আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৪৮- সদ্ব্যবহার,আত্নীয়তা রক্ষা (মুআশারা) ও বিবিধ শিষ্টাচার

হাদীস নং: ৬৪৫৫
৪৬. কন্যা সন্তানের প্রতি সাদাচারনের ফযীলত
৬৪৫৫। কুতায়বা ইবনে সাঈদ (রাহঃ) ......... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একবার) এক মিসকীন মহিলা তার দুটি কন্যা সন্তানকে বহন করা অবস্থায় আমার কাছে এল। আমি তাদের তিনটি খেজুর খেতে দিলাম। সে কন্যাদ্বয়ের প্রত্যেককে একটি করে খেজুর দিল এবং একটি নিজে খাওয়ার জন্য তার মুখে তুলল। তখন কন্যা দু’টি এই খেজুরটিও খেতে চাইল। সে তখন নিজে খাওয়ার জন্য যে খেজুরটি মুখে তুলেছিলো সেটি তাদের দুইজনের মধ্যে ভাগ করে দিল। তার এ ব্যাপার আমাকে অবাক করে দিল। পরে আমি সে যা করেছে তা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে উল্লেখ করলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা এই কারণে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছেন অথবা (বললেন) তিনি তাকে এই কারণে জাহান্নাম থেকে নাজাত দিয়েছেন।
باب فَضْلِ الإِحْسَانِ إِلَى الْبَنَاتِ
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا بَكْرٌ، - يَعْنِي ابْنَ مُضَرَ - عَنِ ابْنِ الْهَادِ، أَنَّ زِيَادَ، بْنَ أَبِي زِيَادٍ مَوْلَى ابْنِ عَيَّاشٍ حَدَّثَهُ عَنْ عِرَاكِ بْنِ مَالِكٍ، سَمِعْتُهُ يُحَدِّثُ، عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيزِ عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا قَالَتْ جَاءَتْنِي مِسْكِينَةٌ تَحْمِلُ ابْنَتَيْنِ لَهَا فَأَطْعَمْتُهَا ثَلاَثَ تَمَرَاتٍ فَأَعْطَتْ كُلَّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا تَمْرَةً وَرَفَعَتْ إِلَى فِيهَا تَمْرَةً لِتَأْكُلَهَا فَاسْتَطْعَمَتْهَا ابْنَتَاهَا فَشَقَّتِ التَّمْرَةَ الَّتِي كَانَتْ تُرِيدُ أَنْ تَأْكُلَهَا بَيْنَهُمَا فَأَعْجَبَنِي شَأْنُهَا فَذَكَرْتُ الَّذِي صَنَعَتْ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ " إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَوْجَبَ لَهَا بِهَا الْجَنَّةَ أَوْ أَعْتَقَهَا بِهَا مِنَ النَّارِ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ ঘটনায় বলা হয়েছে, কোনও এক মিসকীন মহিলা তার দু'টি মেয়ে নিয়ে আসলে তিনি তাকে তিনটি খেজুর দিলেন। সে তা থেকে দু'টি তার দুই মেয়েকে দিল এবং একটি নিজে খাওয়ার জন্য মুখের কাছে তুলল। সে যখন খেজুরটি খেতে যাচ্ছিল, তখন মেয়েদু'টি তার কাছে আবার খাবার চাইল। তখন সে নিজে যেটি খেতে চেয়েছিল সেটি দু'ভাগ করে দুই মেয়েকে দিয়ে দিল, নিজে কিছুই খেল না। আমরা যারা দিবারাত্র তিন-চার-পাঁচবার খাই তাদের কাছে এ ঘটনা বিশেষ কিছু মনে হবে না। কিন্তু আম্মাজান আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. আশ্চর্য হয়ে গেছেন। ক্ষুধার কষ্ট তাঁর জানা ছিল। তাঁর চুলায় দিনের পর দিন আগুন জ্বলত না। এমন বহু দিন গেছে, যখন খাওয়ার জন্য একটি খেজুরও মিলত না। ওই মা'ও সেরকমই ছিল। না হয় তার মেয়েদের নিয়ে খাবার চাইতে আসবে কেন? কে জানে কত বেলা তার না খেয়ে কেটেছে! এ অবস্থায় কথা তো ছিল দু'টি খেজুর নিজে খাবেন আর একটি দুই ভাগ করে দুই মেয়েকে দেবেন। তা না করে তিনটি খেজুর সমান তিন ভাগ করে তিনজনে নিয়েছেন। তারপরও মেয়েদু'টি আবারও চাইলে নিজের খেজুরটিও তাদের দিয়ে দিলেন। মুখের কাছে নিয়েও সেটি খেলেন না। এ হচ্ছে মাতৃমমতা। আম্মাজান মুগ্ধ ও অভিভূত দৃষ্টিতে তা দেখছিলেন। সে মুগ্ধতা লুকিয়ে রাখতে পারেননি। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে আসলে তাঁকে তা জানালেন।
তিনি তা শুনে সুসংবাদ দিলেন এ ত্যাগ ও মায়ার পুরস্কারস্বরূপ আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে জান্নাতে দাখিল করবেন।
অর্থাৎ সন্তানের প্রতি ওই মা যে মমত্ব দেখিয়েছে তা বৃথা যাবে না। সে নিজে অভুক্ত থেকেছে, নিজ ক্ষুধার কথা ভুলে সন্তানের ক্ষুধাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এটা দয়ামায়ার পুরস্কার। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

الرَّاحِمُوْنَ يَرْحَمُهُمُ الرَّحْمنُ، اِرْحَمُوْا أَهْلَ الْأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ

‘যারা দয়ামায়াওয়ালা, দয়াময় আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করেন। যারা পৃথিবীতে আছে তাদের প্রতি দয়া কর, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।৩০৪

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

এ হাদীছ দ্বারা উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-এর বদান্যতার পরিচয় পাওয়া গেল, মাতৃমমতা সম্পর্কে ধারণা লাভ হল এবং জানা গেল- যে মা তার সন্তানদের জন্য এরূপ ত্যাগ স্বীকার করে, তার জন্য জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মায়েদের মর্যাদা বোঝার তাওফীক দান করুন।

৩০৪. সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৯৪১; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯২৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৪৯৪; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৭৯০৫; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১০৫৩৭
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন