আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
২০- যাকাতের অধ্যায়
১৩৩৯। মূহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ (রাহঃ) ......... মা‘ন ইবনে ইয়াযীদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতা (ইয়াযীদ) ও আমার দাদা (আখনাস) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে বায়আত করলাম। তিনি আমার বিবাহের প্রস্তাব করেন এবং আমার বিবাহ সম্পন্ন করে দেন। আমি তাঁর কাছে (একটি বিষয়ে) বিচারপ্রার্থী হই। তা হল, একদা আমার পিতা ইয়াযীদ কিছু স্বর্ণমুদ্রা সাদ্কা করার নিয়তে মসজিদে এক ব্যক্তির নিকট রেখে (তাকে তা বিতরণ করার সাধারণ অনুমতি দিয়ে) আসেন। আমি সে ব্যক্তির নিকট থেকে তা গ্রহণ করে পিতার নিকট আসলাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! তোমাকে দেওয়ার ইচ্ছা আমার ছিলনা। বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে পেশ করলাম। তিনি বললেনঃ হে ইয়াযীদ! তুমি যে নিয়ত করেছ, তা তুমি পাবে আর হে মা‘ন! তুমি যা গ্রহণ করেছ তা তোমারই।*
*এখানে সাদ্কা দ্বারা নফল সাদ্কা উদ্দেশ্য। আলিমগণের সর্বসম্মত মত, পিতা নিজ সন্তানকে যাকাত দিলে তা আদায় হবে না। (আইনী : শরহে বুখারী: ৮ম খণ্ড)
হাদীসের ব্যাখ্যাঃ
বাহ্যত বোঝা যায় হযরত ইয়াযীদ ইবনুল আখনাস রাযি.-এর এ সদাকা ছিল নফল সাদাকা অর্থাৎ সাধারণ দান-খয়রাত, যা নিজ পিতা, পুত্রসহ যে-কোনও আত্মীয়- স্বজনকে দেওয়া যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তার নিয়ত পুত্রকে দেওয়ার ছিল না, অন্য কোনও গরীব ব্যক্তিকে দেওয়াই উদ্দেশ্য ছিল। যখন দেখতে পেলেন তার সে দান নিজ পুত্রের হাতে পৌঁছে গেছে, তখন সন্দেহ জাগল, বুঝি বা এ দান সহীহ হয়নি। এজন্যই তিনি আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু পুত্র যেহেতু গরীব ছিলেন আর গরীবকে দেওয়াই তার উদ্দেশ্য ছিল, সে হিসেবে পুত্রের মনে হয়েছিল তার তা নেওয়া বৈধ হয়েছে। এভাবে পিতা-পুত্রের মধ্যে তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। শেষে বিষয়টা যখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত গড়াল, তিনি দিলেন যে, সে সদাকা কার্যকর হয়ে গেছে এবং পুত্রের পক্ষে তা নেওয়া হালাল হয়েছে। পুত্রের হাতে পৌঁছার কারণে পিতা ইয়াযীদের সদাকা বাতিল হয়ে যায়নি। পুত্রকে দেওয়ার নিয়ত না থাকলেও যেহেতু কোনও গরীবকে দেওয়ার নিয়ত ছিল আর গরীবের হাতেই তা পৌঁছেছে, সেহেতু সে তার নিয়ত অনুযায়ী সদাকার ছওয়াব ঠিকই পেয়ে যাবে। হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ (ক) এ হাদীছ দ্বারা জানা গেল যে, একজনকে দান-খয়রাত করার নিয়ত করার পর অন্য কাউকে দিয়ে ফেললে তাতে দানের ছওয়াব নষ্ট হয় না। (খ) পিতা-পুত্রের মধ্যে কোনও বিষয়ে বিতর্ক দেখা দিলে এবং নিজেরা মীমাংসা করতে সক্ষম না হলে অন্য কোনও গণ্যমান্য লোক দ্বারা মীমাংসা করিয়ে নেওয়া উচিত।

তাহকীক:
তাহকীক নিষ্প্রয়োজন