: ৭৯০)
ইবন আবু জামরাহ রহ. বলেন, এর অর্থ তার চেহারায় সৌন্দর্যের কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। চেহারার সৌন্দর্য হয় গোশতের দ্বারা। গোশত না থাকলে চেহারা কদাকার হয়ে যায়। তাই রূপকার্থে গোশত না থাকা দ্বারা চেহারার কদর্যতা বোঝানো হয়েছে।
কথাটি যদি আক্ষরিক অর্থে হয়, তবে এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য যে, কিয়ামতের দিন তার চেহারায় এমনভাবে শাস্তি দেওয়া হবে যে, তার চেহারা থেকে সমস্ত গোশত খসে পড়বে। কিংবা এর অর্থ শাস্তিস্বরূপ কিয়ামতের দিন তার সম্পূর্ণ চেহারাকে হাড় বানিয়ে ফেলা হবে। এটা হবে সেদিন তার এ বিষয়ের নিদর্শন যে, সে দুনিয়ায় মানুষের কাছে চেয়ে বেড়াত।
মুহাল্লাব রহ.-এর মতে এ কথাটির আক্ষরিক অর্থই ধর্তব্য। তার চেহারাকে হাড্ডিসার করে ফেলা হবে এ কারণে যে, সেদিন সূর্য থাকবে খুব কাছে। ফলে তার চেহারা গোশতশূন্য হওয়ার দরুন অন্যদের তুলনায় সূর্যের তাপে তার কষ্ট বেশি হবে।
প্রকাশ থাকে যে, এ হাদীছটি ওই ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য, যে সচ্ছল হওয়া সত্ত্বেও কেবল সম্পদ বাড়ানোর লক্ষ্যে অন্যের কাছে হাত পাতে। যেমন এক হাদীছে ইরশাদ-
وَمَنْ سَأَلَ النَّاسَ لِيُثْرِيَ بِهِ مَالَهُ كَانَ خُمُوشًا فِي وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَرَضْفًا يَأْكُلُهُ مِنْ جَهَنَّمَ فَمَنْ شَاءَ فَلْيُقِلَّ وَمَنْ شَاءَ فَلْيُكْثِرْ
যে ব্যক্তি সম্পদ বাড়ানোর জন্য মানুষের কাছে যাচনা করে, কিয়ামতের দিন তার চেহারায় থাকবে আঁচড়ানোর চিহ্ন এবং থাকবে জাহান্নামে জ্বলন্ত কয়লা, যা সে খাবে। সুতরাং যার ইচ্ছা যাচনা কম করুক আর যার ইচ্ছা হয় বেশি করুক।(জামে' তিরমিযী: ৬৫৩; সহীহ ইবন হিব্বান : ৩৩৯১; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর: ৩৫০৪; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ১০৬৭৪; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১৬২৩)
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এমন গরীব যে, তার জন্য সদাকা-যাকাত খাওয়া জায়েয আর সে ঠেকায় পড়ে অন্যের কাছে হাত পাতে, তার হাত পাতায় কোনও গুনাহ নেই। সুতরাং সে হাদীছে বর্ণিত শাস্তির উপযুক্তও হবে না।
মোটকথা অন্যের কাছে হাত পাতার দ্বারা একদিকে ব্যক্তির ইজ্জত-সম্মান নষ্ট হয়, অন্যদিকে আখিরাতেও কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা হয়। তাই এর থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুমিনের অবশ্যকর্তব্য।
ইমাম মুতাররিফ ইবন আব্দুল্লাহ ইবনুশ শিখখীর রহ. তাঁর এক ভাতিজাকে বলে রেখেছিলেন, আমার কাছে তোমার কোনও প্রয়োজন দেখা দিলে তুমি তা কাগজে লিখে দেবে। কেননা চাওয়াটা হীনতা। আমি তোমার চেহারাকে তা থেকে বাঁচাতে চাই।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নিতান্ত ঠেকা না হলে কারও কাছে হাত পাততে নেই।
খ. অন্যের কাছে হাত পাতার দ্বারা ব্যক্তির সম্মান নষ্ট হয়।
গ. বিনা প্রয়োজনে অন্যের কাছে হাত পাতলে আখিরাতে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।
يَلْقَى اللَّهَ تَعَالٰى وَلَيْسَ فِي وَجْهِهِ مُزْعَة لَحْمٍ (সে আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে এ অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তার চেহারায় এক টুকরোও গোশত থাকবে না)। এ কথাটি রূপক অর্থেও হতে পারে এবং আক্ষরিক অর্থেও হতে পারে। রূপক অর্থে হলে এর মানে সে আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে এমনভাবে সাক্ষাৎ করবে যে, তার কোনও ইজ্জত ও সম্মান থাকবে না। একটি রেওয়ায়েত দ্বারা এ অর্থের সমর্থন মেলে। যেমন বর্ণিত হয়েছে-
لا يَرَالُ الْعَبْدُ يَسْأَلُ وَهُوَ غَنِيٌّ حَتَّى يَحلِقَ وَجْهَهُ فَمَا يَكُونُ لَهُ عِنْدَ اللَّهِ وَجْهٌ
বান্দা একাধারে মানুষের কাছে চাইতে থাকে, অথচ সে একজন সচ্ছল লোক, আর এভাবে সে নিজ চেহারা বিনষ্ট করে ফেলে। ফলে আল্লাহ তা'আলার কাছে তার কোনও গুরুত্ব থাকে না।(তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর: ৭৯০)
ইবন আবু জামরাহ রহ. বলেন, এর অর্থ তার চেহারায় সৌন্দর্যের কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। চেহারার সৌন্দর্য হয় গোশতের দ্বারা। গোশত না থাকলে চেহারা কদাকার হয়ে যায়। তাই রূপকার্থে গোশত না থাকা দ্বারা চেহারার কদর্যতা বোঝানো হয়েছে।
কথাটি যদি আক্ষরিক অর্থে হয়, তবে এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য যে, কিয়ামতের দিন তার চেহারায় এমনভাবে শাস্তি দেওয়া হবে যে, তার চেহারা থেকে সমস্ত গোশত খসে পড়বে। কিংবা এর অর্থ শাস্তিস্বরূপ কিয়ামতের দিন তার সম্পূর্ণ চেহারাকে হাড় বানিয়ে ফেলা হবে। এটা হবে সেদিন তার এ বিষয়ের নিদর্শন যে, সে দুনিয়ায় মানুষের কাছে চেয়ে বেড়াত।
মুহাল্লাব রহ.-এর মতে এ কথাটির আক্ষরিক অর্থই ধর্তব্য। তার চেহারাকে হাড্ডিসার করে ফেলা হবে এ কারণে যে, সেদিন সূর্য থাকবে খুব কাছে। ফলে তার চেহারা গোশতশূন্য হওয়ার দরুন অন্যদের তুলনায় সূর্যের তাপে তার কষ্ট বেশি হবে।
প্রকাশ থাকে যে, এ হাদীছটি ওই ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য, যে সচ্ছল হওয়া সত্ত্বেও কেবল সম্পদ বাড়ানোর লক্ষ্যে অন্যের কাছে হাত পাতে। যেমন এক হাদীছে ইরশাদ-
وَمَنْ سَأَلَ النَّاسَ لِيُثْرِيَ بِهِ مَالَهُ كَانَ خُمُوشًا فِي وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَرَضْفًا يَأْكُلُهُ مِنْ جَهَنَّمَ فَمَنْ شَاءَ فَلْيُقِلَّ وَمَنْ شَاءَ فَلْيُكْثِرْ
যে ব্যক্তি সম্পদ বাড়ানোর জন্য মানুষের কাছে যাচনা করে, কিয়ামতের দিন তার চেহারায় থাকবে আঁচড়ানোর চিহ্ন এবং থাকবে জাহান্নামে জ্বলন্ত কয়লা, যা সে খাবে। সুতরাং যার ইচ্ছা যাচনা কম করুক আর যার ইচ্ছা হয় বেশি করুক।(জামে' তিরমিযী: ৬৫৩; সহীহ ইবন হিব্বান : ৩৩৯১; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর: ৩৫০৪; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ১০৬৭৪; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১৬২৩)
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এমন গরীব যে, তার জন্য সদাকা-যাকাত খাওয়া জায়েয আর সে ঠেকায় পড়ে অন্যের কাছে হাত পাতে, তার হাত পাতায় কোনও গুনাহ নেই। সুতরাং সে হাদীছে বর্ণিত শাস্তির উপযুক্তও হবে না।
মোটকথা অন্যের কাছে হাত পাতার দ্বারা একদিকে ব্যক্তির ইজ্জত-সম্মান নষ্ট হয়, অন্যদিকে আখিরাতেও কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা হয়। তাই এর থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুমিনের অবশ্যকর্তব্য।
ইমাম মুতাররিফ ইবন আব্দুল্লাহ ইবনুশ শিখখীর রহ. তাঁর এক ভাতিজাকে বলে রেখেছিলেন, আমার কাছে তোমার কোনও প্রয়োজন দেখা দিলে তুমি তা কাগজে লিখে দেবে। কেননা চাওয়াটা হীনতা। আমি তোমার চেহারাকে তা থেকে বাঁচাতে চাই।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নিতান্ত ঠেকা না হলে কারও কাছে হাত পাততে নেই।
খ. অন্যের কাছে হাত পাতার দ্বারা ব্যক্তির সম্মান নষ্ট হয়।
গ. বিনা প্রয়োজনে অন্যের কাছে হাত পাতলে আখিরাতে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।
