আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৪৭- সাহাবায়ে কিরামের রাঃ মানাকিব ও ফাযায়েল

হাদীস নং: ৬১৭৪
আন্তর্জাতিক নং: ২৪৯২-৩
৩৫. আবু হুরায়রা আদ-দুসী (রাযিঃ) এর ফযীলত
৬১৭৪। হারামালা ইবনে ইয়াহয়া তুজীবী (রাহঃ) ......... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (হে উরওয়াহ্!) তোমার কাছে কি আশ্চর্য বলে মনে হয় না যে, আবু হুরাইরা্ (রাযিঃ) আমার কক্ষে একদিকে বসে রসূলুল্লাহ (ﷺ) হতে হাদীস রিওয়ায়াত করছেন এবং তিনি তা আমাকে শুনাচ্ছেন? কিন্তু আমি সে সময় নফল নামাযে মশগুল ছিলাম। সে আমার নফল সম্পন্ন করার পূর্বেই উঠে চলে গেল। আমি যদি তখন তাঁকে পেতাম তাহলে তাকে প্রতিবাদ জানাতাম। কেননা, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এই রকম তড়িঘড়ি কথাবার্তা বলা পছন্দ করতেন না যেমন তোমরা কর।

ইবনে শিহাব ও ইবনে মুসায়্যাব (রাহঃ) বলেন যে, আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বললেন, লোকেরা বলাবলি করে যে, আবু হুরায়রা অধিক সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেন আর আল্লাহর কাছেই এ অভিযোগের বিচার। তিনি বলেন যে, লোকেরা এই মর্মে আরও বলাবলি করত যে, মুহাজির ও আনসারগণ আবু হুরায়রার মত বেশী বেশী হাদীস বর্ণনা করেন না কেন?

এর জবাবে আমি তোমাদের অবহিত করতে চাই যে, আমার আনসার ভাইয়েরা তাদের জমিজমার (কৃষি) কাজে ব্যস্ত থাকতো আর আমার মুহাজির ভাইয়েরা হাট-বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্যর উদ্দেশ্যে বেচা কেনার কাজে ব্যাস্ত থাকতেন। আর আমি রাসুলুল্ললাহ (ﷺ) এর সুহবত আমার জন্য অপরিহার্য করে নিতাম এবং খেয়ে না খেয়ে তাঁর সাহচর্যে থাকতাম। তাঁরা যখন অনুপস্থিত থাকতেন তখন আমি হাযির থাকতাম এবং তাঁরা ভুলে যেতেন আমি মুখস্থ করতাম।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদিন বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কে আছে, যে তাঁর কাপড়ের আচল বিছিয়ে দেবে আর আমার হাদীস গ্রহণ করবে? এরপর তা (কাপড়) নিজের বুকে মিলিয়ে নিলে সে যা শুনবে কখনও ভুলবে না। আমি আমার চাদর পেতে দিলাম এবং তিনি তাঁর হাদীস বর্ণনার সমাপ্তি টানলেন। এরপর আমি চাদরখানি আমার বুকে মিলিয়ে নিলাম। সেদিন হতে আমি কোন বিষয়ই বিস্মৃত হইনি যা তিনি বলেছেন (সবটুকুই স্মরণে আছে)।

আল্লাহ তাঁর কিতাবে দুটি আয়াত যদি নাযিল না করতেন তাহলে আমি কখনও হাদীস বর্ণনা করতাম না। আয়াত দুই এইঃ إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَى إِلَى آخِرِ الآيَتَيْنِ “আমি যে স্পষ্ট নিদর্শন ও পথ নির্দেশ অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্য, কিতাবে তা স্পষ্টভাবে ব্যাক্ত করার পরও যারা তা গোপন রাখে আল্লাহ তাদেরকে লানত দেন এবং অভিশাপকারীরাও অভিশাপ দেয়; কিন্তু যারা তাওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে আর (সত্যকে) স্পষ্টভাবে ব্যাক্ত করে, এ সকল লোক তারাই যাদের তাওবা আমি কবুল করি। (কারণ) আমি তো তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু” (২ঃ ১৫৯-১৬০)।
باب مِنْ فَضَائِلِ أَبِي هُرَيْرَةَ الدَّوْسِيِّ رضى الله عنه
وَحَدَّثَنِي حَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى التُّجِيبِيُّ، أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ، شِهَابٍ أَنَّ عُرْوَةَ بْنَ الزُّبَيْرِ، حَدَّثَهُ أَنَّ عَائِشَةَ قَالَتْ أَلاَ يُعْجِبُكَ أَبُو هُرَيْرَةَ جَاءَ فَجَلَسَ إِلَى جَنْبِ حُجْرَتِي يُحَدِّثُ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يُسْمِعُنِي ذَلِكَ وَكُنْتُ أُسَبِّحُ فَقَامَ قَبْلَ أَنْ أَقْضِيَ سُبْحَتِي وَلَوْ أَدْرَكْتُهُ لَرَدَدْتُ عَلَيْهِ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَمْ يَكُنْ يَسْرُدُ الْحَدِيثَ كَسَرْدِكُمْ .
قَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَقَالَ ابْنُ الْمُسَيَّبِ إِنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ يَقُولُونَ إِنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَدْ أَكْثَرَ وَاللَّهُ الْمَوْعِدُ وَيَقُولُونَ مَا بَالُ الْمُهَاجِرِينَ وَالأَنْصَارِ لاَ يَتَحَدَّثُونَ مِثْلَ أَحَادِيثِهِ وَسَأُخْبِرُكُمْ عَنْ ذَلِكَ إِنَّ إِخْوَانِي مِنَ الأَنْصَارِ كَانَ يَشْغَلُهُمْ عَمَلُ أَرَضِيهِمْ وَإِنَّ إِخْوَانِي مِنَ الْمُهَاجِرِينَ كَانَ يَشْغَلُهُمُ الصَّفْقُ بِالأَسْوَاقِ وَكُنْتُ أَلْزَمُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى مِلْءِ بَطْنِي فَأَشْهَدُ إِذَا غَابُوا وَأَحْفَظُ إِذَا نَسُوا وَلَقَدْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمًا " أَيُّكُمْ يَبْسُطُ ثَوْبَهُ فَيَأْخُذُ مِنْ حَدِيثِي هَذَا ثُمَّ يَجْمَعُهُ إِلَى صَدْرِهِ فَإِنَّهُ لَمْ يَنْسَ شَيْئًا سَمِعَهُ " . فَبَسَطْتُ بُرْدَةً عَلَىَّ حَتَّى فَرَغَ مِنْ حَدِيثِهِ ثُمَّ جَمَعْتُهَا إِلَى صَدْرِي فَمَا نَسِيتُ بَعْدَ ذَلِكَ الْيَوْمِ شَيْئًا حَدَّثَنِي بِهِ وَلَوْلاَ آيَتَانِ أَنْزَلَهُمَا اللَّهُ فِي كِتَابِهِ مَا حَدَّثْتُ شَيْئًا أَبَدًا ( إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَى) إِلَى آخِرِ الآيَتَيْنِ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু এ উম্মতের শিক্ষক ছিলেন এবং তাঁর প্রতিটি কথাই উম্মতের জন্য শিক্ষণীয় ছিল, তাই তিনি প্রতিটি কথা বলতেন সুস্পষ্টভাবে। ফলে তাঁর কোনও কথা বুঝতে শ্রোতার কষ্ট হতো না। দীনী বিষয়ে যারা বক্তব্য দান করে, তাদের এদিকে লক্ষ রাখা দরকার। অনেকে বক্তব্যদানের সময় খুব তাড়াতাড়ি করে কথা বলে। শ্রোতার পক্ষে তা বুঝে ওঠা কঠিন হয়ে যায়। বক্তব্য দান করাই তো হয় মানুষকে বোঝানোর জন্য। তারা যদি বুঝতেই না পারে, তবে সে বক্তব্যদানের সার্থকতা কী? কাজেই কোনও বক্তারই হড়বড় করে কথা বলা উচিত নয়। ধীরে ধীরে গুছিয়ে বলা উচিত। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. কোনও কোনও বক্তার এরকম হড়বড় করে বলা বক্তব্য শুনে তাতে আপত্তি জানান। তিনি তাদের সংশোধনকল্পে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্যের ধরন তাদের সামনে তুলে ধরেন এবং সে প্রসঙ্গেই এ হাদীছটি তিনি বর্ণনা করেন। হাদীসে আছে যে-
ما كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يسرد سردكم هذا، ولكنه كان يتكلم بكلام يبينه، فصل، يحفظه من جلس إليه
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের মতো এরকম হড়বড় করতেন না। বরং তিনি সুস্পষ্টভাবে পরিষ্কার করে কথা বলতেন, তাঁর কাছে যারা বসত তারা মুখস্থ করে ফেলতে পারত।'(জামে' তিরমিযী: ৩৬৩৯; মুসনাদুল বাযযার ১৫৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৩৬৯৬; মুসনাদে ইসহাক ইবন রাহুয়াহ: ১৭০৪)

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

যে-কোনও কথা পরিষ্কারভাবে বলা উচিত, যাতে শ্রোতা তা ভালোভাবে বুঝতে পারে। শিক্ষকদের জন্য এটা আরও বেশি জরুরি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ৬১৭৪ | মুসলিম বাংলা