আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৪৬- ফাযায়েল ও শামাঈল অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৮২৮
১৭. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মৃদু হাসি এবং উত্তম সমাজ জীবন যাপন
৫৮২৮। ইয়াহয়া ইবনে ইয়াহয়া (রাহঃ) ......... সিমাক ইবনে হারব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনে সামুরা (রাযিঃ) কে প্রশ্ন করলাম, আপনি কি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে বসতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, অনেক। তিনি ফজরের নামায যেখানে আদায় করতেন, সূর্যোদয়ের পূর্বে সে মুসল্লা থেকে উঠতেন না। তারপর যখন সূর্য উঠতো, তখন তিনি উঠে দাঁড়াতেন। লোকেরা কথাবার্তা বলতো, জাহিলী যুগের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতো এবং হাসতো আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুচকি হাসতেন।
باب تَبَسُّمِهِ صلى الله عليه وسلم وَحُسْنِ عِشْرَتِهِ .
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا أَبُو خَيْثَمَةَ، عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ، قَالَ قُلْتُ لِجَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ أَكُنْتَ تُجَالِسُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ نَعَمْ كَثِيرًا كَانَ لاَ يَقُومُ مِنْ مُصَلاَّهُ الَّذِي يُصَلِّي فِيهِ الصُّبْحَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ فَإِذَا طَلَعَتْ قَامَ وَكَانُوا يَتَحَدَّثُونَ فَيَأْخُذُونَ فِي أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ فَيَضْحَكُونَ وَيَتَبَسَّمُ صلى الله عليه وسلم .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে হযরত জাবির ইবন সামুরা রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি আমল উল্লেখ করেছেন। আমলটি হল ফজরের নামাযের পর নামাযের স্থানে সূর্য ভালোভাবে উদিত হওয়া পর্যন্ত বসে থাকা। এ আমল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত করতেন। এ সময় তিনি আল্লাহ তা'আলার যিকির করতেন। এটি তাঁর খুবই প্রিয় আমল ছিল। হযরত আবূ উমামা রাযি. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لأَنْ أَقْعُدَ أَذْكُرُ اللَّهَ وَأُكَبِّرُهُ وَأَحْمَدُهُ وَأُسَبِّحُهُ وَأُهَلِّلُهُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَعْتِقَ رَقَبَتَيْنِ ، أَوْ أَكْثَرَ مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ ، وَمِنْ بَعْدِ الْعَصْرِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَعْتِقَ أَرْبَعَ رِقَابٍ مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ
'আমি সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহর যিকির করব। অর্থাৎ আল্লাহু আকবার, আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানাল্লাহ ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু যপতে থাকব। এটা আমার কাছে ইসমা'ঈল আলাইহিস সালামের বংশের দুই বা ততোধিক গোলাম আযাদ করা অপেক্ষাও বেশি প্রিয়। এমনিভাবে আসরের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত এভাবে যিকির করতে থাকাটা আমার কাছে ইসমা'ঈল আলাইহিস সালামের বংশের চারজন গোলাম আযাদ করা অপেক্ষাও বেশি প্রিয়।'
(মুসনাদে আহমাদ: ২২১৯৪; মুসনাদুল বাযযার: ১২৯৯; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর:৮০২৮)

ফজরের নামাযের পর নামাযের স্থানে বসে যিকির করার আমলটি একাকীও করা যেতে পারে, আবার অন্যান্য যিকিরকারীদের সঙ্গে বসেও করা যেতে পারে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় পন্থায়ই এ সময় আল্লাহর যিকির করতেন। অন্যান্য যিকিরকারীদের সঙ্গে বসে যিকির করার প্রমাণ পাওয়া যায় হযরত আনাস ইবন মালিক রাযি. থেকে বর্ণিত একটি হাদীছ দ্বারা। তিনি বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لأن أقعد مع قوم يذكرون الله تعالى من صلاة الغداة, حتى تطلع الشمس, أحب إلي من أن أعتق أربعة من ولد إسماعيل, ولأن أقعد مع قوم يذكرون الله من صلاة العصر إلى أن تغرب الشمس, أحب إلي من أن أعتق أربعة
'আমি ফজরের নামাযের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত ওইসব লোকের সঙ্গে বসে থাকব, যারা আল্লাহ তা'আলার যিকির করে। এটা আমার কাছে ইসমা'ঈল আলাইহিস সালামের বংশের চারজন গোলাম আযাদ করা অপেক্ষাও বেশি প্রিয়। এমনিভাবে আসরের নামাযের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ওইসব লোকের সঙ্গে বসে থাকব, যারা আল্লাহ তা'আলার যিকির করে। এটা আমার কাছে ইসমা'ঈল আলাইহিস সালামের বংশের চারজন গোলাম আযাদ করা অপেক্ষাও বেশি প্রিয়’।
(সুনানে আবূ দাউদ: ৩৬৬৭; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা: ৪১২৬; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৩৯০৭; ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লা ৬৭০; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা:১৫৯৬০; শু'আবুল ঈমান: ৫৫৬;)

ফজরের নামাযের পর সূর্য ভালোভাবে উদিত হওয়া পর্যন্ত আপন স্থানে বসে আল্লাহ তা'আলার যিকির করার পর যদি ইশরাকের নামায পড়া হয়, তবে সেটিও অনেক বড় আমল। এর ফযীলত সম্পর্কে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-
من صلى الغداة في جماعة ثم قعد يذكر الله حتى تطلع الشمس ثم صلى ركعتين كانت له كأجر حجة وعمرة"، قال: قال رسول الله - صلى الله عليه وسلم -: "تامة تامة تامة"
'যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাতের সঙ্গে আদায় করে, তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে থেকে আল্লাহর যিকির করে, তারপর দু'রাকাত নামায পড়ে, তার জন্য রয়েছে একটি হজ্জ ও একটি উমরার ছাওয়াব। হযরত আনাস বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথার পর বলেন, পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ (অর্থাৎ পরিপূর্ণ হজ্জ ও উমরার ছাওয়াব)’। (জামে' তিরমিযী: ৫৮৬; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৭১০)

অন্য বর্ণনায় আছে, এসময় তিনি আসন দিয়ে বসতেন। বোঝা গেল আসন দিয়ে বসে আল্লাহ তা'আলার যিকির করা জায়েয আছে। বস্তুত দীর্ঘক্ষণ বসে যিকির করার জন্য বসার এ ভঙ্গিটিই বেশি উপযোগী। কেননা অন্যান্য ভঙ্গি অপেক্ষা এভাবে বসাটা বেশি আরামদায়ক। সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলার যিকিরে রত থাকাটা যেহেতু দীর্ঘ সময়ের জন্য হয়ে থাকে, তাই এ সময় আসন দিয়ে বসাটাই ভালো। এতে সহজে ক্লান্তিবোধ হবে না। ফলে মনোযোগের সঙ্গে যিকিরে রত থাকা সম্ভব হবে। অন্যান্য বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, যিকির ততক্ষণই করা সমীচীন, যতক্ষণ শরীর-মনে উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকে। যখন ক্লান্তিবোধ হবে, তখন ক্ষান্ত হয়ে যাওয়া উচিত। তাই ক্লান্তির কারণে যাতে ক্ষান্ত হতে না হয়, সে লক্ষ্যে দীর্ঘ সময়ের যিকিরে আসন দিয়ে বসাটাই বেশি সঙ্গতিপূর্ণ।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ফজরের নামাযের পর সূর্য ভালোভাবে উদিত হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলার যিকিরে রত থাকা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত।

খ. এ যিকিরের সময় আসন দিয়ে বসা ভালো।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ৫৮২৮ | মুসলিম বাংলা