আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
৪৮- সদ্ব্যবহার,আত্নীয়তা রক্ষা (মুআশারা) ও বিবিধ শিষ্টাচার
হাদীস নং: ৬২৮৪
৪. পিতা-মাতার বন্ধু বান্ধব প্রমুখের সাথে সম্পর্ক রক্ষা
৬২৮৪। হাসান ইবনে আলী হুলওয়ানী (রাহঃ) ......... ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, যখন তিনি মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হতেন তখন তাঁর সঙ্গে একটি গাধা থাকত। উটের সওয়ারীতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে ক্ষণিক স্বস্তি লাভের জন্য তাতে আরোহণ করতেন। আর তাঁর সাথে একটি পাগড়ী থাকত, যা তিনি মাথায় বেঁধে নিতেন। একদা তিনি উক্ত গাধায় আরোহণ করে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর পাশ দিয়ে একজন বেদুঈন অতিক্রম করছিল। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি অমুকের পুত্র অমুক নও? সে বলল, হ্যাঁ। তখন তিনি তাকে গাধাটি দিয়ে দিলেন এবং বললেন, এতে আরোহণ কর। তিনি তাকে পাগড়ীটিও দান করলেন এবং বললেন, এটি দ্বারা তোমার মাথা বেঁধে নাও।
তখন তাঁর সঙ্গীদের কেউ কেউ তাকে বললেন, আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। আপনি এই বেদুইনকে গাধাটি দিয়ে দিলেন, যার উপর সওয়ার হয়ে আপনি স্বস্তি লাভ করতেন এবং পাগড়ীটিও দান করলেন, যার দ্বারা আপনার মাথা বাঁধতেন। তখন তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার হল কোন ব্যক্তির পিতার ইন্তিকালের পর তার বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে সদ্ভাব রাখা। আর এই বেদুঈনের পিতা ছিলেন উমর (রাযিঃ) এর অন্তরং্গ বন্ধু।
তখন তাঁর সঙ্গীদের কেউ কেউ তাকে বললেন, আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। আপনি এই বেদুইনকে গাধাটি দিয়ে দিলেন, যার উপর সওয়ার হয়ে আপনি স্বস্তি লাভ করতেন এবং পাগড়ীটিও দান করলেন, যার দ্বারা আপনার মাথা বাঁধতেন। তখন তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার হল কোন ব্যক্তির পিতার ইন্তিকালের পর তার বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে সদ্ভাব রাখা। আর এই বেদুঈনের পিতা ছিলেন উমর (রাযিঃ) এর অন্তরং্গ বন্ধু।
باب فَضْلِ صِلَةِ أَصْدِقَاءِ الأَبِ وَالأُمِّ وَنَحْوِهِمَا
حَدَّثَنَا حَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ الْحُلْوَانِيُّ، حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ سَعْدٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، وَاللَّيْثُ بْنُ سَعْدٍ جَمِيعًا عَنْ يَزِيدَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أُسَامَةَ بْنِ الْهَادِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّهُ كَانَ إِذَا خَرَجَ إِلَى مَكَّةَ كَانَ لَهُ حِمَارٌ يَتَرَوَّحُ عَلَيْهِ إِذَا مَلَّ رُكُوبَ الرَّاحِلَةِ وَعِمَامَةٌ يَشُدُّ بِهَا رَأْسَهُ فَبَيْنَا هُوَ يَوْمًا عَلَى ذَلِكَ الْحِمَارِ إِذْ مَرَّ بِهِ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ أَلَسْتَ ابْنَ فُلاَنِ بْنِ فُلاَنٍ قَالَ بَلَى . فَأَعْطَاهُ الْحِمَارَ وَقَالَ ارْكَبْ هَذَا وَالْعِمَامَةَ - قَالَ - اشْدُدْ بِهَا رَأْسَكَ . فَقَالَ لَهُ بَعْضُ أَصْحَابِهِ غَفَرَ اللَّهُ لَكَ أَعْطَيْتَ هَذَا الأَعْرَابِيَّ حِمَارًا كُنْتَ تَرَوَّحُ عَلَيْهِ وَعِمَامَةً كُنْتَ تَشُدُّ بِهَا رَأْسَكَ . فَقَالَ إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِنَّ مِنْ أَبَرِّ الْبِرِّ صِلَةَ الرَّجُلِ أَهْلَ وُدِّ أَبِيهِ بَعْدَ أَنْ يُوَلِّيَ " . وَإِنَّ أَبَاهُ كَانَ صَدِيقًا لِعُمَرَ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
উদ্ধৃত হাদীছটির বর্ণনাকারী হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. যে প্রেক্ষাপটে হাদীছটি বর্ণনা করেছিলেন সেই প্রেক্ষাপট ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি.-এর ঘটনা
আব্দুল্লাহ ইবন দীনার রহ. হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে এ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি.-এর মাওলা (আযাদকৃত গোলাম)। একবার তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি.-এর সঙ্গে মদীনা মুনাউওয়ারা থেকে মক্কা মুকাররামায় যাচ্ছিলেন। পথে জনৈক বেদুঈনের সঙ্গে দেখা হলে হযরত ইবন উমর রাযি. তার নাম-পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। তাতে জানা গেল সে বেদুঈন তাঁর পিতা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি.-এর একজন বন্ধুস্থানীয় লোক। তখন তিনি নিজের কাছে থাকা অতিরিক্ত গাধাটি তাকে দিয়ে দিলেন। সফরকালে এ গাধাটি তিনি নিজের সঙ্গে রাখতেন। উটনীর পিঠে চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে তিনি কিছুক্ষণের জন্য ওই গাধাটি ব্যবহার করতেন। তারপর ক্লান্তি দূর হওয়ার পর ফের উটনীর পিঠে সওয়ার হতেন। এরকম প্রয়োজনীয় বাহনটি তো তাকে দিলেনই, সেইসঙ্গে নিজের ব্যবহার করা একটা পাগড়িও তাকে দিলেন ।
বেদুঈনকে এরূপ খাতির করতে দেখে আব্দুল্লাহ ইবন দীনার রহ.-এর আশ্চর্য বোধ হলো। তিনি বলেই ফেললেন যে, সামান্য কিছু পেলেই যারা খুশি হয়ে যায় তাদেরকে এমন দামী বস্তু দেওয়া কেন? এ কথা বলার আগে তিনি তাঁর জন্য দুআ করে নিলেন যে- اصلحك الله (আল্লাহ তাআলা আপনার কল্যাণ করুন) এবং غفر الله لك (আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন)। এটা এক সময়কার দীনদারদের মধ্যে ব্যবহৃত সম্বোধনের ভাষা। নিজের চেয়ে বড় ও সম্মানিত ব্যক্তিকে বিশেষ কোনও বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণকালে এরকম দুআ করা হতো। এর দ্বারা তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি তার যদি কোনও ভুলও হয়ে থাকে, সেজন্য আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। এর জন্য যে কাজের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় সেটি ভুল হওয়া জরুরি নয়। সেটি ভুল না হলেও মানুষের জীবনে কোনও না কোনও ভুলত্রুটি ও গুনাহখাতা থাকেই । কাজেই এরকম দুআ যে-কারও জন্যই করা যায়।
যাহোক আব্দুল্লাহ ইবন দীনার রহ. বিস্ময় প্রকাশ করলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. বললেন, এই ব্যক্তির পিতা আমার পিতা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি.-এর বন্ধু ছিলেন। আর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি— إنَّ مِنْ أبرِّ البرِّ أنْ يَصِلَ الرّجلُ أهلَ وُدِّ أبِيه بَعْدَ أَنْ يُوَلِّيَ (নেককাজসমূহের মধ্যে একটি বড় নেককাজ হলো কোনও ব্যক্তির তার পিতার মৃত্যুর পর তার বন্ধুদের সঙ্গে সদাচরণ করা)। হাদীছটির অর্থ এরকমও করা যায় যে, পিতার প্রতি একটি উৎকৃষ্ট সদাচরণ এইও যে, তার মৃত্যুর পর তার বন্ধুদের প্রতি সদাচরণ করা হবে। অর্থাৎ বন্ধুদের প্রতি সদাচরণ প্রকারান্তরে পিতার প্রতিই সদাচরণ। কেননা এর দ্বারা বন্ধুবর্গের মধ্যে পিতার ইজ্জত-সম্মান রক্ষা পায়। হযরত ইবন উমর রাযি. বোঝাচ্ছেন যে, আমি এ অনুসরণার্থেই এই ব্যক্তির প্রতি এরকম আচরণ করেছি।
লক্ষণীয়, ওই ব্যক্তি ছিল বেদুঈন, আমাদের অঞ্চলে যেমন কোনও গ্রাম্য ব্যক্তি। সামাজিকভাবে শহুরে ব্যক্তিদের মত তাদেরকে বিশেষ গুরুত্বের দৃষ্টিতে দেখা হয় না । কিন্তু হযরত ইবন উমর রাযি. তাকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখলেন না। কেননা এ জাতীয় সামাজিক বিভাজন ইসলামসম্মত নয়। তিনি তাকে দেখেছেন পিতার বন্ধুরূপে। বন্ধু শহুরে হোক বা গ্রামের হোক, বন্ধুত্বের মর্যাদা তার প্রাপ্য। অনুরূপ যে-কোনও ধরনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্পর্কটাই লক্ষণীয়। বাসস্থান, পেশা ইত্যাদি বিবেচ্য নয়।
উল্লেখ্য, একই কথা মায়ের সখী বান্ধবীদের বেলায়ও প্রযোজ্য।
হাদীছ থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পিতার মৃত্যুর পরও তার বন্ধু-বান্ধবদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। তাদের খেদমত করাকে পিতৃসেবার বিকল্পরূপে গ্রহণ করা উচিত।
খ. পিতার জীবদ্দশায়ও তার বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করা উচিত। তাতে পিতার মানসম্মান রক্ষা হয়।
গ. পিতার বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি যা করণীয়, মায়ের সখী বান্ধবীদের বেলায়ও তা প্রযোজ্য।
ঘ. পিতা-মাতার সাথে যাদের সম্পর্ক, তারা কোথাকার বাসিন্দা বা কোন্ পেশার লোক তা বিবেচ্য নয়; সম্পর্কটাকেই মূল্যায়ন করা চাই।
ঙ. শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির কোনও ত্রুটি-বিচ্যুতির প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার সময় প্রথমে কথা ও কাজে তার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রদর্শন করা চাই।
চ. মাগফিরাতের দুআ জীবিত ও মৃত এবং বড় ও ছোট যে-কারও জন্যই এবং পেছনে ও সামনাসামনি যে-কোনও অবস্থায়ই করা যায়।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি.-এর ঘটনা
আব্দুল্লাহ ইবন দীনার রহ. হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে এ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি.-এর মাওলা (আযাদকৃত গোলাম)। একবার তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি.-এর সঙ্গে মদীনা মুনাউওয়ারা থেকে মক্কা মুকাররামায় যাচ্ছিলেন। পথে জনৈক বেদুঈনের সঙ্গে দেখা হলে হযরত ইবন উমর রাযি. তার নাম-পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। তাতে জানা গেল সে বেদুঈন তাঁর পিতা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি.-এর একজন বন্ধুস্থানীয় লোক। তখন তিনি নিজের কাছে থাকা অতিরিক্ত গাধাটি তাকে দিয়ে দিলেন। সফরকালে এ গাধাটি তিনি নিজের সঙ্গে রাখতেন। উটনীর পিঠে চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে তিনি কিছুক্ষণের জন্য ওই গাধাটি ব্যবহার করতেন। তারপর ক্লান্তি দূর হওয়ার পর ফের উটনীর পিঠে সওয়ার হতেন। এরকম প্রয়োজনীয় বাহনটি তো তাকে দিলেনই, সেইসঙ্গে নিজের ব্যবহার করা একটা পাগড়িও তাকে দিলেন ।
বেদুঈনকে এরূপ খাতির করতে দেখে আব্দুল্লাহ ইবন দীনার রহ.-এর আশ্চর্য বোধ হলো। তিনি বলেই ফেললেন যে, সামান্য কিছু পেলেই যারা খুশি হয়ে যায় তাদেরকে এমন দামী বস্তু দেওয়া কেন? এ কথা বলার আগে তিনি তাঁর জন্য দুআ করে নিলেন যে- اصلحك الله (আল্লাহ তাআলা আপনার কল্যাণ করুন) এবং غفر الله لك (আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন)। এটা এক সময়কার দীনদারদের মধ্যে ব্যবহৃত সম্বোধনের ভাষা। নিজের চেয়ে বড় ও সম্মানিত ব্যক্তিকে বিশেষ কোনও বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণকালে এরকম দুআ করা হতো। এর দ্বারা তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি তার যদি কোনও ভুলও হয়ে থাকে, সেজন্য আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। এর জন্য যে কাজের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় সেটি ভুল হওয়া জরুরি নয়। সেটি ভুল না হলেও মানুষের জীবনে কোনও না কোনও ভুলত্রুটি ও গুনাহখাতা থাকেই । কাজেই এরকম দুআ যে-কারও জন্যই করা যায়।
যাহোক আব্দুল্লাহ ইবন দীনার রহ. বিস্ময় প্রকাশ করলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. বললেন, এই ব্যক্তির পিতা আমার পিতা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি.-এর বন্ধু ছিলেন। আর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি— إنَّ مِنْ أبرِّ البرِّ أنْ يَصِلَ الرّجلُ أهلَ وُدِّ أبِيه بَعْدَ أَنْ يُوَلِّيَ (নেককাজসমূহের মধ্যে একটি বড় নেককাজ হলো কোনও ব্যক্তির তার পিতার মৃত্যুর পর তার বন্ধুদের সঙ্গে সদাচরণ করা)। হাদীছটির অর্থ এরকমও করা যায় যে, পিতার প্রতি একটি উৎকৃষ্ট সদাচরণ এইও যে, তার মৃত্যুর পর তার বন্ধুদের প্রতি সদাচরণ করা হবে। অর্থাৎ বন্ধুদের প্রতি সদাচরণ প্রকারান্তরে পিতার প্রতিই সদাচরণ। কেননা এর দ্বারা বন্ধুবর্গের মধ্যে পিতার ইজ্জত-সম্মান রক্ষা পায়। হযরত ইবন উমর রাযি. বোঝাচ্ছেন যে, আমি এ অনুসরণার্থেই এই ব্যক্তির প্রতি এরকম আচরণ করেছি।
লক্ষণীয়, ওই ব্যক্তি ছিল বেদুঈন, আমাদের অঞ্চলে যেমন কোনও গ্রাম্য ব্যক্তি। সামাজিকভাবে শহুরে ব্যক্তিদের মত তাদেরকে বিশেষ গুরুত্বের দৃষ্টিতে দেখা হয় না । কিন্তু হযরত ইবন উমর রাযি. তাকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখলেন না। কেননা এ জাতীয় সামাজিক বিভাজন ইসলামসম্মত নয়। তিনি তাকে দেখেছেন পিতার বন্ধুরূপে। বন্ধু শহুরে হোক বা গ্রামের হোক, বন্ধুত্বের মর্যাদা তার প্রাপ্য। অনুরূপ যে-কোনও ধরনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্পর্কটাই লক্ষণীয়। বাসস্থান, পেশা ইত্যাদি বিবেচ্য নয়।
উল্লেখ্য, একই কথা মায়ের সখী বান্ধবীদের বেলায়ও প্রযোজ্য।
হাদীছ থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পিতার মৃত্যুর পরও তার বন্ধু-বান্ধবদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। তাদের খেদমত করাকে পিতৃসেবার বিকল্পরূপে গ্রহণ করা উচিত।
খ. পিতার জীবদ্দশায়ও তার বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করা উচিত। তাতে পিতার মানসম্মান রক্ষা হয়।
গ. পিতার বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি যা করণীয়, মায়ের সখী বান্ধবীদের বেলায়ও তা প্রযোজ্য।
ঘ. পিতা-মাতার সাথে যাদের সম্পর্ক, তারা কোথাকার বাসিন্দা বা কোন্ পেশার লোক তা বিবেচ্য নয়; সম্পর্কটাকেই মূল্যায়ন করা চাই।
ঙ. শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির কোনও ত্রুটি-বিচ্যুতির প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার সময় প্রথমে কথা ও কাজে তার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রদর্শন করা চাই।
চ. মাগফিরাতের দুআ জীবিত ও মৃত এবং বড় ও ছোট যে-কারও জন্যই এবং পেছনে ও সামনাসামনি যে-কোনও অবস্থায়ই করা যায়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
