আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৩৯- আদাব - শিষ্টাচার অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৪৪৮
আন্তর্জাতিক নং: ২১৫৪-১
৮. অনুমতি গ্রহণ প্রসঙ্গে
৫৪৪৮। হুসাইন ইবনে হুরায়স আবু আম্মার (রাহঃ) ......... আবু বুরদা (রাহঃ) সূত্রে আবু মুসা আশআরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। আবু বুরদা (রাহঃ) বলেন, আবু মুসা (রাযিঃ) উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) এর কাছে এসে বললেন, আলসালামূ আলাইকুম এ (আমি) আব্দুল্লাহ ইবনে কায়স। কিন্তু তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন না। তখন (আবার) বললেন, আলসালামু আলাইকুম এই যে, আবু মুসা। আসসালামু আলাইকুম এই যে আশআরী। এরপর (জবাব না পেয়ে) তিনি ফিরে গেলেন। তখন উমর (রাযিঃ) বললেন, (তাকে) আমার কাছে ফিরিয়ে আন, আমার কাছে ফিরিয়ে আন। ফিরে এলে তিনি বললেন, কিসে তোমাকে ফিরিয়ে দিল, হে আবু মুসা? আমরা কোন কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে আমি বলতে শুনেছি অনুমতি চাওয়া তিনবার। এতে তোমাকে অনুমতি দেওয়া হলে ভাল, অন্যথায় ফিরে যাও।

উমার (রাযিঃ) বললেন, এ বিষয়ে অবশ্যই তুমি আমার কাছে প্রমাণ নিয়ে আসবে। অন্যথায় আমি এমন করব তেমন করব, (শাস্তি দিব)। তখন আবু মুসা (রাযিঃ) চলে গেলেন। উমর (রাযিঃ) বললেন, প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারলে, বিকালে তাকে তোমরা মিম্বরের কাছে দেখতে পাবে, আর যদি প্রমাণ না পায়, তা হলে তোমরা তাকে দেখতে পাবে না।

বিকালে তিনি এলে তাঁরা তাঁকে (মিম্বরের কাছে দেখতে) পেল। উমর (রাযিঃ) বললেন, হে আবু মুসা! কি বলছ? প্রমাণ পেয়েছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ উবাই ইবনে কা’ব! তিনি বললেন, ইনি বিশ্বস্ত!। (তখন উবাই ইবনে কাব (রাযিঃ) কে লক্ষ্য করে বললেন,) হে আবু তুফায়ল! ইনি কী বলেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে এরূপ বলতে আমি শুনেছি। হে ইবনে খাত্তাব! আপনি কখনো রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাহাবীগণের জন্য আযাব স্বরূপ হয়ে পড়বেন না। তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ! (আমি তা কখনো চাই না)। আমি তো একটি বিষয় শোনার পর সে সম্পর্কে সুনিশ্চিত হওয়া পছন্দ করেছি।
باب الاِسْتِئْذَانِ
حَدَّثَنَا حُسَيْنُ بْنُ حُرَيْثٍ أَبُو عَمَّارٍ، حَدَّثَنَا الْفَضْلُ بْنُ مُوسَى، أَخْبَرَنَا طَلْحَةُ بْنُ، يَحْيَى عَنْ أَبِي بُرْدَةَ، عَنْ أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ، قَالَ جَاءَ أَبُو مُوسَى إِلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ هَذَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ قَيْسٍ . فَلَمْ يَأْذَنْ لَهُ فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ هَذَا أَبُو مُوسَى السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ هَذَا الأَشْعَرِيُّ . ثُمَّ انْصَرَفَ فَقَالَ رُدُّوا عَلَىَّ رُدُّوا عَلَىَّ . فَجَاءَ فَقَالَ يَا أَبَا مُوسَى مَا رَدَّكَ كُنَّا فِي شُغْلٍ . قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " الاِسْتِئْذَانُ ثَلاَثٌ فَإِنْ أُذِنَ لَكَ وَإِلاَّ فَارْجِعْ " . قَالَ لَتَأْتِيَنِّي عَلَى هَذَا بِبَيِّنَةٍ وَإِلاَّ فَعَلْتُ وَفَعَلْتُ . فَذَهَبَ أَبُو مُوسَى قَالَ عُمَرُ إِنْ وَجَدَ بَيِّنَةً تَجِدُوهُ عِنْدَ الْمِنْبَرِ عَشِيَّةً وَإِنْ لَمْ يَجِدْ بَيِّنَةً فَلَمْ تَجِدُوهُ . فَلَمَّا أَنْ جَاءَ بِالْعَشِيِّ وَجَدُوهُ قَالَ يَا أَبَا مُوسَى مَا تَقُولُ أَقَدْ وَجَدْتَ قَالَ نَعَمْ أُبَىَّ بْنَ كَعْبٍ . قَالَ عَدْلٌ . قَالَ يَا أَبَا الطُّفَيْلِ مَا يَقُولُ هَذَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ذَلِكَ يَا ابْنَ الْخَطَّابِ فَلاَ تَكُونَنَّ عَذَابًا عَلَى أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . قَالَ سُبْحَانَ اللَّهِ إِنَّمَا سَمِعْتُ شَيْئًا فَأَحْبَبْتُ أَنْ أَتَثَبَّتَ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বস্তুত এটা ছিল হযরত উমর ফারুক রাযি.-এর দূরদর্শীতা ও হাদীছ বিষয়ে তাঁর কঠোর সতর্কতা। হযরত আবূ মূসা রাযি.-এর বিশ্বস্ততায় তাঁর কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু হাদীছ যেহেতু শরী'আতের দলীল, তাই এর বর্ণনায় যাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় সেটাই ছিল তাঁর লক্ষ্যবস্তু। তাঁর আমলে তিনি ছিলেন সমগ্র উম্মতের অভিভাবক। তাই উম্মতের দীন ও দুনিয়া উভয় বিষয়ে তাঁর সতর্ক অবস্থান বাঞ্ছনীয় ছিল। বিশেষত এ শরী'আত যেহেতু সর্বশেষ শরী'আত, তাই কিয়ামত পর্যন্ত এর সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উম্মতের উলামা ও শাসকবর্গের অপরিহার্য কর্তব্য ছিল। সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে পরবর্তী শত শত বছর উম্মতের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এ কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে এসেছে। ফলে আজ এ আখেরী শরী'আত ও এর উৎস কুরআন-সুন্নাহ যথাযথভাবে সংরক্ষিত আছে।

যাহোক অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা হল তিনবার। তিনবারের পর আর অনুমতি চাওয়া সঙ্গত নয়। এটা পীড়াপীড়ির মধ্যে পড়ে। কাউকে পীড়াপীড়ি করে কষ্ট দেওয়া উচিত না। অনুমতি চাইলে যে অনুমতি দিতেই হবে এর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। মানুষের নানারকম ওজর থাকতে পারে। হয়তো এমন সময় অনুমতি চাওয়া হয়েছে, যখন অনুমতি দেওয়াটা সম্ভব নয়। তা দিতে গেলে বিশেষ কষ্ট বা পেরেশানি হবে। সাক্ষাৎপ্রার্থীর উচিত মানুষের কষ্ট-ক্লেশ বা ওজর-অজুহাতকে সম্মান দেওয়া এবং অনুমতি না পাওয়াকে সহজভাবে গ্রহণ করা। হাঁ, সাক্ষাৎপ্রার্থীর প্রয়োজনও বিশেষ জরুরি হতে পারে। তাই যথাসম্ভব অনুমতি দেওয়া বাঞ্ছনীয়। কঠিন ওজর না থাকলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া সঙ্গত নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে আগে অনুমতি নেওয়া জরুরি।

খ. অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা তিনবার। তৃতীয়বারেও অনুমতি পাওয়া না গেলে ফিরে যেতে হবে। চতুর্থ বার অনুমতি চাওয়া বিধিসম্মত নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ৫৪৪৮ | মুসলিম বাংলা