আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৪৭- সাহাবায়ে কিরামের রাঃ মানাকিব ও ফাযায়েল

হাদীস নং: ৬০৬৪
আন্তর্জাতিক নং: ২৪৩৭
১২. উম্মুল মু’মিনীন খাদীজা (রাযিঃ) এর ফযীলত
৬০৬৪। সুয়ায়দ ইবনে সাঈদ (রাহঃ) ......... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খাদীজা (রাযিঃ) এর বোন হালা বিনতে খুওয়াইলিদ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) খাদীজার অনুমতি চাওয়ার কথা স্মরণ করে শিহরিত হয়ে বললেন, ইয়া আল্লাহ! এতো খূওয়াইলিদের কন্যা হালা। এতে আমি ঈর্ষান্বিত হয়ে বললাম, আপনি কি স্মরণ করছেন কুরাইশের এক লাল মাড়ি এবং সরু পায়ের গোছাওয়ালা বৃদ্ধাকে, যিনি যুগের আবর্তনে বিলীন হয়ে গেছেন। এরপর আল্লাহ তাআলা আপনাকে তাঁর পরিবর্তে উত্তম সহধর্মিনী দান করেছেন।
باب فَضَائِلِ خَدِيجَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ رضى الله تعالى عنها
حَدَّثَنَا سُوَيْدُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُسْهِرٍ، عَنْ هِشَامٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتِ اسْتَأْذَنَتْ هَالَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ أُخْتُ خَدِيجَةَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَعَرَفَ اسْتِئْذَانَ خَدِيجَةَ فَارْتَاحَ لِذَلِكَ فَقَالَ " اللَّهُمَّ هَالَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ " . فَغِرْتُ فَقُلْتُ وَمَا تَذْكُرُ مِنْ عَجُوزٍ مِنْ عَجَائِزِ قُرَيْشٍ حَمْرَاءِ الشِّدْقَيْنِ هَلَكَتْ فِي الدَّهْرِ فَأَبْدَلَكَ اللَّهُ خَيْرًا مِنْهَا .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

(খাদীজা রাযি.-এর বোন হালাঃ বিনত খুওয়াইলিদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চাইলেন)। হালাঃ বিনত খুওয়াইলিদ রাযি. ছিলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বড় কন্যা হযরত যায়নাব রাযি.-এর শ্বাশুড়ি। অর্থাৎ নবী-জামাতা আবুল আস রাযি. ইবন রাবী'র মা। আবুল আস রাযি.-এর পিতার নাম রাবী' ইবন আব্দুল উয্যা। ঐতিহাসিকগণ হালাঃ বিনত খুওয়াইলিদ রাযি.-কে সাহাবীরূপে উল্লেখ করেছেন। আলোচ্য হাদীছ দ্বারাও তা অনুমিত হয়।

তিনি এসে সাক্ষাতের অনুমতি চাইলে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে চিনতে পারলেন। এখানে বলা হয়েছে- فعرف (খাদীজার অনুমতি চাওয়ার কথা তাঁর স্মরণ হলো)। সাধারণত এক বোনের কন্ঠস্বরের সঙ্গে অন্য বোনের কণ্ঠস্বরের মিল থাকে। হযরত খাদীজা রাযি.-এর কন্ঠস্বরের সঙ্গে বোন হালাঃ রাযি.-এর কন্ঠস্বরের মিল ছিল। সুতরাং তাঁর কণ্ঠস্বর শুনে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হযরত খাদীজা রাযি.-এর কথা মনে পড়ে গেল। এ কণ্ঠস্বর যে তাঁর বড় পরিচিত! হুবহু এরকম স্বর ও সুরেই যে এককালে বহুদিনের জীবনসঙ্গিনী, দুর্দিনের সমব্যথিনী হযরত খাদীজা রাযি.-ও অনুমতি চাইতেন! পুরোনো স্মৃতি তাজা হয়ে উঠল। অতীত দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল, যে দিনগুলোয় মহিয়সী আম্মাজান মনপ্রাণ উজাড় করে তাঁর খেদমতে নিয়োজিত থেকেছেন এবং নিজের সর্বস্ব তাঁর সেবাই উৎসর্গ করেছেন। সুতরাং فارتاح لذلك ، فقال : اللهم هالة بنت خويلد (তিনি আনন্দোৎফুল্ল হলেন। বলে উঠলেন, ইয়া আল্লাহ! হালাঃ বিনত খুওয়ায়লিদ?)। অর্থাৎ এ যে খুওয়াইলিদের কন্যা হালাঃ! তোমরা একে অভ্যর্থনা জানাও। সম্মানজনকভাবে গ্রহণ কর। তাঁকে এ সম্মান দেখানো প্রকারান্তরে আম্মাজান খাদীজা রাযি.-এর প্রতিই সম্মানপ্রদর্শন। এভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সম্মানিতা জান্নাতবাসিনী স্ত্রীর সম্মানার্থে তাঁর জীবিত বোনকে সম্মান দেখালেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. আগত অতিথিকে সাদরে গ্রহণ করে নেওয়া নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত।

খ. মরহুমা স্ত্রীর সম্মানার্থে তার জীবিত আত্মীয়-স্বজনকেও সম্মান করা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)