আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
৪৬- ফাযায়েল ও শামাঈল অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৭৫৯
আন্তর্জাতিক নং: ২২৮৫
৬. উম্মতের প্রতি নবী (ﷺ) এর মমতা এবং তাদের জন্য ক্ষতিকর বিষয় থেকে গুরুত্ব সহকারে সতর্কীকরণ
৫৭৫৯। মুহাম্মাদ ইবনে হাতিম (রাহঃ) ......... জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আমার দৃষ্টান্তরাজি ও তোমাদের দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির দৃষ্টান্তের মত যে আগুন জালাল, ফলে ফড়িং দল আর পতঙ্গ তাতে পড়তে লাগল আর সে ব্যক্তি তাদের তা থেকে তাড়াতে লাগল। আমিও আগুন থেকে রক্ষার জন্য তোমাদের কোমরবন্ধ ধরে টানছি, আর তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে যাচ্ছ।
باب شَفَقَتِهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى أُمَّتِهِ وَمُبَالَغَتِهِ فِي تَحْذِيرِهِمْ مِمَّا يَضُرُّهُمْ
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ حَاتِمٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا سَلِيمٌ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ مِينَاءَ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَثَلِي وَمَثَلُكُمْ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَوْقَدَ نَارًا فَجَعَلَ الْجَنَادِبُ وَالْفَرَاشُ يَقَعْنَ فِيهَا وَهُوَ يَذُبُّهُنَّ عَنْهَا وَأَنَا آخِذٌ بِحُجَزِكُمْ عَنِ النَّارِ وَأَنْتُمْ تَفَلَّتُونَ مِنْ يَدِي " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে তাঁর প্রচেষ্টা এবং সে প্রচেষ্টার বিপরীতে উম্মতের কর্মপন্থাকে একটি দৃষ্টান্ত দ্বারা বুঝিয়েছেন। দৃষ্টান্তটির ব্যাখ্যা এই যে, এক ব্যক্তি খোলা মাঠে আগুন জ্বালাল। সে আগুন যখন দাউদাউ করে জ্বলে উঠল, তখন চারদিক থেকে প্রজাপতি ও অন্যান্য পোকামাকড়েরা দলে দলে সেদিকে ছুটে আসতে থাকল এবং সে আগুনের মধ্যে পড়ে নিজেদের জীবন ধ্বংস করতে লাগল।
আগুনের একটা বাহ্যিক সৌন্দর্য ও আকর্ষণ আছে। কোথাও আগুন জ্বললে সে সৌন্দর্য ও আকর্ষণে আকৃষ্ট হয়ে পঙ্গপালেরা তাতে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে। এটাই পঙ্গপালদের প্রকৃতি। তারা কেবল আগুনের বাহ্যিক সৌন্দর্যটাই দেখে। তার ভেতরের ধ্বংসক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারে না। যে ব্যক্তি আগুন জ্বালিয়েছে সে তা ঠিকই জানে। তাই সে তাদেরকে তা থেকে বাঁচানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। কিন্তু তারা তার প্রচেষ্টা উপেক্ষা করে সেদিকেই ছুটে যায়। ফলে নিজেদের ধ্বংসই হয় তাদের পরিণতি।
জাহান্নামের আগুন ও মানুষের ব্যাপারটাও সেরকমই। যে সকল কাজের পরিণামে মানুষকে জাহান্নামে যেতে হবে তা সবই বেশ আকর্ষণীয় এবং বাহ্যত তা সুন্দর ও সুখকর। কিন্তু তার ভেতরে রয়েছে নিদারুণ দুর্ভোগ। সেসব কাজে জড়িত হওয়ার পরিণাম হচ্ছে তার ভেতরগত দুর্ভোগের শিকার হওয়া তথা জাহান্নামে পতিত হওয়া। মানুষ সেই ভেতরগত দুর্ভোগ দেখতে পায় না এবং গভীরভাবে তা চিন্তাও করে না। বাহ্যিক চমক দেখেই তাতে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ফলে অন্ধের মত সেদিকে ছুটে যায়। সেদিকে ছুটে যাওয়ার পরিণাম কী—তা তারা না জানলেও নবী-রাসূলগণ ভালোভাবেই জানেন। আল্লাহ তা'আলা ওহীর মাধ্যমে তাদেরকে তা জানিয়ে দেন। তাই তাঁরা মানুষকে সেইসব কাজের পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করেন এবং মানুষ যাতে সেসব কাজে লিপ্ত না হয় তাই তাদেরকে তা থেকে ফেরানোর চেষ্টা করেন।
হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী ও রাসূল। ওই একই চেষ্টা তিনিও করেছেন; বরং অধিকতর দরদ ও অধিকতর পরিপূর্ণতার সাথে করেছেন। তিনি তাঁর সেই দরদী চেষ্টার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, আমি তো তোমাদের কোমর ধরে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে সে আগুনে পড়ে ধ্বংস হওয়ার জন্য দাপাদাপি করছ!
এ দৃষ্টান্ত দ্বারা উম্মতকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে কতটা আকুতি ও ব্যাকুলতা ছিল তা কিছুটা আঁচ করা যায়। তিনি যে কোমর ধরে রাখার কথা বলেছেন তা দ্বারা তাঁর ওই নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টার কথা বোঝানো উদ্দেশ্য, যা তিনি তাঁর আনীত দীন ও শরী'আতের দিকে মানুষকে ডাকা ও তা অনুসরণ করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
এ হাদীছ দ্বারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উম্মতকে তাঁর দীন ও সুন্নত অনুযায়ী চলতে উৎসাহ দেওয়া। তিনি যেন বলতে চাচ্ছেন, হে আমার উম্মত। আমি তোমাদের সামনে যে দীন এবং আমার যে সুন্নত পেশ করলাম তা শক্ত করে ধরে রাখ। তাহলে তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে পারবে এবং পরম সুখের জান্নাতে তোমাদের ঠিকানা হবে। পক্ষান্তরে তোমরা যদি তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও এবং নফসের চাহিদা মেটানোর জন্য দুনিয়ার ভোগ ও উপভোগে মত্ত হয়ে পড়, তবে তা আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার মতই একটি ধ্বংসাত্মক কাজ হবে। পরিণামে তোমাদেরকে জাহান্নামে যেতে হবে। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করুন এবং পরম সুখের জান্নাতে পৌঁছার জন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত মোতাবেক জীবন যাপনের তাওফীক দিন- আমীন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা উম্মতের প্রতি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরদ ও মহব্বত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সেই দরদের কিছুটা অংশ আমাদের মধ্যেও থাকা উচিত।
খ. দুনিয়ার আকর্ষণীয় বস্তুরাজির লোভে পড়ে যাওয়া উচিত নয়। সে লোভের পরিণাম জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া।
গ. জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের রেখে যাওয়া শরী'আত ও সুন্নত আঁকড়ে ধরা।
ঘ. নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করার পাশাপাশি উম্মতও যাতে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারে সে ব্যাপারে চেষ্টা চালানোও এ হাদীছের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
আগুনের একটা বাহ্যিক সৌন্দর্য ও আকর্ষণ আছে। কোথাও আগুন জ্বললে সে সৌন্দর্য ও আকর্ষণে আকৃষ্ট হয়ে পঙ্গপালেরা তাতে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে। এটাই পঙ্গপালদের প্রকৃতি। তারা কেবল আগুনের বাহ্যিক সৌন্দর্যটাই দেখে। তার ভেতরের ধ্বংসক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারে না। যে ব্যক্তি আগুন জ্বালিয়েছে সে তা ঠিকই জানে। তাই সে তাদেরকে তা থেকে বাঁচানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। কিন্তু তারা তার প্রচেষ্টা উপেক্ষা করে সেদিকেই ছুটে যায়। ফলে নিজেদের ধ্বংসই হয় তাদের পরিণতি।
জাহান্নামের আগুন ও মানুষের ব্যাপারটাও সেরকমই। যে সকল কাজের পরিণামে মানুষকে জাহান্নামে যেতে হবে তা সবই বেশ আকর্ষণীয় এবং বাহ্যত তা সুন্দর ও সুখকর। কিন্তু তার ভেতরে রয়েছে নিদারুণ দুর্ভোগ। সেসব কাজে জড়িত হওয়ার পরিণাম হচ্ছে তার ভেতরগত দুর্ভোগের শিকার হওয়া তথা জাহান্নামে পতিত হওয়া। মানুষ সেই ভেতরগত দুর্ভোগ দেখতে পায় না এবং গভীরভাবে তা চিন্তাও করে না। বাহ্যিক চমক দেখেই তাতে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ফলে অন্ধের মত সেদিকে ছুটে যায়। সেদিকে ছুটে যাওয়ার পরিণাম কী—তা তারা না জানলেও নবী-রাসূলগণ ভালোভাবেই জানেন। আল্লাহ তা'আলা ওহীর মাধ্যমে তাদেরকে তা জানিয়ে দেন। তাই তাঁরা মানুষকে সেইসব কাজের পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করেন এবং মানুষ যাতে সেসব কাজে লিপ্ত না হয় তাই তাদেরকে তা থেকে ফেরানোর চেষ্টা করেন।
হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী ও রাসূল। ওই একই চেষ্টা তিনিও করেছেন; বরং অধিকতর দরদ ও অধিকতর পরিপূর্ণতার সাথে করেছেন। তিনি তাঁর সেই দরদী চেষ্টার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, আমি তো তোমাদের কোমর ধরে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে সে আগুনে পড়ে ধ্বংস হওয়ার জন্য দাপাদাপি করছ!
এ দৃষ্টান্ত দ্বারা উম্মতকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে কতটা আকুতি ও ব্যাকুলতা ছিল তা কিছুটা আঁচ করা যায়। তিনি যে কোমর ধরে রাখার কথা বলেছেন তা দ্বারা তাঁর ওই নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টার কথা বোঝানো উদ্দেশ্য, যা তিনি তাঁর আনীত দীন ও শরী'আতের দিকে মানুষকে ডাকা ও তা অনুসরণ করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
এ হাদীছ দ্বারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উম্মতকে তাঁর দীন ও সুন্নত অনুযায়ী চলতে উৎসাহ দেওয়া। তিনি যেন বলতে চাচ্ছেন, হে আমার উম্মত। আমি তোমাদের সামনে যে দীন এবং আমার যে সুন্নত পেশ করলাম তা শক্ত করে ধরে রাখ। তাহলে তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে পারবে এবং পরম সুখের জান্নাতে তোমাদের ঠিকানা হবে। পক্ষান্তরে তোমরা যদি তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও এবং নফসের চাহিদা মেটানোর জন্য দুনিয়ার ভোগ ও উপভোগে মত্ত হয়ে পড়, তবে তা আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার মতই একটি ধ্বংসাত্মক কাজ হবে। পরিণামে তোমাদেরকে জাহান্নামে যেতে হবে। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করুন এবং পরম সুখের জান্নাতে পৌঁছার জন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত মোতাবেক জীবন যাপনের তাওফীক দিন- আমীন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা উম্মতের প্রতি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরদ ও মহব্বত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সেই দরদের কিছুটা অংশ আমাদের মধ্যেও থাকা উচিত।
খ. দুনিয়ার আকর্ষণীয় বস্তুরাজির লোভে পড়ে যাওয়া উচিত নয়। সে লোভের পরিণাম জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া।
গ. জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের রেখে যাওয়া শরী'আত ও সুন্নত আঁকড়ে ধরা।
ঘ. নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করার পাশাপাশি উম্মতও যাতে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারে সে ব্যাপারে চেষ্টা চালানোও এ হাদীছের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
