আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

১৯- জানাযার অধ্যায়

হাদীস নং: ১৩০৪
আন্তর্জাতিক নং: ১৩৮৭
৮৭৭. সোমবারে মৃত্যু।
১৩০৪। মু’আল্লা ইবনে আসাদ (রাহঃ) ......... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু বকর (রাযিঃ) এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কয় খণ্ড কাপড়ে তোমরা নবী (ﷺ) কে কাফন দিয়েছিলে? আয়িশা (রাযিঃ) বললেন, তিন খণ্ড সাদা সাহুলী কাপড়ে, এগুলোতে (সেলাইকৃত) জামা ও পাগড়ী ছিল না। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, কোন দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইন্‌তিকাল করেন? আয়িশা (রাযিঃ) বললেন, সোমবার। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আজ কী বার? তিনি [আয়িশা (রাযিঃ)] বললেন, আজ সোমবার। তিনি [আবু বকর (রাযিঃ)] বললেন, আমি আশা করি এখন থেকে আগত রাতের মধ্যে (আমার মৃত্যু হবে)। এরপর অসুস্থকালীন আপন পরিধেয় কাপড়ের প্রতি লক্ষ্য করে তাতে জাফরানী রং এর চিহ্ন দেখতে পেয়ে বললেন, আমার এ কাপড়টি ধুয়ে তার সাথে আরো দু’খণ্ড কাপড় বৃদ্ধি করে আমার কাফন দিবে। আমি (আয়িশা) বললাম, এটা (পরিধেয় কাপড়টি) পুরাতন। তিনি বললেন, মৃত ব্যক্তির চেয়ে জীবিতদের নতুন কাপড়ের প্রয়োজন অধিক। আর কাফন হল বিগলিত শবদেহের জন্য। তিনি মঙ্গলবার রাতের সন্ধ্যায় (অর্থাৎ সোমবার শেষ প্রহরে--টিকাকার) ইন্‌তিকাল করেন, প্রভাতের পূর্বেই তাঁকে দাফন করা হয়।
باب مَوْتِ يَوْمِ الاِثْنَيْنِ
1387 - حَدَّثَنَا مُعَلَّى بْنُ أَسَدٍ، حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، عَنْ هِشَامٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: دَخَلْتُ عَلَى أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، فَقَالَ: فِي كَمْ كَفَّنْتُمُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَتْ: «فِي ثَلاَثَةِ أَثْوَابٍ بِيضٍ سَحُولِيَّةٍ، لَيْسَ فِيهَا قَمِيصٌ وَلاَ عِمَامَةٌ» وَقَالَ لَهَا: فِي أَيِّ يَوْمٍ تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَتْ: «يَوْمَ الِاثْنَيْنِ» قَالَ: فَأَيُّ يَوْمٍ هَذَا؟ قَالَتْ: «يَوْمُ الِاثْنَيْنِ» قَالَ: أَرْجُو فِيمَا بَيْنِي وَبَيْنَ اللَّيْلِ، فَنَظَرَ إِلَى ثَوْبٍ عَلَيْهِ، كَانَ يُمَرَّضُ فِيهِ بِهِ رَدْعٌ مِنْ زَعْفَرَانٍ، فَقَالَ: اغْسِلُوا ثَوْبِي هَذَا وَزِيدُوا عَلَيْهِ ثَوْبَيْنِ، فَكَفِّنُونِي فِيهَا، قُلْتُ: إِنَّ هَذَا خَلَقٌ، قَالَ: إِنَّ الحَيَّ أَحَقُّ بِالْجَدِيدِ مِنَ المَيِّتِ، إِنَّمَا هُوَ لِلْمُهْلَةِ فَلَمْ يُتَوَفَّ حَتَّى أَمْسَى مِنْ لَيْلَةِ الثُّلاَثَاءِ، وَدُفِنَ قَبْلَ أَنْ يُصْبِحَ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাফনের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তাঁকে সাদা সাহূলী কাপড় দ্বারা কাফন দেওয়া হয়েছে। সাহূল ইয়ামানের একটি জায়গার নাম। সেকালে কাপড় তৈরির জন্য জায়গাটি বিখ্যাত ছিল। সেখানকার তৈরি কাপড়কে সাহূলী কাপড় বলা হত। হাদীছটিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাফনে তিনটি কাপড় ব্যবহৃত হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে এ কথাও বলা হয়েছে যে, তাতে কামীস (জামা) ও পাগড়ি ছিল না। মায়্যিতের কাফনে তিনটি কাপড় ব্যবহার সম্পর্কে সকলেই একমত। তবে তাতে কামীস থাকবে কি না, এ বিষয়ে মতভিন্নতা আছে। হানাফী মাযহাব অনুযায়ী তিনটি কাপড়ের একটি হল কামীস। অন্যদু'টি হল ইযার ও লিফাফা। আলোচ্য হাদীছটি বাহ্যত হানাফী মতের পরিপন্থি মনে হয়। প্রকৃতপক্ষে পরিপন্থি নয়। কারণ এতে যে কামীস ছিল না বলা হয়েছে, তার মানে জীবিতরা যেরকম কামীস বা জামা পরে, মায়্যিতের কামীস সেরকম নয়। মায়্যিতের কামীসে কলি, হাতা ও সেলাই থাকে না। কেবল মাথা ঢোকানোর জন্য একটা ফোকর থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে কামীস পরানো হয়েছিল, খুবসম্ভব তা এরকমই ছিল। জীবিতদের কামীসের মতো ছিল না। সে হিসেবেই হাদীছটিতে কামীস না থাকার কথা বলা হয়েছে। এরকম ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন এজন্য যে, অন্যান্য বর্ণনায় তাঁর কাফনের মধ্যে কামীস থাকার কথা বলা হয়েছে। এক বর্ণনায় আছে কামীস নেই, অপর বর্ণনায় আছে কামীস ছিল। বাহ্যত এটা সাংঘর্ষিক। এর সমাধান এভাবে হতে পারে যে, কামীস ছিল না মানে জীবিতদের জামার মতো জামা ছিল না। আর কামীস থাকার মানে সেলাই ও হাতাবিহীন জামা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

মায়্যিতকে তিনটি কাপড় দিয়ে কাফন পরাতে হয়। তা সাদা হওয়া উত্তম।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)