আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৪৮- সদ্ব্যবহার,আত্নীয়তা রক্ষা (মুআশারা) ও বিবিধ শিষ্টাচার

হাদীস নং: ৬২৭৬
১. মাতাপিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার এবুং দু’জনের কে তার বেশী হকদার
৬২৭৬। সাঈদ ইবনে মানসুর (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুূল আস (রাযিঃ) খেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (ﷺ) এর কাছে এল। এরপর সে বলল, আমি আপনার হাতে হিজরত ও জিহাদের জন্য বায়আত গ্রহণ করব। এতে আমি আল্লাহর কাছে পুরস্কার ও বিনিময় আশা করি। তিনি বললেনঃ তোমার মাতা-পিতার মধ্যে কেউ জীবিত আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ উভয়ে জীবিত আছেন। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি আল্লাহর কাছে বিনিময় আকাঙ্ক্ষা করছ? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি তোমার মাতা-পিতার কাছে ফিরে যাও এবং তাদের দু’জনের সঙ্গে সদাচরণপূর্ণ জীবন যাপন কর।
باب بِرِّ الْوَالِدَيْنِ وَأَنَّهُمَا أَحَقُّ بِهِ
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي عَمْرُو بْنُ الْحَارِثِ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ، أَنَّ نَاعِمًا، مَوْلَى أُمِّ سَلَمَةَ حَدَّثَهُ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ أَقْبَلَ رَجُلٌ إِلَى نَبِيِّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أُبَايِعُكَ عَلَى الْهِجْرَةِ وَالْجِهَادِ أَبْتَغِي الأَجْرَ مِنَ اللَّهِ . قَالَ " فَهَلْ مِنْ وَالِدَيْكَ أَحَدٌ حَىٌّ " . قَالَ نَعَمْ بَلْ كِلاَهُمَا . قَالَ " فَتَبْتَغِي الأَجْرَ مِنَ اللَّهِ " . قَالَ نَعَمْ . قَالَ " فَارْجِعْ إِلَى وَالِدَيْكَ فَأَحْسِنْ صُحْبَتَهُمَا " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে হিজরত ও বায়আতের উদ্দেশ্যে আগমনকারী ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি। কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, তার নাম জাহিমা ইবন আব্বাস ইবন মিরদাস রাযি. অথবা মুআবিয়া ইবন জাহিমা রাযি.। নাসাঈ ও আহমাদের বর্ণনায় আছে জাহিমা রাযি. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে আরয করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা করেছি এবং সেজন্য আপনার পরামর্শ গ্রহণের জন্য এসেছি। এ উভয় বর্ণনা যদি একই ব্যক্তি সম্পর্কে হয়ে থাকে, তবে তার নাম জাহিমা প্রমাণিত হয়। যাহোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে জিহাদ ও হিজরত দ্বারা তার উদ্দেশ্য কী তা জানতে চাইলেন। তিনি জানালেন যে, উদ্দেশ্য আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি। তারপর জানতে চাইলেন তার পিতা-মাতা জীবিত কি না। যখন জানালেন যে তার পিতা-মাতা জীবিত, তখন তাকে ফিরিয়ে দিলেন এবং পিতা-মাতার সেবাই নিয়োজিত থাকতে বললেন। কেননা জিহাদ হয়তো তখন তার উপর ওয়াজিব ছিল না, অন্যদিকে পিতা-মাতার হক আদায় করা ওয়াজিব। তাই জিহাদ অপেক্ষা পিতা-মাতার সেবাই নিয়োজিত থাকাই তার কর্তব্য ছিল। আর যদি জিহাদ তখন তার উপর ওয়াজিব হয়েও থাকে, তবুও পিতা-মাতার হক যেহেতু তারচে'ও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য জিহাদে অংশগ্রহণ থেকে ছুটি দিয়ে দেন।

লক্ষণীয়, ইসলামের প্রতিষ্ঠাকালীন সে সময়ে জিহাদ কতইনা গুরুত্বপূর্ণ ছিল! তখন প্রতিটি যুদ্ধে শত্রুবাহিনী অপেক্ষা মুসলিম মুজাহিদদের অস্ত্র ও জনবল ছিল নিতান্তই নগণ্য। স্বাভাবিকভাবেই তখন মুসলিম বাহিনীর পক্ষে একজন সৈন্যেরও অনেক মূল্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সাহাবীর জন্য জিহাদে যোগদান অপেক্ষা পিতা-মাতার খেদমতে নিয়োজিত থাকাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তাঁর দৃষ্টি ও বিবেচনাবোধ ছিল কতইনা প্রশস্ত, নিরপেক্ষ ও নিঃস্বার্থ!

এমনিভাবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিতা-মাতার খেদমতে নিয়োজিত থাকার জন্য এ সাহাবীর হিজরতকেও অনুমোদন করেননি। অবশ্য অন্যান্য ঈমান রক্ষা করা কঠিন হয়ে যায়, তবে দীন ও ঈমান রক্ষার স্বার্থে প্রয়োজনে পিতা-মাতা, দলীল-প্রমাণ দ্বারা বোঝা যায়, পিতা-মাতার কাছে থাকা অবস্থায় যদি নিজের দীন ও ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজন সকলকে পরিত্যাগ করে হিজরত করাই অবশ্যকর্তব্য হয়ে যায়। মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় গমনকারী মুহাজিরগণ তাই করেছিলেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায় যে, পিতা-মাতার সেবাযত্নে নিয়োজিত থাকা জিহাদে যাওয়ার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

খ. আরও শিক্ষা পাওয়া যায়, নিজ আগ্রহ-উদ্দীপনা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের নাম দীন নয়; বরং দীন হলো আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ-নিষেধ পালনের নাম।

গ. এ হাদীছের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে দীনী কাজসমূহেও গুরুত্বের পর্যায়ক্রম বিবেচনায় রাখা চাই। একইসঙ্গে দু'টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সামনে এসে গেলে তখন যেটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটিকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।

ঘ. নেতার কর্তব্য নিজ স্বার্থ-সুবিধার দিকে না তাকিয়ে কর্মী ও সঙ্গীর ব্যক্তিগত ও আনুষাঙ্গিক অবস্থাদি বিবেচনায় রাখা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ৬২৭৬ | মুসলিম বাংলা