আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৪১- চিকিৎসা অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৫১৯
১৯. রোগিকে ঝাড়-ফুঁক করা মুস্তাহাব
৫৫১৯। যুহাইর ইবনে হারব ও ইসহাক ইবনে ইবরাহীম (রাহঃ) ......... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের কোন লোক অসুস্থ হয়ে পড়লে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর ডান হাত মুবারক দিয়ে তাকে মুছে দিতেন, এরপর বলতেনঃ

أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا

অর্থাৎ সঙ্কট দূর করে দিন, হে মানুষের-প্রতিপালক! আর শিফা ও নিরাময় করুন, আপনিই নিরাময়কারী। আপনার শিফা ও নিরাময় ব্যতীত আর কোন (বাস্তব নির্ভরযোগ্য) শিফা নেই। এমন নিরাময় করুন যার পর কোন রোগ-ব্যাধি অবশিষ্ট না থাকে।

পরে যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অসুস্থ হলেন এবং রোগভারে অবসন্ন হলেন, তখন আমি তাঁর হাত তুলে ধরলাম যাতে তিনি যেমন করতেন, আমিও তেমন করে (মুছে) দিতে পারি। কিন্তু তিনি আমার হাত থেকে তার হাত টেনে (ছাড়িয়ে) নিলেন এবং পরে বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে মহান বন্ধুর সঙ্গে মিলিত হওয়ার ব্যাবস্থা করুন! তিনি [আয়িশা (রাযিঃ)] বলেন, আমি লক্ষ্য করে দেখতে পেলাম যে, তাঁর ওফাত হয়ে গেছে।
باب اسْتِحْبَابِ رُقْيَةِ الْمَرِيضِ
حَدَّثَنَا زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَإِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ إِسْحَاقُ أَخْبَرَنَا وَقَالَ، زُهَيْرٌ - وَاللَّفْظُ لَهُ - حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي الضُّحَى، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا اشْتَكَى مِنَّا إِنْسَانٌ مَسَحَهُ بِيَمِينِهِ ثُمَّ قَالَ " أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا " . فَلَمَّا مَرِضَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَثَقُلَ أَخَذْتُ بِيَدِهِ لأَصْنَعَ بِهِ نَحْوَ مَا كَانَ يَصْنَعُ فَانْتَزَعَ يَدَهُ مِنْ يَدِي ثُمَّ قَالَ " اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَاجْعَلْنِي مَعَ الرَّفِيقِ الأَعْلَى " . قَالَتْ فَذَهَبْتُ أَنْظُرُ فَإِذَا هُوَ قَدْ قَضَى .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে তার শরীরে হাত বোলাতেন এবং হাদীছে বর্ণিত দু'আটি পাঠ করতেন। একই দু'আ বিভিন্ন হাদীছে সামান্য শাব্দিক পার্থক্যের সঙ্গে বর্ণিত হয়েছে। অর্থের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য নেই। কাজেই দু'আটি যে-কোনও বর্ণনা অনুসারেই পড়া যেতে পারে।

বলাবাহুল্য রোগীর গায়ে হাত বোলানোর ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম রক্ষা করা চাই। যেমন নিজ হাত পরিষ্কার থাকা, রোগীর যাতে কষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা এবং অভিজ্ঞ ও দীনদার চিকিৎসকের নিষেধ না থাকা।

দু'আটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ। এতে প্রথমেই আল্লাহ তা'আলাকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে যে- اَللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ (মানুষের প্রতিপালক হে আল্লাহ)! অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনিই মানুষের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রক্ষাকর্তা। আপনি আপনার সৃষ্টির যথাযথ প্রতিপালন করে থাকেন। যাবতীয় ক্ষতিকর বিষয় থেকে তাকে আপনিই রক্ষা করতে পারেন ও রক্ষা করেও থাকেন। আপনি ছাড়া আর কোনও রক্ষাকর্তা নেই। তাই আপনার এ বান্দার বিপদে আপনারই আশ্রয় গ্রহণ করছি। সে যে কষ্ট ও ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে, তাকে তা থেকে মুক্ত কেবল আপনিই করতে পারেন। সুতরাং-
أَذْهِبَ الْبَأْسَ، اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي (কষ্ট দূর করুন। আরোগ্য দিন। আপনিই আরোগ্যদাতা)। অর্থাৎ আরোগ্যদান করা আপনারই কাজ। এটা যেহেতু আপনারই কাজ, তাই আমরা এর জন্য আপনারই শরণাপন্ন হচ্ছি। বস্তুত এটাই নিয়ম। রোগ-ব্যাধি হলে প্রধান কাজ আল্লাহ তা'আলার শরণাপন্ন হওয়া। চিকিৎসা করানো নিষেধ নয়। বাহ্যিক উপায়-উপকরণ যা-কিছুই অবলম্বন করা সম্ভব তা অবশ্যই করবে। কিন্তু মূল ভরসাটা থাকবে আল্লাহর উপরই। কারণ উপায়-উপকরণ নিজে নিজে কিছু করতে পারে না। আল্লাহ তা'আলাই তা দ্বারা উপকার সাধন করেন। তাই তো হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর কওমকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন-
وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ
'এবং আমি যখন পীড়িত হই, তিনিই আমাকে শিফা দান করেন’। (সূরা শু'আরা, আয়াত ৮০)

হযরত আয়্যুব আলাইহিস সালাম তাঁর অসুস্থ অবস্থায় আল্লাহ তা’আলারই শরণাপন্ন হয়েছিলেন। কুরআন মাজীদে তাঁর সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে-
وَأَيُّوبَ إِذْ نَادَى رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنْتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ . فَاسْتَجَبْنَا لَهُ فَكَشَفْنَا مَا بِهِ مِنْ ضُرٍّ
'এবং আয়্যুবকে দেখো, যখন সে নিজ প্রতিপালককে ডেকে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার এই কষ্ট দেখা দিয়েছে এবং তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু। আমি তার দু'আ কবুল করলাম এবং সে যে কষ্টে আক্রান্ত ছিল তা দূর করে দিলাম।’ -(সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৮৩, ৮৪)

সকল নবী-রাসূলের শ্রেষ্ঠ আমাদের নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এ হাদীছটির মাধ্যমে আমাদেরকে সেই শিক্ষাই দান করেছেন। দু'আটির ভেতর তিনি বলেন-
لا شفاء إلا شفاؤك (আপনার আরোগ্যদান ছাড়া কোনও আরোগ্য নেই)। অর্থাৎ আপনি আরোগ্য না দিলে অন্য কেউ আরোগ্য দিতে পারে না। আপনি কাউকে রোগমুক্ত না করলে সে কোনও উপায়ে রোগমুক্তি লাভ করতে পারে না। তাই আমরা আপনারই কাছে রোগমুক্তি কামনা করি। আপনি এই রোগীকে নিরাময় দান করুন।

شفاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا (এমন আরোগ্য দান করুন, যা কোনও রোগ অবশিষ্ট রাখবে না)। অর্থাৎ তার যে রোগ প্রকাশ পেয়েছে তা থেকেও তাকে নিরাময় দিন এবং যে রোগ প্রকাশ পায়নি কিন্তু ভেতরে ভেতরে আছে তা থেকেও। এমনিভাবে তাকে ওইসকল রোগ থেকেও মুক্তিদান করুন, যা বর্তমান রোগ থেকে মুক্তিলাভের পর তার উপসর্গস্বরূপ থেকে যেতে পারে। তাকে এমনভাবে নিরাময় দান করুন, যাতে এ রোগের কোনও প্রভাব-প্রতিক্রিয়া ও আভাসমাত্র অবশিষ্ট না থাকে।

প্রকাশ থাকে যে, দু'আটির অর্থ নিজ ভাষায় উচ্চারণ করলেও সুফল পাওয়ার আশা আছে। তবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো ভাষার স্বতন্ত্র তাৎপর্য ও বরকত রয়েছে। তাই দু'আটি হুবহু তাঁর ভাষায় পড়াই শ্রেয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কারও অসুস্থতার সংবাদ পেলে তাকে দেখতে যাওয়া উচিত।

খ. রোগীর শরীরে হাত রেখে হাদীছে বর্ণিত দু'আটি পাঠ করলে সুন্নতের উপর আমল হবে এবং এর দ্বারা উপশমের আশা রাখা যায়।

গ. যে-কোনও চিকিৎসায় বিশ্বাস রাখা জরুরি যে, আরোগ্যদাতা কেবল আল্লাহ তা'আলাই। তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কোনও ব্যবস্থা কোনও কাজে আসে না। ওষুধ, পথ্য ইত্যাদির নিজস্ব কোনও ক্ষমতা নেই। এসবের সুফল কেবল তাঁর ইচ্ছারই প্রতিফলন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ৫৫১৯ | মুসলিম বাংলা