আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
৪৭- সাহাবায়ে কিরামের রাঃ মানাকিব ও ফাযায়েল
হাদীস নং: ৬২৫৯
৫৫. উওয়াইস করনী (রাহঃ) এর ফযীলত
৬২৫৯। যুহাইর ইবনে হারব (রাহঃ) ......... উসায়র ইবনে জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, কুফার একটি প্রতিনিধি দল উমর (রাযিঃ) এর কাছে এলো। তাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তিও ছিল, যে উওয়াইস (রাহঃ) কে উপহাস করত। তখন উমর (রাযিঃ) বললেন, এখানে করনী গোত্রের কোন লোক আছে কি? তখন সেই লোকটি এলো। এরপর উমর (রাযিঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমাদের কাছে ইয়ামান থেকে এক ব্যক্তি আসবে, যে উওয়াইস নামে পরিচিত। ইয়ামানে তাঁর মা ব্যতীত কেউ থাকবে না। তার শ্বেতরোগ হয়েছিল। সে আল্লাহর কাছে দুআ করার বদৌলতে আল্লাহ তাকে শ্বেত রোগ মুক্ত করে দেন। তবে কেবল মাত্র এক দীনার অথবা এক দিরহাম পরিমাণ স্থান বাকী থাকে। তোমাদের মধ্য থেকে যদি কেউ তাঁর সাক্ষাত পায় সে যেন নিজের জন্য তাঁর কাছে মাগফিরাতের দুআ কামনা করে।
باب مِنْ فَضَائِلِ أُوَيْسٍ الْقَرَنِيِّ رضى الله عنه
حَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا هَاشِمُ بْنُ الْقَاسِمِ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ الْمُغِيرَةِ، حَدَّثَنِي سَعِيدٌ الْجُرَيْرِيُّ، عَنْ أَبِي نَضْرَةَ، عَنْ أُسَيْرِ بْنِ جَابِرٍ، أَنَّ أَهْلَ الْكُوفَةِ، وَفَدُوا، إِلَى عُمَرَ وَفِيهِمْ رَجُلٌ مِمَّنْ كَانَ يَسْخَرُ بِأُوَيْسٍ فَقَالَ عُمَرُ هَلْ هَا هُنَا أَحَدٌ مِنَ الْقَرَنِيِّينَ فَجَاءَ ذَلِكَ الرَّجُلُ فَقَالَ عُمَرُ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ قَالَ " إِنَّ رَجُلاً يَأْتِيكُمْ مِنَ الْيَمَنِ يُقَالُ لَهُ أُوَيْسٌ لاَ يَدَعُ بِالْيَمَنِ غَيْرَ أُمٍّ لَهُ قَدْ كَانَ بِهِ بَيَاضٌ فَدَعَا اللَّهَ فَأَذْهَبَهُ عَنْهُ إِلاَّ مَوْضِعَ الدِّينَارِ أَوِ الدِّرْهَمِ فَمَنْ لَقِيَهُ مِنْكُمْ فَلْيَسْتَغْفِرْ لَكُمْ " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হযরত উয়ায়স আল-কারনী রহ. একজন উচ্চস্তরের আল্লাহওয়ালা ছিলেন। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ পেয়েছিলেন। কিন্তু মায়ের খেদমতে নিয়োজিত থাকায় তাঁর পক্ষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাতলাভ সম্ভব হয়নি। ফলে সাহাবী হওয়ার সৌভাগ্য তিনি লাভ করতে পারেননি। তবে তাবি‘ঈ হিসেবে তাঁর মর্যাদা অতি উচ্চে।
হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উক্তি বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি শ্রেষ্ঠতম তাবি'ঈ। অবশ্য সর্বশ্রেষ্ঠ তাবি'ঈ কে, এ সম্পর্কে বিভিন্ন মত আছে। কারও মতে হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ.। কারও মতে হযরত যায়নুল আবিদীন আলী ইবনুল হুসায়ন রহ.। তাছাড়া আবূ উছমান নাহ্দী রহ., আলকামা রহ কায়স ইবন আবী হাযিম রহ. ও হাসান বসরী রহ.-কেও শ্রেষ্ঠতম তাবি'ঈ বলা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে যেহেতু স্পষ্টভাবে উয়ায়স আল-কারনী রহ.-কে শ্রেষ্ঠ তাবি'ঈর সনদ দেওয়া হয়েছে, তখন সাধারণভাবে তাঁকেই শ্রেষ্ঠ তাবি‘ঈ গণ্য করা উচিত। অন্য যাদেরকে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে, তা বিশেষ বিশেষ বিবেচনায়। যেমন হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ. শ্রেষ্ঠ ছিলেন তাফসীর, হাদীছ প্রভৃতি ইলমের বিবেচনায়। হযরত আলকামা রহ. শ্রেষ্ঠ ছিলেন ফকীহ হিসেবে। হযরত হাসান বসরী রহ. শ্রেষ্ঠ ছিলেন ইলম, যুহদ ইত্যাদির বিচারে। এভাবে একেকজন একেক বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ তাবি'ঈ ছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলার কাছে মর্যাদা ও নৈকট্যের দিক থেকে উয়ায়স আল-কারনী রহ.-ই সবার সেরা।
উয়ায়স আল-কারনী রহ.-এর এত উচ্চমর্যাদার কারণ বিবিধ। তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য তাঁর মাতৃভক্তি। মায়ের সেবাযত্নে নিয়োজিত থাকার কারণে এমনকি তিনি সাহাবী হওয়ার সৌভাগ্যলাভকে পর্যন্ত ত্যাগ করেছিলেন।
তাঁর একটি বিশেষ গুণ ছিল প্রচারবিমুখতা। তিনি নিভৃত, অজ্ঞাত ও অখ্যাত জীবন ভালোবাসতেন। যেমন হাদীছে তাঁর এ উক্তি উদ্ধৃত হয়েছে যে- أَكُونُ فِي غَبْرَاءِ النَّاسِ أَحَبُّ إِلَيَّ (আমি গরীব ও অখ্যাত লোকদের একজন হয়ে থাকাই বেশি পসন্দ করি)। ফলে যখন তাঁর সম্পর্কে জানাজানি হয়ে গেল, তখন সম্পূর্ণ নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন। বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা জানা যায়, অখ্যাত অজ্ঞাত থাকা আল্লাহ তাআলার কাছেও পসন্দ।
হযরত উয়ায়স রহ. ছিলেন অত্যন্ত দুনিয়াবিমুখ। দুনিয়ার প্রতি তাঁর বিন্দুমাত্র আসক্তি ও লোভ-লালসা ছিল না। খুবই গরীবানা হালে দিন কাটাতেন। হযরত উমর ফারূক রাযি. তাঁর সম্পর্কে কূফার আমীরকে কিছু লিখে দিতে চাইলে তিনি তাতে অসম্মতি জানান এবং সাধারণ জীবনযাপনের প্রতিই নিজ আগ্রহ ব্যক্ত করেন। এসব গুণের প্রত্যেকটিই আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্যলাভের অতি বড় উপায়।
হাদীছে আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উমর ফারূক রাযি.-কে হুকুম দিয়েছিলেন- যদি উয়ায়সের সাক্ষাত পান, তবে তার কাছে যেন গুনাহমাফীর দুআ চান।
এর দ্বারা এ কথা বোঝার কোনও সুযোগ নেই যে, তিনি হযরত উমর রাযি.-এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। উয়ায়স আল-কারনী রহ. অনেক বড় বুযুর্গ ছিলেন বটে, কিন্তু ছিলেন তিনি একজন তাবি'ঈ। যে-কোনও তাবি'ঈ অপেক্ষা যে-কোনও সাহাবীর মর্যাদা অনেক উপরে। হযরত উমর ফারূক রাযি. শুধু সাহাবীই নন; সাহাবীদের মধ্যেও সর্বোচ্চ স্তরের। তিনি হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-এর পরেই এ উম্মতের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি। কাজেই তাঁর তুলনায় কোনও তাবি'ঈ বা অন্য কোনও ওলী-বুযুর্গের শ্রেষ্ঠ হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
বস্তুত উয়ায়স আল-কারনী রহ.-এর কাছে গুনাহমাফীর দুআ চাইতে বলা হয়েছে বাড়তি ফযীলতলাভের উদ্দেশ্যে। আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টির স্তর পরিক্রমার কোনও সীমা-পরিসীমা নেই। তাই নৈকট্যের কোনও স্তরে পৌঁছে ক্ষান্ত ও পরিতৃপ্ত হয়ে যাওয়ারও অবকাশ নেই। এ পথের অভিযাত্রীগণ আল্লাহ তাআলার নৈকট্যের যত উচ্চতায় উপনীত হতে থাকেন, ততই তাদের আরও উচ্চতায় উন্নীত হওয়ার আগ্রহ অদম্য হয়ে ওঠে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবীদেরকে সে অদম্য আগ্রহে উদ্দীপিত করে তোলার প্রতি লক্ষ রাখতেন। উয়ায়স আল-কারনীর কাছে দুআ চাওয়ার উপদেশদান সেরকমই এক প্রণোদনাবিশেষ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও তো একবার হযরত উমর ফারূক রাযি.-কে বলেছিলেন-
لاَ تَنْسَنَا يَا أَخَيَّ مِنْ دُعَائِكَ
(ওহে প্রিয় ভাই! তোমার দুআয় আমাদের ভুলে যেও না),
তিনি আমাদেরকেও উৎসাহ দিয়েছেন যেন তাঁর জন্য রহমতের দুআ করি এবং তাঁর প্রতি সালাত ও সালাম পাঠ করি। আমাদেরকে তাঁর জন্য ওয়াসীলা ও মাকামে মাহমূদের দুআ করার শিক্ষাদান করা হয়েছে।
সুতরাং ছোট বড়'র কাছে, বড় ছোট'র কাছে, সাধারণ ব্যক্তি বুযুর্গের কাছে এবং বুযুর্গ ব্যক্তি সাধারণ লোকের কাছে, এমনিভাবে যে-কেউ যে-কারও কাছে দুআ চাইতে পারে। অবশ্য বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা বিশেষভাবে আল্লাহওয়ালা ও নেককার ব্যক্তিদের কাছে দুআ চাওয়ার প্রতি উৎসাহ পাওয়া যায়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পিতা-মাতার সেবাযত্ন করা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টিলাভের একটি উপায়।
খ. প্রচারবিমুখ থাকা আল্লাহওয়ালাদের বৈশিষ্ট্য। এটি ইখলাস রক্ষার পক্ষে সহায়ক।
গ. তুচ্ছ বেশভূষা ও গরীবী হাল দেখে কাউকে হেলা করতে নেই, বাস্তবিকপক্ষে সে আল্লাহ তাআলার অনেক প্রিয় ও নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা হতে পারে।
ঘ. আল্লাহওয়ালা ও নেককার ব্যক্তিদের কাছে দুআ চাওয়া উচিত, বিশেষত নিজ গুনাহমাফীর জন্য।
হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উক্তি বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি শ্রেষ্ঠতম তাবি'ঈ। অবশ্য সর্বশ্রেষ্ঠ তাবি'ঈ কে, এ সম্পর্কে বিভিন্ন মত আছে। কারও মতে হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ.। কারও মতে হযরত যায়নুল আবিদীন আলী ইবনুল হুসায়ন রহ.। তাছাড়া আবূ উছমান নাহ্দী রহ., আলকামা রহ কায়স ইবন আবী হাযিম রহ. ও হাসান বসরী রহ.-কেও শ্রেষ্ঠতম তাবি'ঈ বলা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে যেহেতু স্পষ্টভাবে উয়ায়স আল-কারনী রহ.-কে শ্রেষ্ঠ তাবি'ঈর সনদ দেওয়া হয়েছে, তখন সাধারণভাবে তাঁকেই শ্রেষ্ঠ তাবি‘ঈ গণ্য করা উচিত। অন্য যাদেরকে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে, তা বিশেষ বিশেষ বিবেচনায়। যেমন হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ. শ্রেষ্ঠ ছিলেন তাফসীর, হাদীছ প্রভৃতি ইলমের বিবেচনায়। হযরত আলকামা রহ. শ্রেষ্ঠ ছিলেন ফকীহ হিসেবে। হযরত হাসান বসরী রহ. শ্রেষ্ঠ ছিলেন ইলম, যুহদ ইত্যাদির বিচারে। এভাবে একেকজন একেক বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ তাবি'ঈ ছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলার কাছে মর্যাদা ও নৈকট্যের দিক থেকে উয়ায়স আল-কারনী রহ.-ই সবার সেরা।
উয়ায়স আল-কারনী রহ.-এর এত উচ্চমর্যাদার কারণ বিবিধ। তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য তাঁর মাতৃভক্তি। মায়ের সেবাযত্নে নিয়োজিত থাকার কারণে এমনকি তিনি সাহাবী হওয়ার সৌভাগ্যলাভকে পর্যন্ত ত্যাগ করেছিলেন।
তাঁর একটি বিশেষ গুণ ছিল প্রচারবিমুখতা। তিনি নিভৃত, অজ্ঞাত ও অখ্যাত জীবন ভালোবাসতেন। যেমন হাদীছে তাঁর এ উক্তি উদ্ধৃত হয়েছে যে- أَكُونُ فِي غَبْرَاءِ النَّاسِ أَحَبُّ إِلَيَّ (আমি গরীব ও অখ্যাত লোকদের একজন হয়ে থাকাই বেশি পসন্দ করি)। ফলে যখন তাঁর সম্পর্কে জানাজানি হয়ে গেল, তখন সম্পূর্ণ নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন। বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা জানা যায়, অখ্যাত অজ্ঞাত থাকা আল্লাহ তাআলার কাছেও পসন্দ।
হযরত উয়ায়স রহ. ছিলেন অত্যন্ত দুনিয়াবিমুখ। দুনিয়ার প্রতি তাঁর বিন্দুমাত্র আসক্তি ও লোভ-লালসা ছিল না। খুবই গরীবানা হালে দিন কাটাতেন। হযরত উমর ফারূক রাযি. তাঁর সম্পর্কে কূফার আমীরকে কিছু লিখে দিতে চাইলে তিনি তাতে অসম্মতি জানান এবং সাধারণ জীবনযাপনের প্রতিই নিজ আগ্রহ ব্যক্ত করেন। এসব গুণের প্রত্যেকটিই আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্যলাভের অতি বড় উপায়।
হাদীছে আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উমর ফারূক রাযি.-কে হুকুম দিয়েছিলেন- যদি উয়ায়সের সাক্ষাত পান, তবে তার কাছে যেন গুনাহমাফীর দুআ চান।
এর দ্বারা এ কথা বোঝার কোনও সুযোগ নেই যে, তিনি হযরত উমর রাযি.-এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। উয়ায়স আল-কারনী রহ. অনেক বড় বুযুর্গ ছিলেন বটে, কিন্তু ছিলেন তিনি একজন তাবি'ঈ। যে-কোনও তাবি'ঈ অপেক্ষা যে-কোনও সাহাবীর মর্যাদা অনেক উপরে। হযরত উমর ফারূক রাযি. শুধু সাহাবীই নন; সাহাবীদের মধ্যেও সর্বোচ্চ স্তরের। তিনি হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-এর পরেই এ উম্মতের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি। কাজেই তাঁর তুলনায় কোনও তাবি'ঈ বা অন্য কোনও ওলী-বুযুর্গের শ্রেষ্ঠ হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
বস্তুত উয়ায়স আল-কারনী রহ.-এর কাছে গুনাহমাফীর দুআ চাইতে বলা হয়েছে বাড়তি ফযীলতলাভের উদ্দেশ্যে। আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টির স্তর পরিক্রমার কোনও সীমা-পরিসীমা নেই। তাই নৈকট্যের কোনও স্তরে পৌঁছে ক্ষান্ত ও পরিতৃপ্ত হয়ে যাওয়ারও অবকাশ নেই। এ পথের অভিযাত্রীগণ আল্লাহ তাআলার নৈকট্যের যত উচ্চতায় উপনীত হতে থাকেন, ততই তাদের আরও উচ্চতায় উন্নীত হওয়ার আগ্রহ অদম্য হয়ে ওঠে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবীদেরকে সে অদম্য আগ্রহে উদ্দীপিত করে তোলার প্রতি লক্ষ রাখতেন। উয়ায়স আল-কারনীর কাছে দুআ চাওয়ার উপদেশদান সেরকমই এক প্রণোদনাবিশেষ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও তো একবার হযরত উমর ফারূক রাযি.-কে বলেছিলেন-
لاَ تَنْسَنَا يَا أَخَيَّ مِنْ دُعَائِكَ
(ওহে প্রিয় ভাই! তোমার দুআয় আমাদের ভুলে যেও না),
তিনি আমাদেরকেও উৎসাহ দিয়েছেন যেন তাঁর জন্য রহমতের দুআ করি এবং তাঁর প্রতি সালাত ও সালাম পাঠ করি। আমাদেরকে তাঁর জন্য ওয়াসীলা ও মাকামে মাহমূদের দুআ করার শিক্ষাদান করা হয়েছে।
সুতরাং ছোট বড়'র কাছে, বড় ছোট'র কাছে, সাধারণ ব্যক্তি বুযুর্গের কাছে এবং বুযুর্গ ব্যক্তি সাধারণ লোকের কাছে, এমনিভাবে যে-কেউ যে-কারও কাছে দুআ চাইতে পারে। অবশ্য বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা বিশেষভাবে আল্লাহওয়ালা ও নেককার ব্যক্তিদের কাছে দুআ চাওয়ার প্রতি উৎসাহ পাওয়া যায়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পিতা-মাতার সেবাযত্ন করা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টিলাভের একটি উপায়।
খ. প্রচারবিমুখ থাকা আল্লাহওয়ালাদের বৈশিষ্ট্য। এটি ইখলাস রক্ষার পক্ষে সহায়ক।
গ. তুচ্ছ বেশভূষা ও গরীবী হাল দেখে কাউকে হেলা করতে নেই, বাস্তবিকপক্ষে সে আল্লাহ তাআলার অনেক প্রিয় ও নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা হতে পারে।
ঘ. আল্লাহওয়ালা ও নেককার ব্যক্তিদের কাছে দুআ চাওয়া উচিত, বিশেষত নিজ গুনাহমাফীর জন্য।


বর্ণনাকারী: