আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
২০- যাকাতের অধ্যায়
আল্লাহর বাণীঃ যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ও নিজেদের আত্মার দৃঢ়তার জন্য ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা কোন উচ্চভূমিতে অবস্থিত একটি উদ্যান......... এবং যাতে সর্বপ্রকার ফলমূল আছে। (২:২৬৫-৬৬)
১৩৩২। আবু কুদামা উবাইদুল্লাহ ইবনে সা’ঈদ (রাহঃ) ......... আবু মাস’উদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন সাদ্কার আয়াত অবতীর্ণ হল তখন আমরা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বোঝা বহন করতাম। এক ব্যক্তি এসে প্রচুর মাল সাদ্কা করলো। তারা (মুনাফিকরা) বলতে লাগল, এ ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে দান করেছে, আর এক ব্যক্তি এসে সা’ পরিমাণ দান করলে তারা বললো, আল্লাহ তো এ ব্যক্তির এক সা’ থেকে অমুখাপেক্ষী। এ প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়ঃ মু’মিনগণের মধ্যে যারা নিজ ইচ্ছায় সাদ্কা দেয় এবং যারা নিজ শ্রম ব্যতিরেকে কিছুই পায় না, তাদেরকে যারা দোষারোপ করে ...... (৯ঃ ৭৯)
হাদীসের ব্যাখ্যাঃ
এ হাদীছটি সাহাবায়ে কিরামের দানশীলতা সম্পর্কে। যখন আয়াত নাযিল হলঃ- خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَهُمْ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ অর্থ : (হে নবী!) তাদের সম্পদ থেকে সদাকা গ্রহণ কর, যার মাধ্যমে তুমি তাদেরকে পবিত্র ও বরকতপূর্ণ করবে এবং তাদের জন্য দোয়া কর। নিশ্চয়ই তোমার দোয়া তাদের পক্ষে প্রশান্তিদায়ক। আর আল্লাহ সব কথা শোনেন, সবকিছু জানেন।সূরা তাওবা, আয়াত ১০৩ তখন সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে দান-সদাকার ধুম পড়ে গেল। এমনিতেই তো তাঁরা ছিলেন দুনিয়াবিমুখ। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতে নাজাত লাভই ছিল তাঁদের জীবনের লক্ষ্যবস্তু । কখন কী উপায়ে তা লাভ করা যায়, সর্বক্ষণ তার সন্ধানে থাকতেন। কাজেই এ আয়াত যখন নাযিল হল, তখন প্রত্যেকেই আপন আপন সামর্থ্য অনুযায়ী দান-সদাকায় লেগে গেলেন। এ হাদীছে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি আসলেন প্রচুর সম্পদ নিয়ে। অন্যান্য বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, তিনি ছিলেন হযরত ‘আব্দুর রহমান ইব্ন 'আওফ রাযি.। তিনি আট হাজার দিরহাম নিয়ে এসেছিলেন। এত বিপুল অঙ্কের দান দেখে মু'মিনদের ভালো কাজেও ত্রুটি খুঁজে বেড়ানো যাদের অভ্যাস সে মুনাফিকরা বলতে লাগল, এ লোক রিয়াকার। মানুষকে দেখানোর জন্যই এত বেশি দান করছে। সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে অনেকেই ছিলেন নিতান্তই গরীব। তাঁদের কাছে নগদ টাকাপয়সা থাকত না। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা দানখয়রাত থেকে পিছিয়ে থাকতেন না। তাঁরা বাজারে গিয়ে মানুষের মুটে বইতেন। কেউ বা কোনও ধনীর বাড়িতে, যাদের অধিকাংশই ছিল ইহুদী, শ্রম খাটতেন। এতে যা অর্জন হত, তা থেকেই তাঁরা আল্লাহর পথে দান করতেন। এরকমই এক সাহাবীর কথা এ হাদীছে বলা হয়েছে যে, তিনি এক সা' পরিমাণ খেজুর নিয়ে এসেছিলেন। এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায় তাঁর নাম আবু 'আকীল। তিনি দুই সা' খেজুরের বিনিময়ে এক ব্যক্তির বাগানে কুয়ার পানি তুলে সেচ দিয়েছিলেন। তারপর সেই দুই সা' খেজুরের এক সা নিজ পরিবারবর্গের জন্য রেখে আসেন, আরেক সা' নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এনে আল্লাহর পথে সদাকা করেন। এবার মুনাফিকরা ছিদ্রান্বেষণের ভিন্ন পথ ধরল। এত কম পরিমাণের দান দেখে এই বলে উপহাস করতে লাগল, এত অল্প পরিমাণ দান গ্রহণ করার কোনও প্রয়োজন আল্লাহ তা'আলার নেই। আসলে দোষ খোঁজা যাদের অভ্যাস তারা সবকিছুতেই তা দেখতে পায়। তাদের সমালোচনা থেকে কেউ নিস্তার পায় না। এটা মুনাফিকী চরিত্র। আল্লাহ তা'আলা তাদের এ চরিত্রের নিন্দা করে কুরআন মাজীদে আয়াত নাযিল করেছেন, যেমনটা এ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ ক. এ হাদীছ আর্থিক মুজাহাদার শিক্ষা দেয়। আল্লাহর পথে খরচ করার বেলায় নিজের মন ও সমাজের পক্ষ থেকে যে-কোনও বাধাই আসুক না কেন, তাতে দমে যাওয়া উচিত নয়। খ. নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী দান করাই আসল কথা। তাতে দানের অঙ্ক যদি কমও হয়, মনের ইখলাসের কারণে আল্লাহ তা'আলার কাছে তা অনেক মূল্যবান হতে পারে। গ. অন্যের আমলে খুঁত ধরা এবং তাকে রিয়াকার বলা বা আমলকে নগণ্য গণ্য করা মুনাফিকদের কাজ। এর থেকে বিরত থাকা অবশ্যকর্তব্য।

তাহকীক:
তাহকীক নিষ্প্রয়োজন