আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
৪৮- সদ্ব্যবহার,আত্নীয়তা রক্ষা (মুআশারা) ও বিবিধ শিষ্টাচার
হাদীস নং: ৬৩৯৮
আন্তর্জাতিক নং: ২৬০৬
- সদ্ব্যবহার,আত্নীয়তা রক্ষা (মুআশারা) ও বিবিধ শিষ্টাচার
২৮. কুটনামী হারাম হওয়া
৬৩৯৮। মুহাম্মাদ ইবনে মুসান্না ও ইবনে বাশশার (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (ﷺ) বলেছেনঃ সাবধান! আমি তোমাদের জানাচ্ছি আযহ (عَضْه) কী? এ হচ্ছে কুৎসা রটনা করা, যাতে মানুষের মাঝে বৈরিতার সৃষ্টি হয়। মুহাম্মাদ (ﷺ) আরও বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি সত্য কথা বলতে বলতে সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়; আবার কেউ মিথ্যা বলতে বলতে মিথ্যাবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়।
كتاب البر والصلة والآداب
باب تَحْرِيمِ النَّمِيمَةِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، وَابْنُ، بَشَّارٍ قَالاَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، سَمِعْتُ أَبَا إِسْحَاقَ، يُحَدِّثُ عَنْ أَبِي الأَحْوَصِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ إِنَّ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ مَا الْعَضْهُ هِيَ النَّمِيمَةُ الْقَالَةُ بَيْنَ النَّاسِ " . وَإِنَّ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ الرَّجُلَ يَصْدُقُ حَتَّى يُكْتَبَ صِدِّيقًا وَيَكْذِبُ حَتَّى يُكْتَبَ كَذَّابًا " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে সত্যবাদিতার সুফল ও মিথ্যাবাদিতার কুফল বর্ণনা করা হয়েছে। সত্যবাদিতার দুনিয়াবী সুফল হল বেশি বেশি নেককাজের সুযোগ লাভ হওয়া আর পরকালীন সুফল হল জান্নাত লাভ করা।
কেউ যখন কোনও একটি সত্যকথা বলে বা একটি সৎকাজ করে, তখন তার অন্তরে আরও বেশি সত্যতা ও সাধুতার আগ্রহ জন্মায়। সত্যকথন দ্বারা অন্তরে শক্তি সঞ্চার হয়। নিজের প্রতি আস্থা জন্মায়। ফলে আরও বেশি সত্য বলার ও সৎকাজ করার সাহস হয়। এরূপ লোক একের পর এক সত্য বলতে থাকে। ফলে তাদের প্রতি মানুষেরও আস্থা জন্মায়। মানুষ তাদের ভালোবাসে ও তাদের সুনাম-সুখ্যাতি করে। আল্লাহ তা'আলাও সত্যবাদীদের ভালোবাসেন। ফলে তিনি সত্যের উপর অটল থাকার ও সৎপথে এগিয়ে যাওয়ার তাওফীক তাদের দান করেন। এজন্যই তাদের দ্বারা বেশি বেশি নেককাজ করা সম্ভব হয়। তারা নেককাজে মানুষের সহযোগিতা লাভ করে। বরং নেককাজে মানুষ তাদের আদর্শরূপে গণ্য করে। তাদের দেখাদেখি আমসাধারণ সত্য বলতে উৎসাহ পায় ও নেককাজে অনুপ্রাণিত হয়। এসব সত্য বলার দুনিয়াবী ফায়দা সত্য বলার দ্বারা অন্তরে সাহস সঞ্চার হয়, বেশি বেশি নেককাজের তাওফীক হয়, মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা লাভ হয়, সত্যবাদী হিসেবে সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জিত হয়। এবং প্রয়োজনমুহূর্তে মানুষের সহযোগিতা পাওয়া যায়।
সত্য যেহেতু নেককাজের দিকে পরিচালিত করে, তাই এর দ্বারা পরকালীন ফায়দা লাভের ব্যাপারটা তো স্পষ্ট। যতবেশি নেককাজ করা যায়, ততই জান্নাতের পথ সুগম হয় ও আল্লাহ তা'আলার ভালোবাসা অর্জিত হয়। একপর্যায়ে আল্লাহ তা'আলা সত্যবাদীদেরকে 'সিদ্দীক' নামে অভিহিত করেন। ফলে তারা হাশরে নবী-রাসূল, শুহাদা ও সালিহীনের সংগে স্থান পাবে এবং জান্নাতের উচ্চমর্যাদা লাভ করবে। সত্যনিষ্ঠার সত্যিকারের সুফল সেদিন তারা নিজ চোখে দেখতে পাবে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ-
هَذَا يَوْمُ يَنْفَعُ الصَّادِقِينَ صِدْقُهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
অর্থ : এটা সেই দিন, যে দিন সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যতা উপকৃত করবে। তাদের জন্য রয়েছে এমন সব উদ্যান, যার তলদেশে নহর প্রবহমান। তাতে তারা সর্বদা থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটাই মহা সাফল্য।
মিথ্যার ব্যাপারটা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। কেউ যখন কোনও মিথ্যাকথা বলে বা অসৎকাজ করে, তখন তার গর্হিত কার্যকলাপ সেই একটিতেই সীমাবদ্ধ থাকে না। একটি মিথ্যা ঢাকার জন্য আরও দশটি মিথ্যা বলতে হয়। একটি অসৎকাজ লুকানোর জন্য নানা অসৎপন্থা অবলম্বন করতে হয়। এভাবে তার অসত্যের সিলসিলা সামনে চলতেই থাকে। একপর্যায়ে সে মিথ্যাচার ও পাপ-পঙ্কিলতায় এভাবে জড়িয়ে যায় যে,তা থেকে তার মুক্তি পাওয়া সহজ হয় না। তখন আল্লাহর কাছে তার নামই হয়ে যায় 'কাযযাব’ ও মহামিথ্যুক।
এরূপ ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুনিয়ায় মানুষের কাছে মিথ্যুক নামে পরিচিতি পায়। তার প্রতি মানুষের আস্থা থাকে না। সে মানুষের ভালোবাসা হারায়। ফলে কাজেকর্মে তাদের সহযোগিতা পায় না। মিথ্যা বলার দরুন সে মানসিক শক্তিও হারিয়ে ফেলে। একপর্যায়ে তার সত্য বলার সাহস থাকে না। পায় না সৎপথে চলার উৎসাহ। মিথ্যাতেই যেন সে স্বস্তি বোধ করে। অন্যায়-অনাচারের পথে চলতে উৎসাহ পায়। অন্যায়পথে চলতে চলতে সে মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলে। তার সদগুণাবলী ধ্বংস হয়ে যায়। তখন ঘরে-বাইরে কারও কাছেই তার বিশেষ ইজ্জত থাকে না। এসব তার পার্থিব ক্ষতি। আখিরাতের ক্ষতি আরও বড়। কবরে, হাশরে, পুলসিরাতে সব জায়গায় সে আটকে যাবে। তার শেষ ঠিকানা জাহান্নাম। সেখানে তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। কুরআন মাজীদে ইরশাদ- وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ
আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি তাদের মিথ্যাচারের কারণে।
আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তা থেকে হেফাজত করুন।
এ হাদীছে বলা হয়েছে- এমনকি একসময় সে আল্লাহর কাছে 'সিদ্দীক' নামে লিখিত (অভিহিত) হয়। আল্লাহ তা'আলার পুরস্কারপ্রাপ্ত বান্দাদের মধ্যে নবীগণের পরই সিদ্দীকদের মর্যাদা। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيقًا
অর্থ : যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে, তারা সেই সকল লোকের সঙ্গে থাকবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, অর্থাৎ নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ ও সালিহগণের সঙ্গে। কতই না উত্তম সঙ্গী তারা!
তো যে ব্যক্তি সদা সত্য বলে, কঠিন থেকে কঠিনতম পরিস্থিতিতেও সত্যের উপর অটল থাকে, কোনও অবস্থায়ই মিথ্যা বলে না, এমনকি হাসি-ঠাট্টা করেও না, তারাই এ মর্যাদা লাভ করে থাকে। তারাই আল্লাহর কাছে সিদ্দীক নামে অভিহিত। এ ব্যাপারে নারী-পুরুষের কোনও ভেদাভেদ নেই। সত্যনিষ্ঠ পুরুষ ‘সিদ্দীক' আর সত্যনিষ্ঠ নারী 'সিদ্দীকা'। কুরআন মাজীদে হযরত মারয়াম আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলা হয়েছে وَأُمُّهُ صِدِّيقَةٌ (এবং তার মা [অর্থাৎ ঈসা আলাইহিস সালামের মা হযরত মারয়াম] হলেন সিদ্দীকা)।
এ উম্মতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সিদ্দীক হলেন হযরত আবূ বকর রাযি.। তাঁর কন্যা উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. এ উম্মতের নারীকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সিদ্দীকা।
প্রকাশ থাকে যে, সিদ্দীক হওয়ার জন্য পরিপক্ক ঈমান শর্ত। ঈমান-সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়কে সত্য বলে জানা ও তার প্রতি গভীর বিশ্বাস স্থাপন দ্বারাই কোনও ব্যক্তির পক্ষে সিদ্দীকের মর্যাদায় উপনীত হওয়া সম্ভব। এ মর্যাদা লাভের জন্য কেবল কথাবার্তায় সত্যনিষ্ঠ হওয়া যথেষ্ট নয়। কুরআন ও হাদীছে যা-কিছু বর্ণিত হয়েছে, তার কোনওটিতে বিন্দুমাত্র সন্দেহও এ মর্যাদা লাভের পক্ষে বাধা, যুক্তি-বুদ্ধি দ্বারা তা আয়ত্ত করা সম্ভব না হলেও। কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত কোনও একটি বিষয় যদি বুঝে না আসে, তবে তা না বোঝাকে নিজ অক্ষমতা গণ্য করতে হবে। সে বিষয়ের সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণের কোনও অবকাশ নেই। সুতরাং সিদ্দীক হতে চাইলে অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহ'র যাবতীয় বিষয়ে অকুণ্ঠ ও নিঃশর্ত বিশ্বাসস্থাপন জরুরি।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা সততা অবলম্বনের প্রতি উৎসাহ লাভ হয়। আরও জানা যায় বেশি বেশি নেককাজ করার তাওফীক ও জান্নাতে পৌঁছার সৌভাগ্য লাভের জন্য সদা সর্বদা সত্যনিষ্ঠ থাকা উচিত।
খ. আরও জানা যায় মিথ্যা কত গুরুতর পাপ। নানামুখী পাপাচার থেকে বাঁচা ও জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষার জন্য মিথ্যা পরিহার করা যে অতি জরুরি, এ হাদীছ দ্বারা সে শিক্ষা লাভ হয়।
কেউ যখন কোনও একটি সত্যকথা বলে বা একটি সৎকাজ করে, তখন তার অন্তরে আরও বেশি সত্যতা ও সাধুতার আগ্রহ জন্মায়। সত্যকথন দ্বারা অন্তরে শক্তি সঞ্চার হয়। নিজের প্রতি আস্থা জন্মায়। ফলে আরও বেশি সত্য বলার ও সৎকাজ করার সাহস হয়। এরূপ লোক একের পর এক সত্য বলতে থাকে। ফলে তাদের প্রতি মানুষেরও আস্থা জন্মায়। মানুষ তাদের ভালোবাসে ও তাদের সুনাম-সুখ্যাতি করে। আল্লাহ তা'আলাও সত্যবাদীদের ভালোবাসেন। ফলে তিনি সত্যের উপর অটল থাকার ও সৎপথে এগিয়ে যাওয়ার তাওফীক তাদের দান করেন। এজন্যই তাদের দ্বারা বেশি বেশি নেককাজ করা সম্ভব হয়। তারা নেককাজে মানুষের সহযোগিতা লাভ করে। বরং নেককাজে মানুষ তাদের আদর্শরূপে গণ্য করে। তাদের দেখাদেখি আমসাধারণ সত্য বলতে উৎসাহ পায় ও নেককাজে অনুপ্রাণিত হয়। এসব সত্য বলার দুনিয়াবী ফায়দা সত্য বলার দ্বারা অন্তরে সাহস সঞ্চার হয়, বেশি বেশি নেককাজের তাওফীক হয়, মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা লাভ হয়, সত্যবাদী হিসেবে সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জিত হয়। এবং প্রয়োজনমুহূর্তে মানুষের সহযোগিতা পাওয়া যায়।
সত্য যেহেতু নেককাজের দিকে পরিচালিত করে, তাই এর দ্বারা পরকালীন ফায়দা লাভের ব্যাপারটা তো স্পষ্ট। যতবেশি নেককাজ করা যায়, ততই জান্নাতের পথ সুগম হয় ও আল্লাহ তা'আলার ভালোবাসা অর্জিত হয়। একপর্যায়ে আল্লাহ তা'আলা সত্যবাদীদেরকে 'সিদ্দীক' নামে অভিহিত করেন। ফলে তারা হাশরে নবী-রাসূল, শুহাদা ও সালিহীনের সংগে স্থান পাবে এবং জান্নাতের উচ্চমর্যাদা লাভ করবে। সত্যনিষ্ঠার সত্যিকারের সুফল সেদিন তারা নিজ চোখে দেখতে পাবে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ-
هَذَا يَوْمُ يَنْفَعُ الصَّادِقِينَ صِدْقُهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
অর্থ : এটা সেই দিন, যে দিন সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যতা উপকৃত করবে। তাদের জন্য রয়েছে এমন সব উদ্যান, যার তলদেশে নহর প্রবহমান। তাতে তারা সর্বদা থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটাই মহা সাফল্য।
মিথ্যার ব্যাপারটা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। কেউ যখন কোনও মিথ্যাকথা বলে বা অসৎকাজ করে, তখন তার গর্হিত কার্যকলাপ সেই একটিতেই সীমাবদ্ধ থাকে না। একটি মিথ্যা ঢাকার জন্য আরও দশটি মিথ্যা বলতে হয়। একটি অসৎকাজ লুকানোর জন্য নানা অসৎপন্থা অবলম্বন করতে হয়। এভাবে তার অসত্যের সিলসিলা সামনে চলতেই থাকে। একপর্যায়ে সে মিথ্যাচার ও পাপ-পঙ্কিলতায় এভাবে জড়িয়ে যায় যে,তা থেকে তার মুক্তি পাওয়া সহজ হয় না। তখন আল্লাহর কাছে তার নামই হয়ে যায় 'কাযযাব’ ও মহামিথ্যুক।
এরূপ ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুনিয়ায় মানুষের কাছে মিথ্যুক নামে পরিচিতি পায়। তার প্রতি মানুষের আস্থা থাকে না। সে মানুষের ভালোবাসা হারায়। ফলে কাজেকর্মে তাদের সহযোগিতা পায় না। মিথ্যা বলার দরুন সে মানসিক শক্তিও হারিয়ে ফেলে। একপর্যায়ে তার সত্য বলার সাহস থাকে না। পায় না সৎপথে চলার উৎসাহ। মিথ্যাতেই যেন সে স্বস্তি বোধ করে। অন্যায়-অনাচারের পথে চলতে উৎসাহ পায়। অন্যায়পথে চলতে চলতে সে মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলে। তার সদগুণাবলী ধ্বংস হয়ে যায়। তখন ঘরে-বাইরে কারও কাছেই তার বিশেষ ইজ্জত থাকে না। এসব তার পার্থিব ক্ষতি। আখিরাতের ক্ষতি আরও বড়। কবরে, হাশরে, পুলসিরাতে সব জায়গায় সে আটকে যাবে। তার শেষ ঠিকানা জাহান্নাম। সেখানে তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। কুরআন মাজীদে ইরশাদ- وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ
আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি তাদের মিথ্যাচারের কারণে।
আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তা থেকে হেফাজত করুন।
এ হাদীছে বলা হয়েছে- এমনকি একসময় সে আল্লাহর কাছে 'সিদ্দীক' নামে লিখিত (অভিহিত) হয়। আল্লাহ তা'আলার পুরস্কারপ্রাপ্ত বান্দাদের মধ্যে নবীগণের পরই সিদ্দীকদের মর্যাদা। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيقًا
অর্থ : যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে, তারা সেই সকল লোকের সঙ্গে থাকবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, অর্থাৎ নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ ও সালিহগণের সঙ্গে। কতই না উত্তম সঙ্গী তারা!
তো যে ব্যক্তি সদা সত্য বলে, কঠিন থেকে কঠিনতম পরিস্থিতিতেও সত্যের উপর অটল থাকে, কোনও অবস্থায়ই মিথ্যা বলে না, এমনকি হাসি-ঠাট্টা করেও না, তারাই এ মর্যাদা লাভ করে থাকে। তারাই আল্লাহর কাছে সিদ্দীক নামে অভিহিত। এ ব্যাপারে নারী-পুরুষের কোনও ভেদাভেদ নেই। সত্যনিষ্ঠ পুরুষ ‘সিদ্দীক' আর সত্যনিষ্ঠ নারী 'সিদ্দীকা'। কুরআন মাজীদে হযরত মারয়াম আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলা হয়েছে وَأُمُّهُ صِدِّيقَةٌ (এবং তার মা [অর্থাৎ ঈসা আলাইহিস সালামের মা হযরত মারয়াম] হলেন সিদ্দীকা)।
এ উম্মতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সিদ্দীক হলেন হযরত আবূ বকর রাযি.। তাঁর কন্যা উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. এ উম্মতের নারীকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সিদ্দীকা।
প্রকাশ থাকে যে, সিদ্দীক হওয়ার জন্য পরিপক্ক ঈমান শর্ত। ঈমান-সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়কে সত্য বলে জানা ও তার প্রতি গভীর বিশ্বাস স্থাপন দ্বারাই কোনও ব্যক্তির পক্ষে সিদ্দীকের মর্যাদায় উপনীত হওয়া সম্ভব। এ মর্যাদা লাভের জন্য কেবল কথাবার্তায় সত্যনিষ্ঠ হওয়া যথেষ্ট নয়। কুরআন ও হাদীছে যা-কিছু বর্ণিত হয়েছে, তার কোনওটিতে বিন্দুমাত্র সন্দেহও এ মর্যাদা লাভের পক্ষে বাধা, যুক্তি-বুদ্ধি দ্বারা তা আয়ত্ত করা সম্ভব না হলেও। কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত কোনও একটি বিষয় যদি বুঝে না আসে, তবে তা না বোঝাকে নিজ অক্ষমতা গণ্য করতে হবে। সে বিষয়ের সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণের কোনও অবকাশ নেই। সুতরাং সিদ্দীক হতে চাইলে অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহ'র যাবতীয় বিষয়ে অকুণ্ঠ ও নিঃশর্ত বিশ্বাসস্থাপন জরুরি।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা সততা অবলম্বনের প্রতি উৎসাহ লাভ হয়। আরও জানা যায় বেশি বেশি নেককাজ করার তাওফীক ও জান্নাতে পৌঁছার সৌভাগ্য লাভের জন্য সদা সর্বদা সত্যনিষ্ঠ থাকা উচিত।
খ. আরও জানা যায় মিথ্যা কত গুরুতর পাপ। নানামুখী পাপাচার থেকে বাঁচা ও জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষার জন্য মিথ্যা পরিহার করা যে অতি জরুরি, এ হাদীছ দ্বারা সে শিক্ষা লাভ হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)