আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৫১- যিকর, দুআ, তাওবা ও ইসতিগফারের অধ্যায়

হাদীস নং: ৬৭৬০
আন্তর্জাতিক নং: ২৭৬৯-২
৩৬. কা’ব ইবনে মালিক (রাযিঃ) ও তার দুই সঙ্গীর তাওবার বিবরণ
৬৭৬০। বনু উমাইয়ার আযাদকৃত গোলাম আবু তাহির আহমাদ ইবনে আমর ইবনে সারহ (রাহঃ) ......... ইবনে শিহাব (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাবুকের অভিযানে রওয়ানা হন। তাঁর লক্ষ্য ছিল, সিরিয়ার আরব খ্রীষ্টান ও রোমকরা। ইবনে শিহাব বলেন, আমাকে আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে কাব ইবনে মালিক (রাহঃ) বলেছেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে কাব বলেছেন, কাব ইবনে মালিক (রাযিঃ) অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার সন্তানদের মধ্যে তিনি ছিলেন তার চালক। আমি কাব ইবনে মালিক (রাযিঃ) কে তাবুক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করার ইতিবৃত্ত (নিজ মুখে) বর্ণনা করতে শুনেছি।

কাব ইবনে মালিক (রাযিঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যত যুদ্ধ করেছেন তাবুক যুদ্ধ ব্যতীত এর সবকটির মধ্যেই আমি তাঁর সঙ্গে শরীক ছিলাম। তবে বদর যুদ্ধে আমি তাঁর সাথে শরীক হতে পারিনি। আর যারা (এ বছর) থেকে পশ্চাতে রয়েছে তাদের কাউকেও অভিযুক্ত করেননি। তখন তো রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও মুসলমানগণ শুধুমাত্র কুরাইশ কাফিলার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন। অবশেষে আল্লাহ তাআলা মুসলমান ও কাফিরদের অনির্ধারিত সময়ে সমবেত করে দেন। আকাবার রাত্রে যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের থেকে ইসলামের উপর অঙ্গীকার নিচ্ছিলেন, সে রাত্রে আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। বদর যুদ্ধ যদিও মানুষের নিকট সর্বাধিক প্রসিদ্ধ, তথাপি আকাবা রজনীর পরিবর্তে বদর মুদ্ধে শরীক হওয়া আমার নিকট অধিক পছন্দনীয় নয়।

তাবুক যুদ্ধে শরীক না হওয়ার ব্যাপারে আমার ঘটনা হচ্ছে এই যে, যখন এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। তখন আমি যেমন শক্তিশালী ও স্বচ্ছল ছিলাম, তেমন আর কখনো ছিলাম না। আল্লাহর কসম! এর পূর্বে এমনকি দু’টি সওয়ারী আমি আর কখনো একত্রে জমা করতে পারিনি। কিন্তু এ যুদ্ধের সময় দু’টি সওয়ারীর অধিকারী ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ অভিযানে যান প্রচন্ড গরমের কালে। সফর ছিল মরু প্রান্তরের। বহু সংখ্যক শক্রর সন্মুখীন হতে যাচ্ছিলেন। তাই তিনি বিষয়টি মুসলমানদের সামনে খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করেন, যাতে তারা যুদ্ধের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে নিতে পারে। যুদ্ধের গতিবিধি সম্পর্কেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদেরকে জানিয়ে দিলেন।

তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে মুসলমানের সংখ্যা ছিল অনেক এবং তাদের নাম লিপিবদ্ধ ছিল না কোন সংরক্ষণকারীর কিতাবে; অর্থাৎ রেজিষ্টারে সংরক্ষিত ছিল না। কাব (রাযিঃ) বলেন, সুতরাং যে ব্যক্তি অনুরূপ থাকতে ইচ্ছা করে সে কমপক্ষে এ ধারণা করতে পারত যে, তার অনুপস্থিতি গোপন থাকবে, যতক্ষণ না আল্লাহর পক্ষ থেকে তার সম্পর্কে ওহী নাযিল হয়।

এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, যখন গাছের ফল পাকছিল এবং বৃক্ষের ছায়া ছিল আনন্দদায়ক। আর আমিও ছিলাম এগুলোর প্রতি আকৃষ্ট। অবশেষে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও মুসলমানগণ যুদ্বের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিলেন। আমিও তাঁদের সাথে যুদ্ধে শরীক হওয়ার জন্য প্রস্ততি গ্রহণের লক্ষ্যে বাড়ী থেকে সকালে বের হতাম, কিন্তু কোন প্রস্তুতি গ্রহণ না করেই ফিরে আসতাম এবং মনে মনে বলতাম, আমি তো যুদ্ধে যেতে সক্ষম, যখনই ইচ্ছা করি। আমার ব্যাপার এভাবেই চলতে লাগল।

এদিকে লোকজন বাস্তব প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে লাগল। অবশেষে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রত্যুষে রওয়ানা হলেন এবং তাঁর সঙ্গে মুসলিমগণও রওয়ানা হয়ে গেল। কিন্তু আমি কোন প্রস্তুতই গ্রহণ করি নি। পরদিন সকালে আমি বের হলাম। কিন্তু কোন প্রস্তুতি গ্রহণ না করেই ফিরে এলাম। এভাবে আমার সময় দীর্ঘায়িত হতে লাগল। এদিকে লোকজন দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয় আর মুজাহিদ্বীনের দল বহু দুরে চলে যায়। তখন আমি ভাবতে লাগলাম যে, আমিও রওয়ানা হয়ে তাদের সাথে মিলিত হয়ে যাই। আফসোস! আমি যদি তাই করতাম। কিন্তু আমার ভাগ্যে তা হয়নি।

পরবর্তী অবস্থা হল এই যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুদ্ধে চলে যাওয়ার পর আমি যখন রাস্তায় বের হতাম তখন এ ব্যাপার আমাকে ব্যথিত করত যে, আমি অনুসরণীয় কাউকে দেখতে পেতাম না, শুধু এমন লোক যাদের উপর নিফাকের অভিযোগ রয়েছে অথবা সে সকল অক্ষম লোক যাদের আল্লাহ তাআলা মা’যুর হিসেবে অবকাশ দিয়েছেন। এদিকে তাবুক পৌছার পূর্বে রাস্তায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার কথা মোটেই আলোচনা করেননি। কিন্তু তাবুক পৌছার পর লোকদের মাঝে বসা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জিজ্ঞাসা করলেন, কা’ব ইবনে মালিক কি করছে? তখন বনু সালামা গোত্রের এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তার লাল (জোড়া) পোশাক এবং তার দেহের দু’ পাশের প্রতি দৃষ্টি তাকে বিরত রেখেছে। তখন মু’আয ইবনে জাবাল (রাযিঃ) বললেন, তুমি বড় মন্দ কথা বলছ। ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমরা তো তাকে ভালই জানি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নীরব রইলেন।

ইতোমধ্যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শুভ্র বসন পরিহিত এক ব্যক্তিকে ধূলা উড়িয়ে আসতে দেখে বললেন, আবু খায়সামাই হবে। দেখা গেল, তিনি আনসারী সাহাবী আবু খায়সামা (রাযিঃ) আর তিনি সে ব্যক্তি যিনি এক সা খেজুর সাদ্‌কা করেছিলেন যাতে মুশরিকরা বিরূপ সমালোচনা করেছিল। কাব ইবনে মালিক (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাবুক থেকে প্রত্যাবর্তনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার সংবাদ আমার নিকট পৌছার পর আমার উপর চিন্তার বোঝা নেমে এল। আমি মনে মনে মিথ্যা ওযর কল্পনা করতে লাগলাম এবং এমন কথা ভাবতে লাগলাম যা বলে আমি তার ক্রোধ থেকে বাচতে পারি। আর এ ব্যাপারে আমি বুদ্ধিমান আপন জনেরও সাহায্য নিতে লাগলাম।

অবশেষে যখন আমাকে বলা হল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পৌছে গেছেন তখন আমার অন্তর থেকে সমস্ত মন্দ কল্পনা দূর হয়ে গেল। এমনকি আমি অনুভব করলাম যে, কোন কিছুতেই আমি তার কাছ থেকে অব্যহতি পাব না। তাই আমি তার কাছে সত্য বলারই সংকল্প করে নিলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ভোর বেলা সফর থেকে আগমন করলেন। তাঁর অভ্যাস ছিল, সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে প্রথমে তিনি মসজিদে আসতেন এবং তথায় দু’রাক’আত (নামায) আদায় করে মানুষের সাথে সাক্ষাতের জন্য বসতেন। এবারও যখন তিনি বসলেন, তখন যারা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেনি তারা এসে অজুহাত পেশ করতে শুরু করল এবং এর উপর কসম খেতে লাগল। এ সকল লোক সংখ্যায় আশির অধিক ছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের প্রকাশ্য ওজুহাত গ্রহণ করলেন এবং তাদের থেকে বায়আত নিয়ে তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। আর তাদের অন্তর্নিহিতা অবস্থা আল্লাহর উপর ন্যস্ত করলেন।

অবশেষে আমি উপস্থিত হয়ে সালাম করলাম। তখন তিনি ক্রুদ্ধ ব্যক্তির হাসির ন্যায় অস্পষ্ট হাসলেন। তারপর তিনি বললেন, এস। আমি এসে তাঁর সামনে বসলাম। তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কিসে তোমাকে পশ্চাতে রেখেছিল? তুমি কি সওয়ারী ক্রয় করনি? তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি যদি আপনি ছাড়া কোন দুনিয়াদার মানুষের নিকট বসতাম তবে আপনি দেখতেন যে অবশ্যই আমি কোন ওযর পেশ করে তার ক্রোধ থেকে বেঁচে যেতাম। কারণ আমাকে তর্কের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর কসম! আমার বিশ্বাস, আজ যদি আমি মিথ্যা কথা বলে আপনাকে আমার প্রতি রাযী করে নেই, তবে অচিরেই আল্লাহ তা'আলা আপনাকে আমার প্রতি অসন্তুষ্ট করে দিবেন। আর যদি আমি সত্য কথা বলি এবং এতে আপনি আমার প্রতি অসন্তষ্ট হন, তবে এতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি কল্যাণজনক পরিণামের আশা রাখি।

আল্লাহর কসম! আমার কোন ওযর ছিল না। আল্লাহর কসম! আপনার (অভিযান) থেকে পিছনে থাকার সময়ের তুলনায় কোন সময় আমি অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন ও অধিক প্রাচুর্যের অধিকারী ছিলাম না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ অবশ্যই এ ব্যক্তি সত্য কথা বলেছে। তারপর তিনি বললেনঃ তুমি চলে যাও, যতক্ষণ না আল্লাহ তোমার সম্বন্ধে ফয়সালা দেন। তারপর আমি উঠে গেলাম। তখন বনু সালামা গোত্রের কতিপয় লোক দৌড়িয়ে আমার কাছে এসে বলল, আল্লাহর কসম! আমরা তো ইতোপূর্বে তোমাকে আর কোন অন্যায় করতে দেখিনি। যারা পশ্চাতে রয়ে গিয়েছিল, তারা যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে ওযর পেশ করেছে সেভাবে ওযর পেশ করতে কি তুমি অপারগ ছিলে? অতএব, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ইস্তিগফারই তোমার গুনাহের জন্য যথেষ্ট হতো।

তিনি বলেন, আল্লাহর কসম। এভাবে তারা আমাকে এত ভৎর্সনা করতে লাগল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট আবার গিয়ে আমার নিজের উক্তি মিথ্যা প্রতিপন্ন করার ইচ্ছা হতে লাগল। আমি লোকদের বললাম, আমার মত আর কারো এমন অবস্থা হয়েছে কি? তারা বলল, হ্যাঁ, আরো দুই জন তোমার মত করেছেন। তুমি যা বলেছ তারাও অনুরূপ বলেছেন এবং তোমাকে যা বলা হয়েছে তাদেরও তাই বলা হয়েছে। আমি বললাম, তারা কারা? তারা বলল, তারা হলেন, মুররা ইবনে রাবীআ আমিরী এবং হেলাল ইবনে উমাইয়া ওয়াকিফী (রাযিঃ)।

কা’ব বলেন, তারা আমার নিকট এমন দুই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করল, যারা ছিলেন নেককার, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী। তারা দুইজনই ছিলেন অনুসরণযোগ্য। কা’ব (রাযিঃ) বলেন, যখন তারা ঐ দুই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করল, তখন আমি চলে গেলাম। এদিকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি তাদের মধ্য থেকে শুধু আমাদের তিন জনের সাথে মুসলমানদের কথা বলতে নিষেধ করে দিলেন। এরপর লোকেরা আমাদের পরিহার করল অথবা বলেছেন, আমাদের সাথে তাদের ব্যবহার বদলে গেল। এমনকি যমীনও যেন পরিবর্তিত হয়ে গেল, (মনে হল) যে ভূমি আমি চিনতাম, এ যেন তা নেই। এমনি করে পঞ্চাশ রাত্র কাটালাম। আর আমার দুই সাথী ছিলেন হীনবল, তাই তারা নিজ নিজ ঘরে চুপচাপ বসে রইলেন এবং কাঁদতে লাগলেন। আর আমি তাদের মধ্যে কম বয়স্ক ও সবল ছিলাম। আমি রাস্তায় বের হতাম, নামাযে শরীক হতাম এবং বাজারেও ঘোরাফেরা করতাম। কিন্তু কেউ আমার সঙ্গে কোন কথা বলতো না।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নামায আদায়ের পর নিজ স্থানে বসা ছিলেন, এমতাবস্থায় আমি তার নিকট এলাম, তাকে সালাম করলাম এবং মনে মনে ভাবলাম, তিনি সালামের জওয়াব প্রদান করে তার ওষ্ঠযুগল নাড়িয়েছেন কি না? তারপর আমি তাঁর নিকটে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করলাম এবং গোপন চাহনির মাধ্যমে আমি তার দিকে তাকালাম। যখন আমি নামাযে মশগুল হতাম তখন তিনি আমার প্রতি নযর দেন। কিস্তু আমি যখন তার দিকে তাকাই তখন তিনি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। আমার প্রতি মুসলমানদের এ কঠোর আচরণ যখন দীর্ঘায়িত হয়ে গেল তখন আমি গিয়ে আবু কাতাদা (রাযিঃ) এর বাগানের প্রাচীরের উপর উঠলাম। তিনি ছিলেন আমার চাচাতো ভাই এবং আমার অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তি।

উপরে উঠেই আমি তাঁকে সালাম করলাম। কিন্তু আল্লাহর কসম! তিনি আমার সালামের কোন উত্তর দিলেন না। আমি তাঁকে বললাম, হে আবু কাতাদা! আমি তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তুমি কি জান না যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (ﷺ) কে ভালবাসি? তিনি কোন উত্তর দিলেন না। আমি পুনরায় তাঁকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। এবারও তিনি কোন উত্তর দিলেন না। তারপর আবারো আমি তাঁকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-ই ভাল জানেন। এ কথা শুনে আমার দু’নয়ন দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। অবশেষে পিছন ফিরে আমি আবার দেওয়ালের উপর চড়লাম।

তারপর আমি কোন একদিন মদীনার বাজার দিয়ে যাচ্ছিলাম, এ সময় মদীনার বাজারে শাক-সবজি বিক্রির উদ্দেশ্যে আগত সিরিয়ার কৃষকদের মধ্য থেকে একজন বলতে লাগল, আমাকে কা’ব ইবনে মালিকের ঠিকানা বলতে পারে এমন কোন ব্যক্তি আছে কি? লোকেরা ইশারায় আমাকে দেখিয়ে দিলে সে আমার নিকট আসল এবং গাসশান সম্রাটের পক্ষ হতে আমাকে একটি পত্র দিল। আমি লেখাপড়া জানতাম। তাই আমি তা পাঠ করলাম। এতে লেখা ছিল, আমি জানতে পারলাম যে, তোমার সঙ্গী মুহাম্মাদ তোমার প্রতি যুলুম করয়ে অথচ আল্লাহ পাক তোমাকে নীচু ঘরে জন্য দেননি এবং ধ্বংসের স্থানেও নয়। সুতরাং তুমি আমাদের নিকট চলে এসো। আমরা তোমার সহযোগিতা করবো।

এ পত্র পাঠমাত্র আমি বললাম এও আরেক ধরনের পরীক্ষা। তখন এ পত্রটি নিয়ে আমি উনুনের নিকট গেলাম এবং উহা আগুনে জ্বালিয়ে দিলাম। চল্লিশ দিন অতিবাহিত হল। কিন্তু এদিকে কোন ওহী আসছে না। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর এক বার্তাবাহক আমার নিকট এসে বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তোমাকে তোমার স্ত্রী হতে দূর হয়ে যাবার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কি তাকে তালাক দিয়ে দিব, না অন্য কিছু করব? তিনি বললেন, না তালাক দিতে হবে না। বরং তুমি তার থেকে পৃথক হয়ে যাও এবং তার সাথে সহবাস করো না। তিনি বলেন, আমার অন্য দুই সঙ্গীদের নিকটও অনুরূপ বার্তা প্রেরণ করা হল।

কা’ব (রাযিঃ) বলেন, অতঃপর আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, তুমি তোমার পিতার বাড়ী চলে যাও এবং যে পর্যন্ত আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে কোন ফয়সালা না করেন ততদিন সেখানেই অবস্থান করবে। কাব (রাযিঃ) বলেন, তারপর হিলাল ইবনে উমাইয়া (রাযিঃ) এর স্ত্রী রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! হিলাল ইবনে উমাইয়া একজন বৃদ্ধ-অকেজো ব্যক্তি। তার কোন খাদিম নেই। যদি আমি তার খিদমত করি, আপনি কি তা অপছন্দ করেন? তিনি বললেন, না, তবে সে তোমার সাথে সহবাস করতে পারবে না। এ কথা শুনে হিলাল (রাযিঃ) এর স্ত্রী বললেন, আল্লাহর কসম! (কোন ব্যাপারেই) তার মনে কোন স্পন্দন নেই এবং আল্লাহর কসম! ঐ ঘটনার পর থেকে অদ্যাবধি সে কেঁদেই দিনাতিপাত করছে।

তিনি বলেন, আমার পরিবারের কেউ কেউ বললেন, আচ্ছা তুমিও যদি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে অনুমতি নিয়ে নিতে। তিনি তো হিলাল ইবনে উমাইয়ার স্ত্রীকে তার স্বামীর খিদমতের অনুমতি দিয়েছেন। কা’ব বলেন, আমি বললাম, আমি আমার স্ত্রীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করব না। কারণ আমি যুবক মানুষ। আমি আমার স্ত্রীর ব্যাপারে অনুমতি প্রার্থনা করলে না জানি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কি বলেন। এ অবস্থায় আরো দশ রাত কাটালাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন থেকে আমাদের সাথে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেছিলেন, তখন থেকে আমাদের পঞ্চাশ রাত পূর্ণ হয়।

কাব বলেন, পঞ্চাশতম রাতের ফজরের নামায আমি আমারর গৃহের ছাদের উপর আদায় করলাম। এরপর যখন আমি ঐ অবস্থায় বসা ছিলাম, যা আল্লাহ আমাদের ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন, অর্থাৎ আমার জীবন আমার জন্য সংকটাপন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও আমার কাছে সংকুচিত হয়ে পড়েছিল। তখন আমি একজন ঘোষণাকারীর আওয়াজ শুনলাম, যিনি সালা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে উচ্চস্বরে বলছেন, হে কাব ইবনে মালিক! সুসংবাদ গ্রহণ কর। কা’ব বলেন, তখন আমি সিজদায় লুটিয়ে পড়লাম এবং আমি বুঝতে পারলাম যে, সংকট মুক্তি এসে গেছে। কা’ব বলেন, এদিকে ফজরের নামাযের পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) লোকদের কাছে ঘোষণা করলেন যে, আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওবা কবুল করেছেন।

তখনই লোকেরা আমাদের সুসংবাদ দেয়ার জন্য ছুটে চলল এবং আমার সাথীদ্বয়কে খোশখবরী পৌছানোর জন্য কয়েকজন লোক তাদের নিকট গেলেন। আর আমার দিকে একজন ঘোড়ার উপর সওয়ার হয়ে রওয়ানা হলেন এবং আসলাম গোত্রের আর এক ব্যক্তিও রওয়ানা হলেন। তিনি পাহাড়ের উপর আরোহণ করে ঘোষণা দিলেন। অশ্বের চেয়েও আওয়াজের গতি আরো দ্রুত এর তারপর যার সুসংবাদের আওয়াজ আমি শুনেছিলাম তিনি আমার নিকট আসলে আমি আমার পরিধেয় বস্ত্র দু’টো সুসংবাদের পুরস্কার স্বরূপ তাকে দিয়ে দিলাম। আল্লাহর কসম! সেদিন ঐ দু’টো কাপড় ব্যতীত আমি আর কোন কাপড়ের মালিক ছিলাম না। অতএব আমি দু’টো কাপড় ধার নিয়ে পরিধান করলাম।

এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে আমি রওয়ানা দিলাম। আমার তাওবা কবুলের মুবারকবাদ জানানোর জন্য লোকেরা দলে দলে আমার সঙ্গে সাক্ষাত করতে লাগল এবং বলতে লাগল, আল্লাহর ক্ষমা তোমার জন্য মুবারক হোক। এমতাবস্থায় আমি মসজিদে প্রবেশ করে দেখলাম, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদেই উপবিষ্ট আছেন এবং তাঁর পাশে লোকজন রয়েছে। তখন তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রাযিঃ) দাঁড়ালেন এবং দৌড়ে এসে আমার সাথে মুসাফাহা করলেন এবং তিনি আমাকে মুবারকবাদ জানালেন। আল্লাহর কসম! মুহাজিরদের মধ্যে তখন তিনি ছাড়া আর কেউ (আমাকে দেখে) দাঁড়াননি।

রাবী বলেন, কা’ব তালহার এ সদাচরণের কথা ভুলেননি। কাব ইবনে মালিক (রাযিঃ) বলেন, তারপর আমি যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে সালাম করলাম তখন তাঁর চেহারা খুশীতে চমকাতে ছিলো। তিনি বললেন, তোমার মা তোমাকে জন্ম দেয়ার পর থেকে যতদিন অতিবাহিত হয়েছে, তার মধ্যে তোমার জন্য এ মুবারক দিনটির সুসংবাদ। কা’ব (রাযিঃ) বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তা কি আপনার পক্ষ থেকে, ইয়া রাসুলাল্লাহ! না মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে। তিনি বললেন, না, বরং মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে।

আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন খুশী হতেন, তখন তাঁর চেহারা মুবারক এমনভাবে প্রদীপ্ত হতো যেন তা এক খণ্ড চাঁদ। কা’ব (রাযিঃ) বলেন, আমরা তাঁর চেহারা দেখেই তা বুঝতে পারতাম। তিনি বলেন, আমি যখন তাঁর সামনে বসলাম তখন বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার তাওবার শুকরিয়া হিসেবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য সাদ্‌কা স্বরূপ দান করে আমার সমস্ত মাল থেকে মুক্ত হতে চাই। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ কিছু মাল তোমার নিজের জন্য রেখে দাও। এই তোমার জন্য উত্তম। আমি বললাম, তাহলে আমি খায়বরে প্রাপ্ত অংশটুকু রেখে দিব।

কা’ব (রাযিঃ) বলেন, এরপর আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সত্য কথাই আমাকে মুক্তি দিয়েছে; তাই যতদিন জীবিত থাকি আমি সত্য ছাড়া বলব না। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে সে সত্য কথা বলার পর, আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি যে অনুগ্রহ প্রদর্শন করেছেন; আল্লাহ তাআলা আর কোন মুসলিম ব্যক্তির প্রতি এরূপ করেছেন বলে আমি জানি না। আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে এ আলোচনা করার পর অদ্যাবধি ইচ্ছাকৃতভাবে আমি কখনো মিথ্যা কথা বলিনি। আমার আশা, অবশিষ্ট জীবনেও আল্লাহ তাআলা আমাকে মিথ্যা থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন।

কা’ব (রাযিঃ) বলেন, আমার তাওবা গ্রহণযোগ্য হবার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা তখন নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করেছিলেনঃ “আল্লাহ অনুগ্রহপরায়ণ হলেন নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি, যারা তার অনুগমন করেছিলো সংকটকালে, এমনকি যখন তাদের এক দলের চিত্ত-বৈকল্যের উপক্রম হয়েছিলো। পরে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করলেন। তিনি তাদের প্রতি দয়ার্দ্র পরম দয়ালু এবং তিনি ক্ষমা করলেন অপর তিনজনকেও, যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল, যে পর্যন্ত না পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য উহা সংকুচিত হয়েছিলো এবং তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়েছিলো এবং তারা উপলব্ধি করেছিল যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন আশ্রয়স্থল নেই। পরে তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ হলেন, যাতে তারা তাওবা করে। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও। (সূরা তাওবাঃ ১১৭-১১৯)

কাব (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট সেদিন সত্য কথা বলার কারণে আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন, অনুরূপ অনুগ্রহ ইসলাম গ্রহণের পর আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি আর কখনো করেননি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট সেদিন আমি মিথ্যা বলিনি। যদি বলতাম তবে অবশ্যই আমি ধ্বংস হয়ে যেতাম, যেমন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। মিথ্যাবাদীগণ। ওহী অবতরণকালে আল্লাহ মিথ্যাবাদীদের এমন কঠোর সমালোচনা করেছেন, যা আর কাউকে করেননি। তিনি বলেছেনঃ তোমরা তাদের নিকট ফিরে এলে তারা আল্লাহর শপথ করবে, যেন তোমরা তাদের উপেক্ষা কর সুতরাং তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা করবে তারা অপবিত্র, তাদের কৃতকর্মের ফল স্বরূপ জাহান্নাম তাদের আবাস স্থল। তারা তোমাদের নিকট হলফ করবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হও। তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হলেও আল্লাহ ফাসিক (সত্যত্যাগী) লোকদের প্রতি তুষ্ট হবেন না। (সূরা তাওবাঃ ৯৫ ও ৯৬)

কা’ব (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট শপথ করার পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যাদের ওযর গ্রহণ করেছিলেন, যাদের বায়আত করেছিলেন এবং যাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন তাদের থেকে আমাদের তিনজনের বিষয়টিকে বিলম্বিত করা হয়েছিল। আল্লাহর পক্ষ থেকে ফয়সালা আসা পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের বিষয়টিকে স্থগিত রেখেছিলেন। তাই আল কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ আর তিনি ক্ষমা করলেন অপর তিনজনকেও যাদের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল।

এখানেخلفوا “যুদ্ধ হতে আমাদের পেছনে থাকা” নয়। বরং এর অর্থ হচ্ছে, রাসুল (ﷺ) কর্তৃক “আমাদের বিষয়টিকে স্থগিত রাখা।” ঐ লোকদের বিপরীতে যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সম্মুখে শপথ করেছিল এবং ওযর পেশ করেছিলো অতঃপর তিনি তা কবুল করেছিলেন।

মুহাম্মাদ ইবনে রাফি (রাহঃ) ......... ইবনে শিহাব (রাহঃ) এর সূত্রে যুহরী (রাহঃ) এর সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
باب حَدِيثِ تَوْبَةِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ وَصَاحِبَيْهِ
حَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، أَحْمَدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ سَرْحٍ مَوْلَى بَنِي أُمَيَّةَ أَخْبَرَنِي ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ ثُمَّ غَزَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم غَزْوَةَ تَبُوكَ وَهُوَ يُرِيدُ الرُّومَ وَنَصَارَى الْعَرَبِ بِالشَّامِ . قَالَ ابْنُ شِهَابٍ فَأَخْبَرَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ كَعْبٍ كَانَ قَائِدَ كَعْبٍ مِنْ بَنِيهِ حِينَ عَمِيَ قَالَ سَمِعْتُ كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ يُحَدِّثُ حَدِيثَهُ حِينَ تَخَلَّفَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ قَالَ كَعْبُ بْنُ مَالِكٍ لَمْ أَتَخَلَّفْ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي غَزْوَةٍ غَزَاهَا قَطُّ إِلاَّ فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ غَيْرَ أَنِّي قَدْ تَخَلَّفْتُ فِي غَزْوَةِ بَدْرٍ وَلَمْ يُعَاتِبْ أَحَدًا تَخَلَّفَ عَنْهُ إِنَّمَا خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَالْمُسْلِمُونَ يُرِيدُونَ عِيرَ قُرَيْشٍ حَتَّى جَمَعَ اللَّهُ بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ عَدُوِّهُمْ عَلَى غَيْرِ مِيعَادٍ وَلَقَدْ شَهِدْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَيْلَةَ الْعَقَبَةِ حِينَ تَوَاثَقْنَا عَلَى الإِسْلاَمِ وَمَا أُحِبُّ أَنَّ لِي بِهَا مَشْهَدَ بَدْرٍ وَإِنْ كَانَتْ بَدْرٌ أَذْكَرَ فِي النَّاسِ مِنْهَا وَكَانَ مِنْ خَبَرِي حِينَ تَخَلَّفْتُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ أَنِّي لَمْ أَكُنْ قَطُّ أَقْوَى وَلاَ أَيْسَرَ مِنِّي حِينَ تَخَلَّفْتُ عَنْهُ فِي تِلْكَ الْغَزْوَةِ وَاللَّهِ مَا جَمَعْتُ قَبْلَهَا رَاحِلَتَيْنِ قَطُّ حَتَّى جَمَعْتُهُمَا فِي تِلْكَ الْغَزْوَةِ فَغَزَاهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي حَرٍّ شَدِيدٍ وَاسْتَقْبَلَ سَفَرًا بَعِيدًا وَمَفَازًا وَاسْتَقْبَلَ عَدُوًّا كَثِيرًا فَجَلاَ لِلْمُسْلِمِينَ أَمْرَهُمْ لِيَتَأَهَّبُوا أُهْبَةَ غَزْوِهِمْ فَأَخْبَرَهُمْ بِوَجْهِهِمُ الَّذِي يُرِيدُ وَالْمُسْلِمُونَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَثِيرٌ وَلاَ يَجْمَعُهُمْ كِتَابُ حَافِظٍ - يُرِيدُ بِذَلِكَ الدِّيوَانَ - قَالَ كَعْبٌ فَقَلَّ رَجُلٌ يُرِيدُ أَنْ يَتَغَيَّبَ يَظُنُّ أَنَّ ذَلِكَ سَيَخْفَى لَهُ مَا لَمْ يَنْزِلْ فِيهِ وَحْىٌ مِنَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَغَزَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تِلْكَ الْغَزْوَةَ حِينَ طَابَتِ الثِّمَارُ وَالظِّلاَلُ فَأَنَا إِلَيْهَا أَصْعَرُ فَتَجَهَّزَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَالْمُسْلِمُونَ مَعَهُ وَطَفِقْتُ أَغْدُو لِكَىْ أَتَجَهَّزَ مَعَهُمْ فَأَرْجِعُ وَلَمْ أَقْضِ شَيْئًا . وَأَقُولُ فِي نَفْسِي أَنَا قَادِرٌ عَلَى ذَلِكَ إِذَا أَرَدْتُ . فَلَمْ يَزَلْ ذَلِكَ يَتَمَادَى بِي حَتَّى اسْتَمَرَّ بِالنَّاسِ الْجِدُّ فَأَصْبَحَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم غَادِيًا وَالْمُسْلِمُونَ مَعَهُ وَلَمْ أَقْضِ مِنْ جَهَازِي شَيْئًا ثُمَّ غَدَوْتُ فَرَجَعْتُ وَلَمْ أَقْضِ شَيْئًا فَلَمْ يَزَلْ ذَلِكَ يَتَمَادَى بِي حَتَّى أَسْرَعُوا وَتَفَارَطَ الْغَزْوُ فَهَمَمْتُ أَنْ أَرْتَحِلَ فَأُدْرِكَهُمْ فَيَا لَيْتَنِي فَعَلْتُ ثُمَّ لَمْ يُقَدَّرْ ذَلِكَ لِي فَطَفِقْتُ إِذَا خَرَجْتُ فِي النَّاسِ بَعْدَ خُرُوجِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَحْزُنُنِي أَنِّي لاَ أَرَى لِي أُسْوَةً إِلاَّ رَجُلاً مَغْمُوصًا عَلَيْهِ فِي النِّفَاقِ أَوْ رَجُلاً مِمَّنْ عَذَرَ اللَّهُ مِنَ الضُّعَفَاءِ وَلَمْ يَذْكُرْنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى بَلَغَ تَبُوكًا فَقَالَ وَهُوَ جَالِسٌ فِي الْقَوْمِ بِتَبُوكَ " مَا فَعَلَ كَعْبُ بْنُ مَالِكٍ " . قَالَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلِمَةَ يَا رَسُولَ اللَّهِ حَبَسَهُ بُرْدَاهُ وَالنَّظَرُ فِي عِطْفَيْهِ . فَقَالَ لَهُ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ بِئْسَ مَا قُلْتَ وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا عَلِمْنَا عَلَيْهِ إِلاَّ خَيْرًا . فَسَكَتَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَبَيْنَمَا هُوَ عَلَى ذَلِكَ رَأَى رَجُلاً مُبَيِّضًا يَزُولُ بِهِ السَّرَابُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " كُنْ أَبَا خَيْثَمَةَ " . فَإِذَا هُو أَبُو خَيْثَمَةَ الأَنْصَارِيُّ وَهُوَ الَّذِي تَصَدَّقَ بِصَاعِ التَّمْرِ حِينَ لَمَزَهُ الْمُنَافِقُونَ . فَقَالَ كَعْبُ بْنُ مَالِكٍ فَلَمَّا بَلَغَنِي أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ تَوَجَّهَ قَافِلاً مِنْ تَبُوكَ حَضَرَنِي بَثِّي فَطَفِقْتُ أَتَذَكَّرُ الْكَذِبَ وَأَقُولُ بِمَ أَخْرُجُ مِنْ سَخَطِهِ غَدًا وَأَسْتَعِينُ عَلَى ذَلِكَ كُلَّ ذِي رَأْىٍ مِنْ أَهْلِي فَلَمَّا قِيلَ لِي إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ أَظَلَّ قَادِمًا زَاحَ عَنِّي الْبَاطِلُ حَتَّى عَرَفْتُ أَنِّي لَنْ أَنْجُوَ مِنْهُ بِشَىْءٍ أَبَدًا فَأَجْمَعْتُ صِدْقَهُ وَصَبَّحَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَادِمًا وَكَانَ إِذَا قَدِمَ مِنْ سَفَرٍ بَدَأَ بِالْمَسْجِدِ فَرَكَعَ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ جَلَسَ لِلنَّاسِ فَلَمَّا فَعَلَ ذَلِكَ جَاءَهُ الْمُخَلَّفُونَ فَطَفِقُوا يَعْتَذِرُونَ إِلَيْهِ وَيَحْلِفُونَ لَهُ وَكَانُوا بِضْعَةً وَثَمَانِينَ رَجُلاً فَقَبِلَ مِنْهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلاَنِيَتَهُمْ وَبَايَعَهُمْ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمْ وَوَكَلَ سَرَائِرَهُمْ إِلَى اللَّهِ حَتَّى جِئْتُ فَلَمَّا سَلَّمْتُ تَبَسَّمَ تَبَسُّمَ الْمُغْضَبِ ثُمَّ قَالَ " تَعَالَ " . فَجِئْتُ أَمْشِي حَتَّى جَلَسْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَقَالَ لِي " مَا خَلَّفَكَ " . أَلَمْ تَكُنْ قَدِ ابْتَعْتَ ظَهْرَكَ " . قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي وَاللَّهِ لَوْ جَلَسْتُ عِنْدَ غَيْرِكَ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا لَرَأَيْتُ أَنِّي سَأَخْرُجُ مِنْ سَخَطِهِ بِعُذْرٍ وَلَقَدْ أُعْطِيتُ جَدَلاً وَلَكِنِّي وَاللَّهِ لَقَدْ عَلِمْتُ لَئِنْ حَدَّثْتُكَ الْيَوْمَ حَدِيثَ كَذِبٍ تَرْضَى بِهِ عَنِّي لَيُوشِكَنَّ اللَّهُ أَنْ يُسْخِطَكَ عَلَىَّ وَلَئِنْ حَدَّثْتُكَ حَدِيثَ صِدْقٍ تَجِدُ عَلَىَّ فِيهِ إِنِّي لأَرْجُو فِيهِ عُقْبَى اللَّهِ وَاللَّهِ مَا كَانَ لِي عُذْرٌ وَاللَّهِ مَا كُنْتُ قَطُّ أَقْوَى وَلاَ أَيْسَرَ مِنِّي حِينَ تَخَلَّفْتُ عَنْكَ . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَمَّا هَذَا فَقَدْ صَدَقَ فَقُمْ حَتَّى يَقْضِيَ اللَّهُ فِيكَ " . فَقُمْتُ وَثَارَ رِجَالٌ مِنْ بَنِي سَلِمَةَ فَاتَّبَعُونِي فَقَالُوا لِي وَاللَّهِ مَا عَلِمْنَاكَ أَذْنَبْتَ ذَنْبًا قَبْلَ هَذَا لَقَدْ عَجَزْتَ فِي أَنْ لاَ تَكُونَ اعْتَذَرْتَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِمَا اعْتَذَرَ بِهِ إِلَيْهِ الْمُخَلَّفُونَ فَقَدْ كَانَ كَافِيَكَ ذَنْبَكَ اسْتِغْفَارُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَكَ . قَالَ فَوَاللَّهِ مَا زَالُوا يُؤَنِّبُونَنِي حَتَّى أَرَدْتُ أَنْ أَرْجِعَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأُكَذِّبَ نَفْسِي - قَالَ - ثُمَّ قُلْتُ لَهُمْ هَلْ لَقِيَ هَذَا مَعِي مِنْ أَحَدٍ قَالُوا نَعَمْ لَقِيَهُ مَعَكَ رَجُلاَنِ قَالاَ مِثْلَ مَا قُلْتَ فَقِيلَ لَهُمَا مِثْلُ مَا قِيلَ لَكَ - قَالَ - قُلْتُ مَنْ هُمَا قَالُوا مُرَارَةُ بْنُ رَبِيعَةَ الْعَامِرِيُّ وَهِلاَلُ بْنُ أُمَيَّةَ الْوَاقِفِيُّ - قَالَ - فَذَكَرُوا لِي رَجُلَيْنِ صَالِحَيْنِ قَدْ شِهِدَا بَدْرًا فِيهِمَا أُسْوَةٌ - قَالَ - فَمَضَيْتُ حِينَ ذَكَرُوهُمَا لِي . قَالَ وَنَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمُسْلِمِينَ عَنْ كَلاَمِنَا أَيُّهَا الثَّلاَثَةُ مِنْ بَيْنِ مَنْ تَخَلَّفَ عَنْهُ - قَالَ - فَاجْتَنَبَنَا النَّاسُ - وَقَالَ - تَغَيَّرُوا لَنَا حَتَّى تَنَكَّرَتْ لِي فِي نَفْسِيَ الأَرْضُ فَمَا هِيَ بِالأَرْضِ الَّتِي أَعْرِفُ فَلَبِثْنَا عَلَى ذَلِكَ خَمْسِينَ لَيْلَةً فَأَمَّا صَاحِبَاىَ فَاسْتَكَانَا وَقَعَدَا فِي بُيُوتِهِمَا يَبْكِيَانِ وَأَمَّا أَنَا فَكُنْتُ أَشَبَّ الْقَوْمِ وَأَجْلَدَهُمْ فَكُنْتُ أَخْرُجُ فَأَشْهَدُ الصَّلاَةَ وَأَطُوفُ فِي الأَسْوَاقِ وَلاَ يُكَلِّمُنِي أَحَدٌ وَآتِي رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأُسَلِّمُ عَلَيْهِ وَهُوَ فِي مَجْلِسِهِ بَعْدَ الصَّلاَةِ فَأَقُولُ فِي نَفْسِي هَلْ حَرَّكَ شَفَتَيْهِ بِرَدِّ السَّلاَمِ أَمْ لاَ ثُمَّ أُصَلِّي قَرِيبًا مِنْهُ وَأُسَارِقُهُ النَّظَرَ فَإِذَا أَقْبَلْتُ عَلَى صَلاَتِي نَظَرَ إِلَىَّ وَإِذَا الْتَفَتُّ نَحْوَهُ أَعْرَضَ عَنِّي حَتَّى إِذَا طَالَ ذَلِكَ عَلَىَّ مِنْ جَفْوَةِ الْمُسْلِمِينَ مَشَيْتُ حَتَّى تَسَوَّرْتُ جِدَارَ حَائِطِ أَبِي قَتَادَةَ وَهُوَ ابْنُ عَمِّي وَأَحَبُّ النَّاسِ إِلَىَّ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَوَاللَّهِ مَا رَدَّ عَلَىَّ السَّلاَمَ فَقُلْتُ لَهُ يَا أَبَا قَتَادَةَ أَنْشُدُكَ بِاللَّهِ هَلْ تَعْلَمَنَّ أَنِّي أُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ قَالَ فَسَكَتَ فَعُدْتُ فَنَاشَدْتُهُ فَسَكَتَ فَعُدْتُ فَنَاشَدْتُهُ فَقَالَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ . فَفَاضَتْ عَيْنَاىَ وَتَوَلَّيْتُ حَتَّى تَسَوَّرْتُ الْجِدَارَ فَبَيْنَا أَنَا أَمْشِي فِي سُوقِ الْمَدِينَةِ إِذَا نَبَطِيٌّ مِنْ نَبَطِ أَهْلِ الشَّامِ مِمَّنْ قَدِمَ بِالطَّعَامِ يَبِيعُهُ بِالْمَدِينَةِ يَقُولُ مَنْ يَدُلُّ عَلَى كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ - قَالَ - فَطَفِقَ النَّاسُ يُشِيرُونَ لَهُ إِلَىَّ حَتَّى جَاءَنِي فَدَفَعَ إِلَىَّ كِتَابًا مِنْ مَلِكِ غَسَّانَ وَكُنْتُ كَاتِبًا فَقَرَأْتُهُ فَإِذَا فِيهِ أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّهُ قَدْ بَلَغَنَا أَنَّ صَاحِبَكَ قَدْ جَفَاكَ وَلَمْ يَجْعَلْكَ اللَّهُ بِدَارِ هَوَانٍ وَلاَ مَضْيَعَةٍ فَالْحَقْ بِنَا نُوَاسِكَ . قَالَ فَقُلْتُ حِينَ قَرَأْتُهَا وَهَذِهِ أَيْضًا مِنَ الْبَلاَءِ . فَتَيَامَمْتُ بِهَا التَّنُّورَ فَسَجَرْتُهَا بِهَا حَتَّى إِذَا مَضَتْ أَرْبَعُونَ مِنَ الْخَمْسِينَ وَاسْتَلْبَثَ الْوَحْىُ إِذَا رَسُولُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَأْتِينِي فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَأْمُرُكَ أَنْ تَعْتَزِلَ امْرَأَتَكَ . قَالَ فَقُلْتُ أُطَلِّقُهَا أَمْ مَاذَا أَفْعَلُ قَالَ لاَ بَلِ اعْتَزِلْهَا فَلاَ تَقْرَبَنَّهَا - قَالَ - فَأَرْسَلَ إِلَى صَاحِبَىَّ بِمِثْلِ ذَلِكَ - قَالَ - فَقُلْتُ لاِمْرَأَتِي الْحَقِي بِأَهْلِكِ فَكُونِي عِنْدَهُمْ حَتَّى يَقْضِيَ اللَّهُ فِي هَذَا الأَمْرِ - قَالَ - فَجَاءَتِ امْرَأَةُ هِلاَلِ بْنِ أُمَيَّةَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ لَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ هِلاَلَ بْنَ أُمَيَّةَ شَيْخٌ ضَائِعٌ لَيْسَ لَهُ خَادِمٌ فَهَلْ تَكْرَهُ أَنْ أَخْدُمَهُ قَالَ " لاَ وَلَكِنْ لاَ يَقْرَبَنَّكِ " . فَقَالَتْ إِنَّهُ وَاللَّهِ مَا بِهِ حَرَكَةٌ إِلَى شَىْءٍ وَوَاللَّهِ مَا زَالَ يَبْكِي مُنْذُ كَانَ مِنْ أَمْرِهِ مَا كَانَ إِلَى يَوْمِهِ هَذَا . قَالَ فَقَالَ لِي بَعْضُ أَهْلِي لَوِ اسْتَأْذَنْتَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي امْرَأَتِكَ فَقَدْ أَذِنَ لاِمْرَأَةِ هِلاَلِ بْنِ أُمَيَّةَ أَنْ تَخْدُمَهُ - قَالَ - فَقُلْتُ لاَ أَسْتَأْذِنُ فِيهَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَمَا يُدْرِينِي مَاذَا يَقُولُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا اسْتَأْذَنْتُهُ فِيهَا وَأَنَا رَجُلٌ شَابٌّ - قَالَ - فَلَبِثْتُ بِذَلِكَ عَشْرَ لَيَالٍ فَكَمُلَ لَنَا خَمْسُونَ لَيْلَةً مِنْ حِينَ نُهِيَ عَنْ كَلاَمِنَا - قَالَ - ثُمَّ صَلَّيْتُ صَلاَةَ الْفَجْرِ صَبَاحَ خَمْسِينَ لَيْلَةً عَلَى ظَهْرِ بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِنَا فَبَيْنَا أَنَا جَالِسٌ عَلَى الْحَالِ الَّتِي ذَكَرَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مِنَّا قَدْ ضَاقَتْ عَلَىَّ نَفْسِي وَضَاقَتْ عَلَىَّ الأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ سَمِعْتُ صَوْتَ صَارِخٍ أَوْفَى عَلَى سَلْعٍ يَقُولُ بِأَعْلَى صَوْتِهِ يَا كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ أَبْشِرْ - قَالَ - فَخَرَرْتُ سَاجِدًا وَعَرَفْتُ أَنْ قَدْ جَاءَ فَرَجٌ . - قَالَ - فَآذَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم النَّاسَ بِتَوْبَةِ اللَّهِ عَلَيْنَا حِينَ صَلَّى صَلاَةَ الْفَجْرِ فَذَهَبَ النَّاسُ يُبَشِّرُونَنَا فَذَهَبَ قِبَلَ صَاحِبَىَّ مُبَشِّرُونَ وَرَكَضَ رَجُلٌ إِلَىَّ فَرَسًا وَسَعَى سَاعٍ مِنْ أَسْلَمَ قِبَلِي وَأَوْفَى الْجَبَلَ فَكَانَ الصَّوْتُ أَسْرَعَ مِنَ الْفَرَسِ فَلَمَّا جَاءَنِي الَّذِي سَمِعْتُ صَوْتَهُ يُبَشِّرُنِي فَنَزَعْتُ لَهُ ثَوْبَىَّ فَكَسَوْتُهُمَا إِيَّاهُ بِبِشَارَتِهِ وَاللَّهِ مَا أَمْلِكُ غَيْرَهُمَا يَوْمَئِذٍ وَاسْتَعَرْتُ ثَوْبَيْنِ . فَلَبِسْتُهُمَا فَانْطَلَقْتُ أَتَأَمَّمُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَتَلَقَّانِي النَّاسُ فَوْجًا فَوْجًا يُهَنِّئُونِي بِالتَّوْبَةِ وَيَقُولُونَ لِتَهْنِئْكَ تَوْبَةُ اللَّهِ عَلَيْكَ . حَتَّى دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فَإِذَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم جَالِسٌ فِي الْمَسْجِدِ وَحَوْلَهُ النَّاسُ فَقَامَ طَلْحَةُ بْنُ عُبَيْدِ اللَّهِ يُهَرْوِلُ حَتَّى صَافَحَنِي وَهَنَّأَنِي وَاللَّهِ مَا قَامَ رَجُلٌ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ غَيْرُهُ . قَالَ فَكَانَ كَعْبٌ لاَ يَنْسَاهَا لِطَلْحَةَ . قَالَ كَعْبٌ فَلَمَّا سَلَّمْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ وَهُوَ يَبْرُقُ وَجْهُهُ مِنَ السُّرُورِ وَيَقُولُ " أَبْشِرْ بِخَيْرِ يَوْمٍ مَرَّ عَلَيْكَ مُنْذُ وَلَدَتْكَ أُمُّكَ " . قَالَ فَقُلْتُ أَمِنْ عِنْدِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَمْ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ فَقَالَ " لاَ بَلْ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ " . وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا سُرَّ اسْتَنَارَ وَجْهُهُ كَأَنَّ وَجْهَهُ قِطْعَةُ قَمَرٍ - قَالَ - وَكُنَّا نَعْرِفُ ذَلِكَ - قَالَ - فَلَمَّا جَلَسْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ مِنْ تَوْبَتِي أَنْ أَنْخَلِعَ مِنْ مَالِي صَدَقَةً إِلَى اللَّهِ وَإِلَى رَسُولِهِ صلى الله عليه وسلم . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَمْسِكْ بَعْضَ مَالِكَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ " . قَالَ فَقُلْتُ فَإِنِّي أُمْسِكُ سَهْمِيَ الَّذِي بِخَيْبَرَ - قَالَ - وَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ إِنَّمَا أَنْجَانِي بِالصِّدْقِ وَإِنَّ مِنْ تَوْبَتِي أَنْ لاَ أُحَدِّثَ إِلاَّ صِدْقًا مَا بَقِيتُ - قَالَ - فَوَاللَّهِ مَا عَلِمْتُ أَنَّ أَحَدًا مِنَ الْمُسْلِمِينَ أَبْلاَهُ اللَّهُ فِي صِدْقِ الْحَدِيثِ مُنْذُ ذَكَرْتُ ذَلِكَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى يَوْمِي هَذَا أَحْسَنَ مِمَّا أَبْلاَنِي اللَّهُ بِهِ وَاللَّهِ مَا تَعَمَّدْتُ كَذْبَةً مُنْذُ قُلْتُ ذَلِكَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى يَوْمِي هَذَا وَإِنِّي لأَرْجُو أَنْ يَحْفَظَنِيَ اللَّهُ فِيمَا بَقِيَ . قَالَ فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ ( لَقَدْ تَابَ اللَّهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالأَنْصَارِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ الْعُسْرَةِ مِنْ بَعْدِ مَا كَادَ يَزِيغُ قُلُوبُ فَرِيقٍ مِنْهُمْ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ إِنَّهُ بِهِمْ رَءُوفٌ رَحِيمٌ * وَعَلَى الثَّلاَثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا حَتَّى إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ الأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْهِمْ أَنْفُسُهُمْ) حَتَّى بَلَغَ ( يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ) قَالَ كَعْبٌ وَاللَّهِ مَا أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَىَّ مِنْ نِعْمَةٍ قَطُّ بَعْدَ إِذْ هَدَانِي اللَّهُ لِلإِسْلاَمِ أَعْظَمَ فِي نَفْسِي مِنْ صِدْقِي رَسُولَ اللَّهُ صلى الله عليه وسلم أَنْ لاَ أَكُونَ كَذَبْتُهُ فَأَهْلِكَ كَمَا هَلَكَ الَّذِينَ كَذَبُوا إِنَّ اللَّهَ قَالَ لِلَّذِينَ كَذَبُوا حِينَ أَنْزَلَ الْوَحْىَ شَرَّ مَا قَالَ لأَحَدٍ وَقَالَ اللَّهُ ( سَيَحْلِفُونَ بِاللَّهِ لَكُمْ إِذَا انْقَلَبْتُمْ إِلَيْهِمْ لِتُعْرِضُوا عَنْهُمْ فَأَعْرِضُوا عَنْهُمْ إِنَّهُمْ رِجْسٌ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ * يَحْلِفُونَ لَكُمْ لِتَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنْ تَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنَّ اللَّهَ لاَ يَرْضَى عَنِ الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ) قَالَ كَعْبٌ كُنَّا خُلِّفْنَا أَيُّهَا الثَّلاَثَةُ عَنْ أَمْرِ أُولَئِكَ الَّذِينَ قَبِلَ مِنْهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حِينَ حَلَفُوا لَهُ فَبَايَعَهُمْ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمْ وَأَرْجَأَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَمْرَنَا حَتَّى قَضَى اللَّهُ فِيهِ فَبِذَلِكَ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ ( وَعَلَى الثَّلاَثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا) وَلَيْسَ الَّذِي ذَكَرَ اللَّهُ مِمَّا خُلِّفْنَا تَخَلُّفَنَا عَنِ الْغَزْوِ وَإِنَّمَا هُوَ تَخْلِيفُهُ إِيَّانَا وَإِرْجَاؤُهُ أَمْرَنَا عَمَّنْ حَلَفَ لَهُ وَاعْتَذَرَ إِلَيْهِ فَقَبِلَ مِنْهُ .
وَحَدَّثَنِيهِ مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، حَدَّثَنَا حُجَيْنُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، بِإِسْنَادِ يُونُسَ عَنِ الزُّهْرِيِّ، سَوَاءً .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এটি তাওবা সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীছ। এতে হযরত কা'ব ইবনে মালিক রাযি.-এর নিজ জবানীতে তার তাওবা কবুলের বৃত্তান্ত বিবৃত হয়েছে। তাঁর এ ঘটনা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ও শিক্ষাপ্রদ।

তাবুকের যুদ্ধ
তাবুকের যুদ্ধাভিযান সংঘটিত হয়েছিল হিজরী ৯ সালের রজব মাসে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ পেলেন রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস মদিনা মুনাওয়ারায় এক জোরদার হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমনকি সে শাম ও আরবের সীমান্ত এলাকায় এক বিশাল বাহিনীও মোতায়েন করেছে। যদিও সাহাবায়ে কিরান এ যাবতকাল বহু যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, কিন্তু তার সবক'টিই হয়েছিল জাযিরাতুল আরবের ভেতরে। কোনও বহিঃশক্তির সাথে এ পর্যন্ত মোকাবেলা হয়নি। এবার তারা সেই পরীক্ষার সম্মুখীন। তাও দুনিয়ার এক বৃহৎ শক্তির সাথে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিরাক্লিয়াসের আক্রমণের অপেক্ষায় না থেকে নিজেরাই সামনে অগ্রসর হয়ে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিলেন। সুতরাং তিনি সকল মুসলিমকে এ যুদ্ধে শরীক হওয়ার হুকুম দিলেন।
মুসলিমদের পক্ষে এটা ছিল এক অগ্নিপরীক্ষা। কেননা দীর্ঘ ১০ বছর উপর্যুপরি যুদ্ধ শেষে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পাওয়া গিয়েছিল। এই যুদ্ধে যাওয়া মানে সেই সুযোগটিও হারানো। দ্বিতীয়ত সময়টা ছিল এমন, যখন বাগানের খেজুর পাকছিল, যেই খেজুরের উপর মদীনাবাসীদের সারা বছরের জীবিকা নির্ভরশীল ছিল। তৃতীয়ত ছিল প্রচণ্ড গরমের মৌসুম। যেন আকাশ থেকে আগুন ঝরছে। ভূমি থেকেও যেন আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। তদুপরি ছিল তাবুকের সুদীর্ঘ সফর। মদীনা হতে তাবুক প্রায় ৮০০ মাইল দূরে অবস্থিত। দুর্গম মরুভূমির পথ। বাহনের সংখ্যাও খুব কম। যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, সেই বৃহত্তম শক্তির রণকৌশল সম্পর্কেও মুসলিমদের জানাশোনা ছিল না। কিন্তু এতকিছু সংকট সত্ত্বেও শাহাদাতের প্রেরণায় উজ্জীবিত সাহাবীগণ এ অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। তারা দলে দলে এসে নাম লেখালেন। যথাসাধ্য প্রস্তুতি শেষে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ত্রিশ হাজার সাহাবায়ে কিরামের এক বাহিনী নিয়ে তাবুকের উদ্দেশে বের হয়ে পড়লেন। আল্লাহ তা'আলা হিরাক্লিয়াস ও তার বাহিনীর উপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ দুঃসাহসিক অভিযানের এমন প্রভাব ফেললেন যে, তারা কালবিলম্ব না করে ফেরত চলে গেল। ফলে যুদ্ধ আর হল না। তবে যুদ্ধ না হলেও এ অভিযানে ইসলাম ও মুসলিম বাহিনীর বিজয় ঠিকই অর্জিত হল। কেননা একে তো সেকালের বৃহত্তম শক্তির উপর ইসলামী শক্তির প্রভাব পড়েছিল এবং তারা ইসলাম ও তার অনুসারীদের আমলে নিতে বাধ্য হয়েছিল। দ্বিতীয়ত তাদের ফিরে যাওয়ায় আশপাশের ক্ষুদ্র রাজন্যবর্গ ক্রমবর্ধমান ইসলামী শক্তির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিল। তাই তারা কালবিলম্ব না করে তাবুকে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে সাক্ষাত করে এবং তাঁর সংগে সন্ধি স্থাপন করে। তাছাড়া এ অভিযানের মাধ্যমেই কে খাঁটি মুসলিম এবং কে মুনাফিক তা ভালোভাবে পরিষ্কার হয়ে যায়, যা কুরআন মাজীদের সূরা তাওবায় বিস্তারিতভাবে বিবৃত হয়েছে।

মুনাফিকদের অধিকাংশই এ যুদ্ধে যোগদান থেকে বিরত থাকে। তাদের কিছুসংখ্যক দুরভিসন্ধীমূলকভাবে এতে শরীক হয়েছিল। তিনজন খাঁটি মুসলিমেরও এতে যোগদান করা হয়নি। তাদের দ্বারা গড়িমসি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ গড়িমসির দরুন তারা যারপরনাই অনুতপ্ত হয়েছিলেন এবং এজন্য তাদেরকে এমন কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছিল, তাওবার ইতিহাসে যা এক শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। সেই পরীক্ষায় উত্তর এ মহান সাহাবীদেরকে মহত্তর মানবরূপে চিরস্মরণীয় করে তুলেছে। সেই তিনজনের একজন হলেন হযরত কা'ব ইবন মালিক রাযি.। এই সুদীর্ঘ হাদীছখানিতে মূলত তাঁর জবানীতে তাদের তাওবা কবুলের বৃত্তান্তই বিবৃত হয়েছে।

‘আকাবার বাই'আতের ঘটনা
‘আকাবা জামরাতুল-উখরার নিকটবর্তী একটি উপত্যকার নাম। এখানে মদীনার আনসারগণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাংগে সাক্ষাত করে ইসলামে দীক্ষিত হয়েছিলেন। তারা মদীনার ইহুদীদের কাছ থেকে শেষ নবীর আগমন সম্পর্কে জানতে পেরেছিল। সে নবী কেমন হবেন, তাঁর হুলিয়া ও বৈশিষ্ট্যাবলী কী, তাদের কাছ থেকে তারা তা অবহিত হয়েছিল। আগে থেকেই তাদের হজ্জ উপলক্ষে পবিত্র মক্কা মুকাররামায় আসা-যাওয়া ছিল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত লাভের পরও তাদের সে যাতায়াত অব্যাহত ছিল।

হজ্জের মৌসুমে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনা-মুযদালিফায় ঘুরে ঘুরে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। এই দাওয়াতী ব্যস্ততার এক পর্যায়ে একদল আনসারের সংগে তাঁর সাক্ষাত হয়। আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছা ছিল তাঁর দীনকে বিজয়ী করবেন এবং তাঁর নবীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবেন। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের বীজ এই সাক্ষাতকারেই বপন হয়ে যায়। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে কুরআন মাজীদ পড়ে শোনালেন এবং আল্লাহর দীন বোঝালেন। কুরআন মাজীদের আয়াত এবং নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য তাদের অন্তরে রেখাপাত করে। ফলে সেই মুহূর্তেই তারা ইসলাম গ্রহণ করে এবং নিজ দেশে ইসলাম প্রচারের উদ্দীপনা নিয়ে ফিরে যায়। তারা মদীনায় ফিরে এসে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিষয়ে মানুষকে অবহিত করলেন এবং তাদের ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানালেন। সে আহ্বানে মদীনার লোকজন স্বতঃস্ফূর্ত সাড়াদান করে। ফলে মদীনার আনসারদের ভেতর ইসলামের ব্যাপক বিস্তার ঘটে।

পরের বছর হজ্জ মৌসুমে ১২জন আনসার মক্কায় আগমন করেন। তারা ‘আকাবায় নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে সাক্ষাত করেন এবং তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। এটাই ‘আকাবার প্রথম বাই'আত। এ বাই'আতের বিষয়বস্তু ছিল এই যে, তারা আল্লাহর সংগে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না,সন্তান হত্যা করবে না, কারও নামে অপবাদ রটাবে না এবং কোনও সৎকাজে বাধা দেবে না। যদি তারা এগুলো পূরণ করে, তবে জান্নাত লাভ করবে। আর এর অন্যথা করলে বিষয়টি আল্লাহর ইচ্ছাধীন থাকবে। তিনি চাইলে শাস্তি দেবেন অথবা ক্ষমা করবেন। বাইআত শেষে তারা মদীনায় ফিরে গেলেন। তাদেরকে কুরআনের তালীম, ইসলাম শিক্ষা ও দীনী বিধি-বিধান সম্পর্কে অবহিত করার জন্য শিক্ষকরূপে হযরত মুসআব ইবন উমায়র রাযি.-কে পাঠিয়ে দিলেন।
অতঃপর পবিত্র মদীনায় ইসলাম প্রচার বেগবান হয়ে উঠল। মদীনার প্রধান দুই গোত্র আওস ও খাযরাজের নেতৃবর্গসহ প্রায় অধিকাংশ লোকই ইসলাম গ্রহণ করে ফেলল। পরের বছর বিপুল উদ্দীপনায় তাদের একটি বড়সড় দল মক্কা মুকাররামায় আগমন করল। এ দলের লোকসংখ্যা ছিল পঁচাত্তরজন। তিয়াত্তরজন পুরুষ দু’জন মহিলা। এবারে তাদের আগমনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মদীনায় গমনের প্রস্তাব দেওয়া। তাদের জানা ছিল পবিত্র মক্কায় তিনি ইসলাম প্রচারে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন এবং মক্কাবাসীগণ নতুন ধর্ম প্রচারের কারণে তাঁকে ও তাঁর মুষ্টিমেয় অনুসারীকে অবর্ণনীয় জুলুম-নির্যাতন করছে। তাদের লক্ষ্য সেই জুলুম নির্যাতন থেকে তাদের রক্ষা করা এবং মদীনা মুনাওয়ারাকে ইসলাম প্রচারের কেন্দ্রভূমিতে পরিণত করা।

তারা রাতের বেলা ‘আকাবায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে সাক্ষাত করলেন। সেখানে জরুরি সব কথার এক পর্যায়ে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মদীনা মুনাওয়ারায় হিজরতের দাওয়াত দিলেন। তাদের এই উদ্দেশ্য সম্পর্কে চাচা আব্বাস রাযি. জানতে পেরেছিলেন। যদিও তিনি তখনও পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ করেননি, কিন্তু মহান ভাতিজার মর্যাদা ও নিরাপত্তার ব্যাপারে নিজ ভাই আবূ তালিবের মতই সচেতন ছিলেন। কাজেই তিনি 'আকাবার আলোচনায় নিজের উপস্থিত থাকা জরুরি মনে করলেন। সময়মত তিনি এসেও গেলেন। তিনি আনসারদের লক্ষ্য করে একটি সারগর্ভ বক্তৃতা দিলেন। তাতে বললেন“হে খাযরাজ (ও আওস) গোত্রের লোকেরা! আমাদের কাছে মুহাম্মাদের কী মর্যাদা তা আপনাদের অজানা নয়। আমরা তাঁকে আমাদের সম্প্রদায়ের হাত থেকে এ যাবত রক্ষা করে এসেছি। তাঁর প্রতিপক্ষও আমাদেরই মত ধারণা রাখে। কাজেই তাঁর দেশ ও সম্প্রদায়ের মধ্যে তাঁর অবস্থান অত্যন্ত সুরক্ষিত। কিন্তু তবুও তিনি আপনাদের কাছে চলে যেতে এবং আপনাদের মাঝে থাকতে ইচ্ছুক। চিন্তা করে দেখুন, আপনারা যদি তাঁকে প্রদত্ত অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারেন এবং শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করার সামর্থ্য আপনাদের থাকে, তবে এ দায়িত্ব গ্রহণ করুন। পক্ষান্তরে যদি মনে করেন আপনারা তাঁকে রক্ষা করতে পারবেন না এবং তাঁকে শত্রুর হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন, তবে আপনারা এর থেকে বিরত থাকুন। তিনি নিজ দেশে ও নিজ গোত্রে নিরাপদে আছেন।”

আনসারগণ বললেন, আমরা আপনার বক্তব্য শুনলাম। এবার ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কথা বলুন এবং নিজের পক্ষে ও নিজ রব্বের পক্ষে আমাদের থেকে যে অঙ্গীকার নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন তা নিয়ে নিন।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথা বললেন। তিনি প্রথমে কুরআন তিলাওয়াত করলেন, তারপর তাদের সামনে ইসলামের ব্যাখ্যা দিলেন এবং ইসলামের প্রতি তাদের উৎসাহ দান করলেন। তারপর বললেন, আমি এ মর্মে তোমাদের থেকে বাই'আত (প্রতিশ্রুতি) গ্রহণ করছি যে, তোমরা তোমাদের নারী ও শিশুদের যেভাবে রক্ষা কর তেমনি আমাকেও রক্ষা করবে।
তারা আল্লাহর নামে শপথ করে এই প্রতিশ্রুতি তাঁকে দান করলেন। তারপর বললেন, মদীনার ইহুদীদের সাথে আমাদের বিশেষ সম্পর্ক আছে। এ বাই'আতের মাধ্যমে আমরা তা ছিন্ন করতে চাচ্ছি। পরে এমন তো হবে না যে ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ যখন আপনাকে বিজয় দান করবেন, তখন আপনি আমাদের ছেড়ে নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে আসবেন? নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কথা শুনে মৃদু হাসলেন। তারপর এই বলে তাদের আশ্বস্ত করলেন যে, তোমাদের রক্ত আমার রক্ত। তোমাদের জীবন-মরণের সাথে আমার জীবন-মরণ গাঁথা থাকবে। আমি তোমাদের, তোমরা আমার। তোমরা যাদের সাথে লড়বে, আমি তাদের সাথে লড়ব। তোমরা যাদের সাথে শান্তি স্থাপন করবে, আমিও তাদের সাথে শান্তি স্থাপন করব। এভাবে 'আকাবার দ্বিতীয় বাই'আত সম্পন্ন হল।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আনসারদের পক্ষে এ বাই'আত ছিল এক চ্যালেঞ্জিং পদক্ষেপ। এটা ছিল সমগ্র আরব: বরং সমস্ত বিশ্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার নামান্তর। সমগ্র বিশ্ব তখন শিরক-কবলিত। তাওহীদের দাওয়াত ছিল শিরকী আকীদা-বিশ্বাসের উপর প্রত্যক্ষ আঘাত। অন্ধকারাচ্ছন্ন মুশরিকদের সে আঘাত সহ্য করার কথা নয়। বরং এ দাওয়াত আসমানী কিতাবে বিশ্বাসী ইহুদী-খৃষ্টানদের জন্যও প্রীতিকর ছিল না, যেহেতু তারাও প্রকৃত তাওহীদের বিশ্বাস থেকে সরে এসেছিল। ফলে এ দাওয়াতের পক্ষাবলম্বন দ্বারা ইহুদী-খৃষ্টানসহ সারা বিশ্বের সমস্ত পৌত্তলিক ও নাস্তিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত শক্তির মুখোমুখি হওয়া ছিল অনিবার্য। খোদ মদীনার ভেতরই শক্তিশালী ইহুদী গোত্রসমূহের বসবাস। এহেন পরিস্থিতিতে মদীনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশ্রয় দান করলে যে ভেতরের ও বাইরের সবরকম শক্তির বিরুদ্ধে জানবাজি রেখে লড়তে হবে, মুষ্টিমেয় আনসারদের সে কথা ভালোভাবেই জানা ছিল। কিন্তু আল্লাহ তা'আলার তো তাঁর দীনকে বিজয় করার ছিল। তিনি আনসারদের অন্তরে হিম্মত দিলেন, ঈমানী উদ্দীপনা দিলেন এবং দিলেন কঠিন থেকে কঠিনতর পরিস্থিতিতে অটল-অবিচল থাকার দৃঢ় সংকল্প। ফলে সম্ভাব্য সকল ঝুঁকি মাথায় নিয়েই তারা ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তার সাথে বাই'আত সম্পন্ন করলেন।

‘আকাবার এই বাই'আত ইসলামী ইতিহাসের এক মহিমময় ঘটনা। মদীনা মুনাওয়ারার ইসলামের কেন্দ্রীয় মর্যাদালাভ, বদর যুদ্ধে জয়লাভ, মক্কাবিজয়, ইসলামী খেলাফতের বিপুল বিস্তার এবং বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারের ভিত্তি এই বাই'আতের মাধ্যমেই স্থাপিত হয়েছিল। যারা এই বাই'আতে অংশগ্রহণ করেছিলেন, সেই সুমহান ব্যক্তিবর্গের অন্তরে এর মূল্য ও মর্যাদাবোধ সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে এটা স্বাভাবিক কথা। মূল্যবোধের সেই অবস্থান থেকেই হযরত কা'ব ইবন মালিক রাযি. বলেছিলেন, ‘আকাবার বাই'আতের বিপরীতে বদর যুদ্ধের উপস্থিতিকে আমি পসন্দ করব না, (অর্থাৎ এমন যদি হত যে, আমি বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি কিন্তু ‘আকাবার বাই'আতে শরীক থাকিনি, এটা আমার পক্ষে প্রীতিকর হত না) যদিও বদর যুদ্ধ মানুষের কাছে ‘আকাবা অপেক্ষা বেশি আলোচিত।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কোনও নেককাজে গড়িমসি করতে নেই। গড়িমসি করলে অনেক সময়ই সেই নেককাজ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে, যেমন হযরত কা'ব রাযি. ও তাঁর দুই সঙ্গী তাবুকের যুদ্ধাভিযানে যাওয়ার সুযোগ হারিয়েছিলেন।

খ. ইসলাম গ্রহণের বাই'আত ছাড়াও দীনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাই'আত জায়েয। ‘আকাবার বাই'আত সে রকমেরই ছিল। এর দ্বারা খাঁটি পীরের হাতে বাই'আতের বৈধতা প্রমাণিত হয়।

গ. সর্বাবস্থায় সত্য বলা উচিত। সত্য বললে প্রথমদিকে কষ্ট-ক্লেশের সম্মুখীন হলেও পরিণাম সর্বদা শুভই হয়ে থাকে। হযরত কা'ব রাযি.-এর সত্যবলা সে কথাই প্রমাণ করে। পক্ষান্তরে মিথ্যার পরিণাম সর্বদা অশুভই হয়, তাতে সাময়িক যত সুবিধাই দেখা যাক না কেন।

ঘ. সর্বাবস্থায় আমীর, উসতায ও শায়খের হুকুম শিরোধার্য করা উচিত। তাদের কঠিন থেকে কঠিনতর হুকুম পালন করতে পারলে তা অভাবনীয় সুফল বয়ে আনে।

ঙ. মিথ্যা অজুহাত প্রদর্শন মুনাফিকদের কাজ। তা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।

চ. নিজেদের পরিকল্পনা ও গতিবিধি সম্পর্কে শত্রুপক্ষ যাতে অবহিত হতে না পারে, সেই লক্ষ্যে সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থাগ্রহণ অধিনায়কের যোগ্যতা ও বিচক্ষণতার পরিচায়ক এটা বিজয় ও সাফল্য লাভের পক্ষে সহায়ক।

ছ. কারও দ্বারা কোনও অপরাধ হয়ে গেলে তার সংশোধনকল্পে তার সংগে কথা বন্ধের শাস্তি প্রয়োগ করা যেতে পারে।

জ. সফর থেকে ফিরে আসার পর প্রথমেই ঘরে না ঢুকে মসজিদে যাওয়া এবং দু' রাক'আত নামায পড়া মুস্তাহাব।

ঝ. কারও ভালো কিছু ঘটলে তাকে সে সম্পর্কে সুসংবাদ শোনানো একটি ইসলামী আদব। এর দ্বারা সুসংবাদদাতার মনের ঔদার্য প্রকাশ পায় এবং পরস্পরে ভালোবাসার সৃষ্টি হয়।

ঞ. সুসংবাদদাতাকে পুরস্কৃত করা মুস্তাহাব।

ট, কারও সুখকর কিছু ঘটলে সেজন্যে তাকে অভিনন্দন জানানো চাই।

ঠ. আগুম্ভককে স্বাগত জানানোর জন্য উঠে এগিয়ে যাওয়া ও তার সাথে মুসাফাহা করা একটি প্রশংসনীয় কাজ।

ড. অমুসলিম শত্রুর তোষামোদে ভুলতে নেই। অনেক সময় তা ঈমান হরণেরও কারণ হয়ে থাকে। সেজন্যই হযরত কা'ব রাযি. গাস্সানের রাজার চিঠিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখেছেন এবং সেটি আগুনে পুড়ে ফেলেছেন।

ঢ. দীনের স্বার্থ আত্মীয়তারও উপরে। কাজেই দীনের কারণে যদি আত্মীয়কে পরিত্যাগ করতে হয়, তবে তা করাই বাঞ্ছনীয়। এজন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাবার্তা বলতে নিষেধ করে দিলে হযরত কা'ব রাযি.-এর সাথে তাঁর চাচাত ভাই কথা বলতে রাজি হননি।

ণ. আমীরের কর্তব্য তার অধীনস্থদের খোঁজখবর রাখা ও তাদের সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

ত. আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে কোনও নি'আমত লাভ হলে তার শোকরস্বরূপ দান-সদাকা করা মুস্তাহাব।

থ. ইসলামের সাধারণ শিক্ষা এটাই যে, যার অর্থ-সম্পদ আছে সে সমস্ত সম্পদ দান-সদাকা না করে একটা অংশ ওয়ারিশদের জন্য রেখে দেবে, যাতে তাদের অন্যদের কাছে হাত পেতে বেড়াতে না হয়।

দ. বিশেষ কোনও আমলের বদৌলতে কোনও নি'আমত লাভ হলে তার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ সেই আমলে আরও বেশি যত্নবান হওয়া উচিত, যেমন হযরত কা'ব রাযি. সত্য বলার বদৌলতে আল্লাহর পক্ষ হতে ক্ষমাপ্রাপ্তির নি'আমত লাভ করেছিলেন। ফলে তিনি জীবনভর সত্যবাদিতায় অবিচল থাকবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।

ধ. কারও সামনে অন্য কারও গীবত ও সমালোচনা করা হলে তার কর্তব্য প্রতিবাদ করা এবং তার প্রশংসনীয় দিক তুলে ধরা, যেমন হযরত কা'ব রাযি.-এর সমালোচনা করা হলে হযরত মু'আয ইবন জাবাল রাযি. প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, আমরা তো কা'বকে ভালো বলেই জানি।

ন. কারও পক্ষ থেকে কোনও উপকার ও সদাচরণ পেলে তা ভুলে যাওয়া উচিত নয়। হযরত কা'ব রাযি. হযরত তালহা রাযি.-এর সদাচরণ জীবনভর মনে রেখেছিলেন।

এ হাদীছে এছাড়া আরও বহু শিক্ষা আছে। সংক্ষেপ করার লক্ষ্যে এখানেই ক্ষান্ত করা হল।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)