আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
৪৮- সদ্ব্যবহার,আত্নীয়তা রক্ষা (মুআশারা) ও বিবিধ শিষ্টাচার
হাদীস নং: ৬২৬৯
১. মাতাপিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার এবুং দু’জনের কে তার বেশী হকদার
৬২৬৯। কুতায়বা ইবনে সাঈদ ইবনে জামীল ইবনে তারীফ সাকাফী ও যুহাইর ইবনে হারব (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কছে এলো এবং সে প্রশ্ন করল,ইয়া রাসুলাল্লাহ! মানুষের মধ্যে আমার সদ্ব্যবহারের সর্বাধিক ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। সে বললঃ এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা। আর কুতায়বা বর্ণিত হাদীসে “আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার সর্বাপেক্ষা যোগ্য কে” এর উল্লেখ আছে। তিনি তাঁর বর্ণনায় (النَّاسَ) মানুষ শব্দটি উল্লেখ করেননি।
باب بِرِّ الْوَالِدَيْنِ وَأَنَّهُمَا أَحَقُّ بِهِ
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدِ بْنِ جَمِيلِ بْنِ طَرِيفٍ الثَّقَفِيُّ، وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ عُمَارَةَ بْنِ الْقَعْقَاعِ، عَنْ أَبِي زُرْعَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ مَنْ أَحَقُّ النَّاسِ بِحُسْنِ صَحَابَتِي قَالَ " أُمُّكَ " . قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ " ثُمَّ أُمُّكَ " . قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ " ثُمَّ أُمُّكَ " . قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ " ثُمَّ أَبُوكَ " . وَفِي حَدِيثِ قُتَيْبَةَ مَنْ أَحَقُّ بِحُسْنِ صَحَابَتِي وَلَمْ يَذْكُرِ النَّاسَ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
উত্তম সোহবত মানে ভালো ব্যবহার করা, খেদমত করা ও সন্তুষ্ট রাখার প্রচেষ্টার সঙ্গে সহাবস্থান করা। পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে মানুষকে পিতা-মাতা, ভাইবোনসহ অনেকের সঙ্গেই মেলামেশা করতে হয়। তবে সকলের সঙ্গেই সমপর্যায়ে মেলামেশা ও সহাবস্থান করা হয় না। কারও সঙ্গে বেশি হয়, কারও সঙ্গে কম। আবার যাদের সঙ্গে একত্রে থাকা হয়, তাদের সকলের সঙ্গে সম্পর্কও সমপর্যায়ের নয়। অপেক্ষাকৃতভাবে কারও সঙ্গে সম্পর্ক বেশি ঘনিষ্ঠ হয়, কারও সঙ্গে কম। এসব বিবেচনায় সদাচরণ ও সদ্ব্যবহারের অধিকারেও তারতম্য থাকার কথা। সে তারতম্যের প্রতি লক্ষ রাখা না হলে অধিকার খর্বের আশঙ্কা থাকে। সে কারণেই জনৈক সাহাবী নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রশ্ন করেছেন যে, আমার সর্বাপেক্ষা উত্তম ব্যবহার ও উত্তম সোহবত লাভের অধিকার বেশি কার? তার প্রশ্নের উত্তরে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মা। সাহাবী একই প্রশ্ন বার বার করতে থাকেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও একই উত্তর দিতে থাকেন। পরপর তিনবার তিনি বলতে থাকেন তোমার মা। চতুর্থবার বললেন, তোমার পিতা।
এর দ্বারা বোঝা গেল সদাচরণ ও খেদমতলাভের ক্ষেত্রে মায়ের হক সবার উপরে। এমনকি পিতার চেয়েও তিনগুণ বেশি। কেন তিনগুণ বেশি, তা কুরআন মাজীদের এক আয়াত দ্বারা উপলব্ধি করা যায়। ইরশাদ হয়েছে وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ 'আমি মানুষকে তার পিতা-মাতা সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছি, (কেননা) তার মা কষ্টের পর কষ্ট সয়ে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দু বছরে। ৭০
এ আয়াতে প্রথমে পিতা-মাতা উভয়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের আদেশদানের পর মায়ের বিশেষ তিনটি কাজ উল্লেখ করা হয়েছে- সন্তানকে কষ্ট-ক্লেশের সঙ্গে গর্ভে ধারণ করতে থাকা, প্রসব করা এবং দুধপান করানো। সন্তানের জন্ম ও লালন-পালনে এ তিনওটি কাজ অত্যন্ত কষ্টসাধ্য এবং এ কষ্ট একা মাকেই বরদাশত করতে হয়। অন্যসব কাজে পিতা-মাতা উভয়ে অংশীদার থাকে। এ কারণেই পিতা-মাতা উভয়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করে যাওয়া সন্তানের একান্ত কর্তব্য। তবে মা যেহেতু বাড়তি তিনটি কষ্টসাধ্য কাজ একাই করে থাকে, তাই খেদমত ও সেবাযত্নও পিতা অপেক্ষা মায়ের তিনগুণ বেশি প্রাপ্য।
হাদীছে আছে- (তারপর পর্যায়ক্রমে তোমার নিকটজন, তোমার নিকটজন)। অর্থাৎ যে যতবেশি কাছের তার হকও ততবেশি এবং তুলনামূলকভাবে যে যত দূরের তার হকও তত কম। উলামায়ে কেরামের মধ্যে কেউ কেউ এভাবে স্তর বিন্যাস করেছেন যে, সর্বোচ্চ অধিকার মায়ের, তারপর পিতার, তারপর দাদা-দাদীর, তারপর নানা-নানীর, তারপর ভাইবোনের, তারপর চাচার ও ফুফুর, তারপর মামা-খালার, তারপর ভাতিজা-ভাতিজী, ভাগিনা-ভাগিনী, চাচাতো ভাইবোন, ফুফাতো ভাইবোন, মামাতো ভাইবোন, খালাতো ভাইবোন, তারপর আত্মীয় প্রতিবেশীর, তারপর অনাত্মীয় প্রতিবেশীর এভাবে ক্রমবিস্তার হতে থাকবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. প্রত্যেক সন্তানের কর্তব্য সেবাযত্ন ও খুশি রাখার চেষ্টা-মেহনতের ক্ষেত্রে মাকে সর্বোচ্চ স্থানে রাখা।
খ. সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতার পর্যায়ক্রম অনুযায়ী সদাচরণের পর্যায়ক্রম রক্ষা করা উচিত।
গ. শরীআতের হুকুম পালনে কোনও ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা বোধ হলে সে বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করা উচিত।
৭০. সূরা লুকমান (৩১), আয়াত ১৪
এর দ্বারা বোঝা গেল সদাচরণ ও খেদমতলাভের ক্ষেত্রে মায়ের হক সবার উপরে। এমনকি পিতার চেয়েও তিনগুণ বেশি। কেন তিনগুণ বেশি, তা কুরআন মাজীদের এক আয়াত দ্বারা উপলব্ধি করা যায়। ইরশাদ হয়েছে وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ 'আমি মানুষকে তার পিতা-মাতা সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছি, (কেননা) তার মা কষ্টের পর কষ্ট সয়ে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দু বছরে। ৭০
এ আয়াতে প্রথমে পিতা-মাতা উভয়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের আদেশদানের পর মায়ের বিশেষ তিনটি কাজ উল্লেখ করা হয়েছে- সন্তানকে কষ্ট-ক্লেশের সঙ্গে গর্ভে ধারণ করতে থাকা, প্রসব করা এবং দুধপান করানো। সন্তানের জন্ম ও লালন-পালনে এ তিনওটি কাজ অত্যন্ত কষ্টসাধ্য এবং এ কষ্ট একা মাকেই বরদাশত করতে হয়। অন্যসব কাজে পিতা-মাতা উভয়ে অংশীদার থাকে। এ কারণেই পিতা-মাতা উভয়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করে যাওয়া সন্তানের একান্ত কর্তব্য। তবে মা যেহেতু বাড়তি তিনটি কষ্টসাধ্য কাজ একাই করে থাকে, তাই খেদমত ও সেবাযত্নও পিতা অপেক্ষা মায়ের তিনগুণ বেশি প্রাপ্য।
হাদীছে আছে- (তারপর পর্যায়ক্রমে তোমার নিকটজন, তোমার নিকটজন)। অর্থাৎ যে যতবেশি কাছের তার হকও ততবেশি এবং তুলনামূলকভাবে যে যত দূরের তার হকও তত কম। উলামায়ে কেরামের মধ্যে কেউ কেউ এভাবে স্তর বিন্যাস করেছেন যে, সর্বোচ্চ অধিকার মায়ের, তারপর পিতার, তারপর দাদা-দাদীর, তারপর নানা-নানীর, তারপর ভাইবোনের, তারপর চাচার ও ফুফুর, তারপর মামা-খালার, তারপর ভাতিজা-ভাতিজী, ভাগিনা-ভাগিনী, চাচাতো ভাইবোন, ফুফাতো ভাইবোন, মামাতো ভাইবোন, খালাতো ভাইবোন, তারপর আত্মীয় প্রতিবেশীর, তারপর অনাত্মীয় প্রতিবেশীর এভাবে ক্রমবিস্তার হতে থাকবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. প্রত্যেক সন্তানের কর্তব্য সেবাযত্ন ও খুশি রাখার চেষ্টা-মেহনতের ক্ষেত্রে মাকে সর্বোচ্চ স্থানে রাখা।
খ. সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতার পর্যায়ক্রম অনুযায়ী সদাচরণের পর্যায়ক্রম রক্ষা করা উচিত।
গ. শরীআতের হুকুম পালনে কোনও ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা বোধ হলে সে বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করা উচিত।
৭০. সূরা লুকমান (৩১), আয়াত ১৪
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
